ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে তিনি যে পরিবর্তনগুলি আনতে চান তার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়েছে। এমন কোনও ভূগোল নেই যেখানে তাঁর প্রাথমিক পদক্ষেপের প্রভাব পড়েনি। ইতিমধ্যেই অস্থির কৌশলগত পরিস্থিতিতে এগুলি উল্লেখযোগ্য অনির্দেশ্যতা যোগ করেছে। মনে হচ্ছে ট্রাম্পের মার্কিন বিদেশনীতির পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে কোনও আগ্রহ নেই, এবং তিনি কিছু মৌলিক উপায়ে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের রূপরেখা পুনর্নির্মাণ করছেন।
বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ইউরো-আটলান্টিক থেকে ইন্দো-প্যাসিফিকে স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ওয়াশিংটন বেশ কিছুদিন ধরে এই বাধ্যবাধকতার প্রতি সাড়া দিচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ইউরোপ আর আমেরিকার কাছ থেকে আগের মতো মনোযোগ পাবে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপকে এই কথা ভাবতে উৎসাহিত করেছে যে মার্কিন কৌশলগত কাঠামোতে তার মূল্য পুনরুজ্জীবিত হবে। কিন্তু ট্রাম্প এর কোনওটিই মানছেন না। তিনি শুধু ইউরোপকে তার নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে বলে দাবিই করছেন না, বরং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে তিনি ইউরোপের জন্য ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
মনে হচ্ছে ট্রাম্পের মার্কিন বিদেশনীতির পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে কোনও আগ্রহ নেই, এবং তিনি কিছু মৌলিক উপায়ে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের রূপরেখা পুনর্নির্মাণ করছেন
ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে এই সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত ছিল, কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের নেতৃত্ব নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিতে অনিচ্ছুক ছিল। ইউরোপের জন্য কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন শুধু শিক্ষাক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল; অন্যদিকে এর ক্ষয়িষ্ণুতা শুধু তার স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াতেই অক্ষম ছিল না, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্রমবর্ধমান বোঝাও ছিল। আমেরিকা যখন চিনকে তার কেন্দ্রীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইন্দো-প্যাসিফিককে তার গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মঞ্চ হিসাবে দেখছে, তখন একটি দুর্বল ও বিভক্ত ইউরোপকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। ট্রাম্পের 'আমেরিকা প্রথম' পদ্ধতি মার্কিন বিদেশনীতিতে এই কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এটি চিন এবং সাধারণভাবে পূর্বের উপর নতুন করে ফোকাসের সঙ্গে যুক্ত। ট্রাম্পের বিশ্বাস যে চিনের বাণিজ্য অনুশীলনগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যায্য, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে শুধু নানাভাবে সুবিধা নেওয়া হয়েছে; এবং এই বিশ্বাসই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি তৈরি করে। এর ফলে তিনি যেমন চিনা ও মার্কিন অর্থনীতির বিচ্ছিন্নকরণের জন্য চাপ দেন, তেমনই ম্যানুফ্যাকচারিংকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনার এবং চিনের উপর নির্ভরতা কমানোর উপর জোর দেন। প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতাও এখন এই প্রচারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কারণ চিন গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতাও এখন এই প্রচারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কারণ চিন গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্পের বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, "যদি আমরা [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র] পথ পরিবর্তন না করি, তাহলে আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করব যেখানে আমাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পর্যন্ত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রাত্যহিক কাজগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিনারা আমাদের তা করতে দেয় কি না তার উপর নির্ভর করবে।" ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তাইওয়ানের বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে আসে যখন মার্কিন বিদেশ দপ্তর তাইওয়ানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের উপর তাদের অনলাইন তথ্যপত্রের 'নিয়মিত' আপডেট থেকে ‘আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করি না’ লাইনটি বাদ দেয়। এটি ওয়াশিংটনের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান থেকে বিচ্যুতি। চিনাদের তরফে তাৎক্ষণিকভাবে এর তিরস্কার করা হয় এবং এই লাইনটি অপসারণের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে তার ভুল সংশোধন’ করতে বলা হয়, এবং জানিয়ে দেওয়া হয যে, অন্যথায় সম্পর্কের ‘আরও গুরুতর ক্ষতি’ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
ভারতের জন্য, ট্রাম্প একটি ধাঁধা তৈরি করেন। একদিকে, তাঁর অনির্দেশ্যতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পৃক্ততা এবং ক্রমাগত সমন্বয় প্রয়োজন। অন্যদিকে, নয়াদিল্লির জন্য নতুন সুযোগও তৈরি হয়েছে, কারণ যা ভারতীয় স্বার্থের জন্য খুব একটা কাজে আসেনি সেই পুরনো কৌশলগত স্থাপত্য আর নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক মার্কিন সফর পরবর্তী চার বছরের অ্যাজেন্ডার ভিত্তি স্থাপনে সফল হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশ স্পষ্ট।
ধূসর জগতে ভারতীয় কূটনীতি সমৃদ্ধ হয়, কিন্তু ট্রাম্পের পুরোটাই কালো-সাদা। ভারত এই বাহ্যিক চাপ ব্যবহার করে নিজের ঘর সাজাতে পারে, এবং যেখানে অলসতা ছিল সেখানে পরিবর্তন আনতে পারে।
এখন ভারতের দায়িত্ব হল ওয়াশিংটনের প্রশাসনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং স্পষ্ট ফলাফল অর্জনের চেষ্টা করা। ধূসর জগতে ভারতীয় কূটনীতি সমৃদ্ধ হয়, কিন্তু ট্রাম্পের পুরোটাই কালো-সাদা। ভারত এই বাহ্যিক চাপ ব্যবহার করে নিজের ঘর সাজাতে পারে, এবং যেখানে অলসতা ছিল সেখানে পরিবর্তন আনতে পারে।
ভারতীয় কূটনীতি কৌশলগত ধৈর্যের অনুসরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, কিন্তু ট্রাম্পের আমেরিকা তাড়াহুড়ো করছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সমস্যা থেকে শুরু করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির 'মধ্যম পথে' থাকার জন্য পুরনো যুক্তিগুলি এখন পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। ভারত কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুতর বাণিজ্য অ্যাজেন্ডা এগিয়ে নিতে যেতে পারবে? ভারত কি স্বল্পমেয়াদে মার্কিন অস্ত্র কেনার সুবিধার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তার আত্মনির্ভর পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা পূরণ করতে পারবে? দেশটি কি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার কূটনৈতিক অবস্থানের ধার আরও তীক্ষ্ণ করতে পারবে? এই প্রশ্নগুলি এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। সেমিনার কক্ষ ও থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সার্কিটগুলিতে ট্রাম্পের সমালোচনা অব্যাহত থাকবে, তবে ট্রাম্পকে ম্যানেজ করার কাজটি বাস্তব সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। চ্যালেঞ্জটি স্পষ্ট কিন্তু অনিবার্য।
এই মন্তব্যটি প্রথম মিন্ট -এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.