-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
শি জিনপিং থেকে শুরু করে ভ্লাদিমির পুতিন হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত… সকলের ক্ষেত্রেই সামরিক শক্তির বৃহৎ কৌশলগুলি ১৯৪৫ সালের পূর্ববর্তী অরাজকতার প্রত্যাবর্তনের পথের সূচনা করেছে। তাই এখন প্রতিটি সার্বভৌম শক্তিই একা দাঁড়িয়ে আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প পরিশীলিত আলাপ-আলোচনার কফিনে তৃতীয় পেরেকটি পুঁতে দিচ্ছেন, যেটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হিসাবে পরিচিত। তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মহান কৌশলের অংশ হিসাবে ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলি কেবল মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নেই।
উদাহরণস্বরূপ, পানামা খাল বা ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে ট্রাম্প কার্যকর ভাবে দ্বিতীয় প্রত্যাঘাতটিকে আন্তর্জাতিক আইনহীনতার বৈধতা দিচ্ছেন, যা রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৃহৎ কৌশলের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
একই ভাবে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শুল্কের নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি কূটনীতি, প্রযুক্তি ও এমনকি নাগরিকদের বাণিজ্যের অস্ত্রায়নের মাধ্যমে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিশ্ব আধিপত্যের মহা কৌশলের পদক্ষেপগুলিকেও বৈধতা দিচ্ছেন।
কার্যত ট্রাম্প এমন এক বার্তার প্রচার করছেন, যে বিষয়ে অবশিষ্ট বিশ্ব দীর্ঘদিন যাবৎ অবগত: আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা কার্যকর করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই ব্যবস্থা থেকে তাঁর আগ্রাসী প্রত্যাহার ব্যর্থতাকেই স্বীকৃতি দেয়। ফলস্বরূপ, স্বল্পমেয়াদি জাতীয় স্বার্থগুলি দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দেবে। তাই আগামিদিনে প্রতিটি দেশই একাই দাঁড়িয়ে থাকবে।
একই ভাবে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শুল্কের নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি কূটনীতি, প্রযুক্তি ও এমনকি নাগরিকদের বাণিজ্যের অস্ত্রায়নের মাধ্যমে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিশ্ব আধিপত্যের মহা কৌশলের পদক্ষেপগুলিকেও বৈধতা দিচ্ছেন।
২০২৫ সালে তিনটি বৃহৎ শক্তি একই সঙ্গে তাদের অভিন্ন সাধারণ লক্ষ্য দ্বারা সংযুক্ত হয়েছে। সেই লক্ষ্য হল ১৯৪৫ সালের ৮০ বছরের পুরনো নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা দ্বারা সৃষ্ট নিরাপত্তা-শান্তি-সমৃদ্ধি ত্রয়ী্র অবসান ঘটানো, যেটিতে ১৯৩টি দেশ স্বাক্ষর করেছিল। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার এই দশমুখী কাঠামোর ১০টি শাখা রয়েছে:
১. এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ দ্বারা পরিচালিত।
২. এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) মাধ্যমে স্ব-আরোপিত শান্তির অভিভাবকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যাদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিনজনই এই শৃঙ্খলার ব্যাঘাতে জড়িত।
৩. এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের বৃহত্তর অথচ দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে মঞ্চ করে তুলেছে এবং তা ইউএনএসি-র বিশ্বাসযোগ্যতার নিরিখে এক প্রহসন।
৪. এটি কাব্যিক ভাবে স্পষ্ট করে দিলেও জেনেভা কনভেনশনের মাধ্যমে সংঘাতে বর্বরতা কমাতে কার্যত অক্ষম। নিরীহ মানুষের মৃত্যুর স্বাভাবিকীকরণ করা হয়েছে; অন্য দিকে, বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
৫. এটি মানবাধিকার সুরক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অথচ দুর্বল প্রতিষ্ঠান এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র। এটি এমন একটি ধারণা, যেটিকে সংস্কারের পরিবর্তে পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। এটিকে একটি মানবাধিকার সমস্যা হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, এবং এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তি দুর্বল হয়েছে।
৬. এটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধের মতো নির্দিষ্ট চুক্তিগুলির মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। চিন ও রাশিয়া দ্বারা এই চুক্তিগুলি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দুর্বৃত্ত দেশ তৈরি করা হয়েছে। এটি অন্যান্য দেশকে পারমাণবিক ক্ষমতা গড়ে তুলতেও বাধা দেয়।
৭. এটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত পরিচালনা করে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও রাশিয়া কেউই স্বাক্ষরকারী নয় এবং তারা কেউই আদালতের রায় মেনে চলে না। এই নিয়মগুলি নীতিনির্মাতাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
৮. এটি ১৯৪৪ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থায়ন তদারকি করার জন্য ব্রেটন উডস ইনস্টিটিউশন তৈরি করেছিল এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ইউরোপ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (বিশ্ব ব্যাঙ্ক গ্রুপ) এগুলির দখল নেয়।
৯. এটি ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে শুল্কের সাহায্যে পণ্য ও পরিষেবার প্রবাহ পরিচালনা করার জন্য বিশ্ব বাণিজ্যের পুনর্কল্পনা করেছিল, যা চিন প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
১০. এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংস্থা তৈরি করেছিল, যা চিন ব্যবহার করেছে, দখল করেছে এবং যেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে এসেছে। অন্য সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, রাষ্ট্রপুঞ্জ উন্নয়ন কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা।
এই দু’টির মধ্যে একটি উচ্চ বেতনভোগী বিশ্বব্যাপী অভিজাত শ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে, যারা বিশ্ব জুড়ে কোষাগারের অপব্যবহার করে চলেছে এবং বিদ্রুপাত্মক ভাবে এই বাড়াবাড়ি ও অদক্ষতার অর্থায়নকারীও বটে। এই ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন এবং ট্রাম্প সম্ভবত সেই শক্তি, যিনি এটিকে ভেঙে ফেলতে পারেন।
আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত এই জটিল ব্যবস্থার অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে নিয়ম তৈরির অধিকার এবং সেগুলি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতার মধ্যে ব্যবধান আরও বিস্তৃত হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিশ্ব দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে - নিয়ম প্রণেতা এবং নিয়ম গ্রহণকারী।
জাপান ও জার্মানি বাণিজ্য ও কল্যাণক্ষেত্রে এত ব্যস্ত যে, নিরাপত্তার দিকে তেমন মনোযোগ দিতে পারছে না এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের উভয় সদস্য অর্থাৎ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ভেতর থেকে ফেটে পড়ছে। ফলে একবিংশ শতাব্দীর উদীয়মান ক্ষমতা কাঠামোগুলি পরিবর্তিত হচ্ছে।
সরলতা ও সংশয়ের অবস্থান পেরিয়ে আরও এগোলে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তা হল: বিশ্ব এখন যা মেনে নিয়েছে, তা আদতে এক ধরনের প্রহসন। এই উপহাসের শব্দভাণ্ডারকে বলা হয় নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। এর ভাষা তথাকথিত নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা; এর কাঠামো ক্ষমতা-চালিত এবং অল্প কিছু লোক দ্বারা বহু মানুষের উপর নিজের ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারকেই দর্শায়। ১৯৮০-এর দশক থেকে চিনের উত্থান ও ২০১০-এর দশকে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং তার পরের দিকে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া, ২০২২ সালে ইউক্রেন… আগ্রাসনের লড়াই হয়েছে পশ্চিমীদের সঙ্গে অবশিষ্ট বিশ্বের। বর্তমানে যখন চিন ১২০টিরও বেশি দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় (২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত) এলএনজি-র বৃহত্তম রফতানিকারক, তখন এ হেন প্রহসন কিছুটা গণতন্ত্রায়িত হয়েছে বলা যায়।
রাশিয়ার গ্যাস ও পুতিনের যুদ্ধে অর্থায়ন করার সময় পশ্চিমীদের তরফে ভারতকে নৈতিক জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। জাপান ও জার্মানি বাণিজ্য ও কল্যাণক্ষেত্রে এত ব্যস্ত যে, নিরাপত্তার দিকে তেমন মনোযোগ দিতে পারছে না এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের উভয় সদস্য অর্থাৎ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ভেতর থেকে ফেটে পড়ছে। ফলে একবিংশ শতাব্দীর উদীয়মান ক্ষমতা কাঠামোগুলি পরিবর্তিত হচ্ছে।
বাদামি ও সবুজ স্থল সীমান্তের ভৌগোলিক অঞ্চলে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে - রাশিয়া বনাম ইউক্রেন, যা রাশিয়া বনাম ইউরোপে বিস্তৃত হতে পারে; হামাস ও হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইজরায়েল বনাম ফিলিস্তিন অবধি লড়াই গড়াতে পারে; ইরান বনাম ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; উত্তর কোরিয়া বনাম দক্ষিণ কোরিয়া – ভবিষ্যতের ক্ষমতার খেলা নদী, সমুদ্র এবং মহাসাগরের নীল পরিসরেও ছড়িয়ে পড়বে। অনানুষ্ঠানিক ভাবে, দক্ষিণ চিন সাগরে চিন বনাম ফিলিপিন্স এবং চিন বনাম তাইওয়ানের লড়াই শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই জলরাশি সংক্রান্ত যুদ্ধও শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার স্ব-নিযুক্ত অভিভাবকরা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়া এখন এই নিয়মের লঙ্ঘনে লিপ্ত হচ্ছে এবং এই সত্যটি আগামী শতাব্দীর অবস্থার পূর্বাভাস দেয়। অবশ্য সুদান, হাইতি, মায়ানমার ও বাংলাদেশ জুড়ে একাধিক যুদ্ধের কথার উল্লেখ না করেই এমনটা বলা যায়।
ক্ষমতার ভারসাম্যের অন্তর্নিহিত বাস্তবতা ভারতের মতো দেশ এবং জি২০-র মতো ন্যায্য, বিস্তৃত ও আরও গণতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলির দিকে সরে এসেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের এই পরিবর্তন যতটা সার্বভৌম বিষয়ক, ততটাই এটি সমুদ্র এবং মহাসাগরের উপর পরিচালিত ৩৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শক্তিশালী নীল অর্থনীতির একটি বৃহত্তর বহুপাক্ষিক অভিভাবকত্ব সম্পর্কিতও। এমনকি সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তিগুলিও একক ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে না।
বিশ্ব শান্তির জন্য একটি সত্যিকারের রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রয়োজনীয়তা আজকের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আগে কখনও হয়নি।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতাই প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি। জলদস্যুতা থেকে শুরু করে একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি লঙ্ঘন পর্যন্ত… সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দলগত কার্যকারিতার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নতুন বাস্তবতাও বিদ্যমান। বিশ্ব শান্তির জন্য একটি সত্যিকারের রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রয়োজনীয়তা আজকের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আগে কখনও হয়নি। তবুও, এই প্রয়োজনীয়তাকে অন্তর্নিহিত বাস্তবতাগুলির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করে তোলা প্রয়োজন।
সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হল অর্থনৈতিক। ১৯৬০ সালে বিশ্বের জিডিপিতে পি৫-র (রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি দেশ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং রাশিয়া) মোট দেশজ উৎপাদনের অংশ ছিল ৭৩.১ শতাংশ। ২০২৩ সালে এটি ৫০.৪ শতাংশে নেমে এসেছে; যা ২২.৭ শতাংশ পতনকেই দর্শায়। ১৯৬০ সালে দু’টি বৃহত্তম অর্থনৈতিক ব্লকের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সম্মিলিত জিডিপির অংশ ছিল ৫৮.৯ শতাংশ; ২০২৩ সালে, দু’টি বৃহত্তম অর্থনৈতিক ব্লকের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ) ছিল ৪৩.২ শতাংশ; যা ১৫.৭ শতাংশ পতনকেই দর্শায়।
১৯৬০ সালে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির অংশ ছিল ৩৯.৬ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে ২৫.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; যা ১৩.৯ শতাংশ পতনকেই দর্শায়। একই সময়ে চিনের জিডিপির অংশ ৪.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; ভারতের ২.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; ইইউ-র ২০.৭ শতাংশ থেকে কমে ১৭.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সর্বোপরি, ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মধ্যে, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি পূর্ব দিকে ভারত, চিন এবং ইন্দোনেশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। যে কোনও নতুন নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার জন্য এই পরিবর্তনকে জায়গা করে দিতে হবে।
যদিও স্বল্পমেয়াদে এর কিছুই ঘটবে না। বিপরীতে, আমেরিকা, চিন ও রাশিয়ার মধ্যে একই ধরনের খামখেয়ালি শাসন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যখন ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন নীতির কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। চিন ও রাশিয়া তাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমতার ব্যবহার করছে বলে দেখা গিয়েছে এবং অন্য দিকে আমেরিকা ও ইইউ গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করার মূল্যবোধের ধ্বজা ধরে রেখেছিল।
ট্রাম্প বিশ্বের মূল আলোচনার বিষয়ের নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠছেন এবং যেগুলিকে তিনি এক সময়ে নিজেই নিন্দা করতেন, এখন নিজেই সেগুলির দিকে ঝুঁকছেন। অর্থাৎ নতুন ব্যবস্থা নিয়মভিত্তিক হওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাভিত্তিক হয়ে উঠছে। ট্রাম্প, শি ও পুতিন প্রত্যেককেই একটি নতুন ভারসাম্য খুঁজে পেতে গেলে বাকি দুই শক্তির জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। ট্রাম্প কর্তৃত্ববাদকে আলিঙ্গন করবেন, পুতিনকে সম্প্রসারণবাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং শি-কে সংশোধনবাদ ত্যাগ করতে হবে। তিনটি মহা কৌশল এখনও সুপ্ত থাকলেও সংঘর্ষের দিন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। এখন সুপ্ত থাকা কৌশলগুলি তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যকর হয়ে উঠবে।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যখন ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন নীতির কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। চিন ও রাশিয়া তাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমতার ব্যবহার করছে বলে দেখা গিয়েছে এবং অন্য দিকে আমেরিকা ও ইইউ গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করার মূল্যবোধের ধ্বজা ধরে রেখেছিল।
পৃথিবীতে যখন বৃহৎ শক্তিগুলি নিজের স্বার্থে মগ্ন, তখন বাকি বিশ্ব নীরবে তা প্রত্যক্ষ করছে। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো মহাদেশগুলি নিরাপত্তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করবে ও আশ্বাসে নিজেদের সঙ্ঘবদ্ধ করবে। ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও সশক্ত করবে। যেসব সংস্থা ভৌত ও ডিজিটাল উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করে, তারা নতুন স্টক মার্কেটের নয়নের মণি হয়ে উঠবে।
সার্বভৌমদের উপর পারস্পরিক সন্দেহের কুয়াশা নেমে আসবে। ক্ষমতা দখল ও বর্ধিতকরণ হবে স্বৈরাচারীদের একমাত্র লক্ষ্য। গণতান্ত্রিক আলোচনা কর্তৃত্ববাদ সশক্ত করার পথ তৈরি করবে। অর্থনৈতিক আহরণের জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মহান কৌশলের শক্তি সঙ্কুচিত হবে। ‘মূল্যবোধ’ বা ‘বিশ্বাস’-এর মতো ধারণাগুলি মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
ফলস্বরূপ, বিশ্ব আরও বেশি অন্তর্মুখী হয়ে উঠবে, বাণিজ্য সীমিত হবে এবং বাজার স্থানীয় হয়ে উঠবে। এটি শক্তিশালী এবং শক্তিহীন উভয় দেশের জন্যই ক্ষতি করবে। আশা করা যায় যে, ৬০ মিলিয়ন মানুষের প্রাণের মূল্য না চুকিয়েই বিশ্ব ১৯৩৯ সালের দোরগোড়ায় ফিরে যাবে। নেতৃত্বহীন নেতাদের শূন্যস্থানে চালিকাশক্তি ছাড়াই ভেসে বেড়ানো মানুষ ও ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে নৈতিক ভাবে দেউলিয়া এই শূন্যস্থানে, নতুন খেলোয়াড়, নতুন শক্তিকেন্দ্র ও নতুন উদ্ভব-সহ একটি নতুন আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা হবে।
বর্তমান ব্যবস্থার ব্যর্থতা নতুনও নয়, শেষ বারও নয়। প্রথম ব্যর্থতাটি ছিল ১৮১৫ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে কনসার্ট অফ ইউরোপ; দ্বিতীয়টি ছিল ১৯১৯ থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে লিগ অফ নেশনস; এবং তৃতীয়টি হল ইউনাইটেড নেশনস, যার ব্যর্থতা আজ আমাদের সামনে সুস্পষ্ট।
সম্ভবত বর্তমান নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার ভাঙন তার বিকৃত সৃষ্টিতে নিহিত ছিল। সম্ভবত বিশ্ব যেমন ভাবে বিকশিত হওয়া উচিত ছিল, তেমন ভাবে বিকশিত হয়নি। সম্ভবত, ক্ষমতা নিজেই নিয়মের সীমাবদ্ধতার দরুন ক্ষুণ্ণ। যা-ই হোক না কেন, ইতিহাসের বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করার মতো একমাত্র জিনিস হল - ১৯৪৫ সালের আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা কি নেহাতই সময়ের সুবিধা, প্রত্যাশার মরীচিকা বা দুর্বলদের ফাঁদে ফেলার স্বরূপ না কি তা ছিল কেবলই ক্ষমতার পুনর্ব্যবহার!
গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Gautam Chikermane is Vice President at Observer Research Foundation, New Delhi. His areas of research are grand strategy, economics, and foreign policy. He speaks to ...
Read More +