Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 21, 2022 Updated 16 Days ago

আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিবর্তে সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচি নেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে।

চিনের এলিট হংকং নিয়ে কর্মপদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে
চিনের এলিট হংকং নিয়ে কর্মপদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে

মার্চ মাস চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন তারা দেখানোর চেষ্টা করে যে চিন একটি কার্যকর গণতন্ত্র। এর আইন প্রণয়ন সংস্থাগুলির—চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স ও ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি)‌—অধিবেশন বসলে বোঝা যায় সিসিপি–র অগ্রাধিকারগুলি কী কী৷ এই বছরের ‘দুই অধিবেশন’–এ সিসিপি–র শাসক এলিট সম্মিলিত হয়েছিলেন ইউরোপে সংঘাতের মধ্যে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী স্লাভিক জাতির দেশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কঠোর শক্তির ব্যবহারকে ন্যায্যতা দিয়েছেন এই বলে যে ঐতিহাসিক ভাবে রাশিয়ার অন্তর্গত অঞ্চলগুলিতে পশ্চিমীদের হুমকি মোকাবিলা করার জন্য তাঁকে এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে। পুতিন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসানের প্রেক্ষাপটে যে সমস্যাগুলি তৈরি হয়েছিল, তিনি তার সমাধান করছেন। ইউরেশিয়ায় ভ্রাতৃপ্রতিম শাসনের পতন ছিল সিসিপি–র জন্য জেগে ওঠার আহ্বান, এবং একই ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এটি ঘটনাবলির পিছনের কারণগুলি অনুসন্ধান করেছিল।

সিসিপি তার নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ভেঙে দিয়েছিল এবং বিদেশী বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যার ফলে অনেকে শহরগুলিতে চলে যাওয়ার পরে দেশে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের অনুপাত হ্রাস পেয়েছে, কারণ এই শহরগুলি শিল্পক্ষেত্রে চাকরির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

প্রথমত, কেন্দ্রীয় ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অরক্ষিত বিন্দু বলে ধরা হয়েছিল বলেই চিন অর্থনৈতিক উদারীকরণ নিয়ে এসেছিল। সিসিপি তার নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ভেঙে দিয়েছিল এবং বিদেশী বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যার ফলে অনেকে শহরগুলিতে চলে যাওয়ার পরে দেশে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের অনুপাত হ্রাস পেয়েছে, কারণ এই শহরগুলি শিল্পক্ষেত্রে চাকরির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সিসিপি চাতুর্যের সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কারও শুরু করে। পশ্চিমীরা বহুদলীয় নির্বাচন এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের জন্য কষ্টিপাথর হিসেবে দেখলেও সিসিপি মনে করে যে তারা একদলীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেও প্রশাসনিক কাজকর্মের সংস্কার করে গণতন্ত্রীকরণের লাভগুলিকে কাজে লাগাতে পারে, বিশেষ করে কর্মীদের জবাবদিহির ব্যবস্থা ও মেয়াদের সীমা প্রচলনের মাধ্যমে।

দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সময় সবচেয়ে বড় দেশ ছিল;‌ পৃথিবীর ভূমিপৃষ্ঠের প্রায় এক-সপ্তমাংশ নিয়ে দেশটি তৈরি হয়েছিল, এবং তার ১৫টি প্রজাতন্ত্র বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করত। অভ্যন্তরীণ ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমস্যা শুরু হয়েছিল স্যাটেলাইট রাজ্যগুলি ক্রেমলিনের কক্ষপথ থেকে সরে যেতে শুরু করার পরে। দূরবর্তী সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলিতে জাতীয়তাবাদী মনোভাব শিকড় গাড়তে শুরু করে। এই ঘটনা গণপ্রজাতান্ত্রিক চিনের বর্তমান পরিস্থিতির অনুরূপ। সেখানে ৫৬টি জাতিগত গোষ্ঠী বাস করে, এবং এই কারণেই চিন তার পরিধি, বিশেষ করে হংকং-এ নজর রাখার জন্য প্রয়াসী হয়। এই ভাবে একটি দক্ষ আমলাতন্ত্র ও সমৃদ্ধি আরও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি হয়ে উঠেছিল ১৯৮৯ সালের তিয়ানানমেন স্কোয়ারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে সিসিপি–র মন্ত্র।

২০২০ সালে বেজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করে, যা সিসিপি–র ধারণা অনুযায়ী বিচ্ছিন্নতা, অন্তর্ঘাত, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশী শক্তির সঙ্গে যোগসাজস হিসেবে সংজ্ঞায়িত কাজগুলিকে নিষিদ্ধ করে।

এই ক্ষেত্রে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে সিসিপি–র অভিজাতদের আলোচনায় আবারও হংকং-এর বিষয়টি উঠে এসেছে। ব্রিটেন চিনের কাছে এই নগর-রাষ্ট্র হস্তান্তরের পর এর চিনা জাতিসত্তার মানুষ অনেক বিষয়ে বেজিংয়ের নির্দেশাবলি প্রতিহত করেছে। সিসিপি অনুমান করেছিল বিশৃঙ্খলার ঘটনাগুলি ছিল পশ্চিমের হাতের কাজ, এবং অস্থির অঞ্চলের মানুষের মোকাবিলা করার জন্য চিন ‘‌লফেয়ার’ বা আইন ব্যবহার করার পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। ‘লফেয়ার’‌ বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আইনি প্রতিকার ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার। ২০২০ সালে বেজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করে, যা সিসিপি–র ধারণা অনুযায়ী বিচ্ছিন্নতা, অন্তর্ঘাত, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশী শক্তির সঙ্গে যোগসাজস হিসেবে সংজ্ঞায়িত কাজগুলিকে নিষিদ্ধ করে। গত বছর ‘দুটি অধিবেশন’ চলাকালীন বেজিং শুধু ‘দেশপ্রেমিক’‌রাই যাতে রাষ্ট্রীয় অফিসে প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটায়। পরিবর্তনগুলি হংকংয়ের আইন পরিষদে সরাসরি নির্বাচিত বিধায়কদের সংখ্যা হ্রাস করেছে, এবং প্রার্থীদের জন্য যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চালু করেছে।

লাঠির পর এবার গাজর 

সিসিপি সমৃদ্ধি ছড়িয়ে দেওয়ার এবং জন–প্রশাসনের একটি দক্ষ ব্যবস্থা তৈরি করার যে প্রয়াস আগে ব্যবহার করেছে এবং পরীক্ষা করে দেখেছে, সেগুলিই আবার ব্যবহার করছে। তাঁর বার্ষিক রিপোর্টে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন লি ঝানশু, যিনি সিসিপি–র পদক্রমে ৩ নম্বর এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মিত্র, হংকংয়ের শাসন প্রক্রিয়া ‘‌উন্নত’‌ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মানে হল বেজিংয়ের চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে হংকংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর নজর রাখা ও রাজনৈতিক প্রতিভা লালন করার  বিষয়গুলি সম্পর্কে সিসিপি উদ্বিগ্ন। সিসিপি দেখেছে যে কোভিড–১৯–এর প্রাদুর্ভাবের ব্যবস্থাপনা মূল ভূখণ্ডে ভাল ভাবে করা হয়েছিল, কিন্তু বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটি সংক্রমণের একটি নতুন তরঙ্গের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে ভাইরাস থেকে নগর-রাজ্যের মৃত্যুর হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, কারণ অনেক বয়স্ক বাসিন্দা টিকা পাননি।  একটি বেসামাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ছবি এবং বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার হিড়িক সিসিপি–র ভাবমূর্তি খারাপ করে, বিশেষত যখন তারা ‘‌পশ্চিমের চেয়ে চিন বেশি ভাল ভাবে ভাইরাসটির মোকাবিলা করেছে’‌ বলে প্রচার করছে। করোনাভাইরাসের জন্য পজিটিভ শিশুদের প্রতি হংকং প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। একটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা ১১ মাস বয়সী একটি শিশুকে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিল। এই নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ হয়েছিল। হংকং-এর একটি রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিও বেজিংকে স্থানীয় প্রশাসনকে উপেক্ষা করে পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে। দ্বীপটি যখন পঞ্চম তরঙ্গের মধ্যে পড়েছে সেই সময় অতিমারি–রোধ নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে নগর-রাজ্যের প্রতিনিধি উইটম্যান হাং ওয়াই-ম্যানের জন্মদিন উদযাপনও বেশ অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। উইটম্যান এবং ১৭০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীকে পৃথকীকরণ করা হয়েছিল, এবং সেখানে উপস্থিত ১৩ জন কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। হংকংয়ের সেক্রেটারি ফর হোম অ্যাফেয়ার্স ক্যাসপার সুই এই কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন। এসব ঘটনা স্থানীয় শাসনের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর সংশয়ের ছায়া ফেলেছে।

একটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা ১১ মাস বয়সী একটি শিশুকে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিল। এই নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ হয়েছিল।

হংকংয়ে বিক্ষোভের অন্যতম কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইকনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০২১ সালে জীবনযাত্রার ব্যয়ের উপর বার্ষিক প্রতিবেদনে, যেখানে শহরগুলির র‌্যাঙ্ক দেওয়া হয়, হংকংকে পঞ্চম স্থানে রাখা হয়েছিল। বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটি এই প্রকাশনার ২০২০ সালের সমীক্ষায় প্রথম স্থানে ছিল। একটি আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের উত্থান ও তার ফলস্বরূপ প্রবাসীদের আগমন অত্যাবশ্যক সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং তা স্থানীয়দের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে একটি পরিবারের বার্ষিক গড় আয়ের ২০ গুণ বেশি (গ্রাফিক দেখুন)।

Chinas Elite Signals A Course Correction On Hong Kong
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

হংকং-এর আদমশুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ১০০,০০০ হংকং ডলারের (১২,৭৯৪ মার্কিন ডলার)‌ থেকে বেশি মাসিক টেক-হোম বেতনের উচ্চ-আয়ের পরিবারের সংখ্যা ১৯০,০০০;‌ আর ৪,০০০ হংকং ডলারের (৫১২ মার্কিন ডলার) বা তার কম আয়ের পরিবারের সংখ্যা ২২০,০০০।

সিসিপি জানে যে এই বৈষম্য উদ্বেগের কারণ। তাঁর ২০২১ নীতিসংক্রান্ত ভাষণে চিফ এগজিকিউটিভ ক্যারি লাম বলেছিলেন যে প্রশাসন প্লট দেখে রেখেছে এবং আগামী ১০ বছরে ৩৩০,০০০ পাবলিক হাউজিং ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।

অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য সিসিপি-এর সর্বরোগহর দাওয়াই হল মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বৃহত্তর একীকরণে উৎসাহিত করা। হংকং প্রশাসন তরুণ উদ্যোগপতিদের গ্রেটার বে অঞ্চলে নতুন প্রকল্প তৈরি করতে উৎসাহিত করছে। এটি একটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার লক্ষ্য হংকং ও মূল ভূখণ্ডের অন্যান্য নয়টি দক্ষিণের শহরকে একটি উদ্ভাবনী কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা। সিসিপি আশা করে যে সমৃদ্ধির সম্ভাবনা দ্বীপের পরবর্তী প্রজন্মকে গণতন্ত্রের ধারণা থেকে মুক্ত করবে। সিসিপি–র র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তি চিনের প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং দুটি অধিবেশনে তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এটি ২০২০ সালের লি–র বক্তৃতা থেকে পুরোপুরি অন্য রকম, কারণ তখন তিনি জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন।

উপসংহার

উপসংহারে বলা যায়, কোভিড-১৯ ও সংঘাতের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। হংকং-এ ওমিক্রন-এর ক্রমবর্ধমান কেস–এর অর্থ হল যে অনেক অঞ্চল সীমানায় নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনেছে, এবং তা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। তা ছাড়া সিসিপি–ও এখন এই বিশ্বাসে ভরপুর যে তার আইন–কৌশলে হংকংয়ে কিছুটা হলেও ঝুঁকি কমে গিয়েছে, এবং এখন সামাজিক-অর্থনৈতিক দিকগুলিতে নজর দেওয়ার সময়। এই সব কারণেই সিসিপি হংকংয়ের ক্ষেত্রে তার কর্মপদ্ধতি পরিবর্তনের কথা ভেবেছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.