-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ব্রিকসের ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতা পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থাকেই দর্শায়। কারণ দেশগুলি কঠোর পশ্চিম নেতৃত্বাধীন কাঠামোর পরিবর্তে নমনীয়, বহুমেরু সহযোগিতার সন্ধান করছে। ব্রিকস কি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে?
Image Source: Getty
এই নিবন্ধটি রাইসিনা এডিট ২০২৫-এর অংশ।
কোন সহযোগিতামূলক জোটগুলি নতুন স্থিতিশীল বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণে বেশি প্রতিশ্রুতিময় এবং দেশগুলিকে বর্তমান বিশৃঙ্খলা ও সংঘাতের আবহে তাদের নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার অধিক সুযোগ প্রদান করে? মঞ্চটি শৃঙ্খলা, বাধাগ্রস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব দ্বারা চিহ্নিত না কি নমনীয়তা, জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার এবং কখনও কখনও সাধারণ ভিত্তি অর্জনের ধীর গতি দ্বারা সংজ্ঞায়িত?
স্থিতাবস্থা বজায় রাখা
ট্রাইল্যাটেরাল কমিশন এবং লাইব্রেরি গ্রুপ থেকে উদ্ভূত প্রথম পদ্ধতিটি - যা পরবর্তীতে জি৭ দ্বারা আকার পেয়েছিল - বিশ্ব ব্যবস্থা সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে টিকিয়ে রাখবে এবং তার মিত্রদের মাপা সুযোগ প্রদান করবে। ‘যা সিজারের জন্য ভাল...’ এই লালিত নীতিটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল নীতি হিসাবে বৃহত্তর ব্যবহারের জন্য কোনও স্বাগত ফরম্যাট নয়, যার ফলে ‘নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা’ তৈরি হয়। এই নিয়মগুলি অর্থনৈতিক পছন্দ বজায় রাখার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে এ কথা সুনিশ্চিত করা যায় যে, বিশ্বের বাকি অংশের উন্নয়নের বিদ্যমান উদ্দেশ্যমূলক প্রক্রিয়াটি অবাঞ্ছিত দিকে চালিত না হয়। এটি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি এ কথাও সুনিশ্চিত করে যে, ‘সোনালি অংশীদারিত্ব’র বিষয়টি যেন চিরাচরিত শক্তিগুলির হাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
অর্ধ শতাব্দী ধরে এই গোষ্ঠীটি তাদের মতে আদর্শ বিশ্ব ব্যবস্থাটি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য একাধিক প্রয়াস চালিয়েছে, ‘ইতিহাসের সমাপ্তি’ ঘোষণা করেছে এবং বিশ্বব্যাপী অলিম্পাসে নিজের জন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিসর সুনিশ্চিত করেছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের সমাপ্তি, পশ্চিমী বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর পতন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাঙ্কের (ডব্লিউবি) আন্তর্জাতিক প্রসার অথবা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) সম্প্রসারণ… সবই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সাধনী সরবরাহ করেছিল।
পশ্চিমী অভিজাতরা তাদের জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদাগুলিকে অবহেলা করছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী সমাজের পক্ষ থেকে সতর্কতা ও অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।
উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি জি৭-এর প্রকাশ্য অবহেলা বাকি বিশ্বকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। শুধুমাত্র যখন দেশগুলি মাঝে মাঝে সাহায্যের জন্য আবেদন করে, সেই সময়টুকু ছাড়া বেশ কিছু ভুল পদক্ষেপ এই গোষ্ঠীটিকে ক্রমশ আকর্ষণহীন করে তুলেছে। পশ্চিমী অভিজাতরা তাদের জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদাগুলিকে অবহেলা করছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী সমাজের পক্ষ থেকে সতর্কতা ও অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।
বিকল্পগুলি কী কী?
পরবর্তী পর্যায়টি অনেক বেশি অস্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে। কঠোর অভিন্ন সাধারণ কর্মসূচির জন্য এটি বিশেষ রসদ প্রদান করে না এবং বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি প্রদানের জন্য এটিকে খুবই অস্পষ্ট বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন আমরা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মডেলগুলির প্রতিযোগিতামূলক মতাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কথা বলি। কঠোর শ্রেণিবিন্যাস ও সমন্বিতকরণ একটি শক্তিশালী অবস্থান প্রদান করলেও তা হয় সাধারণ যুক্তি অনুসারে। তবুও, এটি কেবল তখনই কার্যকর হতে পারে, যতক্ষণ না ব্যবস্থার মধ্যে থাকা সমস্ত শক্তির গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের প্রতি গভীর বোধগম্যতা ও সম্মান থাকে। ফলস্বরূপ এই ধরনের স্বার্থের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি অবহেলা সমস্ত শক্তিকে ভিন্ন ও অসঙ্গত স্বার্থের জটিলতাকে একত্রিত করার জন্য আরও অস্পষ্ট কাঠামোর দিকে চালিত করে। এটি ব্রিকসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আর্জেন্টিনাকে ব্রিকসে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পর আবার আমেরিকার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে দূরে সরে যেতেও দেখা গিয়েছে। সৌদি আরবের অত্যন্ত সতর্ক আচরণ লক্ষ করা গিয়েছে, যারা চিরাচরিত ভাবে আমেরিকার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং ট্রাম্পের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের সহযোগিতার জন্য আরও প্রস্তুত। সকলেই ট্রাম্পের হুমকি সম্পর্কে অবগত, যদি দেশগুলি আমেরিকান ডলারের উপর নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে এবং একটি অভিন্ন সাধারণ মুদ্রার লক্ষ্যে কাজ করে, তা হলে সমস্ত ব্রিকস দেশের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এমনকি সংবাদমাধ্যমে ব্রিকসের পতন এবং কিছু দেশের এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।
এই গোষ্ঠীটি কেবল একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই ক্ষমতাশালী হয়নি এবং গতি অর্জন করেনি, বরং বিশ্বের অবশিষ্ট অ-পশ্চিমী দেশের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠেছে।
বাস্তবে, সমস্ত ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও ব্রিকস সদস্যদের ব্ল্যাকমেল করার অবিরাম প্রচেষ্টা এবং ব্রিকস কেন ব্যর্থ হতে বাধ্য তার বিশদ গবেষণা আসলে বিপরীত উদ্দেশ্যই সাধন করেছে। এই গোষ্ঠীটি কেবল একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই ক্ষমতাশালী হয়নি এবং গতি অর্জন করেনি, বরং বিশ্বের অবশিষ্ট অ-পশ্চিমী দেশের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠেছে।
এ ক্ষেত্রে কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বালাই নেই। কারণ একমাত্র নীতি হল প্রতিটি দেশের উদ্বেগকে সম্পূর্ণ রূপে বিবেচনা করা। এমনকি যখন চুক্তিগুলি গৃহীত হয়, তখনও তারা বিদ্যমান পশ্চিম-নেতৃত্বাধীন সমন্বয় ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যেই অবস্থান করে। ব্রিকস প্রায়শই খুব কম কাজ করা, খুব ধীর গতিতে চলা এবং একটি বিবর্তনমূলক প্রক্রিয়ার উপর অত্যধিক নির্ভর করার জন্য সমালোচিত হয়েছে, যেখানে বর্তমান ব্যবস্থাটি তৈরি করা কর্মসূচি ও প্রতিষ্ঠানগুলিতে আবদ্ধ সৎ উদ্দেশ্যের উপর তার সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এটি এমন ক্ষেত্রগুলি প্রদর্শন করে যেখানে ব্রিকসকে প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য দ্রুত এগিয়ে যাওয়া উচিত, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, এনডিবি একমাত্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাঙ্ক, যা কোনও পশ্চিমী তত্ত্বাবধান ছাড়াই কেবল উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত।
জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার একটি বিভাজনকারী কারণ বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে যখন সেই স্বার্থগুলি কেবল অসঙ্গতিপূর্ণই নয়, বরং পারস্পরিক ভাবে একচেটিয়াও। তবে, যখন সকল সদস্য সমান অবস্থানে এসে দাঁড়ায়, তখন কোনও দেশই শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারে না।
ব্রিকসের আর একটি আকর্ষক দিক হল তাদের ভিন্ন দর্শন ও সভ্যতার পছন্দ। কঠোর সমন্বিতকরণ এবং পশ্চিমী জীবনধারা ও দর্শনকে একমাত্র উপযুক্ত হিসেবে গ্রহণ করার দাবি অবশেষে ব্রিকসের অভিজাত ও জনগণের দ্বারা এই ধরনের আরোপিত নীতির অভিন্ন সাধারণ প্রত্যাখ্যানের দিকে চালিত করেছে।
ব্রিকস সংক্রান্ত যোগাযোগের আর একটি স্পষ্ট বৈপরীত্য হল গোষ্ঠীটির ইতিবাচক কর্মসূচি। ব্রিকসের কিছু দেশ পশ্চিমীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত, এই সংঘর্ষ কখনই গোষ্ঠীটির কর্মসূচির অংশ নয়। এই গোষ্ঠীটি তাদের নাগরিকদের কল্যাণের জন্য হুমকিস্বরূপ সমস্যার সাধারণ সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং কারও জন্যই উপযুক্ত আচরণের নিয়মাবলি চাপিয়ে দিচ্ছে না।
কঠোর সমন্বিতকরণ এবং পশ্চিমী জীবনধারা ও দর্শনকে একমাত্র উপযুক্ত হিসেবে গ্রহণ করার দাবি অবশেষে ব্রিকসের অভিজাত ও জনগণের দ্বারা এই ধরনের আরোপিত নীতির অভিন্ন সাধারণ প্রত্যাখ্যানের দিকে চালিত করেছে।
অন্য সাধারণ বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে সার্বভৌমত্বের ধারণার প্রতি আনুগত্য, বহুমেরুকৃত বিশ্বে বিশ্বাস রাখা, ন্যায্য ও সমান আলোচনার বিকল্পের অভাব এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের কেন্দ্রীয়তা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা। এগুলি মূলত বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের কথা বলে, যা ব্রিকসের বৈশিষ্ট্য এবং অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের নয়। এই কারণেই ব্রিকসে বর্তমানে ১১টি পূর্ণ সদস্য দেশ, ন’টি অংশীদার রয়েছে এবং এমন প্রায় তিন ডজন দেশ রয়েছে, যারা সদস্যপদ অর্জন করতে ইচ্ছুক।
এই সহজ হিসেব দর্শিয়েছে যে, ব্রিকস ইতিমধ্যেই জি৭ শক্তির তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। ব্রিকসের ক্রমবর্ধমান মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) (ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে) ৬৫.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বব্যাপী শেয়ারের ৩৯.২৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে জি৭ তার নেতৃত্ব হারিয়েছে এবং তার জিডিপি মাত্র ৪৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আন্তর্জাতিক শেয়ারের ৩০ শতাংশেরও কম। সর্বোপরি, ব্রিকস প্রায় ৩.৯৩ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে জি৭ মাত্র ৭৭৯.২ মিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে বা বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ।
তবে, এই পাল্টা অবস্থান সম্ভবত সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য পূরণ করছে না অথবা ব্রিকসের মনোভাব বা ভূমিকা সম্পর্কে বোঝার কোনও নমুনা উপাদান প্রদান করছে না। এই পরিসংখ্যানগুলি স্পষ্টতই দর্শায় যে, কেন ব্রিকস ব্লককে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য নতুন প্রেরণা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈধ হিসাবে দেখা যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নতুন মডেল তৈরির জন্য ব্রিকস একটি প্রাসঙ্গিক মঞ্চ।
অংশীদারিত্বের জন্য একাধিক আবেদন দর্শিয়েছে যে, এটি এক অর্থে, বৈধতার ভোট ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলির পক্ষ থেকে একটি নতুন, ন্যায্য বিশ্বের জন্য প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আস্থার প্রতীক।
এই গোষ্ঠীটি পশ্চিম-বিরোধী নয়, বরং এটি শুধুমাত্র অ-পশ্চিম। পথে যত বাধাই আসুক না কেন, বর্তমানে ব্রিকসই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যার একটি নতুন ব্যবস্থা তৈরি করার ক্ষমতা ও সদিচ্ছা উভয়ই রয়েছে। অংশীদারিত্বের জন্য একাধিক আবেদন দর্শিয়েছে যে, এটি এক অর্থে, বৈধতার ভোট ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলির পক্ষ থেকে একটি নতুন, ন্যায্য বিশ্বের জন্য প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আস্থার প্রতীক। মডেলটির বিশদকরণের কাজ এখনও বাকি। তাই ব্রিকসের ক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
ভিক্টোরিয়া ভি পানোভা রাশিয়ার ডব্লিউ২০-র শেরপা, রাশিয়ার ব্রিকস এক্সপার্ট কাউন্সিলের প্রধান এবং এইচএসই ইউনিভার্সিটির ভাইস-রেক্টর বা উপাচার্য।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr. Victoria V. Panova is the Provost for International Relations of the Far Eastern Federal University (FEFU). ...
Read More +