Occasional PapersPublished on Sep 13, 2022
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

পরিবর্তনের দোরগোড়ায় বিমস্টেক: আঞ্চলিক নিরাপত্তাই প্রধান লক্ষ্য

  • Sohini Bose
  • Anasua Basu Ray Chaudhury
  • Harsh V. Pant

    ২০২২ সালে ২৫ বছর পূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গে দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক) এক নতুন দিগন্তের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। বিগত মাসগুলি বিমস্টেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যখন সংগঠনটির সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রার রূপরেখা নির্ধারণে মার্চ মাসের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে একটি সনদ গ্রহণ করা হয়। শীর্ষ সম্মেলনটিতে বিমস্টেক তার ১৪টি বিবিধ আন্তঃসহযোগিতার ক্ষেত্রকে নিরাপত্তা-সহ সাতটি প্রধান ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করে। এক দিকে যখন জ্বালানি সম্পদ সংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমশ চরম আকার ধারণ করছে, হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিমস্টেককে তার উদ্যোগে গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর পাশাপাশি সংগঠনটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকা প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির মতো আশঙ্কা থেকে সংশ্লিষ্ট সামুদ্রিক ক্ষেত্রটিকে সুরক্ষা জোগানোর বিষয়টির উপরেও নজর দিতে হবে। এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিমস্টেকের কর্মসূচি এবং অদূর ভবিষ্যতে সংগঠনটির অগ্রাধিকারগুলি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

    নির্দেশিকা: সোহিনী বসু, অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী এবং হর্ষ ভি পন্থ, ‘বিমস্টেক অন দ্য কাস্প: রিজিওনাল সিকিউরিটি ইন ফোকাস’, ও আর এফ ইস্যু ব্রিফ নম্বর ৫৬৩, জুলাই ২০২২, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন

পরিবর্তনের দোরগোড়ায় বিমস্টেক: আঞ্চলিক নিরাপত্তাই প্রধান লক্ষ্য

 ভূমিকা

বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি একগুচ্ছ নিরাপত্তা উদ্বেগের সঙ্গে যুঝছে, যেগুলির মধ্যে বিশেষ কয়েকটি রাষ্ট্রের আগ্রাসন, অবৈধ কার্যকলাপ এবং পরিবেশগত অবক্ষয় উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উপসাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি জ্বালানি সম্পদের বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট বা নৌপথগুলির স্বায়ত্তশাসন খর্ব করবে, এহেন সম্ভাবনা বিমস্টেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন)(ক) সদস্য দেশগুলির মনে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। ভবিষ্যতে আমরা যে তীব্র জ্বালানি সঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে চলেছে।(১)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউ এস) এবং চিনের মতো অঞ্চল-বহির্ভূত শক্তিগুলির ক্রমবর্ধমান আগ্রহ উপসাগরকে আঞ্চলিক সম্পদ রাজনীতি ও কৌশলী শক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রে চালিত করেছে। অবস্থানজনিত কারণে দুর্যোগপ্রবণ উপসাগরীয় অঞ্চলটি বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ-সহ অতিরিক্ত নিরাপত্তা উদ্বেগের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই উপসাগরীয় অঞ্চলস্থিত দেশগুলি বিমস্টেককে পুনরুজ্জীবিত করতে এই সকল উদ্বেগের বিরুদ্ধে  কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতার প্রচার চালাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশের (প্রায় ১.৫ বিলিয়ন / ১৫০ কোটি মানুষ) অধিকারী এবং সদস্য দেশগুলির সম্মিলিত গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট (জি ডি পি) ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়া সত্ত্বেও বিমস্টেক প্রধানত নিষ্ক্রিয় থেকেছে।(২) বঙ্গোপসাগরের উপরে ক্রমবর্ধমান কৌশলী মনোযোগ বিমস্টেককে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং সংগঠনটিকে নির্দিষ্ট গঠনগত পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য করেছে। ২০২২ সালের ৩০ মার্চ পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে সংগঠনটি তার আন্তঃসহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করেছে এবং ১৪টি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রকে সাতটি বৃহত্তর শাখার অন্তর্ভুক্ত করেছে : বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন (নেতৃত্বে বাংলাদেশ); পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন (ভুটান); নিরাপত্তা(খ) (ভারত); কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা (মায়ানমার); মানুষে মানুষে সংযোগ (নেপাল); বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন (শ্রীলঙ্কা); এবং সংযোগ ব্যবস্থা (তাইল্যান্ড)(৩)

এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটির তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য হল: ‘নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত বিমস্টেকের নিজস্ব ‘প্রবিধান’-এর সঙ্গে উপসাগরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সামঞ্জস্য খতিয়ে দেখা; সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা এবং জ্বালানির মতো শাখাক্ষেত্রগুলিতে এটির অবদানের মূল্যায়ন এবং এটি কীভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে আরও কার্যকর ভাবে শক্তিশালী করতে পারে, সেই পথগুলি চিহ্নিতকরণ।

উপসাগরের নিরাপত্তা এবং বিমস্টেক প্রবিধান

বঙ্গোপসাগর কৌশলগত ভাবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গমে অবস্থিত। অঞ্চলটির গুরুত্বপূর্ণ সি লেনস অব কমিউনিকেশন (এস এল ও সি) বা সামুদ্রিক সংযোগপথগুলি এবং হাইড্রোকার্বন ভাণ্ডারের গুরুত্বের নিরিখে এই সামুদ্রিক ক্ষেত্রটিতে প্রতিকূলতা ও সুযোগ, উভয়েরই প্রাচুর্য রয়েছে। নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদ দু’টিতে উপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলির চিরাচরিত এবং অচিরাচরিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

চিরাচরিত নিরাপত্তা উদ্বেগ: নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা

প্রাথমিক ভাবে উপসাগরের চিরাচরিত নিরাপত্তা উদ্বেগটি হল এস এল ও সি-গুলি বরাবর জ্বালানি ও অন্যান্য সম্পদের বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলির স্বাধীনতা রক্ষা করা। এই নৌপথগুলির অধিকাংশই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (এ এন আই) শৃঙ্খলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।(ঘ) বিশ্বের ব্যস্ততম জাহাজপথগুলির অন্যতম ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং রুটটি(ঙ) মালাক্কা প্রণালীতে প্রবাহিত হওয়ার আগে এই দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণতম প্রান্তের মাত্র ৮ নটিক্যাল মাইল নিচ দিয়ে প্রসারিত হয়েছে। এই বাণিজ্য পথগুলির সুরক্ষা উপসাগরীয় উপকূলস্থ দেশগুলি এবং অন্য আঞ্চলিক অংশীদারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক দিকে যখন চিন ‘মালাক্কা ডিলেমা’(চ) বা ‘মালাক্কা দ্বন্দ্ব’-এর মোকাবিলা করার জন্য অঞ্চলটিতে তার উপস্থিতি শক্তিশালী করছে, তখন ভারতও এ এন আই-তে তার নৌশক্তি বৃদ্ধি করছে, মিলানের(৪) সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়া এবং তাইল্যান্ড(৫) ও ইন্দোনেশিয়ার(৬) মতো দেশগুলির সঙ্গে যৌথ টহলদারি চালিয়েছে।

অচিরাচরিত নিরাপত্তা (এন টি এস) উদ্বেগ

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলটিতে এন টি এস-এর উদ্বেগগুলিকে তিনটি প্রধান ধারায় ভাগ করা হয়েছে, যা নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদগুলিতে পর পর আলোচনা করা হয়েছে।

(ক) সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ

সন্ত্রাসবাদ

প্রতিটি বিমস্টেক দেশই হয় সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার অথবা সন্ত্রাসবাদীদের ‘আঁতুড়ঘর’ হওয়ার দরুন সন্ত্রাসবাদ দ্বারা তীব্র ভাবে প্রভাবিত। অধিকাংশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বা শৃঙ্খলগুলিই তাদের কার্যকলাপের অর্থায়নের জন্য অর্থ পাচার এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।(৭) গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স, ২০২২ অনুসারে বিমস্টেক সদস্য দেশগুলির ক্রম উল্লেখ করা হল: মায়ানমার নবম স্থানে রয়েছে এবং তার খুব কাছেই রয়েছে ভারত (দ্বাদশ স্থানে), তাইল্যান্ড (২২তম), শ্রীলঙ্কা (২৫তম), নেপাল (৩৪তম), বাংলাদেশ (৪০তম) এবং ভুটান (৯৩তম)(৮)। পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো ক্রমতালিকার উপরের দিকে থাকা দেশগুলির সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিমস্টেক দেশের অভিন্ন স্থলসীমান্ত বা সামুদ্রিক সীমান্ত বর্তমান।(৯)

জলদস্যুতা

আন্তর্জাতিক অপরাধ রূপে বিবেচিত যে সব বেআইনি কার্যকলাপ উপসাগরীয় অঞ্চলটিতে সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়, তার মধ্যে মাদক দ্রব্যের বাণিজ্য, সামুদ্রিক জলদস্যুতা, অবৈধ মৎস্যশিকার, অনথিভুক্ত পরিযান এবং মানব পাচার রয়েছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)(১০) এবং মুক্তিপণের জন্য মৎস্যজীবীদের অপহরণ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাপক দারিদ্র, জনঘনত্ব এবং অতিরিক্ত মাত্রায় মৎস্যশিকারের জন্য জীবিকার সুযোগের অভাবের মতো বিষয়গুলির ফলে এহেন বেআইনি কার্যকলাপ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চিত্র ১: বিমস্টেক দেশগুলিতে সামুদ্রিক জলদস্যুতা (২০১০-২০১৮)

সূত্র: স্টেবল সিজ(১১)

বেআইনি, অপ্রতিবেদিত এবং অনিয়ন্ত্রিত মৎস্যশিকার

অতিরিক্ত পরিমাণে মৎস্যশিকারের ফলে ফিশ স্টক বা মাছের ভাণ্ডার ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে মৎস্যজীবী এবং মাছ ধরার ট্রলারগুলি বেশি মাছ ধরার আশায় বার বার সামুদ্রিক সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশের জলসীমার মধ্যে ঢুকে পড়ে। উপসাগরে এমনটা করা সহজতর। কারণ প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চলই একাধিক উপকূলস্থ দেশের অধীনস্থ একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের এক অভিন্ন সাধারণ সীমানা সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। অন্য দেশের জলসীমান্ত অতিক্রম করে বারংবার অবৈধ অভিযান চালানোর ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে মনোমালিন্যের সৃষ্টি করে। কারণ এর ফলে দেশটির খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। হিংসার ঘটনা মৎস্যজীবীদের প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠতে পারে, যেমনটা ভারত ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের বছরগুলিতে (১৯৯১-২০০৯) প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।(১২) এ কথা ঠিক যে, বেআইনি মৎস্যশিকারের ঘটনাগুলি সর্বদা ইচ্ছাকৃত ভাবে হয় না, অনেক মৎস্যজীবীই সীমান্ত সংক্রান্ত সচেতনতার অভাবে অন্য দেশের জলভাগে প্রবেশ করেন।(১৩) ‘১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৭টি দেশের মোট বেআইনি এবং অপ্রতিবেদিত ক্ষতির বার্ষিক পরিমাণ ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই মূল্যগুলি ৪.৫ থেকে ১৪.৪ মিলিয়ন টন পরিমাণ সামুদ্রিক মৎস্যশিকারকে প্রতিফলিত করে।’(১৪)

বেআইনি পরিযান

নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানরা মায়ানমার ছেড়ে পালানোর সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উপসাগরে অবৈধ পরিযানের সমস্যা প্রকট হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হলেও, অন্যরা উপসাগর বরাবর পরিযানে বাধ্য হন এবং অনেক সময়েই প্রাণঘাতী অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ে্ন।(১৫)

মানব পাচার

কর্তৃপক্ষরা এ বিষয়ে সহমত যে, মানব পাচারকারীদের চোরাচালানের পথ, পদ্ধতি এবং কার্যকলাপ ক্রমশ সুসংহত হয়েছে। অঞ্চলের ভিতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই অপরাধী সিন্ডিকেটগুলির অনুপ্রবেশের ক্ষমতা প্রবল।(১৬) যদিও এ বিষয়ে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান সীমিত এবং তা বারংবার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতির পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র তুলে ধরা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(খ) প্রাকৃতিক বিপর্যয়

যেহেতু বঙ্গোপসাগর ‘বিশ্ব বিপর্যয় বলয়’ বা ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাজার্ড বেল্ট’ অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের অংশ, তাই অঞ্চলটিকে পরিবেশ সম্পর্কিত নিরাপত্তা উদ্বেগগুলির সঙ্গে যুঝতে হয়।(জ) শুধু মাত্র ভৌগোলিক অবস্থানের দরুন একাধিক বিমস্টেক দেশকেই পৃথক মাত্রায় ঘূর্ণিঝড়, সুনামি, ভূমিধ্বস এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষজন হয় প্রাণ হারান অথবা বাস্তুচ্যুত হন। (দ্রষ্টব্য চিত্র ২) উপসাগরের ভূ-ভৌতিক গঠন(ঝ) অঞ্চলটির ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ। আন্দামান এবং সুমাত্রা সাবডাকশন জোনের মতো একটি উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন সিজমিক জোনের নিকটবর্তী হওয়ায় অঞ্চলটি বারংবার সুনামির সম্মুখীন হয়।(১৭)

চিত্র ২: বিমস্টেক দেশগুলির উপরে ২০০৪ সালের সুনামি এবং সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব

বছর বিপর্যয় প্রভাব
২০০৪ ভারত মহাসাগরে সুনামি

শ্রীলঙ্কা: ৩০,০০০ মৃত; ১৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি

ভারত: ১০,২৭৩ জন মৃত এবং ২২,৭৫০ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত

মায়ানমার: ৮৬ জন মৃত

তাইল্যান্ড: সহস্রাধিক মৃত; ৫০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি

বাংলাদেশ: ২ মৃত, কোনও ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি

২০১৭ সাইক্লোন ওখি

ভারত: ৩৫০ জন মৃত; উপকূলীয় ফিশারিতে ৮২১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

শ্রীলঙ্কা: ৪১৪ জন মৃত; ৩২০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

২০১৭ সাইক্লোন মোরা

বাংলাদেশ: প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়; ৬ জন মৃত

শ্রীলঙ্কা: ১৫০ জন মৃত

মায়ানমার: ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ করা গিয়েছে

২০১৮ সাইক্লোন তিতলি ভারত: ৮ জন মৃত; ২০০০ বিদ্যুৎ খুঁটি উপড়ে যায়
২০১৮ সাইক্লোন গাজা

ভারত: ৪৫ জন মৃত; ক্ষয়ক্ষতি ৩.৪ লক্ষ টাকা

শ্রীলঙ্কা: ১০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

২০১৯ সাইক্লোন ফণী

ভারত: ৬৪ জন মৃত; ১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রভাবিত

বাংলাদেশ: ১২ জন মৃত

২০১৯ সাইক্লোন বুলবুল

ভারত: ১২ জন মৃত

বাংলাদেশ: ১২ জন মৃত; ২১ লক্ষ মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়

২০২০ সাইক্লোন আমফান

ভারত: ৯৮ জন মৃত; ১০০০-এরও বেশি অস্থায়ী ঘর ক্ষতিগ্রস্ত; ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক ক্ষতি

বাংলাদেশ: ১৩ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি

২০২১ সাইক্লোন ইয়াস

ভারত: ৪ জন মৃত; ১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রভাবিত; ৩ লক্ষ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়

বাংলাদেশ: ২ জন মৃত

সূত্র: লেখকবৃন্দের নিজস্ব একাধিক মুক্ত সূত্র ব্যবহার করে নির্মিত

উল্লেখ্য: এই সারণিটিতে শুধু মাত্র বিগত পাঁচ বছরের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 (গ) জ্বালানির অভাব

একাধিক কারণে বিমস্টেক দেশগুলিতে মাথাপিছু প্রাথমিক জ্বালানি চাহিদা(ঞ) বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলির মধ্যে দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, শিল্পায়ন এবং পণ্য ও পরিষেবা সংক্রান্ত বর্ধিত চাহিদা উল্লেখযোগ্য। বিমস্টেক এনার্জি আউটলুক ২০৩০ অনুযায়ী(১৮) ২০০৮ সালে বিমস্টেক অঞ্চলে মোট প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৭৭২ মিলিয়ন টন তেলের সমতুল্য (এম টি ও ই), যা ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে ১৭৫৮ এম টি ও ই হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ২০০৮ সালে মোট প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ৫৩৯ এম টি ও ই থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে ১২১০ এম টি ও ই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মোট প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারের নিরিখে তেলের পরিমাণ ২০০৮ সালের ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশা করা হলেও কয়লাই এখনও পর্যন্ত জ্বালানির প্রধান উৎস রূপে বিদ্যমান।(১৯)

অধিকাংশ বিমস্টেক দেশই তাদের প্রাথমিক জ্বালানির চাহিদা মেটাতে আমদানির উপরে নির্ভরশীল। যেমনটা চিত্র ৩-এ দেখানো হচ্ছে যে, বিমস্টেকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সরবরাহ-চাহিদার ফারাক ২০৩০ সালে তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে, যেখানে তেল-সম্পদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। চিত্র ৪-এ উঠে এসেছে যে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অঞ্চলটি দ্বারা আমদানিকৃত মোট জ্বালানির পরিমাণ প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সঙ্গে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পরিমাণ ২০০৫ সালের ৮০ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশে।(ট)

চিত্র ৩: বিমস্টেকের প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ ও চাহিদার ফারাক 

বছর ২০০৮ ২০১৫ ২০২০ ২০৩০
কয়লা ২২৩.২৯ ১১৭.৭৬ ৩০৮.৭২ ৪২১.৭
তৈল ও পণ্য ১০.৪৭ -৬৪.১ ৩০.৮৪ ৩৫.৮৬
প্রাকৃতিক গ্যাস ৯২.৬৪ ১০৭.০২ ১৪৬.০২ ১৬৫.৭৬
পারমাণবিক ১৭.১২ ২১.৪ ২৯.২৬ ২৮.৫৪
জৈব জ্বালানি -২১.৮৭ ৩.৬৭ ১.৫৮ ৬৭.৮২
বিদ্যুৎ -৬২.৩৫ -৯৬.২৫ -১১৯ -২০৬.৮৪

সূত্র: বিল্ডিং আ রিজিওনাল অ্যাপ্রোচ ফর এনার্জি সিকিউরিটি ফর বিমস্টেক(২০)

চিত্র ৪: বিমস্টেক জ্বালানি আমদানি এবং আত্মনির্ভরতা

সূত্র: বিল্ডিং আ রিজিওনাল অ্যাপ্রোচ ফর এনার্জি সিকিউরিটি ফর বিমস্টেক(২১)
উল্লেখ্য: বিমস্টেক এনার্জি আউটলুক ২০৩০ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সকলের বিদ্যুৎ ব্যবহারের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য রকমের অগ্রগতি ঘটলেও অঞ্চলটিতে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ কম থেকেছে। ২০১৯ সালে ভুটান ছাড়া অন্যান্য সব ক’টি বিমস্টেক দেশের মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার বৈশ্বিক গড়(২২) অর্থাৎ ৩৫০১ কিলোওয়াট ঘণ্টা / মাথাপিছুর তুলনায় কম ছিল।

অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও সরবরাহের পরিমাণ অপ্রতুলই থাকবে। তাই সীমান্তের উভয় পার্শ্বস্থ দেশের মধ্যে বিদ্যুতের আমদানি-রফতানি অঞ্চলটিতে জ্বালানি নিরাপত্তা(ঠ) সুনিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিমস্টেকের প্রবিধান

বিমস্টেকের একটি মৌলিক নীতি হল ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা’(২৩)। বিমস্টেকের সনদ এই অবস্থানকে পুনরায় অনুমোদন করেছে। সনদটিতে সংঘাত নিরসনের কোনও পন্থা সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। বরং সদস্য দেশগুলির উপরে সমস্যা সমাধানের বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।(২৪) এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, বর্তমান সময়ের পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে এস এল ও সি-গুলির স্বায়ত্তশাসন সুনিশ্চিত করার নিরিখে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণে বিরত থাকা সংগঠনটির কর্মসূচির একটি বড় দুর্বলতা। এহেন অবস্থান গ্রহণের নেপথ্যে প্রধান কারণটি হল, অধিকাংশ সদস্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য চিনের উপরে নির্ভরশীল এবং বেজিংকে চটানোর মতো কোনও প্রকাশ্য রাজনৈতিক-সামরিক কার্যকলাপে তারা অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হবে না।

অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিতে একটি স্থিতিশীল অঞ্চলের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে বিমস্টেক সদস্য দেশগুলি শুধু মাত্র অচিরাচরিত নিরাপত্তা উদ্বেগগুলির প্রশমনে একজোট হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অতএব বিমস্টেকের সনদটি তার একটি প্রধান লক্ষ্যকেই প্রতিফলিত করে : ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্দেশীয় অপরাধ, এমনকি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।’(২৫) সংগঠনটির প্রবিধানে তাই শুধু মাত্র অচিরাচরিত নিরাপত্তার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে।

উপসাগরের অভিভাবক

পূর্বের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম’ (সি টি টি সি), ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘এনার্জি’ নামক শাখাগুলিকে একত্র করে উন্নততর কার্যকারিতার লক্ষ্যে ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা ক্ষেত্রটির সাম্প্রতিক সংযোজন বিমস্টেকের তরফে এক বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এই শাখা ভারতের নেতৃত্বাধীন। নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদগুলিতে আগেকার স্বাধীন এই ক্ষেত্রগুলির প্রত্যেকটিতে এখনও পর্যন্ত হওয়া অগ্রগতির কথা আলোচনা করা হয়েছে।

সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ

বিমস্টেক নেতৃস্থানীয় দেশগুলির কাছে অঞ্চলটিতে শান্তি এবং স্থিতিশীল বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করার জন্য সন্ত্রাসবাদ এবং সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলি তথ্যের পারস্পরিক আদানপ্রদান এবং অন্যান্য স্থায়ী কর্মসূচি(২৬), যেমন ২০০৫ সালে ‘সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্দেশীয় অপরাধ দমন’ এবং ২০০৮ সালে বিমস্টেক কনভেনশন অন কমব্যাটিং ইন্টারন্যাশনাল টেররিজম, ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম এবং ইল্লিসিট ড্রাগ ট্রাফিকিং সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলির সূচনা করার মাধ্যমে প্রয়াসগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছে। এই কনভেনশন অনুযায়ী বিমস্টেক দেশগুলির আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন, নোডাল কর্তৃপক্ষদের সূচিত করা এবং কনভেনশন বলবৎ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্দেশীয় সংগঠিত অপরাধ এবং মূল রাসায়নিক পদার্থ-সহ মাদকদ্রব্য এবং সাইকোট্রপিক পদার্থের চোরাপাচার প্রতিরোধ করবে। যদিও এই পর্যালোচনার পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান আন্তঃসহযোগিতার অন্যতম প্রধান পথ হলেও ‘অনুরোধ প্রত্যাখ্যান’-এর জন্যও একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।(ড)(২৭) দীর্ঘ সময় যাবৎ এই চুক্তি শুধু মাত্র ভারত এবং বাংলাদেশ দ্বারা অনুমোদিত ছিল(২৮) এবং সম্প্রতি ২০২১ সালের ১৬ মার্চ এটি বলবৎ করা হয়। ২০১৪ সালের বিমস্টেক কনভেনশন অন মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ক্রিমিনাল ম্যাটারস-এর মতো অন্য কনভেনশনগুলিও দীর্ঘ সময় পরে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়াও বিমস্টেক কনভেনশন এগেনস্ট ট্রাফিকিং ইন পারসনস, বিমস্টেক কনভেনশন অন ট্রান্সফার অব সেনটেন্সড পারসনস এবং বিমস্টেক কনভেনশন অন এক্সট্রাডিশন নিয়ে এখন আলাপ-আলোচনা চলছে।(২৯)

সন্ত্রাসবাদ দমন সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য বিমস্টেক নোডাল এজেন্সি(৩০) এবং সাইবার সন্ত্রাসবাদের জন্য একটি প্রাথমিক এজেন্সির মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যেগুলি একবিংশ শতাব্দীর উদীয়মান উদ্বেগ সামলানোর জন্য আদর্শ, সেগুলির সূচনা এখনও করা হয়নি।

চিত্র ৫: বিমস্টেক সি টি টি সি সাব সেক্টরের অধীনে সাব গ্রুপ 

সাব গ্রুপ পরিচালনকারী দেশ অনুষ্ঠিত সমাবেশের সংখ্যা
প্রিভেনশন অফ ইল্লিসিট ট্রাফিকিং ইন নারকোটিকস ড্রাগস, সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যান্ড প্রিকারসর কেমিক্যাল মায়ানমার ০৬
ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং শ্রীলঙ্কা ০৪
লিগাল অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্ট ইস্যুজ ভারত ০৮
অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং দ্য ফিনান্সিং অব টেররিজম তাইল্যান্ড ১১
কাউন্টারিং র‍্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড টেররিজম ভারত ০১
হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড ইললিগাল মাইগ্রেশন বাংলাদেশ

সূত্রন: বিমস্টেক(৩১)

পরিবেশ এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা

ভারত মহাসাগরে ২০০৪ সালের বিধ্বংসী সুনামির আগে পর্যন্ত বিমস্টেক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আঞ্চলিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। এক বছরের মধ্যে বিমস্টেকে ‘পরিবেশ এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা’ নামক একটি নতুন আন্তঃসহযোগিতা ক্ষেত্রের সূচনা করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিল ভারত। সুনামির স্মৃতি আবছা হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গতিশীলতা হারালেও শেষ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহের চাপে সেটি নতুন মোড় নেয়।(৩২)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালে ভারতে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির আওতায় তার পূর্ব দিকের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে নিরাপত্তা আন্তঃসহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেয়। ফলে স্বভাবতই বিমস্টেক ‘বিপর্যয় কূটনীতি’র প্রচারকারী একটি নিরপেক্ষ মঞ্চরূপে(৩৩) উঠে আসে। ২০১৬ সালে সার্কের (সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন) ব্যর্থ শীর্ষ সম্মেলন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিকে বাড়তি উদ্দীপনা জুগিয়েছে এবং একই সঙ্গে এটি বিমস্টেক জোটের সদস্য দেশগুলিকেও এক সমন্বয়মূলক ভবিষ্যতের লক্ষ্যে একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ভাবে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।(৩৪) বিমস্টেকের আওতায় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ লক্ষ করা গিয়েছে। (দ্রষ্টব্য চিত্র ৬)

চিত্র ৬: বিমস্টেকের অধীনে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ 

বর্ষ অনুষ্ঠান আলোচ্যসূচি
২০১৬ বিমস্টেক গোয়া রিট্রিট যৌথ মহড়া, তথ্য বিনিময়, দক্ষতা বৃদ্ধি, অভিন্ন সাধারণ দ্রুত সতর্ককারী ব্যবস্থা, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন
২০১৭ সিনিয়র অফিশিয়ালস মিটিংস প্রথম বিমস্টেক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এক্সারসাইজ আয়োজনের দায়িত্ব পড়ে ভারতের উপরে
২০১৭ ফার্স্ট অ্যানুয়াল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এক্সারসাইজ টেবল টপ এক্সারসাইজ, ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজেস অন আর্থকোয়েক অ্যান্ড ফ্লাড, আফটার অ্যাকশন রিভিউ
২০১৭ পঞ্চদশ মন্ত্রী সমাবেশ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ দলের স্থাপনা
২০১৮ ইনগরাল গভর্নিং বোর্ড অ্যান্ড সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল মিটিং অব দ্য সেন্টার ফর ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট কর্মশালার আয়োজন করা; ‘বিমস্টেক অঞ্চলের জন্য তীব্র জলবায়ু/জলবায়ু’ বিপর্যয়ের সতর্কতা
২০১৮ ষোড়শ মন্ত্রী সমাবেশ বিপর্যয় প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি এবং আন্তঃসমন্বয়ের জন্য আন্তঃসরকারি বিশেষজ্ঞ দল গড়া
২০১৮ ফোর্থ সামিট ডিক্লেয়ারেশন উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলি; প্রতিরোধ পদক্ষেপ, পুনর্বাসন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা
২০১৮ আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিমস্টেক কথোপকথন বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার  ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সম্পদ ব্যবহার করার জন্য আন্তঃসরকারি প্রক্রিয়াগুলিকে সক্রিয় করা
২০২০ সেকেন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এক্সারসাইজ দক্ষতার মূল্যায়ন, আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া পদ্ধতির সশক্তিকরণ এবং ঘূর্ণিঝড়ের দরুন ঘটা বন্যা বিপর্যয়ের ফলে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির নিরিখে ঝুঁকির বিশ্লেষণ চালানো
২০২১ সপ্তদশ মন্ত্রী সমাবেশ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে ‘নিরাপত্তা’ অধিক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিমস্টেক সেন্টার ফর ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেটকে দ্রুত সতর্কবাণী প্রদানের জন্য কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়
২০২১ থার্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এক্সারসাইজ অতিমারি চলাকালীন বিপর্যয় প্রতিক্রিয়ার নিরিখে বিমস্টেক সদস্য দেশগুলির পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির বৃদ্ধি
২০২২ পঞ্চম শীর্ষ বৈঠক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রটিকে পরিবেশ থেকে পৃথক করা এবং এটিকে ভারতের নেতৃত্বাধীন ‘নিরাপত্তা’ অধিক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করা
২০২২ এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং বিপর্যয় প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য আন্তঃসমন্বয়ের উন্নতি সাধনের জন্য একটি কর্মপন্থা গড়ে তুলতে সম্মত হওয়া

সূত্র: লেখকবৃন্দের নিজস্ব, একাধিক মুক্ত সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে

সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটির নাম ‘পরিবেশ এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা’ রাখা হলেও এখনও পর্যন্ত কেবল মাত্র শেষোক্ত বিষয়টি নিয়েই কাজ হয়েছে। যৌথ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি পালনে বহুবিধ বাধা থাকা সত্ত্বেও বিমস্টেক অঞ্চলটিতে বিপর্যয় প্রস্তুতি জোরদার করার বিষয়ে তৎপর হয়েছে। যদিও ‘বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা’র বিষয়টি বর্তমানে বিমস্টেকের অধীনে নিরাপত্তা উদ্বেগগুলির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে বিমস্টেকের নিরাপত্তা কর্মসূচির উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হবে এবং জরুরি অবস্থার প্রয়োজনে সশস্ত্রবাহিনীকে কাজে লাগানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে জোর দেওয়া হবে বিপর্যয় প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ করার উপরে। এটিকে ‘পরিবেশ’ থেকে পৃথক ভাবে দেখা হবে। কারণ পরিবেশের ক্ষেত্রটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘমেয়াদি ভাবে বিবিধ আঙ্গিকের সমন্বয়ে গঠিত।

জ্বালানি

২০০৫ সালে নয়াদিল্লিতে জ্বালানি সংক্রান্ত প্রথম বিমস্টেক মিনিস্টেরিয়াল করফারেন্স(৩৫) বা মন্ত্রী-পর্যায়ের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ‘প্ল্যান অফ অ্যাকশন ফর এনার্জি কোঅপারেশন ইন বিমস্টেক’ প্রণয়ন করা হয়; ২০১০ সালে তাইল্যান্ডে বিমস্টেক এনার্জি মিনিস্টেরিয়াল মিটিং (বি ই এম এম) অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে বিমস্টেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন মাস্টার প্ল্যান স্টাডি (বি জি আই এম পি এস) তৈরি হয়; ভারতের বেঙ্গালুরুতে বিমস্টেক এনার্জি সেন্টার স্থাপন করার জন্য ২০১১ সালের মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (এম ও এ) গৃহীত হয় এবং সদস্য দেশগুলি দ্বারা ২০১৮ সালে বিমস্টেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন সম্পর্কিত একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়। বিমস্টেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন(৩৬) বা গ্রিড আন্তঃসংযোগের প্রধান লক্ষ্যগুলি হল সদস্য দেশগুলির মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যের পরিধির বিস্তার ঘটানো এবং নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার কাজকে ত্বরান্বিত করা, বিদ্যুৎ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস গ্রিডগুলির আন্তঃসংযোগ, কার্যকর পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন এবং শক্তি দক্ষতা কর্মসূচি সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং তথ্য অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।

একটি আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা কম দামে গুণমানসম্পন্ন বিদ্যুতের জোগান সুনিশ্চিত করবে এবং শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। অঞ্চলটিতে ভৌগোলিক দিক থেকে কেন্দ্রীয় অবস্থানের দরুন ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড (সি বি ই টি) বা আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্য সংক্রান্ত ভারতের জাতীয় নীতিও মূল উদ্যোগটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভারতের সি বি ই টি নির্দেশিকা অঞ্চলটিতে বিদ্যুৎ বাণিজ্যকে উৎসাহিত করলেও এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়ে কাজ করা বাকি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নীতিগুলির সমন্বয় সাধনের নিয়ন্ত্রণ এবং আইন প্রণয়নের জন্য একটি রাষ্ট্রাতিগ কর্তৃপক্ষের গঠন।

ভবিষ্যতে মনোনিবেশের ক্ষেত্রগুলি

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ (সাগর)-এর ধারণা লালন করেছে। এটিকে আরও শক্তিশালী করতে ইন্দো-প্যাসিফিক ওশানস ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা করা হয় যেটিতে নিয়মভিত্তিক আঞ্চলিক পরিকাঠামো বা রুলস বেসড রিজিওনাল আর্কিটেকচার গড়ে তোলার জন্য সাতটি স্তম্ভের সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এগুলির মধ্যে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সামুদ্রিক সম্পদ এবং বিপর্যয়ের ঝুঁকি প্রশমনের মতো তিনটি স্তম্ভ বিমস্টেকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ভূমিকার সঙ্গে অনুরণিত হয়। এর ফলে ভারতের কৌশলগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সংগঠনটির অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে এক কেন্দ্রাভিমুখিতা লক্ষ করা গিয়েছে। বিমস্টেকের অধীনে সি টি টি সি এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেতৃত্বপ্রদানকারী দেশ হওয়ার সুবাদে এবং ‘নিরাপত্তা’ ক্ষেত্রের আওতায় ‘জ্বালানি’ অধিক্ষেত্রটির দায়িত্

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Sohini Bose

Sohini Bose

Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...

Read More +
Anasua Basu Ray Chaudhury

Anasua Basu Ray Chaudhury

Anasua Basu Ray Chaudhury is Senior Fellow with ORF’s Neighbourhood Initiative. She is the Editor, ORF Bangla. She specialises in regional and sub-regional cooperation in ...

Read More +
Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +