Published on Jan 27, 2023 Updated 0 Hours ago

কয়েক বছরের মধ্যে পিআরসি সফল ভাবে তাইওয়ানকে তার সীমানার অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির জন্য চিনকে তাদের কৌশলগত পরিধির মধ্যে বিবেচনা করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে

চিন তাইওয়ান দখল করলে জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের উপর তার প্রভাব

তাইওয়ান উপকূলের কাছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক মহড়া চিনা সামরিক শক্তির সর্বশেষ প্রদর্শন। তাইওয়ানের সমুদ্র এবং আকাশসীমার কাছাকাছি পরিচালিত হওয়া এই মহড়াকে বেজিং ‘স্ট্রাইক ড্রিল’ বলে অভিহিত করেছে। এই মহড়াগুলি দ্বীপটিতে আক্রমণ চালানোর একটি ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার পূর্বাভাস দেয়, যে দ্বীপকে বেজিং একটি বিশ্বাসঘাতক দ্বীপ হিসাবে মনে করে।

এর আগে ২০২২ সালের অগস্ট মাসে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (পিআরসি) তাইওয়ানের প্রধান দ্বীপের চারপাশে ব্যাপক যুদ্ধ-মহড়া চালায়। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের পরে পরেই এই ঘটনা ঘটে। এই সামরিক মহড়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব হল এই যে, তাইওয়ান চিনা  আক্রমণের বাস্তব সম্ভাবনার মুখোমুখি, যে সম্ভাবনা বিগত বছরগুলিতেও তেমন প্রকট ছিল না।

সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ডেপুটি ডিরেক্টর ডেভিড কোহেনের মতে, চিনারা ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণ এবং দখল করার ক্ষমতা অর্জনে প্রস্তুত বা অন্তত সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে, যা কি না এই প্রতিবেদন লেখার সময় থেকে মাত্র চার বছর দূরে রয়েছে। এই মন্তব্যগুলিকে প্রাক্তন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল ডেভিড ডেভিডসন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি এর আগে একই রকমে মন্তব্যে জানিয়েছিলেন যে, পিআরসি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে দ্বীপটিকে আক্রমণ করতে পারে। এমনকি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০৫০ সালের মধ্যে তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পুনর্যুক্ত করা হতে পারে। তবে পিআরসি স্পষ্টতই তাইওয়ান প্রণালীতে মিডিয়ান লাইন লঙ্ঘন করে সেই লক্ষ্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রমাণ দিয়েছে, যেমনটা ২০২২ সালের অগস্ট মাসের সঙ্কটকাল পর্যন্ত জারি ছিল। এ ভাবেই বেজিং সম্ভবত ২০৫০ সালের সময়সীমাকে প্রায় দুই দশক এগিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছে।

পিপলস লিবারেশন আর্মি আর্মি (পিএলএএ) উভচর আক্রমণ মিশনে ব্যাপক পুনর্গঠন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে যা তাইওয়ানের সংযুক্তিকরণে চিনা অগ্রাধিকারকেই প্রতিফলিত করে।

তাইওয়ানের উপর সফলভাবে আক্রমণ চালানোর জন্য পিআরসি উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পিপলস লিবারেশন আর্মি আর্মি (পিএলএএ) উভচর আক্রমণ মিশনে ব্যাপক পুনর্গঠন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে যা তাইওয়ানের সংযুক্তিকরণে চিনা অগ্রাধিকারকেই প্রতিফলিত করে। পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি (পিএলএএন) তার দিক থেকে পিআরসি আক্রমণে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যক্তিগত অথবা সম্মিলিত হস্তক্ষেপ রোধ করার জন্য বিমান-বিরোধী, সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধ এবং ভূ-পৃষ্ঠ-বিরোধী যুদ্ধক্ষমতার সম্পূর্ণ পরিসরকে শক্তিশালী করে তুলেছে।

পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) তাইওয়ান আক্রমণের জন্য সক্ষমতা সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টা জোরদার করতে অসংখ্য বিমান সংগ্রহ করছে যার জন্য মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হবে না। পিএলএএএফকে স্থল আক্রমণ এবং বিমান হামলা চালানোর জন্যও ঢেলে সাজানো হয়েছে। চিনের মূল ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি এবং বিভিন্ন বসতিকেন্দ্রে অ্যান্টি-অ্যাক্সেস / এরিয়া-ডিনায়াল (এটু/এডি) ব্যবস্থা সমন্বিত ঘনসন্নিবদ্ধ বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ রুখতে পিএলএএএফ-এর ফাইটার উইংয়ের কার্যকরী সীমা এবং টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়াতে পিএলএএএফ-এর মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।

তাইওয়ানের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল (সি২) নেটওয়ার্ক, রাডার ব্যবস্থার  নেটওয়ার্ক, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা স্থাপনা এবং সর্বোপরি নেতৃত্বঘাঁটির মতো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলির উপর হামলা চালানোর জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি রকেট ফোর্সের (পিএলএআরএফ) প্রস্তুতি এই প্রচেষ্টার পরিপূরক। পিপলস লিবারেশন আর্মি স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (পিএলএএসএসএফ) সাইবার এবং ইলেকট্রনিক আক্রমণকে একত্র করে তথ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সর্বোপরি পিপলস লিবারেশন আর্মি জয়েন্ট লজিস্টিকস সাপোর্ট ফোর্সের (পিএলএজেএলএসএফ) প্রাথমিক লক্ষ্য হল পিএলএ-র জন্য কৌশলগত এবং প্রচারগত পর্যায়ে যৌথ লজিস্টিকস সহায়তার ব্যবস্থা করা। এর মধ্যে সি২-সম্পর্কিত লজিস্টিকস, এবং গোলাবারুদ থেকে শুরু করে চিকিৎসার প্রয়োজন সংক্রান্ত সরবরাহও অন্তর্ভুক্ত। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মতো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলির জন্য সামরিক উপায়ে চিনের সফল তাইওয়ান দখলের প্রভাব কী হতে পারে? সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বা তাইওয়ানের পতন পিআরসি-র জন্য এই অঞ্চলটি অতিক্রমকারী ক্রিটিক্যাল সি লাইনস অফ কমিউনিকেশন-সহ (এসএলওসি) ফার্স্ট আইল্যান্ড চেনকে (এফআইসি) সরাসরি চিনা হুমকির আওতায় আনার পথ প্রশস্ত করবে। তাইওয়ান ছাড়াও এফআইসির অধীনে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ, প্রধান জাপানি আর্কিপেলাগো, ওকিনাওয়া, মালয় উপদ্বীপ এবং ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের উত্তর দিকের দ্বীপগুলি অন্তর্ভুক্ত। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চিনাদের সামরিক উপস্থিতি প্রসারিত করার জন্য এফআইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে।

পিপলস লিবারেশন আর্মি স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (পিএলএএসএসএফ) সাইবার এবং ইলেকট্রনিক আক্রমণকে একত্র করে তথ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিবিড় ভাবে কাজ করছে।

ভারত থেকে তাইওয়ানের ভৌগোলিক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে এর ফলাফল নেহাত উপেক্ষা করা সম্ভব নয়, যা ইতিমধ্যেই একটি ব্যাপকভাবে সামরিকীকরণ হওয়া স্থলসীমান্ত বরাবর পিএলএ-র সম্মুখীন হয়েছে। চিনাদের হাতে তাইওয়ানের পতন গুরুতর প্রভাব ফেলবে, কারণ তা পিআরসি-কে সশক্ত করবে এবং ভারত মহাসাগরে পিএলএএন-এর প্রসার ঘটাবে।

নয়াদিল্লির সামনে এ বার বিকল্পগুলি তাই কঠিন। মহাদেশীয় এবং সামুদ্রিক ক্ষেত্রে পিআরসি-র প্রতিদ্বন্দ্বিতার যথাযথ প্রত্যুত্তর দেওয়ার জন্য ভারতকে তার প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভারতকে চতুর্মুখী নিরাপত্তা সংলাপ বা কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ (কিউএসডি) বা কোয়াড দেশগুলির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাকে গভীরতর করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.