Author : Aparna Roy

Published on Apr 21, 2025 Updated 0 Hours ago

চিন জলবায়ু নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক বলে মনে হলেও জলবায়ু সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী শীর্ষ প্রতিনিধিদের আলোচনাসভায় চিনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রভাবিত করার নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।

জলবায়ু নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত-চিন দ্বৈরথের নেপথ্যে কারণ কী?

কার্বন ব্রিফের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যেপ্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রায় ৯৫% দেশ ২০৩৫ সালের জন্য নতুন জলবায়ু প্রতিশ্রুতি জমা দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) সময়সীমা মেনে চলেনিযা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ। এই ফলাফল এমন এক সময়ে হয়েছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার জন্য একটি কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেনযা জলবায়ু পদক্ষেপের জন্য বিশ্বব্যাপী গতিকে খর্ব করেছে। যে সব দেশ সময়সীমা মেনে চলেনি, তারাই সম্মিলিত ভাবে বিশ্বব্যাপী নির্গমনের ৮৩% এবং বিশ্বের অর্থনীতির প্রায় ৮০%- জন্য দায়বদ্ধযা অর্থপূর্ণ জলবায়ু অগ্রগতি পরিচালনার জন্য চুক্তির ক্ষমতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইতিমধ্যেরেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহ  বিপর্যয়কর বন্যা থেকে শুরু করে চরম দাবানল পর্যন্ত জলবায়ু বিপর্যয়ের তীব্রতর মাত্রা সিদ্ধান্তমূলক নেতৃত্বের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়। তাৎক্ষণিক  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পদক্ষেপ না নিলে প্যারিস চুক্তি একটি বাধ্যতামূলক বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে একটি ফাঁপা প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতেবিশ্বকে জরুরি ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু শাসনে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে হবে এবং জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপের উপর জোর দিতে হবে।

যে সব দেশ সময়সীমা মেনে চলেনি, তারাই সম্মিলিত ভাবে বিশ্বব্যাপী নির্গমনের ৮৩% এবং বিশ্বের অর্থনীতির প্রায় ৮০%- জন্য দায়বদ্ধযা অর্থপূর্ণ জলবায়ু অগ্রগতি পরিচালনার জন্য চুক্তির ক্ষমতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যেপ্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া চিন ও ভারতের জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ তৈরি করেছে। কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যে সক্রিয় পদক্ষেপের মাধ্যমে উভয় দেশই উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতিশক্তিশালী যোগ্যতা  নেতৃত্বের সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে।

চিন চিরাচরিত ভাবে বিচ্ছিন্ন বিদেশনীতি থেকে আরও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেবিশেষ করে জলবায়ু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে। প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর চিন বহুপাক্ষিকতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েক্সিয়াং এটিকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘সোনার চাবিকাঠি’ বলে বর্ণনা করেছেন।

পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগতার ক্যাপ-এন্ড-ট্রেড সিস্টেমের সম্প্রসারণ এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে দূষণহীন করে তোলার প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিনের বৈশ্বিক জলবায়ু নেতৃত্বের অন্বেষণ স্পষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ফলে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে এবং চিন বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নীতি  বাজার শক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মকাণ্ড টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নিজে একটি কেন্দ্রীয় শক্তি হয়ে উঠেছে।

চিনের জলবায়ু পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও দেশটি এখনও স্বাধীন ভাবে জলবায়ু শাসনের দাবির মতো নেতৃত্ব গ্রহণের অবস্থানে নেই। প্রথমত, আগ্রাসী জলবায়ু উদ্যোগ সত্ত্বেও চিন বিশ্বের বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমনকারী দেশযা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ জিএইচজি নির্গমন করে। এটি অন্যান্য দেশকে আরও উচ্চাভিলাষী জলবায়ু লক্ষ্য গ্রহণে রাজি করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়দ্বিতীয়ত, চিন চিরাচরিত ভাবে আঞ্চলিক  বৈশ্বিক কূটনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে দায়িত্ব না নেওয়ার পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক শক্তি ব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য আরও ইতিবাচক নেতৃত্বের প্রয়োজনএর পাশাপাশি ভবিষ্যতে উচ্চাভিলাষী জলবায়ু লক্ষ্য প্রস্তাব করার ক্ষমতারও প্রয়োজনএটি এমন একটি ক্ষেত্রযেখানে চিন এখনও পর্যাপ্ত সম্ভাবনা প্রদর্শন করতে পারেনি। তৃতীয়তসাম্প্রতিক বছরগুলিতেও জলবায়ু সঙ্কটের বিষয়টি চিনে একটি প্রভাবশালী আখ্যান ছিল এবং জলবায়ু সঙ্কটকে প্রায়শই ‘চিন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পশ্চিমি ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করা  হত। এই ইতিহাস জলবায়ু নেতৃত্বে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের জন্য চিনের প্রতিশ্রুতির উপর সন্দেহ প্রকাশ করে।

জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক শক্তি ব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য আরও ইতিবাচক নেতৃত্বের প্রয়োজনএর পাশাপাশি ভবিষ্যতে উচ্চাভিলাষী জলবায়ু লক্ষ্য প্রস্তাব করার ক্ষমতারও প্রয়োজনএটি এমন একটি ক্ষেত্রযেখানে চিন এখনও পর্যাপ্ত সম্ভাবনা প্রদর্শন করতে পারেনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার  চিনের অনিশ্চিত জলবায়ু স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতেবর্তমান জলবায়ু নেতৃত্বের গতিশীলতার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারতের সামনে উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি সবুজ রূপান্তরের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং আগামী বছরগুলিকে ‘সবুজ যুগ’ হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।

জলবায়ু কর্মকাণ্ডে ভারতের তীব্র প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা  অর্থনৈতিক  স্থিতিস্থাপকতা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপকেই দর্শায়। এই পদক্ষেপগুলি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু কর্মকাণ্ডে ভারতের নেতৃত্বকে তুলে ধরে। দেশটি ইতিমধ্যেই একটি দূষণহীন শক্তি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে এবং প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। নির্গমন কমাতে ভারত একটি বিস্তৃত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি কর্মসূচি চালু করেছেঅতীতের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে এবং রেকর্ড মাইলফলক অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে ভারত তার সৌর ক্ষমতা প্রায় ২৪.৫ গিগাওয়াট (জিডব্লিউ) এবং তার বায়ু ক্ষমতা ৩.৪ গিগাওয়াট বৃদ্ধি করেছেযা তার সৌর স্থাপনার দ্বিগুণেরও বেশি এবং তার বায়ু ক্ষমতা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২১% বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের মোট পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ক্ষমতা ১৬২.৪৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছিলযার মধ্যে সৌরশক্তির পরিমাণ ৯৭.৮৬ গিগাওয়াট  বায়ুশক্তির পরিমাণ ৪৮.১৬ গিগাওয়াট ছিল।

ভবিষ্যতের দিকে তাকালেভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট অ-জীবাশ্ম জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেযার সময়সীমা এখন ২০৩১-৩২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। উপরন্তুদেশটি কয়লা নির্ভরতা কমাতে এবং দূষণহীন শক্তির উৎসে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার জন্য তার নীতিগুলির ক্রমাগত পরিমার্জন করছে। বর্তমানে ভারত কেবল প্যারিস জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্যই নয়বরং তা অতিক্রম করার নিরিখেও খুব ভাল অবস্থানে রয়েছে।

ভারত চিরাচরিত যানবাহনের তুলনায় বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপর হ্রাসকৃত পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) ব্যাপক ভাবে গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। সরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যে২০৩০ সালের মধ্যে নতুন যানবাহন বিক্রির ৩০%- ইভি সংক্রান্ত হবেযার বিক্রয় ১ কোটি টাকায় পৌঁছবে এবং যার ফলে পঞ্চাশ লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এর পাশাপাশিবৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পাবলিক চার্জিং স্টেশন-সহ অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলি সবুজ শক্তি বিপ্লবকে উৎসাহিত করারবিনিয়োগ আকর্ষণ করাকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং উদীয়মান প্রযুক্তির রফতানি সম্ভাবনা বৃদ্ধির প্রতি ভারতের নিষ্ঠাকেই দর্শায়।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারত দেখিয়েছে যেকী ভাবে শক্তিশালী জলবায়ু পদক্ষেপগুলি উন্নয়নমূলক লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সফল ভাবে সমন্বিত করা যেতে পারে।

উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের ঊর্ধ্বে উঠে কার্যকর জলবায়ু নেতৃত্বকে দরিদ্র  সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চাহিদা  অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারত দেখিয়েছে যেকী ভাবে শক্তিশালী জলবায়ু পদক্ষেপগুলি উন্নয়নমূলক লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সফল ভাবে সমন্বিত করা যেতে পারে। ভারত জলবায়ু আলোচনায়বিশেষ করে প্যারিস চুক্তি আলোচনার সময়একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশটি ধারাবাহিক ভাবে ‘বিভেদমূলক দায়িত্ব’ নীতিকে রক্ষা করেছেউন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আরও নমনীয় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের পক্ষ সমর্থন করেছেসীমিত বৈশ্বিক কার্বন বাজেটের মধ্যে বৃদ্ধির জন্য তাদের বৃহত্তর পরিসরের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বর্তমান নেতৃত্বের শূন্য স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, সমগ্র বিশ্ব জি২০ ও কপ৩০-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ আসন্ন মঞ্চগুলিতে জলবায়ু কর্মকাণ্ডে ভারতের ভূমিকা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। চিন যখন বিশ্ব মঞ্চে তার প্রভাব বৃদ্ধির জন্য একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারের সন্ধান করছেতখন ভারত এই সুযোগটিকে কাজে লাগানো এবং বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করার জন্য একটি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.