Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 21, 2022 Updated 6 Days ago

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশগুলি দ্বিধাবিভক্ত হলেও তার ‘পাশ্চাত্য বিরোধী’ প্রচারে রাশিয়া কিউবা, নিকারাগুয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ব্রাজিলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

ইউক্রেন সঙ্কট এবং লাতিন আমেরিকার প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন সঙ্কট এবং লাতিন আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের লুহানসক এবং দনেৎসক অঞ্চলগুলিকে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে স্বীকৃতি দেন। এর দু’দিন পরে ইউক্রেন রুশবাহিনীর ‘অপ্ররোচিত’ সামরিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জরুরি অবস্থা জারি করে। রাজধানী কিভ-সহ সমগ্র ইউক্রেনের উপরে তিন দিক থেকে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক নিন্দা এবং অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মতো এক ডমিনো এফেক্ট বা শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়ার সূচনা করে। পশ্চিমি দেশগুলি রাশিয়াকে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এক বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা শুরু করলেও লাতিন আমেরিকার দেশগুলি তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কয়েকটি দেশ রুশ আক্রমণের নিন্দা করলেও অন্যান্য দেশ পরোক্ষে রাশিয়াকেই সমর্থন করছে।

১৯৬০ এবং ’৭০-এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়েও লাতিন আমেরিকার দেশগুলি ঘনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ইউক্রেন সঙ্কটের সময়েও অভিন্ন মতাদর্শ এবং স্বার্থের উপরে ভিত্তি করে একই ধরনের অংশীদারিত্বের ছবি উঠে আসছে।

রুশ আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মিশ্র প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট মহাদেশে — সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় থেকেই — সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে জোট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সফট পাওয়ার কৌশলকেই দর্শায়। ১৯৬০ এবং ’৭০-এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়েও লাতিন আমেরিকার দেশগুলি ঘনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল এবং ইউক্রেন সঙ্কটের সময়েও অভিন্ন মতাদর্শ এবং স্বার্থের উপরে ভিত্তি করে একই ধরনের অংশীদারিত্বের ছবি উঠে আসছে। পুতিন প্রচলিত সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা পরিত্যাগ করলেও উভয় পক্ষেরই একটি অভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ পশ্চিমি আধিপত্যের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। ফলে ইউক্রেনে রুশ সামরিক পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মিশ্র ও জটিল প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

লাতিন আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

তীব্র নিন্দা

আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং চিলির সরকার রুশ আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুক ক্ষমতার কর্তৃত্বপূর্ণ অপব্যবহারের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এক দিকে যখন আর্জেন্টিনার বিদেশমন্ত্রকের তরফে রাশিয়াকে সব রকম সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে, তখন অন্য দিকে চিলি ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল (ইউ এন এস সি) দ্বারা রাশিয়ার উপরে জারি করা কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছে। এর পাশাপাশি, কোস্তারিকা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ডমিনিকান রিপাবলিক এবং উরুগুয়ের মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলির শীর্ষ নেতারা রুশ আক্রমণের নিন্দা করে একটি যৌথ পত্রে স্বাক্ষর করেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর রাশিয়াকে ‘আক্রমণ না করা’র অনুরোধ জানান। মেক্সিকোর বিদেশনীতি এসত্রাদা ডকট্রিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার দরুন মেক্সিকোর পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা সম্ভব নয়। যদিও কিউবা, নিকারাগুয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ব্রাজিলের মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সমর্থন অর্জন করতে পেরেছে রাশিয়া।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া

কিউবান-রুশ জোটের সূচনা হয়েছিল ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময়ে মস্কো হাভানাকে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বার্ষিক ভর্তুকি প্রদান করে যা ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিউবার রাজনৈতিক প্রবণতা এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান সোভিয়েত ইন্টেলিজেন্সকে সমগ্র আমেরিকাব্যাপী সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রচারে সাহায্য করে। বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টালমাটাল অবস্থার জন্য দায়ী করেছে। তাদের মতে, আমেরিকা ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে’ এবং একই সঙ্গে তারা ‘গঠনমূলক এবং সম্মানজনক আলোচনা’র পক্ষে সওয়াল করেছে। এর পাশাপাশি ‘ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি’তে (ইউ এন জি এ) কিউবা রাশিয়াকে তিরস্কার করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত দিয়েছে।

এক দিকে যখন আর্জেন্টিনার বিদেশমন্ত্রকের তরফে রাশিয়াকে সব রকম সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে, তখন অন্য দিকে চিলি ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল (ইউ এন এস সি) দ্বারা রাশিয়ার উপরে জারি করা কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সমর্থন করেছে।

নিকারাগুয়া এবং রাশিয়ার সম্পর্ক সোভিয়েতের বছরগুলিতে তাদের জোটের উপরে ভিত্তি করেই চলে এসেছে এবং ১৯৮০-র দশকে সানদিনিস্তা আন্দোলনের সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সুবাদে এই সম্পর্ক মজবুত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উভয় দেশই একে অপরকে রাজনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা জুগিয়েছে। এমনকি নিকারাগুয়া তার সীমান্তের ভিতরে জলভাগে ২০০৮ এবং ২০১৫ সালে রুশ নৌবাহিনীর মহড়ায় অনুমতি দিয়েছিল। নিকারাগুয়ার সেনার আধুনিকীকরণে রাশিয়ার অবদান তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ মস্কোর তরফে সে দেশটিকে বি এম পি থ্রি ও বি টি আর ৮০ সাঁজোয়া গাড়ি, মিরাজ প্যাট্রল ক্রাফট, মোলিনা মিসাইল বোট, টি ৭২ ট্যাঙ্ক এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্য পরিবহণক্ষম বিমানের মতো একগুচ্ছ সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কটের প্রেক্ষিতে নিকারাগুয়া ইউ এন এইচ আর সি-তে ইউক্রেনের বিষয়ে এক মুক্ত বিতর্কের পক্ষে মত দিলেও রাশিয়াকে তিরস্কার করার প্রস্তাবে সে বিপক্ষে মতদান করেছে। নিকারাগুয়ার সরকার ইউক্রেনে বিপর্যয়ের জন্য নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনকে (ন্যাটো) দায়ী করেছে।

ইউক্রেনীয় সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলা প্রত্যাশামাফিক অবস্থান নিয়েছে। কারণ কারাকাস এই অঞ্চলে মস্কোর সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধুদের মধ্যে একটি। কার্যত ভেনেজুয়েলার প্রধান নিকোলাস মাদুরো পুতিনকে সম্পূর্ণ রূপে সমর্থন করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় সৈন্য ব্যর্থ হবে এবং রাশিয়া এই যুদ্ধের শেষে সংঘবদ্ধ ও বিজয়ী রূপে উত্থিত হবে। রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে জ্বালানি, সামরিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত সুদৃঢ় সম্পর্ক থাকার দরুণ ন্যাটো দেশগুলিকে দোষারোপ করার পক্ষে ভেনেজুয়েলার সরকারের অবস্থান সম্পূর্ণ প্রত্যাশামাফিক।

এক নিরপেক্ষ অবস্থান

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারো সংঘাতের প্রেক্ষিতে তাঁর ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান বজায় রেখেছেন। যদিও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের দিক থেকে এমনটা অনুমান করা হচ্ছে যে, সার এবং তেলের উপরে ব্রাজিলের নির্ভরতা ধাক্কা খেতে পারে যদি রাশিয়া ইউক্রেনে তার আগ্রাসী কাজকর্ম চালিয়ে যায়। হয়তো এই আশঙ্কাতেই ব্রাজিলীয় বিদেশমন্ত্রক আন্তর্জাতিক স্তরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। এ হেন মনোভাবকে প্রতিধ্বনিত করে ইউ এন-এ ব্রাজিলের প্রতিনিধি রোনাল্ডো কোস্তা জানান যে, ব্রাজিল ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং প্রাদেশিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করার তীব্র নিন্দা’ করছে। ব্রাজিল রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও মাথায় রাখবে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং ব্রিকস-এর মতো বহুপাক্ষিক ফোরামগুলিতে পারস্পরিক সহযোগিতাকে কেন্দ্রে রেখে নির্মিত সহযোগিতার ভিত্তিতে স্থাপিত। যদিও অতীতে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় রুশ কার্যকলাপের জন্য রাশিয়াকে তিরস্কৃত করার ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে ব্রাজিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে মতদানে বিরত ছিল।

লাতিন আমেরিকায় রুশ কৌশল

লাতিন আমেরিকায় রাশিয়ার সর্বাত্মক কৌশলের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০০০ সালের পর থেকেই সেখানে একগুচ্ছ সফট পলিসি (পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি) গ্রহণ করেছেন যেগুলি বর্তমানে রাশিয়াকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে একটি সম্ভাব্য সুবিধার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরিণতি কী হয়, তার উপর নির্ভর করে রাশিয়া অঞ্চলটিতে লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশের সাহায্য নিতে পারে।

মেক্সিকো-রাশিয়া সম্পর্ক তুলনামূলক ভাবে নিরপেক্ষ হলেও নাফটা খারিজ করা এবং মেক্সিকো সিটির উপরে কঠোর অনুপ্রবেশ নীতি চাপানোর আমেরিকার অবস্থান এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার সদ্ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া।

রাশিয়ার বিদেশনীতি পুতিনের বিশ্বব্যাপী প্রভাব অর্জন এবং পশ্চিমী দেশগুলিকে চ্যালেঞ্জ করার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই দর্শায়। রুশ মিডিয়া দ্বারা প্রচারিত বক্তব্যে এই আক্রমণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হয়েছে এবং রাশিয়ার আঞ্চলিক ব্যাপারে নাক গলানোর জন্য ওয়াশিংটনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাশিয়ার উপরে জারি করা কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে রুশ রুবলের মূল্য তলানিতে এসে ঠেকেছে। বর্তমানে ১২৪ রুবলের মূল্য এক মার্কিন ডলারের সমান। লাতিন আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার তরফে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক থাকার দরুণ বর্তমান সহায়তার জন্য ফেডারেশন দুর্বল রাজনৈতিক ভিত্তিযুক্ত দেশগুলির উপরে নজর রাখছে। ভেনেজুয়েলা, কিউবা এবং নিকারাগুয়ার মতো দেশগুলি আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার দরুন রাশিয়া এই সব দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার উপস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে। ২০১৮ সালে কিউবা, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, মেক্সিকো এবং ব্রাজিল রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল যা রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে দুর্বল করেছে। অঞ্চলটির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতার ফলে সৃষ্ট লাতিন আমেরিকার অস্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য এক সুবিধেজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। প্রধানত অস্ত্র বিক্রয়, তেলের জোগান এবং ব্যাপক রাজনৈতিক প্রচারকে কেন্দ্র করে রুশ সরকার অঞ্চলটিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে আপাত দৃষ্টিতে রাশিয়া অঞ্চলটি থেকে অর্থনৈতিক লাভ তুলছে বলে মনে হলেও বাস্তবে এ সব কিছুই লাতিন আমেরিকায় পুতিনের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করছে। রুশ সংস্থাগুলি বলিভিয়া, মেক্সিকো এবং ভেনেজুয়েলার তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালে রাশিয়া মোট শূকরের মাংসের ৯০% ব্রাজিল থেকে এবং মোট গো মাংসের ৫৫% ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে থেকে আমদানি করেছে, যা অঞ্চলটিতে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সুবিধের কথাই দর্শায়।

ক্রমাগত এককেন্দ্রাভিমুখিতা সত্ত্বেও রুশ প্রভাব অঞ্চলটির নেতাদের মধ্যে বিদ্যমান ‘পাশ্চাত্য বিরোধী’ কর্মসূচির সঙ্গে ঐক্য স্থাপনে সমর্থ হয়েছে। ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারো এবং ভেনেজুয়েলার প্রধান নিকোলাস মাদুরো ইউক্রেন সঙ্কটে নাক গলানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বলসোনারো এখনও পর্যন্ত ওয়াশিংটনের তরফে কোনও আমন্ত্রণ পাননি এবং এ কথা স্পষ্ট যে, বাইডেন প্রশাসন ব্রাজিলীয় নেতাকে এড়িয়ে যেতে চায়। মেক্সিকো-রাশিয়া সম্পর্ক তুলনামূলক ভাবে নিরপেক্ষ হলেও নাফটা খারিজ করা এবং মেক্সিকো সিটির উপরে কঠোর অনুপ্রবেশ নীতি চাপানোর মার্কিন অবস্থান এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার সদ্ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দরুন সে দেশের বাণিজ্যিক প্রসার সীমিত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে ইউক্রেনীয় সঙ্কট রাশিয়ার জন্য বেশ কয়েকটি লাতিন আমেরিকার দেশের সঙ্গে এক শক্তিশালী অক্ষ নির্মাণের পথ সহজতর করে তুলবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হওয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে (ই ইউ) শক্তিশালী করে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী আহ্বান রাশিয়ার উপরে বিকল্প রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও তার মজবুতিকরণের জন্য উল্লেখযোগ্য রকমের চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.