চিন এখনও ভারত-চিন সীমান্তে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনেনি
২০২০ সালের আগস্টের শেষের দিকে ভারতের দখল করা কৈলাস রেঞ্জ থেকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ভারত ও চিনের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের এক বছর পরে, এবং চিনের প্যাংগং সো-তে ‘ফিঙ্গার্স’ অঞ্চল দখল করার মধ্যে দিয়ে, সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের পথ থেকে বিচ্যুতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ২০২০ সালে মে মাসে পূর্ব লাদাখে ভারতের দাবি করা অঞ্চল চিনের দখল করা দিয়ে এই সঙ্কট শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে, ২০২১ সালের আগস্টের প্রথম দিকে, ভারত ও চিন উভয়েই গোগরা থেকে পুরোপুরি সরে আসে। ২০২০ সালের মে মাসে চিন যে পাঁচটি অঞ্চল দখল করেছিল তার মধ্যে ফিঙ্গার্স ও গোগরা হল সেই দুটি এলাকা যেখান থেকে উভয় পক্ষই কিছুটা দূরে সরে গেছে। ডেপসাং, ডেমচোক ও হট স্প্রিংস এখনও চিনের দখলে রয়েছে। চিনাদের দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবশিষ্ট অঞ্চলগুলিকে খালি করাতে ভারতের অক্ষমতার কারণের কিছু বিশিষ্ট বিশ্লেষণে মোদী সরকারের চিন নীতির ব্যর্থতার উপরেই আলোকপাত করা হয়েছে। সাধারণ ভাবে এটি সঠিক ও ন্যায্য। পাং সো এবং গোগরা থেকে চিনের সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার পরে বাকি অঞ্চলগুলি থেকে চিনাদের পিছু হঠানোর ক্ষেত্রে ভারত আর কোনও সাফল্য পায়নি। চিন তখন থেকে ডেপসাং ও ডেমচোকের বিপরীতে যথেষ্ট সামরিক শক্তি জড়ো করেছে এবং পরিকাঠামো তৈরি করেছে। বলপ্রয়োগ করে সেখান থেকে তাদের পিছু হঠানো এখন প্রায় অসম্ভব।
পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি) যে ভারতের দাবি করা অঞ্চল দখল করে রেখেছে, তার কোনও দায় নিতে না-পারা বা দায় অস্বীকার করা, মোদী সরকারের একটি স্পষ্ট ত্রুটি। এই বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে সরকার নিজেকে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীকে (আইএ) জবাবদিহি করার দায় থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। অনুপ্রবেশের সময় এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেদখল হয়ে যাওয়ার সময় যে ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’–র ১৪ কোর–এর লাদাখ, কার্গিল ও সিয়াচেনে অপারেশনাল কর্তৃত্ব ছিল, তার কোর কমান্ডার ও তাঁর ডেপুটিকে তাঁদের পদ থেকে সরানো উচিত ছিল বা কমান্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত ছিল। তা করা হয়নি। মন্ত্রিসভার কোনও শীর্ষ অসামরিক কর্তাও পদ হারাননি। প্রকৃতপক্ষে ভারত চিনের নিয়ন্ত্রণে থাকা আকসাই চিন দখল করবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি আংশিক ভাবে ভারতের বর্তমান অবস্থা কেমন তা বুঝিয়ে দেয়। নয়াদিল্লি কৈলাস রেঞ্জের উচ্চ এলাকা দখল করে চিনাদের বিরুদ্ধে কৌশলগত ভাবে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই একক দৃষ্টান্তটি বাদ দিলে, সরকার প্রাথমিক ভাবে বিষয়টিকে কূটনৈতিক সঙ্কট হিসেবে দেখেছে, কৌশলগত প্রতি–আক্রমণের পথ পরিত্যাগ করেছে, এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) চিন-ভারত সীমান্ত বরাবর গড়ে তোলা বিশাল সামরিক বাহিনী ও পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক সামরিক প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভারতের বিদেশনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ হল সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে ঐকমত্য।
অন্যদিকে, ভারতের বিদেশনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ হল সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে ঐকমত্য। যদিও ভারতের চিন নীতির প্রয়োগের বিষয়ে মোদী সরকারের অনেক কিছু জবাবদিহি করার আছে, মোদী সরকারের সমালোচকরা তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে ঐকমত্য ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্যাংগং সো-র দক্ষিণ তীরে ভারতীয় বাহিনীর রেজাং লা ও রেচিন লা দখল তাকে কৌশলগত সুবিধা দিয়েছে। এই অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল টিবেটান স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (এসএফএফ)। সমালোচকরা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লাভের জন্য এই মিশনে এসএফএফ-কে ব্যবহার করা হয়েছে বলে সরকারের সমালোচনা করেছেন। মোদী সরকার এসএফএফ-কে ব্যবহার করে যে পরিমাণ সুবিধা পেয়েছে তা বাদ দিলেও, এটা কিন্তু স্পষ্ট নয় যে কেন সমালোচকেরা মোদী সরকারের এই বিশেষ কাজটির উপর এত জোর দিয়েছিলেন এবং সমালোচনার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। কারণ এই সমালোচকেরাই কৌশলগত উত্তেজনা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিলেন, যেখানে চিন এলএসি বরাবর হিসেব মেটানোর জন্য ভারতীয় অঞ্চল আক্রমণ করে দখল করে নিলে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকত ভারত। বাস্তবে গত ফেব্রুয়ারিতে মোদী সরকার যা নিশ্চিত করেছিল তা হল এই হিসেব মেটানো।
প্রকৃতপক্ষে, এখানেই মোদী সরকারের সমালোচকেরা ভুল করেছেন। এলএসি বরাবর সরকারের কৌশলগত উত্তেজনা বৃদ্ধির সমালোচনা কোনও নতুন ঘটনা নয়। ২০১৯–এর ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) পরিবহণকারী যান–এর উপর এক সন্ত্রাসবাদীর আত্মঘাতী হামলার পরে পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদ সন্ত্রাসবাদী শিবিরের বিরুদ্ধে মোদী পাল্টা বিমান হানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এবং তখনও তা স্পষ্ট হয়েছিল। বিমান শক্তির ব্যবহারের সুপারিশও এসেছিল সাধারণ ভাবে সেই বিশেষজ্ঞদের থেকে, যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের (এনএসএবি) সদস্য, এবং পূর্ববর্তী কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারের সময়েও পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব দিতে তাঁরা একই সুপারিশ করেছিলেন৷
সংক্ষেপে, মোদী সরকারকে পুরোপুরি জবাবদিহির পরীক্ষার সামনে দাঁড়াতে হয়নি। আবার সরকারের সমালোচকেরাও—তা তাঁরা বিরোধী দলের হোন বা বিস্তৃত বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়ের হোন—বিদেশনীতি বা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়, বিশেষ করে সেনা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের প্রশ্নে নিজেদের সমালোচনামুক্ত করতে পারেননি। মোদী সরকার চিন ও পাকিস্তানের যৌথ হুমকির দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে বলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক সমালোচনার কিছুটা বৈধতা থাকতে পারে। কারণ ডেপসাং চিনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় সিয়াচেন হিমবাহের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে ভারত-চিন যুদ্ধের মধ্যে যদি পাকিস্তানের ময়দানে নামার পরিপ্রেক্ষিত মাথায় রাখা হয়। তবে, এটাও ঘটনা যে বালাকোট বা কৈলাস রেঞ্জে সামরিক পদক্ষেপের সময় সরকারকে সমর্থন করতে বিরোধী নেতার অস্বীকৃতিও ঐকমত্যকে ক্ষুণ্ণ করেছে। তিনিও কিন্তু সরকারের সমালোচনা করেছেন একই ভাবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লাভের জন্য। বিশেষ করে বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে দায়বদ্ধতা ও ঐকমত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তা বজায় রাখার প্রশ্নে রাজনৈতিক বিরোধীদেরও সরকারের মতোই ভূমিকা আছে। কাজেই মোদী সরকার যেমন চিন ও পাকিস্তানের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ পথ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, সরকারের বিদেশনীতির অভ্যন্তরীণ সমালোচকেরাও কিন্তু তার চেয়ে ভাল কিছু করে উঠতে পারেননি।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.