Author : Kabir Taneja

Published on Dec 24, 2024 Updated 0 Hours ago

বহু পরিচিত গ্লোবাল সাউথ এই সঙ্কটের নিরিখে দ্বিধাবিভক্ত মনোভাব দেখিয়েছে।

গাজার যুদ্ধ এবং গ্লোবাল সাউথের ‘হস্তক্ষেপ’

২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ইরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে গাজায় হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যা ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দাবির অবসান ঘটায়। সিনওয়ার - যিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ইরানে তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়া-র হত্যার পর মাত্র কয়েক মাস আগে হামাসের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন – ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রধান স্থপতি বলে বিবেচিত।

হামাস হিজবুল্লা নেতাদের আধিক্য নির্মূল করার বিষয়ে জরায়েলের মূল গতিশীল লক্ষ্যগুলি যখন আকার পাচ্ছে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘এর পরে কী?’ আগে গাজা বর্তমানে লেবানন উভয় ক্ষেত্রেই বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ক্রমশ বেড়েছে এবং অবরোধের মধ্যে থাকা উভয় অঞ্চলেই রাজনৈতিক পরিসর কোন সমান্তরাল সমাধানের পরিকল্পনা ছাড়াই অব্যাহত থেকেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী প্রয়োজনীয়তার দরুন পঙ্গু হয়ে পড়েছে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত ও চিন-সহ ন্যান্য দেশ তাই ক্রমশ বিকল্প পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দেশ তাদের পদক্ষেপ

বহু পরিচিত গ্লোবাল সাউথ এই সঙ্কটের নিরিখে বস্তুত দ্বিধাবিভক্ত মনোভাব দেখিয়েছে। বর্ণবাদ যুগের অভিজ্ঞতা দ্বারা চালিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) টেনে আনে এবং তারা চেয়েছিল, আইসিজে যেন জরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমন জারি করে। রায়েল যখন এই দেশগুলিতে নিজের সদিচ্ছা হারাতে বসেছে, তখন এই প্রেক্ষিতের মধ্যে দুটি বৃহত্তম শক্তি চি ভারত ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য হল ব্রিকসের মতো নতুন বহুপাক্ষিক বিন্যাসে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টার পরিবর্তে নিজস্ব দেশীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে অগ্রসর হওয়া। এমনটা ঘটেছে উভয় রাষ্ট্র দ্বারা প্রচারিত কূটনীতিভিত্তিক সমাধান ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও।

বর্ণবাদ যুগের অভিজ্ঞতা দ্বারা চালিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) টেনে আনে এবং তারা চেয়েছিল, আইসিজে যেন জরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমন জারি করে।

আন্তর্জাতিক জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রতিনিধিত্বকারী দুই এশীয় শক্তির মধ্যে এই বিভাজন শেষ পর্যন্ত গ্লোবাল সাউথ’-এর গতিপথ নির্ধারণ করবে এবং এমনটা করতে তারা সমর্থ হবে এই জোটটির বহুমুখী প্রকৃতি সত্ত্বেও। প্যালেস্তাইন প্রসঙ্গে ভারত ও চিন উভয়েরই স্পষ্ট কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান দর্শিয়েছে। বেজিং আরব দেশগুলির উপর তার বাজি ঘরেছে এবং এমনটা সে করেছে প্যালেস্তাইনি সার্বভৌমত্বকে অ-ঔপনিবেশিক আলোকে দেখার ক্ষেত্রে তার সমর্থনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির দরুন২০২৪ সালের জুলাই মাসে হামাস-সহ ১৪টি ফিলিস্তিনি দল বিভাজনের অবসান এবং ফিলিস্তিনি ঐক্যকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি সম্মেলনের জন্য চিনে যায়।

চিনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভারতের স্বার্থ

চিন গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ইরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের জন্য হামাসের নাম উল্লেখ করে প্রকাশ্যে নিন্দা করেনি। এর নেপথ্যে প্রধান কারণ ছিল, দেশটির নিজস্ব আলাপ-আলোচনার পথ খোলা রাখা, যা এর আগে দেশটি ইরান এবং সৌদি আরবের ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় চিনের ক্রমবর্ধমান শক্তি যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ইসমাইল হানিয়ে এবং তার পর সিনওয়ারের হত্যাকাণ্ডের দরুন সেই হিসেব-নিকেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পূর্বোল্লিখিত ‘ঐকমত্য’ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেবর্তমানে বিভাজিত আরব-ইরান অবস্থানকে সমর্থন করার জন্য চিন ইরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ককে খাটো করে দেখেছে এবং অনুমান করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রায়েলের নৈকট্য অপরিবর্তনীয় এবং এই দক্ষতা অন্য প্রসঙ্গেও কাজে লাগানো হতে পারে। কিন্তু চিন এখনও ব্রিকসের মতো নতুন মঞ্চগুলিকে গ্লোবাল সাউথের আখ্যানকে তার নিজের পক্ষে তুলে ধরতে ব্যবহার করতে চায়। এমনটা ব্রিকসের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণে প্রতিফলিত হয়েছিল, যখন ভারত এই বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ না করলেও সম্মত হতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই ব্রিকসে যোগদানের আগ্রহ বেড়েছেএমনকি প্যালেস্তাইনও জোটটিতে যোগদান করতে চেয়েছে এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস রাশিয়ার কাজানে এই বছরের ব্রিকসে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

বর্তমানে বিভাজিত আরব-ইরান অবস্থানকে সমর্থন করার জন্য চিন ইরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ককে খাটো করে দেখেছে এবং অনুমান করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রায়েলের নৈকট্য অপরিবর্তনীয় এবং এই দক্ষতা অন্য প্রসঙ্গেও কাজে লাগানো হতে পারে।

অন্য দিকে, ভারতের অবস্থান তার জাতীয় স্বার্থ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার নিরিখে ধারাবাহিক ভারসাম্যপূর্ণ থেকেছে। অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে, সংঘাতের প্রতি ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ইজরায়েলের পক্ষে গিয়েছে। ভারত ইজরায়েলকে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন জুগিয়েছে… এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভুল নয়, চিনা মনোভাবের বিপরীতে হেঁটে নয়াদিল্লি এটিকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার মনোভাব থেকে বিচার করতে চায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে, দুই দেশের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ আঞ্চলিক বাস্তবতার ঊর্ধ্বে উঠে উভয় রাষ্ট্রই আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের পরিকল্পনার শিকার। এই যুক্তিকে আরও সশক্ত করে ২০১১ সালে একজন বন্দি রায়েলি সৈন্যের বিনিময়ে সিনওয়ারকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ইজরায়েল বাধ্য হয়েছিলএটি ১৯৯৯ সালে আইসি৮১৪ অপহরণের সময় জইশ-ই-মুহাম্মদের মাসুদ আজহারকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে ভারতকে বাধ্য করার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সমতুল্য। ভারত বহুপাক্ষিকতা অর্জনের মূল লক্ষ্য হিসেবে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতার বিষয়ে ক্রমশ চাপ দিয়ে এসেছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চালিত ‘ওয়ার অন টেরর’ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সমান্তরাল ভাবে, ভারত একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সমর্থক এবং ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। উভয় নীতিই সমান্তরাল ভাবে চলেছে এবং মেরুকৃত ভাবমূর্তির সৃষ্টি করেছে। যাই হোক, বাস্তবে উভয়েরই অস্তিত্ব রয়েছে এবং এটি মোটেও পরস্পরবিরোধী নয়।

একটি দৃষ্টিকোণ

অবশেষে গাজার যুদ্ধ দর্শিয়েছে যে, আমেরিকার প্যাক্স আমেরিকানা’ বিন্যাসের ধারণা ক্রমশ খর্ব হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই তার বিশেষ সমর্থক নেই এবং একই সঙ্গে এর বিকল্পগুলি সুদূর বাস্তব হয়ে রয়েছে। ভারত-চিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তার প্রকৃতির দরুন গ্লোবাল সাউথের অভ্যন্তরে যে কোনও ঐক্যের জন্য বড় বাধা এবং এর পাশাপাশি গণতন্ত্র বনাম অ-গণতন্ত্রের মতো অন্যান্য বৈষম্য আরও বিচ্যুতির সৃষ্টি করেছে। প্রকৃত মধ্যস্থতা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির ব্যবহার এবং সুবিধাকে কাজে লাগানোর উপর। গ্লোবাল সাউথের কোন শক্তিই – তা সে একক হোক বা যৌথ – এ হেন সাধনীর মালিক নয়, যা ব্যবহার করে বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ায় তাদের প্রভাব দর্শাতে পারে। যেটুকু অগ্রগতি এ যাবৎ লক্ষ করা হিয়েছে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত স্বার্থচালিত এবং তার নেপথ্যে শান্তির পরিকল্পনা, প্রচার ও সর্বোপরি শান্তি সুনিশ্চিতকারী কোনও যৌথ লক্ষ্য নেই।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.