-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
স্বাধীনতার বিরোধিতা বাদ দিয়ে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ট্রাম্পের তাইওয়ান পদক্ষেপ বেজিংয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এটা কি দর কষাকষি না কি এশীয় নীতি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করে না’ এবং ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে তাইপেইয়ের প্রবেশকে সমর্থন করে… এ হেন বাক্যাংশ জেনেবুঝে বাদ দেওয়ার ফলে বেজিংয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট মূল ভূখণ্ডকে কেবলমাত্র ‘চিন’ বলে উল্লেখ করেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন (পিআরসি) নয়। এগুলি ট্রাম্প প্রশাসনের মূল পরিবর্তন বলে মনে হচ্ছে। নতুন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিওর ‘আগ্রাসী চিন’ শব্দবন্ধের কারণে বেজিংয়ে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ বাক্যাংশটিতে বলা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষের (তাইওয়ান) স্থিতাবস্থায় একতরফা পরিবর্তনের বিরোধিতা করে এবং আন্তঃপ্রণালীর ব্যবধান শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাধান করতে হবে। তার জন্য বলপূর্বক ক্ষমতা প্রদর্শন করা যাবে না এবং প্রণালীর উভয় পাশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য উপায় মেনে চলতে হবে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অর্ধপরিবাহীর আশা রেখেছেন এবং তাইওয়ানের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিল পেন্টাগনের সহযোগিতায় ২০২৪ সালে সমন্বিত সার্কিটের জন্য দু’টি কেন্দ্র চালু করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে তাইওয়ানের অন্তর্ভুক্তির সমর্থনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রস্তাব বেজিংয়ের জোর জবরদস্তির কবলে থাকা দ্বীপপুঞ্জের মানুষের আবেগকে উস্কে দিয়েছে। তাইওয়ানের বিদেশমন্ত্রী লিন চিয়া-লাং তাইওয়ানের প্রতি রুবিওর প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে চিন তাইওয়ানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে দূরে রাখার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রচার চালিয়ে আসছে, এমনকি যদি তাদের পরিধিতে অতিমারি সহযোগিতার মতো বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের পণ্য সম্পৃক্ত থাকে, সেক্ষেত্রেও এমনটা করা হয়েছে। ২০২১ সালে যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারির চরম সীমায় থাকাকালীন অধিবেশন করেছিল - যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করেছিল - তখন সদস্য রাষ্ট্রগুলি বেজিংকে অসন্তুষ্ট করার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে কার্যপ্রণালিতে তাইওয়ানের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেনি। স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ প্রতিরোধে তাইওয়ানের সাফল্যের প্রশংসা করা সত্ত্বেও এমনটা ঘটেছে। এই কারণে, কিছু দেশ প্রাথমিক ভাবে তাইওয়ানকে পর্যবেক্ষক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে তাইওয়ানের অন্তর্ভুক্তির সমর্থনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রস্তাব বেজিংয়ের জোর জবরদস্তির কবলে থাকা দ্বীপপুঞ্জের মানুষের আবেগকে উস্কে দিয়েছে। তাইওয়ানের বিদেশমন্ত্রী লিন চিয়া-লাং তাইওয়ানের প্রতি রুবিওর প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, একটি দ্বীপ হওয়ার দরুন তাইওয়ান ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের জন্য বিমান যোগাযোগের উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভর করত। তাইওয়ানের তাওয়ুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল অষ্টম ব্যস্ততম কার্গো টার্মিনাল। তাইওয়ানের ১৭টি বিমানবন্দরে ২০১৯ সালে প্রায় ৭২ মিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার তরফে তাইপেই নিষিদ্ধ, যা মূলত বিমান চলাচলের মান নির্ধারণের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী সংস্থা। বিশ্ব বিমান চলাচল সংস্থা থেকে তাইপেইকে বাদ দেওয়ার অর্থ হল এটি যৌথ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ এবং প্রযুক্তিগত আন্তঃকার্যক্ষমতা, দূষণহীন গুণমান, মাদকবিরোধিতা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, এমনকি দূরবর্তী ভাবে চালিত বিমানের মতো বিমান প্রযুক্তিতে উদীয়মান উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ ধারণা প্রত্যাখ্যানের পর চিন তাইওয়ানের কূটনৈতিক স্বীকৃতি ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে কাজ করেছে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে-র শপথ গ্রহণ উপলক্ষে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ নাউরু তাইপেই থেকে সরে আসে ও বেজিং-কে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তাইপেই সফরের প্রতিক্রিয়ায় বা ২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট লাই-এর অভিষেক এবং তাইওয়ান জাতীয় দিবসের মতো জাতীয় ও রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলিতে তাইওয়ান বারবার সামরিক মহড়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ জানিয়েছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে তাঁর প্রথম জাতীয় দিবসের ভাষণে জোর দিয়ে বলেছেন যে দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা যাবে না এবং তাইপেইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার কোনও অধিকার বেজিংয়ের নেই। বেজিং সন্দেহ করছে যে, লাই ‘দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্ব’র প্রচার চালাচ্ছেন এবং বেজিং সতর্ক করেছে যে, তাইওয়ানের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হল সংঘাত। পিপলস ডেলির একটি নিবন্ধে তাইওয়ানের অভিজাতদের স্বাধীনতার দিকে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং মূল ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য তাইওয়ানকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাইওয়ান নিজেই আসলে ‘দাবাড়ু এবং নেহাতই দাবার ঘুঁটি নয়… প্রেসিডেন্ট লাইয়ের এই বক্তব্যের উল্লেখ করে তাইওয়ানের চাইনিজ কালচার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কিউ ইয়ি চিনা জাতীয়তাবাদী সংবাদমাধ্যম গুয়াঞ্চায় তাইপেইয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে লিখেছেন। কিউ যুক্তি দেন যে, ১৯৬০ সাল থেকে তাইপেইয়ের রাজনৈতিক অভিজাতরা তাইওয়ানকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার ভরসাযোগ্য বিমানশক্তির ধারক ও বাহক বলে মনে করে আসছে এবং মূল ভূখণ্ডকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পশ্চিমীদের একটি ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। দ্বিতীয়ত, তিনি মনে করেন যে, তাইওয়ানের শাসকগোষ্ঠী ‘ইউ কিয়ান নেং শি হুই তুই মো’ বা [有钱能使鬼推磨] কৌশলে বিশ্বাস করে, যার অর্থ এই যে, তারা তাদের প্রায় ৫৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাষ্ট্রপুঞ্জে দ্বীপটির হয়ে কথা বলে এ হেন ছোট দেশগুলিকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। চিন অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্ধপরিবাহী ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য তাইওয়ানের প্রচেষ্টার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিউ পাল্টা বলেন, তাইপেইয়ের অভিজাতরাও এই ধারণা পোষণ করেন যে, দেশটির চিপ শিল্পের আধিপত্য তাদের ‘শেন শান’ [神山] বা ঐশ্বরিক পর্বতের সুবিধা প্রদান করে যা দেশটিকে বহিরাগত হুমকির বিরুদ্ধে রক্ষা করবে। এই বিশ্বাসগুলি চিনের কূটনৈতিক আক্রমণকে উৎসাহিত করেছে এবং এর ফলে প্রায় ৭০টি দেশ তাইওয়ানের বিরুদ্ধে গিয়ে চিনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বেজিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এই দেশগুলির মধ্যে অনেকেই বলেছে যে, পুনর্মিলনের প্রচেষ্টা সফল করার অধিকার চিনের রয়েছে। সুতরাং, অবরুদ্ধ তাইওয়ানিজদের আশ্বস্ত করার জন্য ট্রাম্পের অর্থগত পরিবর্তন এর চেয়ে উপযুক্ত সময়ে হতে পারত না।
চিনা পক্ষ বিশেষ ভাবে তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন অবস্থান পরিবর্তন করার অনুরোধ করেছিল এবং স্পষ্ট ভাবে বলেছিল যে, তারা স্বাধীনতার সাধারণ ধারণাকে সমর্থন করে না; বরং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে’।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট মূল ভূখণ্ড সম্পর্কে তাদের তথ্যও আপডেট করেছে, যেখানে চিনকে কেবল মূল ভূখণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক গণপ্রজাতন্ত্রী চিন হিসেবে নয়। নতুন ওয়েবপেজে বেজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকারগুলিও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আমেরিকা চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ‘পারস্পরিকতা এবং ন্যায্যতার নীতির অধীনে’ গড়ে তুলতে চায় এবং মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) ‘দুরভিসন্ধিমূলক সাইবার কার্যকলাপ’-এর বিরোধিতা করে। চিন এবং কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে এই স্বতন্ত্র সূক্ষ্মতা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় শুরু হয়েছিল। তৎকালীন সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইকেল পম্পেও ২০২০ সালের জুলাই মাসে রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে তাঁর বক্তৃতার সময় বারবার ‘কমিউনিস্ট চিন’-এর কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই বাক্যাংশটি দর্শায় যে, মার্কিন পদক্ষেপগুলির নিশানায় রয়েছে চিনের শাসনব্যবস্থা, কিন্তু চিনের নাগরিকবৃন্দ নয়। মজার বিষয় হল, মার্কিন প্রশাসন ১৯৩০-এর দশকে নাৎসি জার্মানি সম্পর্কেও একই রকম পার্থক্য নির্মাণের পথে হেঁটেছিল।
সংক্ষেপে বললে, ২০২৩ সালের সান ফ্রান্সিসকো শীর্ষ সম্মেলনের সময় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তাইওয়ানের বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। চিনা পক্ষ বিশেষ ভাবে তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন অবস্থান পরিবর্তন করার অনুরোধ করেছিল এবং স্পষ্ট ভাবে বলেছিল যে, তারা স্বাধীনতার সাধারণ ধারণাকে সমর্থন করে না; বরং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে’। তবে, বাইডেন প্রশাসন এই বিষয়ে নতি স্বীকার করেনি এবং এখন ট্রাম্প প্রশাসন এই বাক্যাংশটি বাদ দিয়েছে যে, তারা তাইওয়ানের ‘স্বাধীনতা’কে সমর্থন করে না। এই ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি সঙ্গে মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন-জাপান-কোরিয়া ত্রিপাক্ষিক সম্মেলনের ঘোষণাও করা হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির একটি অপরিহার্য উপাদান হিসাবে তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, তাইওয়ান এবং চিন সম্পর্কে ট্রাম্পের অর্থপূর্ণ পরিবর্তনগুলি কি বেজিংয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনের তরফে দর কষাকষি বজায় রাখার প্রচেষ্টা না কি ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প এ বার এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুর দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছেন?
কল্পিত এ মানকিকর অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +