Published on Jul 02, 2024 Updated 0 Hours ago

এই নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে মুইজ্জু রাজনৈতিক ভাবে আরও স্থিতিশীল হয়েছেন। ফলে এই নির্বাচন তাঁকে তাঁর ভারত-বিরোধী বক্তব্যকে হ্রাস করতে এবং চিনপন্থী ঝোঁক বজায় রেখে দিল্লির সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপনে উৎসাহিত করবে

ভারত ও চিনের কাছে মলদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনের অর্থ কী?

মলদ্বীপে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) পার্লামেন্টে সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। ক্ষমতাসীন দলটি এখন দেশের ৯৩টি আসনের মধ্যে ৭৩টি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে। অভ্যন্তরীণ ভাবে দেশের আইনসভার উপর তাঁসুদৃঢ় আধিপত্য সম্ভবত ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনা এবং চিনেসঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির নিরিখে তাঁর নীতিকে উৎসাহিত করবে। যাই হোক, একটি বাস্তববাদী যুক্তিবাদী নীতি সম্ভবত তাঁকে ভারতকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন করা থেকে দূরে সরিয়ে আনতে রাজি করাতে পারে।

 

নির্বাচনী ফলাফলের মূল্যায়ন

পিএনসি-র বিজয়ের নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন কারণপ্রথমত, মলদ্বীপের কিছু সাংবাদিকের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে সমস্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায়নের সাক্ষী থেকেছে এবং তাঁদের একটি ঝামেলাবিহীন সরকার চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এ বারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারের অনেক নজির ছিল। নির্বাচনের সময় বা তার ঠিক আগে বেশ কিছু নতুন প্রকল্প ঘোষণা বা উদ্বোধন করা হয়। সরকারও রাজনৈতিক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে ভোট অর্জন করেছে। তবে তাঁর শপথ গ্রহণের পর থেকে মুইজ্জু নিজের মন্ত্রিসভায় ৩০০ জনেরও বেশি মন্ত্রী নিয়োগ করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির জন্য বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক নিয়োগ অনুমোদন করেছেন, যার অনেকগুলি নির্বাচনের ঠিক আগে করেছেন। তৃতীয়ত, মুইজ্জুর জাতীয়তাবাদী বক্তব্য এবং ভারতের সৈন্য প্রত্যাহার সম্ভবত তাঁর নির্বাচনী এবং বিপুল অবকাঠামোর প্রতিশ্রুতির প্রতি জনগণের আস্থাকে শক্তিশালী করেছে বলে মনে হচ্ছে। পরিশেষে ভোট কেনাও ছিল নির্বাচনে সব দলের চর্চার কৌশল।

দুটি রাজনৈতিক কৌশলও সম্ভবত মুইজ্জুর পক্ষে কাজ করেছে। প্রথমত, পিএনসি-র মধ্যে, বিশেষ করে ইয়ামিনের অনুগত এবং মুইজ্জুর অনুগত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও দলাদলি এড়াতে, ক্ষমতাসীন দল তাঁদের কিছু অনুগতকে স্বাধীন ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উত্সাহিত করেছিল। দ্বিতীয়ত, বড় দলগুলির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পিএনসি ছোট দলগুলিকে বেশ কিছু ছাড় দিয়েছে মলদ্বীপ ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্স (এমডিএ), মলদ্বীপ ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) এবং জুমহুরি পার্টি (জেপি) নেতাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে পিএনসি প্রার্থী না দাঁড় করানোয় মুইজ্জু আপাতদৃষ্টিতে সেই দলগুলিকে সীমিত আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি করিয়েছিলেন।

এই বিষয়গুলি এবং কৌশলগুলি মুইজ্জুকে তাঁ পিপিএম-পিএনসি ভোটের ভিত্তি ছাড়াও সুইং ভোটার (অর্থাৎ যে ভোট বদলে যেতে পারে) এবং জেপি, এমএনপি এবং এমডিএ-এর সদস্যদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে সাহায্য করেছিল (দ্রষ্টব্য সারণি ২)। এটি তাঁর দলকে ৬৬ ভোটের অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। এর পরে এগারো জন স্বতন্ত্র এমপির মধ্যে সাত জন – যাঁদের মুইজ্জু সমর্থন করেছিলেন – ফের মুইজ্জুর দলে যোগদান করেন। এমডিএ (২ জন এমপি), জেপি ( জন এমপি) এবং এমএনপি-র ( জন এমপি) সমর্থন মুইজ্জুর সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করে এমপি-র সংখ্যা ৭৭-এ উন্নীত করেছে। অতএব, মুইজ্জু এবং তাঁপিএনসি পার্টি উল্লেখযোগ্য রকমের ক্ষমতায়ন ঘটেছে।

 

সারণি ১. পার্লামেন্টে দলগুলির প্রতিনিধিত্ব এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আসন

রাজনৈতিক দল

প্রাপ্ত আসন

যে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়েছে

পিএনসি

৬৬ (+৭ স্বতন্ত্র)

৯০

এমডিপি

১২

৮৯

নির্দল বা স্বতন্ত্র

১১ (-৭)

১৩০

এমডিএ

জেপি

১০

এমএনপি

ডেমোক্র্যাট

৩৯

এপি

সূত্র – ইলেকশন কমিশন

 

সারণি ২. পার্টির সদস্যপদ এবং ভোট

রাজনৈতিক দল

সদস্য

মজলিস নির্বাচনে মোট ভোটের সংখ্যা

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক দফায় মোট ভোটের সংখ্যা

এমডিপি

৫১৯১৯

৬৪৬৫০

৮৬১৬১

পিপিএম

৩৫৯৮৭

-

-

পিএনসি

২৮২৩৬

১০১১২০

১০১৬৩৫

জেপি

১৮১৮৬

৩১৪১

৫৪৬০

এপি

৬৭৪৬

২৫৩৮

-

এমডিএ

৮৫১৬

৪০৭১

-

এমএনপি

৭৮০৭

১০৬০

১৯০৭

ডেমোক্র্যাট

৪৪০৪

৪৬৩৫

১৫৮৩৯

স্বতন্ত্র বা নির্দল

-

২৯১৭৫

-

সূত্র – ইলেকশন কমিশন

 

অন্য দিকে, বিরোধী দল, বিশেষ করে মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) কিছু পার্লামেন্টারি কমিটির জন্য যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ১২ জন এমপি থাকার দরুন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমডিপি তাদের সাধারণ ভোটার ভিত্তির বাইরে বেরিয়ে ভোট সংগ্রহ করতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ের (সারণি ২) তুলনায় দলটি ভোটের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। দলটি নিজেদের চিরাচরিত গড় আদ্দুতে একটি আসন জিততে ব্যর্থ হয়েছে। এমডিপি নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ, দুর্নীতির সমস্যা এবং মুইজ্জুর নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে তাদের নিয়ন্ত্রণের দরুন দলটি এ হেন মূল্য চোকাতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।

এমডিপি-কে সহযোগিতাকারী দলগুলিও অপমানজনক পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এমডিপি-র জোটসঙ্গী আধালাথ পার্টি টানা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পার্লামেন্টে আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এমডিপি এবং পিপিএম-পিএনসি থেকে বিভক্ত হওয়া দলগুলি — ডেমোক্র্যাট এবং পিপলস ন্যাশনাল ফ্রন্ট — দুজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে থাকা সত্ত্বেও শূন্য আসন পেয়েছে ডেমোক্র্যাটদের ভোটগুলি তাদের ভোটের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ ছিল এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায় (সারণি ২) থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে - যা রাজনৈতিক পরিসরে তাদের প্রাসঙ্গিকতা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। পিএনএফ এবং ইয়ামিন দ্বারা সমর্থিত ৩৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কেউ একটি আসনও পাননি। সামগ্রিক ভাবে, বিরোধী দল, বিশেষ করে মূলধারার দলগুলি কার্যনির্বাহী ও আইনসভা উভয় ক্ষেত্রেই দুর্বল ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

 

কৌশলগত প্রভাব

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনার উদ্দেশ্যে মুইজ্জুর প্রচেষ্টা তাঁর জাতীয়তাবাদের প্রচার এবং অভ্যন্তরীণ সমর্থন জোগাড় করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সংযুক্ত। এখন অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গেই মুইজ্জু রাজনৈতিক ভাবে আরও স্থিতিশীল এবং নিরাপদ, যা তাঁকে তাঁর ভারত-বিরোধী বক্তব্যে রাশ টানতে এবং দিল্লির সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপনে উৎসাহিত করে। তবে, একই সময়ে চিনের সঙ্গে তাঁর সমীকরণ অপরিবর্তিত রয়েছে। মুইজ্জুর দল চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে এবং দেশটিকে একটি দক্ষ অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করে। এ ছাড়াও চিন মলদ্বীপে আরও শক্তিশালী উপস্থিতি এবং দ্বীপদেশটিকে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে বেশ আগ্রহী। 

চিন গত পাঁচ মাসে মলদ্বীপে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রবেশ করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মুইজ্জু নীল, ডিজিটাল এবং সবুজ অর্থনীতি, মানবসম্পদ, দুর্যোগ প্রশমন, মৎস্য, কৃষি, পর্যটন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ২০টিরও বেশি সমঝোতা স্মারক (মউ) স্বাক্ষর করেছে। একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হল এই যে, ইয়ামিনের বিপরীতে কয়েক বছর ধরে চিন ক্রমবর্ধমান ভাবে ক্ষুদ্র সম্প্রদায় উন্নয়ন প্রকল্প এবং অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ করছে। চিন অ্যাম্বুল্যান্স, বেসামরিক যানবাহন, পরীক্ষাগারের সরঞ্জাম এবং ১৫০০ টন বোতলজাত জলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বা প্রদান করেছে। এটি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট, অত্যাধুনিক ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করছে এবং মলদ্বীপে স্মার্ট ইউটিলিটি পরিষেবাও চালু করছে। রাস মালে দ্বীপ এবং এর আবাসন ইউনিটের উন্নয়ন, ভেলানা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ, মালেতে রাস্তাগুলি পুনরুন্নয়ন করা এবং তিন বছরের জন্য সিনামালে সেতুর বিনামূল্যে রক্ষণাবেক্ষণের মতো বেশ কিছু প্রকল্প বেজিংকে দ্বীপদেশটিতে আরও বেশি বাস্তব ভিত্তিতে উপস্থিতি জোরদার করতে সক্ষম করবে। উভয় দেশ একটি কৌশলগত ব্যাপক অংশীদারিত্ব এবং একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। সরকার চিনের গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করতেও সম্মত হয়েছে।

অন্য দিকে, নতুন সরকার ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাস করেছে এবং কিছু কৌশলগত বিনিয়োগে তা যাচাই করে দেখছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চিনা হারবারিং ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা উথুরু থিলা ফালহু-তে (ইউটিএফ) ২০০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করতে, একটি কৃষি শিল্প পার্ক তৈরি করতে এবং ড্রোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে দ্বীপদেশটিকে সজ্জিত করার জন্য মলদ্বীপের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই প্রকল্পটি ভারতের অর্থায়িত ইউটিএফ কোস্টগার্ড বন্দরের মতো একই অঞ্চলে রয়েছে এবং এটি চিনকে ভারতীয় প্রকল্পের উপর সতর্ক নজর রাখতে সাহায্য করতে পারে। চিন কাধধু বিমানবন্দরও তৈরি করবে, যেখানে ভারতীয় সৈন্যদের একটি দল রয়েছে বলে জানা গিয়েছে এবং দ্রুতই বেসামরিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সেটি প্রতিস্থাপিত হবে। সরকার গুলহিফালহু বন্দরটিকে থিলাফুশিতে স্থানান্তর করারও প্রস্তাব করছে এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের জন্য থিলাফুশি বন্দরটি উন্মুক্ত করে দিচ্ছেএমনকি ভারতীয় এক্সিম ব্যাঙ্ক গুলহিফালহু পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থায়ন করেছে এবং শর্ত দিয়ে রেখেছে যে, শুধু মাত্র ভারতীয় সংস্থাগুলিই বন্দরটি বিকাশের কাজ করতে পারে। মুইজ্জু সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, মলদ্বীপে ভারতীয় বেসামরিক বিশেষজ্ঞরা একটি চুক্তির ভিত্তিতে রয়েছেন এবং অস্থায়ী ভাবে দেশে অবস্থান করবেন। মলদ্বীপ প্রতিরক্ষা, খাদ্য আমদানি, স্বাস্থ্য বিমা, ওষুধ এবং পর্যটনের জন্য ভারতের উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে।

পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক বিজয় শুধু মাত্র মুইজ্জুর এই বিদেশনীতিকে উৎসাহিত করবে। এই বিজয় মুইজ্জুর সঙ্গে চিনের পূর্বের সংযমগুলিকে হ্রাস করেছে, যেমন পার্লামেন্টে তাঁর শক্তির অভাব এবং ইয়ামিনের থেকে দূরত্ব। সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফলকে চিন স্বাগত জানানোর ফলে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দ্বীপরাষ্ট্রটির সঙ্গে চিনের সম্পর্ক সম্প্রসারণের ইচ্ছাকে দর্শায়। পার্লামেন্টে একটি অতি সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরুন চিনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আইনটি তেমন বিশেষ নিরীক্ষণ ছাড়াই পাশ করা, প্রকল্পগুলির একতরফা বাতিল (ভারতীয় প্রকল্প-সহ) এবং দ্বীপগুলির বিদেশি মালিকানার মতো আইন পাস করার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে, যেমনটি ইয়ামিনের ক্ষমতায় থাকাকালীন দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়াও, সরকার ২০১৯ সাল থেকে থমকে থাকা অনুন্নত দ্বীপগুলিতে রিসর্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলি পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বিনিয়োগগুলির মধ্যে কিছু চিন থেকে এসেছে এবং এর ফলে উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে সামগ্রিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ভারত চিনের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে কারণ মুইজ্জু চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন।

 

একটি বহুবর্ষব্যাপী সমীকরণ?

এর অর্থ এই নয় যে, মুইজ্জু আগামী পাঁচ বছরে চিনপন্থী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ভাবে সুরক্ষিত থাকবে

একটি অতি সংখ্যাগরিষ্ঠতা কখনওই এই গ্যারান্টি প্রদান করে না যে, সরকার কোনও বিরোধিতা ছাড়াই কাজ করতে পারবে। ক্ষমতাসীন দলের মতোই বিরোধী দলও নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দলের ঐক্যকে হ্রাস করতে সদ্য পাস হওয়া দলত্যাগ-বিরোধী আইনের ফাঁকফোকরগুলি ব্যবহার করবে। পার্লামেন্টে সদস্যদের কাছ থেকে ভোট কেনা এই মেয়াদে আরও ঘন ঘন ঘটতে থাকা ঘটনা হয়ে উঠতে পারে। এর পাশাপাশি এপি, এমডিপি, ডেমোক্র্যাট এবং পিএনএফ সম্ভবত মুইজ্জুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একে অপরকে সহযোগিতা করবে। কোন আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও এই দলগুলি তাদের সদস্যদের, বাস্তবিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জনতাকে একত্রিত করতে এবং সরকারকে এর বাহ্যিক আচরণ-সহ একাধিক ক্ষেত্রে চাপ দিতে পারে। 

একই ভাবে, পিএনসি-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভারতের উদ্দেশ্য সাধনের সব উপায়কে না হলেও বেশ কিছু উপায়কে অবশ্যই খর্ব করবে। পার্লামেন্টে দুর্বল বিরোধীদের সম্মুখে মুইজ্জু একতরফা ভাবে প্রকল্পগুলি বাতিল করতে পারে এবং অর্থনৈতিক খরচ সত্ত্বেও ভারত থেকে স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প, ওষুধ, পর্যটন এবং খাদ্য আমদানিতে বৈচিত্র্য আনতে পারে। কিন্তু ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সহায়তার মতো অন্যান্য সুবিধা নির্বাচনের দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। যদি মুইজ্জু একা মতাদর্শগত এবং ব্যক্তিগত ঝোঁক দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে একটি বাস্তববাদী এবং যুক্তিবাদী পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তা হলে তিনি এই সুবিধাগুলিকে মলদ্বীপের স্বার্থে আরও বেশি করে ব্যবহার করতে সক্ষম হবেএর জন্য তিনি ভারতকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন করে কূটনৈতিক কৌশলের জন্য তাঁর বিকল্পগুলি হ্রাস করতে চান না। তখন সম্ভবত চিনপন্থী ঝোঁক বজায় রাখার পাশাপাশিই মুইজ্জু ভারতের সঙ্গে একটি সহযোগিতার সম্পর্ক বেছে নেবেন।

 


আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো। লেখক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ইন্টার্ন অম্বিকা পাণ্ডের কাছে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.