২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংক্ষিপ্ত ও সরকারি কর্মসফর যথাযথ ভাবেই অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এই সফর মার্কিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ অবশ্যই আন্তঃকার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যেমনটা যৌথ বিবৃতিতেও জোর দিয়ে বলা হয়েছে। ঘোষিত চুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে ভারত ‘জ্যাভলিন’ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম) এবং ‘স্ট্রাইকার’ ইনফ্যানট্রি কমব্যাট ভেহিকল (আইসিভি) কেনা ও সহ-উৎপাদনের বিষয়ে অগ্রসর হতে পারে। ‘জ্যাভলিন’ ও ‘স্ট্রাইকার’-এর সহ-উৎপাদন দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং এই ব্যবস্থাগুলি সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতকে আরও সংহত করতে সাহায্য করবে।
বলয় জুড়ে
এ ছাড়াও ভারতীয় নৌবাহিনীর মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস বা সামুদ্রিক পরিসরের সচেতনতা (এমডিএ) বৃদ্ধির জন্য ভারত আরও ছ’টি পি-৮আই মেরিটাইম প্যাট্রোল বা সমুদ্রে টহল দিতে সক্ষম বিমান কিনবে। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন একবিংশ শতাব্দীতে মার্কিন-ভারত বিশেষ সামরিক অংশীদারিত্বের জন্য একটি নতুন ১০ বছরের কাঠামোয় স্বাক্ষর করবে। মোদী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত একটি নতুন উদ্যোগের অধীনে আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেমস বা মনুষ্যবিহীন বিমান (ইউএএস) এবং অটোনোমাস সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সহযোগিতা জোরদার হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্ডুরিল ইন্ডাস্ট্রিজ ও মাহিন্দ্রা গ্রুপের মধ্যে ইতিমধ্যেই বিদ্যমান চুক্তি এবং এল৩হ্যারিস ও ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল) দ্বারা অ্যাক্টিভ টোয়েড অ্যারে সিস্টেমস-এর (এটিএএস) সহ-উন্নয়ন। পর্যালোচনার পর সমুদ্রতলের ব্যবস্থা ও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতা সম্ভব। এর পাশাপাশি মহাকাশ, বিমান প্রতিরক্ষা ও ট্যাঙ্ক-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রে ত্বরান্বিত সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।
নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন একবিংশ শতাব্দীতে মার্কিন-ভারত বিশেষ সামরিক অংশীদারিত্বের জন্য একটি নতুন ১০ বছরের কাঠামোয় স্বাক্ষর করবে।
ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা বাণিজ্য, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতের ক্ষেত্রে আরও সমন্বয় সাধনের জন্য অস্ত্র স্থানান্তরের ক্ষেত্রে তাদের বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে এবং রেসিপ্রোকাল ডিফেন্স প্রোকিউরমেন্ট বা পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ক্রয় (আরডিপি) চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে উভয় দেশ তাদের সংগ্রহ প্রক্রিয়াগুলিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে এবং প্রতিরক্ষা পরিষেবা ও পণ্যের পারস্পরিক সরবরাহকে উৎসাহিত করবে। এই সমস্ত ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে গভীর প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে।
প্রতিবন্ধকতাসমূহ
তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও অব্যাহতই রয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে অনুপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির অন্যতম হল ভারতে তৈরি তেজস-মার্ক ওয়ান যুদ্ধবিমানের জন্য জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) অ্যারোস্পেসের এফ-৪০৪ জিই-আইএন-২০ ইঞ্জিনের জরুরি সরবরাহ বা তেজসের মার্ক-টু-কে আরও ক্ষমতা প্রদান করার উদ্দেশ্যে আরও উন্নত জিই ইঞ্জিন এফ-৪১৪-এর জন্য ভারতের হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড-কে (হ্যাল) ৮০% প্রযুক্তি স্থানান্তর (টিওটি) করা। বিবৃতিতে এই প্রযুক্তি সরবরাহের কোনও উল্লেখ করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, মোদীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প (যৌথ বিবৃতিতে যেমনটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে) নয়াদিল্লির এফ-৩৫ লাইটনিং টু যুদ্ধবিমান কেনার সম্ভাবনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
এফ-৩৫-কে সমন্বিত করা সবচেয়ে কঠিন কাজ হবে। কারণ ভারতীয় বিমানবাহিনীতে (আইএএফ) অনেকগুলি স্থায়ী শূন্যস্থান রয়েছে, যা পূরণ করতেই বিমানবাহিনী রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বিমান শক্তির ক্ষেত্রে আইএএফ-এর ক্ষমতা আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক বিমান, পাল্টা বিমান ও স্থল আক্রমণ সংক্রান্ত অভিযানের জন্য প্রস্তুত। তবে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে সমন্বিতকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ক্ষমতার ঘাটতির মধ্যে রয়েছে হালকা ওজনের তেজস-মার্ক ওয়ানএ এবং মার্ক-টু জেটগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা, যা এখন প্রায় অব্যবহারযোগ্য মিগ-২১ স্কোয়াড্রনের প্রতিস্থাপন হিসাবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তেজসের জন্য জিই-র ইঞ্জিন সরবরাহ সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে কোনও উল্লেখ না থাকাও উদ্বেগের। কারণ আইএএফ ফাইটার স্কোয়াড্রনের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যা ৩০-এর নীচেও নেমে আসতে পারে।
বিশেষ করে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বিমান শক্তির ক্ষেত্রে আইএএফ-এর ক্ষমতা আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক বিমান, পাল্টা বিমান ও স্থল আক্রমণ সংক্রান্ত অভিযানের জন্য প্রস্তুত। তবে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে সমন্বিতকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১১৪টি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের জন্য মিডিয়াম মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (এমএমআরসিএ) প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করারও প্রচেষ্টা চলছে। ২০০০ সালে প্রথম শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০০৭ সালে একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার ফলে ২০১১-১২ সালে ডাসাউ-এর রাফালকে ১১৪টি যুদ্ধবিমান সরবরাহের জন্য একটি বিস্তৃত ও কঠোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। বিমান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর প্রযুক্তিগত মান পূরণের জন্য হ্যাল-এর ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করার পর ফরাসিরা টিওটি-র ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতি হ্রাস করে। নয়াদিল্লি জেটের খরচ বহন করতে বা ফ্রান্সের শর্ত মেনে নিতে প্রস্তুত না হওয়ায় আলোচনা বন্ধ হয়ে যায় এবং অবশেষে ভারত ও ফ্রান্সের সরকারের চুক্তির অংশ হিসেবে ৮.৮ বিলিয়ন ডলারে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ফলে কী হবে
এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্প প্রশাসনের এফ-৩৫ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রস্তাবটি নতুন নয়। কারণ (প্রয়াত) অ্যাশটন কার্টার - যিনি ওবামা প্রশাসনের অধীনে প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন - পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য একই রকম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে এটি যৌথ উৎপাদন বা টিওটি ছাড়াই সম্ভব হবে, এমনকি এফ-৩৫ জেটের ইউনিট খরচ বর্তমানে প্রতি বিমানের জন্য ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হলেও তা সম্ভব। এর বিপরীতে, ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার স্ক্যাল্প এয়ার টু গ্রাউন্ড ক্রুজ মিসাইল এবং ১৫০ কিলোমিটার পাল্লার মেটিওর মিসাইল-সহ একটি উল্লেখযোগ্য অস্ত্র প্যাকেজের পাশাপাশি ভারত প্রতি রাফাল ২৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এফ-৩৫ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রস্তাবটি নতুন নয়। কারণ (প্রয়াত) অ্যাশটন কার্টার - যিনি ওবামা প্রশাসনের অধীনে প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন - পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য একই রকম প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
আইএএফ-এ এফ-৩৫-কে সমন্বিত করা সম্ভবত কঠিন হবে। কারণ এটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের বিমান সরবরাহ করছে, যার ফলে ভারতের বিমানবাহিনীকে যথেষ্ট পরিমাণে অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বহন করতে হতে পারে এবং মার্কিন প্রশাসনের তরফে অত্যন্ত হস্তক্ষেপমূলক অন-সাইট বা ক্ষেত্রভিত্তিক পরিদর্শনও করতে হতে পারে।
এর পাশাপাশিই ফলস্বরূপ, আইএএফ ও ভারত সরকারকে এফ-৩৫-র ব্যবহারের উপর সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি বিবেচনা করতে হবে, যা এই বিমান বিক্রয়ের পাশাপাশি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। সংক্ষেপে বললে, মার্কিন-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা একটি স্থিতিশীল গতি অর্জন করলেও এমন কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা উভয় পক্ষকেই মোকাবিলা করতে হবে। মোদী-ট্রাম্প সম্পৃক্ততা এমন একটি সূচনা করেছে, যা এখন উভয় পক্ষেরই গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলিকে ত্বরান্বিত করার জন্য ব্যবহার করা উচিত।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.