-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
অতিমারি বিপর্যস্ত অর্থনীতির পাশাপাশি ঐতিহাসিক ভাবে জমতে থাকা ঋণের বোঝার চাপে ভারাক্রান্ত একটি দেশে সরকারের ক্ষমতার বিপর্যয় দেশটির ভবিষ্যতের জন্য সুখকর ইঙ্গিত দেয় না।
‘গণতন্ত্রের অভাব এবং অর্থনীতির দুরবস্থা’: পাকিস্তানের সামনের পথ
পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবার আগেই ঘটলো পাকিস্তানে রাজনৈতিক পালাবদল। অনেক চেষ্টা করেও, এমনকী অসাংবিধানিক পথে গিয়েও অনাস্থা ভোট এড়াতে পারেন নি পাক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আর সেই অনাস্থা ভোটই তাঁর ক্ষমতাচ্যুতি ডেকে আনল। অতিমারি বিপর্যস্ত অর্থনীতির পাশাপাশি ঐতিহাসিক ভাবে জমতে থাকা ঋণের বোঝার চাপে ভারাক্রান্ত একটি দেশে সরকারের ক্ষমতার বিপর্যয় দেশটির ভবিষ্যতের জন্য সুখকর ইঙ্গিত দেয় না।
৮ মার্চ পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি পি পি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ — নওয়াজ (পি এম এল-এন) এবং অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে মিলিত ভাবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির (এম এন এ) প্রায় ১০০ জন সদস্য ন্যাশনাল সেক্রেটারিয়েটে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। ধারাবাহিক ভাবে নাগরিক-সামরিক সংঘাতে জড়িত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য ক্ষমতায় তার কার্যকাল পূরণ করা পাকিস্তানের প্রেক্ষিতে এক বড় ঘটনা। যদিও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পি টি আই) সরকার তার মেয়াদ পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল, সে আশা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হল না। সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের পাশাপাশি এই অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ার ফলে অবস্থা জটিলতর হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে যে অনৈতিক উপায়ে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন, তার জন্য তাঁকে আক্রমণ করা হয়। তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেবল বেড়েইছে। দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম বারের জন্য ২০১৯ সালে একটি ঋণাত্মক বৃদ্ধির মুখোমুখি হয়, দেশে প্রকৃত উপার্জনে তীব্র পতন এবং অর্থনীতিতে সামগ্রিক ধ্বস পরিলক্ষিত হয়। তারপর থেকে পাকিস্তান সরকারের অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবাদ এবং অবরোধ প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে, পাশাপাশি সরকারি নীতির সমালোচক ও বিরোধী আইন প্রণেতাদের খাটো করার মনোভাবের বিরুদ্ধেও মানুষ আওয়াজ তুলেছেন। সাম্প্রতিকতম গলাপ পারফরমেন্স সমীক্ষা অনুসারে দেখা গিয়েছে, মানুষের মনে উচ্চ বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেখা গিয়েছে যে, দেশের রাজস্বের গড় ১৬% আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হয়েছে এবং এই অর্থের অধিকাংশই বকেয়া ঋণের সুদ হিসেবে জমা করা হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যের উপর এই অত্যধিক নির্ভরতা এবং সংস্কারের শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে তাদের চতুর প্রচেষ্টার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আই এম এফ) গত মাসে বর্ধিত তহবিল সুবিধার অধীনে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি কিস্তি দেওয়ার পরে তথ্যটি সামনে উঠে এসেছিল। বিরোধীদের মতে, ইমরান খানের ‘বিরোধী শৈলীর’ রাজনীতি এবং কার্যকর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি গ্রহণের অক্ষমতা দেশে চলতে থাকা বিশৃঙ্খলার নেপথ্যে অন্যতম কারণ।
যদিও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পি টি আই) সরকার তার মেয়াদ পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল, সে আশা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হল না। সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের পাশাপাশি এই অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ার ফলে অবস্থা জটিলতর হয়ে ওঠে।
তাঁর রাশিয়া সফরের পর ২৮ ফেব্রুয়ারির এক বক্তৃতায় ইমরান খান ইউক্রেনের সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের আকাশছোঁয়া দামের প্রভাব প্রশমনের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় পদক্ষেপের ঘোষণা করেন। পেট্রোলিয়ামের দাম পি কে আর ১০ (পাকিস্তানি মুদ্রা) কমিয়ে এনে এবং কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় ঘোষণা করে, তিনি জুন মাসের পরবর্তী বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত দামের বৃদ্ধি আটকাতে চেয়েছিলেন। অর্থনীতিতে আস্থার সঞ্চার এবং বিরোধী স্বরের তীব্রতা রোধের লক্ষ্যে নগদ অর্থ বিলি এবং এককালীন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হলেও তা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অফলপ্রসূ বা বিরূপ প্রভাবকারী বলে চিহ্নিত হয়েছে এবং একই সঙ্গে বিরোধী পক্ষ এটিকে ইমরানের সরকার বাঁচানোর শেষ চেষ্টা বলে মনে করেছিল।
পি টি আই সকারের সমর্থন হারানো এবং ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে গুজব গত অক্টোবর মাস থেকে রাজনৈতিক পরিসরে ঘুরছিল। অনাস্থা প্রস্তাব সফল করার জন্য বিরোধী পক্ষকে ৩৪২ সদস্যের আইনসভায় ১৭২ সদস্যের সমর্থন অর্জন করা দরকার ছিল। প্রস্তাব পেশ করার দিন সাংবাদিক সম্মেলনের সময়ে পি পি পি-র বিলাওয়াল ভুট্টো ও আসিফ আলি জারদারি এবং পিএমএল-এন-এর শেহবাজ শরিফ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং পি টি আই-এর অসন্তুষ্ট সদস্যদের — ১৫৫ জন সদস্য এবং ২৩ জন অংশীদার সদস্য — মধ্যে ১৬৪ জন বিরোধী সদস্যের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করার ফলে আশাবাদী হয়ে পড়েন। উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান রক্ষা করতে চাওয়ায়, ৮ মার্চের পরের দিনগুলি মৌখিক আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ, সভা ও আলোচনা এবং আনুগত্য অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট এম এন এ-দের হুমকি এবং ঘুষ দেওয়ার মতো ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। বিরোধী দল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কায়সার এবং ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির বিরুদ্ধে তাঁদের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানকে অসম্মান করার জন্য, কার্যকর ভাবে তাঁদের অ্যাসেম্বলির কার্যক্রমের সভাপতিত্ব করা থেকে বিরত রাখা এবং নিয়মমাফিক দল থেকে পদত্যাগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
আইনসভায় রাজনৈতিক দলগুলির যা প্রতিনিধিত্ব ছিল:
পার্টি | আসন সংখ্যা |
পি টি আই | ১৫৫ |
পি এম এল- এন | ৮৪ |
পি পি পি | ৫৬ |
মুত্তাহিদা মজলিশ-এ-আলম | ১৫ |
মুত্তাহিদা কোয়ামি মুভমেন্ট (এম কিউ এম- পি) | ৭ |
পাকিস্তান মুসলিম লিগ- কিউ (পি এম এল- কিউ) | ৫ |
বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টি (বি এ পি) | ৫ |
বালুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি | ৪ |
ইন্ডিপেন্ডেন্ট (নির্দল) | ৪ |
গ্র্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স | ৩ |
আওয়ামি মুসলিম লিগ — পাকিস্তান | ১ |
আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টি | ১ |
জমহুরি ওয়াতন পার্টি | ১ |
পি টি আই-এর জোট: পি এম এল- কিউ, এম কিউ এম- পি, বি এ পি, জি ডি এ, জে ডব্লিউ পি এবং এ ডব্লিউ এল- পি | সূত্র: ডন, ৮ মার্চ, ২০২২
অভ্যন্তরীণ বৈধতার অভাবদুষ্ট সব নেতার মতোই ইমরান খানও অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বৈদেশিক ষড়যন্ত্রকে কারণ হিসেবে দর্শিয়ে বলেন, যাঁরা একটি স্বাধীন বৈদেশিক নীতি চান না, তাঁরাই এই প্রস্তাবকে সমর্থন করবেন। এই তীব্র বিশৃঙ্খলার মাঝেই জোটের মধ্যকার ফাটল প্রকাশ্যে আসে। আইনসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য জোটের অংশীদারদের দ্বারা পি টি আই-এর সদস্যদের ব্ল্যাকমেল করা এবং পঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের অসন্তোষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পি টি আই গত কয়েক সপ্তাহে সমর্থন অর্জনের জন্য তার সদস্যদের সঙ্গে ব্যাপক ভাবে দরাদরি চালিয়েছে। কিন্তু একদা ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আলিম খানের প্রায় ৩০ জন আইন প্রণেতা-সহ বিক্ষুব্ধ জাহাঙ্গির তারিন গ্রুপের সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন জোটের পক্ষে সুবিধার হয়নি। বিরোধীদের লম্ফঝম্ফ খারিজ করে দিয়ে ইমরান খান স্পষ্টতই সামরিক বাহিনীর তরফে পাওয়া সমর্থনের জন্য গর্ব প্রকাশ করেন এবং তাঁর মন্ত্রীদের কেনার জন্য বিরোধীদের প্রচেষ্টাকে উপহাস করেন। তীব্র চাপের মুখে এক জন শক্তিশালী নেতা হিসেবে আত্মপরিচিতি গড়ে তুলতে তিনি জোরালো বক্তৃতা এবং বিরোধী নেতাদের নির্দিষ্ট ভাবে ব্যঙ্গ করা ও তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ গ্রহণের মতো কার্যকলাপে রত হন।
একাধিক দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে চমকপ্রদ কোনও ব্যাপার নয়। তবে এ কথাও সত্যি যে, দলগুলির ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের জন্য তাদের পক্ষেও দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হয় না। নির্বাচনী যুদ্ধে যারই জয় হোক না কেন, আগামী দিন নগদ অর্থের অভাবে ধুঁকতে থাকা দেশটির জন্য প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ হবে।
বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত তাদের আত্মবিশ্বাসী মনোভাবকেই দর্শায়। কিন্তু এই অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হার এ বার সরকার পরিবর্তনের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই অবস্থায় বিরোধী দলের ঐক্য বজায় রাখা এবং দলগুলির বিচিত্র সদস্যদের একত্রে ধরে রাখার ক্ষমতা পরীক্ষার মুখে পড়েছে। একাধিক মতাদর্শ বিশিষ্ট নেতা-সহ একটি ঐকমত্যে পৌঁছনো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তাই এই অনাস্থা প্রস্তাব সফল হওয়া সত্ত্বেও তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে পাকিস্তানি রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করতে পারবে না। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনাই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার একমাত্র সম্ভাব্য উপায়। তবে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির পাশাপাশি দেশ থেকে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক বহিঃপ্রবাহও তীব্র আশঙ্কার কারণ। একটি নতুন সরকারের ক্ষমতায় বহাল হওয়া বিদ্যমান চুক্তি এবং প্রকল্পগুলিকেও প্রভাবিত করবে এবং আই এম এফ-এর সঙ্গে সহায়তা কর্মসূচির উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যা অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও পাকিস্তানের জন্য অপরিহার্য।
এই অনাস্থা প্রস্তাব রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্লেষকদের জন্য বিস্ময়কর ছিল না। কিন্তু পি টি আই সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া বিরোধীদের একটি সাংবিধানিক অধিকার হলেও একটি দুর্বল দেশের প্রেক্ষিতে এ হেন প্রস্তাবের ঝুঁকি বহু গুণ যার মধ্যে সম্ভাব্য ‘কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা’ও বর্তমান। একাধিক দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে চমকপ্রদ কোনও ব্যাপার নয়। তবে এ কথাও সত্যি যে, দলগুলির ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের জন্য তাদের পক্ষেও দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হয় না। নির্বাচনী যুদ্ধে যারই জয় হোক না কেন, আগামী দিন নগদ অর্থের অভাবে ধুঁকতে থাকা দেশটির জন্য প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Shivam Shekhawat is a Junior Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. Her research focuses primarily on India’s neighbourhood- particularly tracking the security, political and economic ...
Read More +