-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
যেহেতু চিন পশ্চিম এশিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাই নিশ্চিত করতে হবে যে সে মস্কো বা বেজিংয়ের অনুসারী হয়ে পড়বে না।
পশ্চিম এশিয়ায় চিনের ক্রমবর্ধমান পদচিহ্ন
সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে ইয়েমেনের জন্য বিশেষ মার্কিন দূত টিম লেন্ডারকিং বলেছেন যে পশ্চিম এশিয়ায় (মধ্যপ্রাচ্য) মার্কিন শক্তির মন্দা চলছে বলে একটি বর্ণন চালু থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোটেই এই অঞ্চলটিকে ত্যাগ করছে না। লেন্ডারকিং মার্কিন মিডিয়াকে বলেছেন , ‘‘(মার্কিন) প্রেসিডেন্ট এই অঞ্চলে যে প্রধান বার্তা নিয়ে এসেছেন তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোথাও চলে যাচ্ছে না।’’ যাই হোক, এই অঞ্চলের অনেকেই কিন্তু আজ বিশ্বাস করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে আগেই চেক আউট করে গিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জুলাই মাসে সৌদি আরব সফর একটি কঠিন সময়ে সংঘটিত হয়েছিল। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যকে উপরে ঠেলে দিচ্ছিল, এবং ইউরোপ শীতের মরসুম এসে পড়লেও এখনও একটি জটিল শক্তি পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় সৌদিকে একটি ‘পারিয়া’ বা সমাজচ্যুত রাষ্ট্র হিসাবে অভিহিত করেছিলেন, এবং সি আই এ যাঁকে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করেছে সেই সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই দেখা করেছিলেন। মার্কিন বিদেশ নীতির এই নৈতিক লাল রেখা একটি আশীর্বাদ হিসাবে এসেছে চিনের জন্য, যে দেশটি এই অঞ্চলে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিষয়ে মানবাধিকারের মতো কোনও ইস্যুকে গ্রাহ্যের মধ্যে না–এনে স্থিরভাবে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করেছে। এখানে অবশ্যই এই ঘটনা মাথায় রাখতে হবে যে বেজিং নিজেই তার জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলমানদের প্রতি আচরণের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জে সমালোচিত হয়েছে। যাই হোক, জিনজিয়াংয়ে চিনের দমনপীড়ন বিষয়ে ইসলামিক বিশ্ব মূলত নীরব ছিল, যা বেজিংকে একটি লেনদেন কাঠামোর ভিত্তিতে কূটনীতি পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সমস্ত পরিবর্তনশীলতার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এখন নিজেকে এমনভাবে চালিত করতে হবে যাতে এটুকু নিশ্চিত হয় যে তাকে মস্কো বা বেজিংকে অনুসরণ করতে হবে না।
জিনজিয়াংয়ে চিনের দমনপীড়ন বিষয়ে ইসলামিক বিশ্ব মূলত নীরব ছিল, যা বেজিংকে একটি লেনদেন কাঠামোর ভিত্তিতে কূটনীতি পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউ এ ই) ক্রাউন প্রিন্সের কাছে দেশটিতে হুথি জঙ্গিদের হামলার পরে হোয়াইট হাউসের সাদামাটা প্রতিক্রিয়ার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা গেছে। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হুথিরা ড্রোন ব্যবহারের মতো বিভিন্ন অপারেশনাল পারদর্শিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছে। মার্কিন বিদেশ দফতরের সিনিয়র মধ্যপ্রাচ্য কর্মকর্তা বারবারা লিফ এই বিষয়টি জোর দিয়ে বলেছেন যে এই অঞ্চলে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা যে ড্রোন ব্যবহার করছে তা চিন থেকে আসছে, এবং এটি পরিহাসের বিষয় যে বেজিং এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছুই করছে না। আবার একই সঙ্গে চিন এখন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিক্রি করছে সেই আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে যারা ওই মিলিশিয়াগুলোকে দমনের চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে ২০২০ সালে কোভিড–১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং–এর চিনের বাইরে প্রথম বিদেশ সফর সৌদি আরবে হতে চলেছে, এবং বাইডেনকে দেওয়া প্রাণহীন সংবর্ধনার বিপরীতে সেই সময় শি–কে রিয়াধে বিরাটভাবে স্বাগত জানানো হবে। চিনের উপস্থিতি আপাতত তুলনামূলকভাবে সামান্য হলেও ওয়াশিংটন ডিসি–তে, এবং তার বাইরেও, ধড়ফড়ানি সৃষ্টি করছে। সম্ভাব্য সামরিক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এমন একটি সমুদ্রবন্দর চিন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তৈরি করতে চলেছে বলে সাম্প্রতিক খবরের পর আবু ধাবিতে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আজ আরব বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত। তারা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অংশীদারও বটে। অথচ তারাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চিনকে ব্যবহার করছে, এবং বাইডেন ও তাঁর পূর্বসূরিদের একতরফাভাবে কাজ করার পরিবর্তে আরও বেশি ন্যায়সঙ্গত অংশীদারিত্ব দিতে বাধ্য করেছে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব এমকিউ–৯ ‘রিপার’ ড্রোন সরবরাহ করতে অস্বীকার করার পরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি তার সামরিক বাহিনীর জন্য চিনা উইং লুং ড্রোন কিনেছিল। অতি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে আবু ধাবি তার সামরিক বাহিনীর ক্রয়ে সরবরাহকারীদের বৈচিত্র্য আনার জন্য চিনা এল–১৫ প্রশিক্ষক জেট কিনতে প্রস্তুত। উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্য অনেক দেশও এখন তাদের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পরিকাঠামো তৈরি করতে হুয়াওয়ের মতো বিতর্কিত চিনা টেকনোলজি জায়ান্ট–এর উপর নির্ভর করছে, এবং তার পরিণতিতে ভবিষ্যতে চিনের হাতে ডেটা ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আজ আরব বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত। তারা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অংশীদারও বটে। অথচ তারাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার দর বাড়ানোর জন্য চিনকে ব্যবহার করছে, এবং বাইডেন ও তাঁর পূর্বসূরিদের একতরফাভাবে কাজ করার পরিবর্তে আরও বেশি ন্যায়সঙ্গত অংশীদারিত্ব দিতে বাধ্য করেছে।
যাই হোক, বেজিং একটি রাজনৈতিকভাবে অস্থির ভূখণ্ডে তার প্রভাব তৈরি করতে সতর্কভাবে এগোচ্ছে, সাবধানে আঞ্চলিক চ্যুতিরেখার মধ্যে কাজ করেছে এবং স্থানীয় ভূরাজনীতিতে জড়িত হওয়া থেকে দূরে সরে থেকেছে। চিন মার্কিন হস্তক্ষেপবাদ থেকে শিক্ষা নিয়েছে, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে প্রকাশ্য সামরিক সহযোগিতা থেকে সরে থেকে মূলত পর্দার আড়ালে কাজ করার পথ বেছে নিয়েছে। আজকের পশ্চিম এশিয়ায় চিনের সমস্ত প্রয়াস তার নিজস্ব অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০২১ সালে চিন এবং ইরান ২৫ বছরের এমন সহযোগিতা চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল যার মূল্য, কিছু অনুমান অনুসারে, প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চিন ১৯৮০–র দশক থেকে ইরানের সঙ্গে তার সহযোগিতা বাড়াতে চেয়েছে, যদিও তখন আমেরিকা বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তি হিসাবে রাজত্ব করেছিল। আজ সমীকরণ অনেক ভিন্ন। চিনের কাছে ইরানের ভৌগোলিক ক্ষেত্র তার বিস্তৃত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গেই এর প্রাকৃতিক সম্পদ, যা বর্তমানে রাষ্ট্রটির পারমাণবিক কর্মসূচির উপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার কারণে হিমায়িত, ভবিষ্যতে তার ব্যবহার একচেটিয়াভাবে চিনের আয়ত্বে এসে যেতে পারে। এদিকে, উপসাগরীয় অঞ্চলের মতোই ইরানের জন্যও পশ্চিমের সঙ্গে লেনদেনের একটি বিকল্প হয়ে উঠেছে চিন। ফলে পশ্চিমের কাছে শুধু এশিয়ায় নয়, বিশ্বব্যাপী চিনের উত্থান উল্লেখযোগ্যভাবে অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। ইরান, চিন ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা এখন সাংহাই কোঅপারেশন অরগানাইজেশনের মতো ফোরামে প্রতিফলিত হচ্ছে, এবং একে পশ্চিমের নীতি, মতাদর্শ ও ভূরাজনীতির একটি ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ইজরায়েল এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক মিত্র হওয়া সত্ত্বেও সম্ভাব্য বাজার এবং বিনিয়োগের জন্য চিনাদের কাছেও দরবার করেছে। বেজিংয়ের জন্য ইজরায়েলি প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বিশেষ করে প্রতিরক্ষায়, তার নিজস্ব প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে ইজরায়েলি প্রযুক্তিতে চিনা প্রভাব ঠেকাতে কাজ করেছে ১৯৯০–এর দশক থেকে, যখন বেজিং তেল আভিভের মাধ্যমে তার প্রথম বায়ুবাহিত প্রারম্ভিক সতর্কতা (এ ই ডবলিউ) ব্যবস্থা পেতে চেয়েছিল। ২০০২ সালে মার্কিন চাপে শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি বাতিল করা হয়। অনেক বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আবার ইজরায়েলকে তার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চিনা বিনিয়োগ এড়ানোর জন্য চাপ দিতে দ্রুত এগিয়ে এসেছে।
চিনের কাছে ইরানের ভৌগোলিক ক্ষেত্র তার বিস্তৃত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গেই এর প্রাকৃতিক সম্পদ, যা বর্তমানে রাষ্ট্রটির পারমাণবিক কর্মসূচির উপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার কারণে হিমায়িত, ভবিষ্যতে তার ব্যবহার একচেটিয়াভাবে চিনের আয়ত্বে এসে যেতে পারে।
চিনের উত্থান, এবং এই প্রবণতা হ্রাস করার একটি দৃষ্টিভঙ্গি নানা অংশীদারি, জোট ও চুক্তির নানা বর্ণের খসড়া তৈরি করছে। ইন্দো–প্যাসিফিকের ‘কোয়াড’ থেকে পশ্চিম এশিয়ায় আই২ইউ২ গ্রুপিং (ভারত–ইজরায়েল–ইউ এস–ইউ এ ই) পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষেত্রে ভারত এই চিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও চালক হয়ে উঠছে, এবং দ্বিপাক্ষিক স্তরে নয়াদিল্লি এখন বেজিংয়ের চেয়ে এই অঞ্চলের সঙ্গে অনেক বেশি সামরিক মহড়া পরিচালনা করে। পশ্চিম এশিয়ার জন্য ভারতের প্রাণবন্ত বৈদেশিক নীতির নকশায় সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে চিন এখন অতিরিক্ত একটি কারণ।
মতামত লেখকের নিজস্ব।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +