Author : Sushant Sareen

Published on Oct 24, 2024 Updated 0 Hours ago

বালোচিস্তানের অস্থিরতা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনা সমীকরণ পুনর্নির্মাণের মুখে: পাকিস্তান কতটা কার্যকর এবং চিন সে দেশে আর কতটাই বা বিনিয়োগ করবে?

যখন ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পও ডুবতে শুরু করে: চিনের সিপিইসি বালোচিস্তানে ভরাডুবির মুখে

বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) অত্যন্ত জটিল, সু-সমন্বিত এবং যথেষ্ট বিধ্বংসী অপারেশন হেরোফ-এর কারণে সৃষ্ট হামলার অনুরণন এ বার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অনুভূত হচ্ছে, যেখানে সরকার ও সামরিক বাহিনী বালোচ প্রতিরোধকে দমন করার ব্যর্থ নীতির জন্য জেরবার হয়ে যাচ্ছে। বালোচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী - যাঁকে সামরিক সংস্থার প্রক্সি হিসাবে দেখা যায় - একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি আবার ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেছেন যে, সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন নেই। তাঁর মতে, বালোচিস্তানে বিদ্রোহ মোকাবিলায় একজন স্থানীয় থানার ইনচার্জই যথেষ্ট। তবে বালোচিস্তান সমস্যা এত সহজ হলে অনেক আগেই তার সমাধান হয়ে যেত। বরং এটি একটি পূর্ণ মাত্রার বিদ্রোহে পরিণত হচ্ছে এবং জনগণ এই আন্দোলনকে সমর্থনও করে চলেছে। একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আখতার মেঙ্গলের মতে, এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, মূলধারার রাজনীতিবিদ বা ডাঃ মাহরাং বালোচের মতো সক্রিয় কর্মী এবং বালোচ ইয়াকঝেতি কমিটিও আর বালোচিস্তানে প্রাসঙ্গিক নয় তিনি নিশ্চিত যে, সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, কারণ তারাই এই পরিস্থিতির সূচনা করেছে।

কয়েক বছর ধরে বেজিং বালোচিস্তানের দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সঙ্গেই দেখছে।

কয়েক বছর ধরে বেজিং বালোচিস্তানের দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সঙ্গেই দেখছে। এক দশক আগে যখন চিন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর-এর (সিপিইসি) উন্মোচন করেছিল, তখন পাকিস্তান এটিকে ম্যাজিক বুলেট বলে দাবি করেছিল, যা কিনা তাদের সমস্ত অর্থনৈতিক, নিরাপত্তাজনিত এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করবে। চিনারা সিপিইসি-র মর্যাদা উন্নত করেছে এবং এটিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্প বলে অভিহিত করেছে। চিনের পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানের পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার জন্য সিপিইসি ব্যবহার করা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ধোপে তো টেকেইনি, বরং সিপিইসি অত্যন্ত অস্থিতিশীল বলেই প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রকল্প পাকিস্তানকে ঋণের ফাঁদে ফেলেছে, দেশটিতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকল্প তৈরি করেছে এবং এর ফলে নেতিবাচক রাজনৈতিক পতন ঘটেছে। এই সব কিছুই বালোচদের মতো প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে চিনাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মাধ্যমেই স্পষ্ট।

অন্যান্য বিআরআই প্রকল্পের মতো এর ফ্ল্যাগশিপ সিপিইসিও ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে। যে করিডোরটি বালোচিস্তানের গোয়াদর থেকে গিলগিট-বালটিস্তানের খুঞ্জেরাব পাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, তা কেবল তার দুই প্রান্তেই নয়, অন্যান্য পথ বরাবরও গুরুতর সমস্যায় পড়েছে। যে যে সমস্যা সিপিইসিকে জর্জরিত করেছে, তা পাকিস্তানের সমস্ত অংশ এবং পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলির জন্য অভিন্ন সাধারণ সমস্যা এবং সেগুলি হল অস্পষ্ট নীতি তৈরি, অযোগ্য বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং প্রশাসনিক আলস্য। কিন্তু গিলগিট-বালটিস্তান ও বালোচিস্তানে নিরাপত্তার মাত্রা ব্যাপক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের মতে, ‘জিটুজি, গিলগিট থেকে গোয়াদর পর্যন্ত সিপিইসি রুট এখন জঙ্গি হামলার কেন্দ্রস্থল... যা লক্ষ্য হল পাকিস্তানে সিপিইসি-র সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার করতে চিনকে বাধা দেওয়া।

যে যে সমস্যা সিপিইসিকে জর্জরিত করেছে, তা পাকিস্তানের সমস্ত অংশ এবং পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলির জন্য অভিন্ন সাধারণ সমস্যা এবং সেগুলি হল অস্পষ্ট নীতি তৈরি, অযোগ্য বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং প্রশাসনিক আলস্য

গিলগিট-বালটিস্তান একটি প্রধান সাম্প্রদায়িক যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে, যেখানে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং ইসলামিক স্টেট খোরাসান-সহ অন্যান্য জিহাদি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চিনারাও এই সন্ত্রাসবাদীদের আড়ালে রয়েছে। পাকিস্তানিরা এই হামলাগুলিকে সিপিইসি-র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী করতে বদ্ধপরিকর হলেও বাস্তবতা অন্য কথাই দর্শায়। এবং তা হল এই যে, জিহাদিদের নিজস্ব মতাদর্শগত কৌশলগত অভিযোগ এবং চিনাদের লক্ষ্যবস্তু করে তোলার ভিন্ন কারণ রয়েছে। পাকিস্তান-অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তান অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক অসুবিধা রাজনৈতিক মন্থন থেকে উদ্ভূত অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। সমগ্র অঞ্চলটি - যা কিনা চিনের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে - পাকিস্তান-বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সক্রিয় ভাবে কাজ করার জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র। স্বাভাবিক ভাবেই, এই এলাকায় কর্মরত চিনারা জিহাদিদের জন্য লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। কারণ তাঁদের লক্ষ্যবস্তু করলে পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে। কারণ চিনই এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সমর্থনকারী। গত বছরের মার্চ মাসে বেশামে চিনা প্রকৌশলীদের উপর আত্মঘাতী হামলার আগেও বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত চিনা কর্মীরা গুরুতর হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে আশঙ্কা ছিল।

চিনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বালোচিস্তানে পরিস্থিতি আরও খারাপ। প্রদেশটিতে ব্যাপক আকারে চাপানউতোর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং চিনা প্রকল্প ও কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা একটি রোজকার ব্যাপারবালোচ যোদ্ধারা শুধু বালোচিস্তানে নয়, করাচিতেও চিনাদের পর হামলা চালাচ্ছে। এই আক্রমণগুলির কারণেই প্রায় সমস্ত বড় আকারের সিপিইসি প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়েছে পাকিস্তানে সিপিইসি এবং অন্যান্য প্রকল্পে চিনা বিনিয়োগ হয় ব্যাপক ভাবে মন্থর হয়ে গিয়েছে অথবা স্পষ্টতই থমকে গিয়েছেসিপিইসি-জন্য অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য গোয়াদর বন্দর চালু হয়নি। বন্দরে কার্যত কোন বাণিজ্যিক যানবাহন নোঙর করছে না বা সেখান থেকে যানবাহন ছেড়ে যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পাকিস্তান সরকার বন্দরে ট্র্যাফিক তৈরির জন্য সমস্ত সরকারি বিভাগকে তাদের বাল্ক আমদানির ৫০ শতাংশ গোয়াদর দিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। গোয়াদর কার্যত এমন একটি দুর্গে পরিণত হয়েছে, যেখান থেকে নিরাপত্তার কারণে স্থানীয় বালোচরা সম্পূর্ণ ভাবে বাদ পড়েছে। চিনা ও স্থানীয় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে উঠেছে। কারণ স্থানীয় জনগণকে যে সব দুর্দান্ত প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তা আসলে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সমগ্র অঞ্চলটি - যা কিনা চিনের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে - পাকিস্তান-বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সক্রিয় ভাবে কাজ করার জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র।

বালোচরা চিনাদের নতুন উপনিবেশবাদী বলে মনে করেন। গোয়াদরের সম্পূর্ণ উন্নয়ন যে ভাবে পরিচালনা করা হয়েছে, তা কেবলমাত্র এই ধারণাকে পোক্ত করেছে যে, বেজিং এবং ইসলামাবাদ স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে কোনও প্রকৃত সুবিধা না দিয়েই আসলে বালোচদের সম্পদ শোষণ করছে। বাস্তবে চিনারা যাই করে থাকুক না কেন, স্থানীয় বালোচ এলাকাগুলি এক প্রকারের বান্টুস্তানে (দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় প্রশাসক দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার বর্ণবাদ নীতির অংশ হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের আলাদা করে যে অঞ্চলে রেখেছিল, সেটিই বান্টুস্তান নামে পরিচিত) পরিণত হয়েছে সেখানে বাসিন্দাদের চলাফেরা করার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় এবং সমগ্র এলাকা জুড়ে থাকা নিরাপত্তা চেকপোস্টের মধ্য দিয়ে চলাচল করার জন্য নিত্য দিনের অসম্মান সহ্য করতে হয়বালোচিস্তানে এই বর্ণবাদ-সদৃশ নীতিগুলি সাম্প্রতিক বালোচ রাজি মুচি মার্চ বা অব্যাহত হক দো তেহরিক-এর মতো রাজনৈতিক প্রতিবাদী আন্দোলনের জন্য চিনাদেরই লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে। এটি পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী এবং চিনা প্রকল্প কর্মীদের লক্ষ্য করে বালোচ যোদ্ধাদের সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা প্রদান করছে।

চিনাদের দিক থেকে দেখলে সিপিইসি একটি সুবিশাল দ্বিধায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে তা ব্যর্থতারই নামান্তর। পাকিস্তানের পরিধিতে জনগণকে প্রণোদিত করার পরিবর্তে এটি তাদের বিরোধিতাকে আরও উস্কে দিয়েছে এবং স্থানীয় মানুষজন এখন চিনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে। সিপিইসি-কে ‘গেম-চেঞ্জার’ বা ‘খেলা বদলকারী’ বলা যে আদতে অভিনব বাগাড়ম্বর, তা বেশ ফাঁপা বলে প্রমাণিত হচ্ছে। পাকিস্তান চিনের জন্য কৌশলগত ভাবে প্রাসঙ্গিক হলেও এটি অবশ্যই অর্থনৈতিক ‘নর্দমা’য় (ব্যর্থ খাত) পরিণত হয়েছে। যে সিপিইসি প্রকল্পগুলির কাজ সামান্য হলেও চলছে, সেখানে আসলে অর্থ নালায় বয়ে যাওয়ারই সমান। পাকিস্তান বিশেষ করে সিপিইসি-র অধীনে স্থাপিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থপ্রদানে পিছিয়ে পড়ছে। সিপিইসি-র জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়েছে। এবং এখন পাকিস্তানও আর চিনকে নতুন প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে বলছে না (যার মধ্যে অনেকগুলি আর্থিক ভাবে অসম্ভবও বটে) তবে পূর্ববর্তী সিপিইসি প্রকল্পগুলির জন্য নেওয়া ঋণের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে পাকিস্তানচিনারা অবশ্য তাদের ‘আয়রন ব্রাদার’-এর জন্য পুরনো সিপিইসি চুক্তির পুনর্বিবেচনা করতে নারাজ। সিপিইসি-সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে চিনা বিনিয়োগে কার্যত মন্থরতা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তান চিনের জন্য কৌশলগত ভাবে প্রাসঙ্গিক হলেও এটি অবশ্যই অর্থনৈতিক ‘নর্দমা’য় (ব্যর্থ খাত) পরিণত হয়েছে।

চিনাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এ কথা বলা যায়, পাকিস্তানে অর্থের লগ্নি থেকে লাভবান না হওয়াই যথেষ্ট নেতিবাচক, তার উপর চিনাদের প্রাণ সংশয়ের ব্যাপারটি কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি এমন একটি বার্তা যা এখন চিনা কর্মকর্তারা পাকিস্তানে বেশ প্রকাশ্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। চিনারা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, চিনা বিনিয়োগ এখন কেবল নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং একটি বন্ধুত্বপূর্ণ’ গণমাধ্যম পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। মূলধারার গণমাধ্যমকে ইতিমধ্যে পাকিস্তানে সামরিক সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তো দূরের কথা, বেসামরিক মুখোশ দিয়ে সামরিক আইন জারি করার প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না। আসলে, পাকিস্তানের অস্থিরতা বাস্তবে এবং উপলব্ধিগত ভাবে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। নিরাপত্তা পরিবেশের উন্নতি অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে আরও অধরা এবং প্রতিবন্ধকতাময় বলে প্রমাণিত হচ্ছে। এমনকি ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চিনা বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য বর্তমানে পাকিস্তান নিরাপত্তার খাতে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তান সিপিইসি প্রকল্পগুলিকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রায় দুই বিভাগের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করলেও ক্রমবর্ধমান হিংসার ঘটনা দর্শিয়েছে যে, সেটুকুই যথেষ্ট নয়।

চিনারা পাকিস্তানিদের নিজেদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে এবং তাদের প্রকল্প কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করার জন্য চাপ দিচ্ছে। কয়েক বছর আগে চিনারা বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলে তাদের নিজস্ব শৃঙ্খল উন্মোচন করেছে বলে জানা গিয়েছেচিনারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্ররোচিত করতে এবং তাদের প্রকল্প ও কর্মীদের উপর হামলা প্রতিরোধ করতে ঘুষ দিয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু এতে তেমন কোনও লাভ হয়নি, বরং হামলার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। এর ফলস্বরূপ, চিনাদের প্রাথমিক অবস্থান বদলে গিয়েছে। প্রথমে চিনারা বিশ্বাস করত যে, ঘুষ এবং আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে চিনারা পাকিস্তানকে এই নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। গত মে মাসে পাকিস্তানি দৈনিক বিজনেস রেকর্ডারে প্রথম পাতা প্রকাশিত হয়েছিল যে, চিন পাকিস্তানকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অপারেশন জারব-ই-আজবের মতো আর কটি আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করতে বলেছিল। খবরটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সংবাদপত্রের ই-পেপার সংস্করণটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছিলকিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে পাকিস্তান সরকার একটি ব্যাপক নতুন সামরিক অপারেশন আজম-ই-ইস্তেহকাম ঘোষণা করে। এর ফলে কিছু দিনের মধ্যেনাগরিকদের তরফে ব্যাপক বিরূপতার সৃষ্টি হয় এবং তাঁরা যে কোনও নতুন সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করেন। ফলে পাকিস্তান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল এবং এই যুক্তি দর্শায় যে, ঘোষণাটিতে সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের কথা বলা হয়নি, শুধুমাত্র গোয়েন্দাভিত্তিক অভিযানের কথা বলা হয়েছিল

চিনারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্ররোচিত করতে এবং তাদের প্রকল্প ও কর্মীদের উপর হামলা প্রতিরোধ করতে ঘুষ দিয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু এতে তেমন কোনও লাভ হয়নি, বরং হামলার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। এর ফলস্বরূপ, চিনাদের প্রাথমিক অবস্থান বদলে গিয়েছে। প্রথমে চিনারা বিশ্বাস করত যে, ঘুষ এবং আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে

চিন-পাকিস্তান দুই দেশই এখন বিপাকে পড়েছে। পাকিস্তানি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, যদি বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করা হয় - প্রায় ২০০১ সাল থেকে বালোচিস্তানে সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে – তা হলে পুরো এলাকাটি বর্তমানের তুলনায় আরও বেশি অশান্ত হয়ে পড়বে। যদিও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছ যে, সেখানে বাস্তবে কোন ব্যাপক অভিযান হবে না; তবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত যে অভিযানগুলি এখনও বন্ধ হয়নি, তা স্পষ্টতই কার্যকর নয়। পরাজিত হওয়া তো দূরের কথা, বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আরও শক্তিশালী, সক্ষম এবং প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছেতাঁরা এখন প্রধান প্রতিপক্ষ এবং স্পষ্টতই আলোচনার শর্তাবলি নির্ধারণ করছেন। অর্থাৎ পাকিস্তানি সৈন্যরা কখন এবং কীভাবে বালোচিস্তান ছেড়ে যাবে, সেই সিদ্ধান্তের মূল সূত্র রয়েছে বালোচদের হাতেই। বৃহৎ মাত্রার কোনও অভিযানই এখন আর বিকল্প নয়। এই ধরনের অভিযান টিটিপি বিদ্রোহের বিরুদ্ধে যুঝতে থাকা পাকিস্তান সেনার উপর চাপ বৃদ্ধি করবে এবং ভারতে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে। র ফলে সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে। যত দিন এই অভিযান চলবে, তত দিন শুধু বালোচিস্তানে নয়, সমগ্র পাকিস্তানে কোন বিনিয়োগ হবে না। সামরিক অভিযান একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রস্তাব, বিশেষ করে এমন একটি কোষাগারের জন্য, যা ইতিমধ্যেই শূন্য

পাকিস্তানের বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে আর কত দিনই বা চিন বিনিয়োগ করতে পারে, তা নিয়ে চিন বেশ দ্বন্দ্বে রয়েছে। পাকিস্তানের মতো একটি পরজীবী দেশকে একজন অংশীদার এবং মিত্র হিসেবে বয়ে বেড়ানোর কৌশলগত নীতির অর্থনৈতিক মূল্যই বা কী? ইঙ্গিত মিলেছে যে, চিনারা পাকিস্তানের দুরবস্থা মোচনে ক্রমশ নিরুৎসাহী হয়ে পড়ছে। কিন্তু চিনাদের সামনে দ্বৈত দ্বিধাকেও অস্বীকার করা যায় না। চিনারা নিজেদের বিআরআই-এর ফ্ল্যাগশিপকে ডুবতে দিতে পারে না। কারণ এমনটা হলে তা এই ভৌগোলিক অঞ্চলের বাকি প্রকল্পগুলির উপরেও গুরুতর প্রভাব ফেলবে। আর ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পটিকে চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাও লোকবল ও অর্থের নিরিখে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে। আর একটি দ্বিধা হল এই যে, পাকিস্তানের কৌশলগত মূল্যই প্রশ্নের মুখে পড়বে, যেহেতু দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে অক্ষম এবং অসমর্থ। উপরন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আকৃষ্ট করার জন্য চিনা কার্ড খেলার পাকিস্তানি প্রবণতা রয়েছে এবং চিনের কাছ থেকে আরও বেশি টাকা বের করে নেওয়ার জন্য মার্কিন কার্ড বিদ্যমানঅর্থাৎ চিনকে মার্কিনি তাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চিনা তাস দেখানোর খেলা পাকিস্তান অব্যাহত রেখেছে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পাকিস্তানের উপযোগিতা সম্পর্কে এক ধরনের পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনার সময়ে এসেছে। এবং চিনকেও এ বার সত্যিই খতিয়ে দেখতে হবে, চিন আদৌ পাকিস্তানে আর বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে চায় কি না।

 


সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.