-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব ডব্লিউএমও রিপোর্টকে পৃথিবী দিবস ২০২৩–এর স্লোগান ‘আমাদের গ্রহে বিনিয়োগ করুন’–এর সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন
গত টানা আটটি বছর, ২০১৫–২০২২, ছিল বিশ্বব্যাপী রেকর্ড অনুযায়ী আটটি উষ্ণতম বছর। ২২ এপ্রিল ২০২৩–এ বিশ্ব পৃথিবী দিবসের ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ ২১ এপ্রিল, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) দ্বারা জেনিভায় প্রকাশিত স্টেটঅফদ্যগ্লোবালক্লাইমেট২০২২রিপোর্টে (১) এ কথা জানানো হয়। ঘটনাক্রমে প্যারিস চুক্তি (৩), যা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর চলতি বিশ্বব্যাপী আলোচনার মূল ভিত্তি হিসাবে কাজ করে, তা ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত যদি লা নিনা নামক আবহাওয়াজনিত ঘটনাটি, যা আবহাওয়ার উপর শীতল প্রভাব ফেলে, গত তিন বছরে না ঘটত। প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতার জন্য ব্যাপকভাবে বর্ধিত বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার (২) উপর, বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্বল দেশ ও সম্প্রদায়গুলির জন্য যারা সংকট সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে কম দায়ী।
প্যারিস চুক্তি এই জলবায়ু সঙ্কটের জন্য প্রধানত দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানিগুলিকে সুষমভাবে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ২০১৫ সালের জলবায়ু চুক্তির পরিপূরক হিসাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংহতির মাধ্যমে সবুজ রূপান্তরের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তির আকারে একটি নতুন বৈশ্বিক কাঠামো প্রয়োজন।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে সাম্প্রতিক ডব্লিউএমও রিপোর্টের অনুসন্ধান, এবং এর ফলাফলগুলি সেই অভিযোগের প্রমাণ, যা সুশীল সমাজ বরাবরই করে আসছে। অভিযোগটি হল বেশিরভাগ শিল্পোন্নত ও নির্গমনকারী দেশগুলি তাদের জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা তাদের দায়িত্ব পালন করছে না।
এই বিষয়টি স্পষ্ট যে প্যারিস চুক্তি এই জলবায়ু সঙ্কটের জন্য প্রধানত দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানিগুলিকে সুষমভাবে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ২০১৫ সালের জলবায়ু চুক্তির পরিপূরক হিসাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংহতির মাধ্যমে সবুজ রূপান্তরের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তির আকারে একটি নতুন বৈশ্বিক কাঠামো প্রয়োজন।
ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজি–র প্রধান হরজিৎ সিং, যিনি সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের হানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত রূপান্তর কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে বর্তমান জলবায়ু প্রভাবগুলি শিল্পোন্নত দেশগুলি থেকে ঐতিহাসিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফল, এবং তাদের অবশ্যই দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বাদ দিতে হবে, আর সেইসঙ্গে উচ্চাভিলাষী জলবায়ু কর্মের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সমর্থন করতে হবে।
জলবায়ুর রেকর্ড বদল
রিপোর্টটি দেখায় যে রেকর্ড পারদ বৃদ্ধি ছাড়াও ২০২২ সালে আরও বেশ কয়েকটি জলবায়ু রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে:
জলবায়ু উদ্বেগ আরও বাড়ে অন্যান্য সংকটের কারণে
ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি ডব্লিউএমও দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে। ডব্লিউএমও–র মহাসচিব প্রফেসর পেটেরি টালাসের মতে, ডব্লিউএমও বার্ষিক প্রতিবেদনে আবারও এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করা হয়েছে যে কীভাবে পর্বতশৃঙ্গ থেকে শুরু করে সমুদ্রের গভীরতায় ২০২২ সালে জলবায়ু পরিবর্তন তার পরিধি বৃদ্ধি করেছে (২)। জলবায়ু ক্ষতির অর্থনৈতিক দিকটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে খরা, বন্যা ও তাপপ্রবাহ ভারত–সহ প্রতিটি মহাদেশে জনসম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে, এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তার মূল্য বহু বিলিয়ন ডলার হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যার কারণে পাকিস্তান একাই ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছে, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি হয়েছে ৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে বিপজ্জনক জলবায়ুগত প্রভাব এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি কীভাবে নতুন জনসংখ্যার বাস্তুচ্যুতি ঘটিয়েছে এবং ২০২২ সালের শুরুতে ইতিমধ্যেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বসবাসকারী ৯৫ মিলিয়ন মানুষের অনেকের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।
ঘটনাচক্রে, পুরোটাই এখনও শেষ হয়ে যায়নি, কারণ ডব্লিউএমও মূল্যায়নে ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা’কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা চরম আবহাওয়া ও জলবায়ু ঘটনাগুলির দ্বারা সৃষ্ট মানবিক প্রভাবগুলি মোকাবিলায়, বিশেষত সংশ্লিষ্ট মৃত্যুহার ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে, অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী অতিমারির চাপের সঙ্গে জলবায়ু চালকগুলি ও বিশ্বব্যাপী দ্বন্দ্বের সম্মিলিত প্রভাবও তুলে ধরা হয়েছে, এবং এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে অপুষ্টি ক্রমশ বেড়েছে হাইড্রোমেটিওরোলজিক্যাল বিপদ ও কোভিড–১৯–এর যৌগিক প্রভাব, এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের ফলে।
প্রতিবেদনে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে বিপজ্জনক জলবায়ুগত প্রভাব এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি কীভাবে নতুন জনসংখ্যার বাস্তুচ্যুতি ঘটিয়েছে এবং ২০২২ সালের শুরুতে ইতিমধ্যেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বসবাসকারী ৯৫ মিলিয়ন মানুষের অনেকের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।
জলবায়ু বিশ্লেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে বিশ্বের ‘উপকরণ, জ্ঞান ও সমাধান’ থাকলেও তার বাস্তবায়নের গতির অভাব রয়েছে; এবং তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করার জন্য যদি দ্রুত গভীরতর নির্গমন হ্রাস–সহ ত্বরান্বিত জলবায়ু সক্রিয়তা গ্রহণ না–করা হয়, পৃথিবী ধ্বংসের দিকে একমুখী পথে এগোতে থাকবে।
জয়ন্ত বসু ‘দ্য টেলিগ্রাফ’, এবিপি–র পরিবেশ বিষয়ক সংবাদদাতা; প্লুরাল এনভায়রনমেন্ট নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি; এবং সাউথ এশিয়ান এডিটর, দ্য ক্লাইমেট টিভি চ্যানেল, কানাডা।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.