-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এই বছরের বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবসের মূলভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে খাদ্য সরবরাহের নিরাপত্তা, গুণমান এবং বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক খাদ্যমানের ভূমিকা অন্বেষণ করা হয়েছে
প্রতি বছর ৭ জুন বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস পালিত হয়, যার উদ্দেশ্য খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি ও পদক্ষেপ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া। জনস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবসের দিনটি নির্ধারণ করে। দিবসটির লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী নিরাপদ, পুষ্টিকর ও স্থিতিশীল খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা, এবং সেইসঙ্গে খাদ্যজনিত ঝুঁকি প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ ও মোকাবিলার প্রয়াসের প্রসার ঘটানো। খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক উদ্বেগ, কারণ অ–নিরাপদ খাদ্য থেকে খাদ্যজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে , এবং তার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে স্বাস্থ্যের উপর। আনুমানিক ৬০০ মিলিয়ন মানুষ — প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ১ — প্রতি বছর খাদ্যজনিত অসুস্থতায় ভোগেন, এবং প্রতি বছর মোট ৪২০,০০০ জনের মৃত্যু হয়। ফলে ৩৩ মিলিয়ন বছরের সুস্থ জীবন নষ্ট হয়। অনিরাপদ খাদ্যের অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে, কারণ এটি বাণিজ্য ও পর্যটনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যা জাতীয় অর্থনীতি এবং সেইসঙ্গে খাদ্যশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জীবিকাকে প্রভাবিত করে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে হারানো উৎপাদনশীলতা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের জন্য অ- নিরাপদ খাদ্যের খরচ অনুমান করা হয় বছরে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক উদ্বেগ, কারণ অ–নিরাপদ খাদ্য থেকে খাদ্যজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে , এবং তার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে স্বাস্থ্যের উপর।
প্রতি বছর বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস খাদ্য নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস ২০২৩–এর মূলভাব হল ‘খাদ্যমান জীবন বাঁচায়’। খাদ্যমান হল খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা ও গুণমান নিশ্চিত করার জন্য নির্ধারিত নিয়মের একটি সেট, যা জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্যপণ্য যাতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকরভাবে নাড়াচাড়া করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য এটি কৃষক ও প্রক্রিয়াকারীদের একটি কাঠামো প্রদান করে। খাদ্য কোড, যা ‘কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিউস’ নামেও পরিচিত, হল আন্তর্জাতিক মান, প্রবিধান, ও অনুশীলনের কোডের একটি সেট, যা ভোক্তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং খাদ্য শিল্পে নৈতিক অনুশীলন প্রসারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ১৯৬৩ সালে ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং খাদ্য শিল্পে নৈতিক মান উন্নীত করার জন্য কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিউস কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছিল। কোডেক্স মানগুলিই হল খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি,, যা ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান। প্রতি বছর ‘খাদ্য কোড’ প্রসারিত হতে থাকে, নতুন মান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিদ্যমান মানগুলি নতুন উপলব্ধ তথ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করা হয়।
সূত্র: হু–বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস ২০২৩
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হু–এর বৈশ্বিক কৌশল ২০২২–২০৩০ সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে খাদ্যের নিরাপত্তা ও গুণমান,পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তৈরি জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা কাঠামো গ্রহণ করা, অভিযোজিত করা এবং শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে। যেহেতু কোডেক্স স্ট্যান্ডার্ড এবং কোডেক্স টেক্সটগুলি বাধ্যতামূলক নয়, তাই প্রয়োগযোগ্য হওয়ার জন্য তাদের অবশ্যই জাতীয় আইন বা প্রবিধান হিসাবেই কোডিফাই করতে হবে। ভারতে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)) খাদ্যের মান ও প্রবিধানগুলি নির্দেশিত করে। এফএসএসএআই খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং খাদ্যসম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলির পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের প্রসারেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ভারতে খাদ্য ব্যবসা ও ভোক্তাদের এই মান ও প্রবিধান সম্পর্কে সচেতনতা এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনুবর্তিতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করা ছাড়াও, খাদ্যের নির্ধারিত মান আরও কিছু বিষয়ের নির্দেশিকা ও প্রবিধান নির্ধারণ করে দেয়, যেমন খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণ; খাদ্যের গুণমান ও পুষ্টির মান বজায় রাখা; অ্যালার্জেনিক উপাদান চিহ্নিত করা এবং সম্ভাব্য অ্যালার্জেন সংক্রমণ রোধ করা; অর্থনৈতিক লাভের জন্য খাদ্যে জালিয়াতি প্রতিরোধ; উৎপাদকদের জন্য সমসুযোগের ব্যবস্থা করা, এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্য যাতে বিভিন্ন দেশের খাদ্যপণ্য সুরক্ষা ও গুণমানের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করা। সাধারণ মানগুলি মেনে চলার মাধ্যমে, দেশগুলি একে অপরের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পারস্পরিক আস্থা স্থাপন করতে পারে, এবং এইভাবে জনস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি খাদ্যপণ্য আমদানি ও রপ্তানিকে সহজতর করে।
এফএসএসএআই খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে, এবং খাদ্যসম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপগুলির পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের প্রসারেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
কোডেক্স আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক মানগুলির একটি সেট তুলে ধরে, যা দেশগুলিকে বিভিন্ন স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে পারে: এসডিডি ১ (দারিদ্র্যহীনতা) বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষা মানগুলিকে জাতীয় আইনে পরিণত করে। এটি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নতুন বাজারে প্রবেশ করা এবং তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দেয়, এবং এইভাবে পরোক্ষভাবে এসডিজি ২ (শূন্য ক্ষুধা) অর্জন করে। এটি ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্যজনিত অসুস্থতার প্রকোপ কমাতে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এসডিজি ৩ (সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা) অর্জন করে; বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা ও অসুবিধা দূর করে খাদ্য খাতে ন্যায্য বাণিজ্য চর্চাকে উৎসাহিত করে এসডিজি ৮ (শালীন কাজ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি) অর্জন করে; সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য খাদ্য লেবেলিংয়ের মাধ্যমে এসডিজি ১২ (খাদ্য বর্জ্য ও রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা) অর্জন করে; এবং অর্জন করে এসডিজি ১৭ (এসডিজি–র জন্য অংশীদারি), যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কেউ যাতে পিছিয়ে না–থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করা।
নিরাপদ খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ, এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের একটি অপরিহার্য উপাদান। খাদ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা একে অপরের পরিপূরক, এবং তা আমাদের স্থিতিশীল ভবিষ্যতে অবদান রাখে। নিরাপত্তার দিকটি খাদ্য পাওয়ার সুযোগ ও ক্রয়ক্ষমতার উপর ফোকাস করে, এবং এটি নিশ্চিত করে যে বিশ্বের প্রত্যেকেরই পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। খাদ্যের সুরক্ষা খাদ্যকে দূষিত করা বা ক্ষয় থেকে রক্ষা করে, যাতে ভোক্তাদের পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার সুযোগ থাকে। ২০৫০ সালে ১০ বিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিসর্জন না–দিয়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও তার স্থায়িত্বের জন্য নতুন কিছু সমাধান নিয়ে আসা প্রয়োজন।
খাদ্যের সুরক্ষা খাদ্যকে দূষিত করা বা ক্ষয় থেকে রক্ষা করে, যাতে ভোক্তাদের পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার সুযোগ থাকে।
খাদ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রশমিত করতে পারি, খাদ্যের অপচয় ন্যূনতম স্তরে নিয়ে যেতে পারি, ভোক্তাদের আস্থা তৈরি করতে পারি, কৃষি উৎপাদনশীলতাকে সমর্থন করতে পারি, এবং বাণিজ্য সহজতর করতে পারি। এই প্রচেষ্টাগুলি সম্মিলিতভাবে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখে, যেখানে সমস্ত মানুষ তাদের খাদ্যতালিকাগত চাহিদা এবং পছন্দগুলি পূরণ করার জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর এবং পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ পায়। সামগ্রিকভাবে, খাদ্যের মান খাদ্য সরবরাহের নিরাপত্তা, গুণমান ও শুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসাবে কাজ করে। এই মানগুলি মেনে চলার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদক, প্রক্রিয়াকারী, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতারা খাদ্যজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধে এবং ভোক্তাদের সুস্থতায় অবদান রাখে।
শোভা সুরি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr. Shoba Suri is a Senior Fellow with ORFs Health Initiative. Shoba is a nutritionist with experience in community and clinical research. She has worked on nutrition, ...
Read More +