-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এমসিসি–র সামনে থাকা একাধিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে নেপাল সরকার অবশেষে দীর্ঘ বিলম্বিত চুক্তিটি অনুমোদন করতে পারল।
মার্কিন মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন ও নেপাল
২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নেপালের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি)–কে অনুমোদন দিয়েছে, যার ফলে আগামী পাঁচ বছরে নেপালে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মার্কিন সরকারের কাছ থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নেপালের পার্লামেন্টে এমসিসি পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু এই ইস্যুতে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে দীর্ঘদিন এটি পাস করা যায়নি। তবে ২৭ ফেব্রুয়ারি নেপালি কংগ্রেস, লোকতান্ত্রিক সমাজবাদী পার্টি (এলএসপি), জনতা সমাজবাদী পার্টি (জেএসপি), কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল-মাওইস্ট সেন্টার (সিপিএন-এমসি), কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল-ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট (সিপিএন-ইউএস), এবং নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি-ইউনিফায়েড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (সিপিএন-ইউএমএল) সহ প্রায় সব দল এমসিসি–র পক্ষে ভোট দিয়েছে, তা তারা সরকার পক্ষের হোক বা বিরোধী পক্ষের।
এমসিসি এমন সময়ে পার্লামেন্টে অনুমোদিত হল যখন পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে এমসিসি–র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেশ দৃশ্যমান ছিল। এমসিসি–র বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এমসিসি আদৌ অনুমোদিত হবে কি না তা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বোঝা কঠিন ছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এটি প্রায় একটি অলৌকিক ঘটনা হিসেবে দেখা দেয় যখন এমসিসি সফল ভাবে অনুমোদিত হয়, এবং তাও দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতায়।
এমসিসি এমন সময়ে পার্লামেন্টে অনুমোদিত হল যখন পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে এমসিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেশ দৃশ্যমান ছিল।
শেষ ঘণ্টায় এমসিসি–র পক্ষে যা কাজ করেছিল তা হল ‘বারো দফা ব্যাখ্যামূলক ঘোষণা’। এটি এমসিসি অনুমোদনের সময়েই পার্লামেন্টে গৃহীত হয়েছিল। এই ঘোষণাটি এমসিসি–র বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছিল তাদের শান্ত করতে সাহায্য করেছিল, কারণ এতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল যে এমসিসি মার্কিন এশিয়া-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ নয়, বা নেপালের সংবিধানের ঊর্ধ্বেও নয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ১২ দফা ব্যাখ্যামূলক ঘোষণাটি অর্থবহ নয়, কারণ এমসিসি এমন কোনও কিছু স্বীকার করে না যার উল্লেখ এমসিসি–র মধ্যে নেই। তবে নেপালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত র্যান্ডি বেরি পরে বলেছেন আমেরিকানরা ইতিমধ্যেই এমসিসি সম্পর্কে তাদের ব্যাখ্যায় যা বলেছে, ১২ দফা ব্যাখ্যামূলক ঘোষণাটি তার অতিরিক্ত কিছু নয়।
এমসিসি হল মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা শাখা, যার লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা দেওয়া। বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করার লক্ষ্যে নেপালের বিভিন্ন স্থানে ৩০০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও লাপসিফেড়ি-গালচি-দামাউলি-সুনাওয়াল করিডোরে ৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন তৈরির জন্য নেপাল ও এমসিসি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭-এ, ওয়াশিংটন ডিসি–তে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুসারে এমসিসি নেপালকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের অনুদান সহায়তা দিতে সম্মত হয়। এছাড়াও নেপাল সরকার এই প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ১৩ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই ভাবে, এমসিসি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি মার্কিন ডলার। নেপালের এটিই সবচেয়ে বড় বৈদেশিক অনুদান সহায়তা।
এমসিসি অনুমোদনের আগে কিছু গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ও মিথ্যা গুজব ছড়াতে সাহায্য করেছিল। বলা হয়েছিল যে এমসিসি অনুমোদনের অর্থ নেপালকে মার্কিন এশিয়া-প্যাসিফিক কৌশলের দিকে ঠেলে দেওয়া। এমসিসি–র সমালোচনা করে বলা হয়েছিল যে এর মাধ্যমে নেপালের সংবিধানকে খর্ব করা হচ্ছে, এবং এতে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)–কে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য এমসিসি–র বিরুদ্ধে কাঠমান্ডুর রাস্তায় প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হয়েছে।
এমসিসি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি মার্কিন ডলার। নেপালের এটিই সবচেয়ে বড় বৈদেশিক অনুদান সহায়তা।
এমসিসি সম্পর্কিত এই সংশয়গুলি কিছুটা কাটানোর জন্য মার্কিন সরকারের বেশ কয়েকটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নেপাল সফর করে, এবং নেপালিদের বোঝানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে এমসিসি নেপালিদের জন্য মার্কিন জনগণের কাছ থেকে একটি উপহার, এবং এর মধ্যে কোনও বিশেষ বা গোপন শর্ত নেই। একথাও জানানো হয়েছিল যে নেপালে ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রতিটি সরকার ও রাজনৈতিক দল মার্কিন অনুদান সহায়তা পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।
এমসিসি–র বিরোধী গোষ্ঠীগুলির মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল ও প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা-র যৌথ ভাবে এমসিসি সদর দফতরের কাছে লেখা এক গোপন চিঠি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করা হয়েছিল, যে চিঠিতে এই দুজন এমসিসিকে তাঁদের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার-পাঁচ মাস সময় দিতে বলেছিলেন যাতে তাঁরা পার্লামেন্টে এমসিসি অনুমোদনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। এই চিঠিটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এমসিসি–র সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক মাওবাদী নেতা দহল বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, এবং জনসাধারণ ও তাঁর দলের কর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েন।
উপরন্তু মার্কিন সরকারও হুমকি দিয়েছিল যে নেপালের পার্লামেন্ট যদি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এমসিসি অনুমোদন না–করে, তা হলে তারা নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘পর্যালোচনা’ করবে। মার্কিন সরকারের এমন সতর্কবার্তা নেপালের রাজনীতিবিদদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে। নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করার অর্থ হল সাহায্য এবং সহায়তায় ব্যাপক ঘাটতি, আর তা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই নয়, মার্কিন প্রভাবাধীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান, যেমন বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি)–এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এই চিঠিটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এমসিসি–র সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক মাওবাদী নেতা দহল বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, এবং জনসাধারণ ও তাঁর দলের কর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েন।
অনেক সময় মার্কিন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে যে চিন এমসিসি অনুমোদনে বাধা সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে চিনা কূটনীতিকরা অভিযোগ করেছেন যে আমেরিকা এমসিসি অনুমোদন করতে নেপালিদের চাপ দেওয়ার জন্য জবরদস্তিমূলক কূটনীতির পথ গ্রহণ করেছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র প্রশ্ন করেছেন, এমসিসি কি ‘উপহার’ নাকি ‘প্যান্ডোরার বাক্স’’?
অনেক সমস্যাসঙ্কুল পথ পেরনোর পর নেপালের পার্লামেন্টে এমসিসি অনুমোদিত হয়। এর কৃতিত্ব অনেকাংশে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও তার সরকারের, কারণ তাঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। এমসিসি এখন পার্লামেন্টে অনুমোদিত হওয়ায় জোট সরকারের জীবনও রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা এমসিসি–র অধীনে বিশাল তহবিল যাতে দেশের জ্বালানি ও পরিবহণ ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও দায়বদ্ধ করেছে। নেপাল সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল তার ব্যয় করার ক্ষমতা সুবিন্যস্ত নয়। এমতাবস্থায় মার্কিন অনুদান সহায়তা থেকে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা কঠিন হবে। সুতরাং, এমসিসি প্রকল্পগুলি যথাসময়ে সম্পূর্ণ করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে সম্ভাব্য সমস্ত রকম প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ভারতে রফতানি করা যায়। এতে শুধু আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না, দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারও ত্বরান্বিত হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Hari Bansh Jha was a Visiting Fellow at ORF. Formerly a professor of economics at Nepal's Tribhuvan University, Hari Bansh’s areas of interest include, Nepal-China-India strategic ...
Read More +