Published on May 06, 2024 Updated 0 Hours ago

ভবিষ্যতের শহরগুলির অবশ্যই টেকসই গতিশীলতাকে মূল পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযুক্ত করতে হবে, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে একটি ব্যয়-ফলপ্রসূ উপায়ে পরিবহণ চাহিদা পূরণ

শহুরে গতিশীলতার ভবিষ্যৎ: অভিন্ন, সংযুক্ত ও বৈদ্যুতিক

বিশ্ব একটি বড় অভিবাসনের মধ্যে রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ গ্রামীণ জীবন থেকে শহরের জীবনে চলে আসেন, এবং অনুমানগুলি ইঙ্গিত করে যে ২০৫০ সালের মধ্যে শহরগুলি মোটের উপর প্রায় ৭ বিলিয়ন বাসিন্দার আবাসস্থল হয়ে উঠবে। মানুষের এই বিশাল প্রবাহ শহুরে গতিশীলতা ব্যবস্থার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। শহরগুলি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চালক হিসাবে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে কিনা, তা নির্ধারণে এই ব্যবস্থাগুলির পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

অতীত শহুরে গতিশীলতার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। উন্নত বিশ্বে, যেখানে নগরায়ণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে  গতিশীলতায় অটোমোবাইল প্রাধান্য পেয়েছে এবং ভ্রমণের ব্যক্তিগত উপায়গুলিতে মনোনিবেশ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
প্রতি ১০০০ জনসংখ্যার জন্য প্রায় ৯০০টি গাড়ি রয়েছে - প্রায় প্রতি জনে একটি গাড়ি। এই নির্ভরতার জন্য একটি মূল্য দিতে হয়েছে, যা যানজট, ব্যাপক কার্বন নিঃসরণ এবং বায়ু দূষণের কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়। আনুমানিক হিসাবগুলি পরামর্শ দেয় যে একই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, ২০৫০ সালের মধ্যে শহরের বাসিন্দারা যানজটে আটকে প্রতি বছর গড়ে ১০৬ ঘণ্টা হারাতে পারেন। নগরায়ণের পরবর্তী তরঙ্গ উদ্ভাসিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, গতিশীলতা পরিকল্পনাকে ক্রমবর্ধমানভাবে এমন একটি নতুন দৃষ্টান্তের উপর ফোকাস করতে হবে যা মানুষ ও পণ্য উভয়ের আরও দক্ষ ও টেকসই চলাচলের সুবিধা দেয়।


ইভি বৃদ্ধি মূলত তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত ব্যক্তিগত যানবাহনকে নতুন বৈদ্যুতিক বিকল্প দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চাওয়া মানুষের দ্বারা চালিত হয়েছে।



প্রযুক্তি নতুন শহুরে গতিশীলতা ব্যবস্থার একটি প্রধান রূপকার হবে। ডিকার্বনাইজ করার জন্য একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক ধাক্কা দ্বারা চালিত বর্তমানের সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত হল বৈদ্যুতিক যানবাহনে (ইভি) রূপান্তর। তবুও, এই রূপান্তরের রূপগুলি ভৌগোলিক বিস্তৃতি জুড়ে পরিবর্তিত হয়। চিন
সমস্ত বৈদ্যুতিক যানবাহন বিক্রির ৫০ শতাংশেরও বেশির অধিকারী হয়ে এই ক্ষেত্রে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছে। উন্নত বিশ্বে ইভি বৃদ্ধি মূলত তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত ব্যক্তিগত যানবাহনকে নতুন বৈদ্যুতিক বিকল্প দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চাওয়া মানুষের দ্বারা চালিত হয়েছে। ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ২০২২ সালে সমস্ত গাড়ি বিক্রির ১৫ ও ৮ শতাংশ ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি।

যাই হোক, উদীয়মান বিশ্বে ইভি বিক্রি মূলত টু-হুইলার এবং থ্রি-হুইলার বিভাগ দ্বারা চালিত হয়েছে। এই যানবাহনগুলি মূলত নিম্ন আয়ের মানুষেরা ব্যবহার করেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই বাধ্যতামূলক ব্যবহারকারী। উন্নত বিশ্বে বৈদ্যুতিক যানবাহনে রূপান্তর মূলত ধনী ভোক্তাদের দ্বারা চালিত হয়, যাঁদের বিভিন্ন পরিবহণ বিকল্পের সুযোগ রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে এতে নিম্ন-আয়ের গোষ্ঠীগুলি নেতৃত্ব দেয়। তাঁদের জন্য বৈদ্যুতিক যানবাহন শুধু পরিবহণের মাধ্যম হিসাবে নয়, বরং তাঁদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অপরিহার্য হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে।

ডিজিটালাইজেশনের উত্থান ব্যক্তিগত থেকে অভিন্ন শহুরে গতিশীলতায় একটি নতুন রূপান্তরও তৈরি করছে। যদিও ভাগ–করা বা অভিন্ন গতিশীলতার বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে, মৌলিকভাবে এটি 'পরিষেবা হিসাবে গতিশীলতা'-র দিকে একটি স্থানান্তরকে বোঝায়, যেখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি একাধিক ব্যবহারকারীকে যানবাহন ও সাইকেল ভাগাভাগি করতে সক্ষম করে। এটি বিদ্যমান গাড়ির স্টকের আরও ভাল ব্যবহারের সুযোগ দেয়, যার ফলে খরচ, যানজট ও নির্গমন হ্রাস পায়। অভিন্ন গতিশীলতার বৃদ্ধি বেশ উল্লেখযোগ্য; ২০১৬ থেকে ২০১৯-‌এর মধ্যে, ই-হেলিং ট্রিপ
৫.৫ ট্রিলিয়ন থেকে ১৬.৫ ট্রিলিয়ন হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে শেয়ার্ড মোবিলিটি কোম্পানিতে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ হয়েছে এবং এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় উপায় হয়ে উঠেছে।


উন্নত বিশ্বে বৈদ্যুতিক যানবাহনে রূপান্তর মূলত ধনী ভোক্তাদের দ্বারা চালিত হয়, যাঁদের বিভিন্ন পরিবহণ বিকল্পের সুযোগ রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে এতে নিম্ন-আয়ের গোষ্ঠীগুলি নেতৃত্ব দেয়।



স্বল্পমেয়াদে, অভিন্ন গতিশীলতা হবে মানুষ-চালিত। তবে দীর্ঘমেয়াদে, স্বচালিত যানবাহনের আবির্ভাবের একটি নতুন দৃষ্টান্ত যুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতের শহরগুলিকে ভাগ-‌করা রোবো-ট্যাক্সি এবং অপ্টিমাইজড রুট সহ রোবো-শাটল দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে, যা খরচ ও নির্গমন কমাতে পারে। কিছু অনুমান প্রস্তাব করে যে স্বচালিত
অভিন্ন গতিশীলতা পরিষেবাগুলি ২০৩০ সালের প্রথম দিকে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে ৷ তবে, স্বচালিত যানবাহনের এখনও অনেক ঝুঁকি রয়েছে৷ নগর সরকারগুলি এখন সক্রিয়ভাবে এমন একটি নিয়ামক কাঠামো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে যা সুবিধা বজায় রেখে স্বচালিত যানগুলিকে নিরাপদ করতে পারে। সক্রিয় প্রবিধান বিকশিত হওয়ার গতি স্বচালিত গতিশীলতার বৃদ্ধি নির্ধারণ করবে।

অতএব, বর্ধিত ডিজিটালাইজেশন এবং অটোমেশনের সঙ্গে সংযুক্ত নতুন যানবাহন প্রযুক্তির আবির্ভাবের মাধ্যমে ভবিষ্যতে শহুরে গতিশীলতা তৈরি হবে। যাই হোক, এই প্রযুক্তিগত প্রবণতাগুলি কার্যকর শহুরে গতিশীলতা ব্যবস্থা গঠনে সফল কি না তা নির্ভর করবে শহর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার উপর, যারা এই পরিবর্তনকে বৃহত্তর নগর পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

উন্নত বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত ব্যক্তিগত যানবাহনের আধিপত্যশীল গতিশীলতা ব্যবস্থা পেরিয়ে মানুষকে চলাফেরার আরও কার্যকর উপায় বার করার জন্য বিদ্যমান শহরগুলিকে পুনরায় কল্পনা করতে হবে। এর জন্য অভিন্ন গতিশীলতা বাড়ানো এবং গণ-‌পরিবহণের জন্য ব্যক্তিগত যানবাহন থেকে দূরে সরে যাওয়ার সঠিক প্রবিধান তৈরির প্রয়োজন হবে, আর তার পাশাপাশি মানুষকে বৈদ্যুতিক গতিশীলতার দিকে সরাতে সক্ষম করার জন্য সঠিক অর্থনৈতিক প্রণোদনা তৈরি করে দিতে হবে।


বর্ধিত ডিজিটালাইজেশন এবং অটোমেশনের সঙ্গে সংযুক্ত নতুন যানবাহন প্রযুক্তির আবির্ভাবের মাধ্যমে ভবিষ্যতে শহুরে গতিশীলতা তৈরি হবে। 



তবে সবচেয়ে বড় সুযোগ আছে উন্নয়নশীল বিশ্বে। এই ভৌগোলিক অঞ্চলে যে শহরগুলিতে পরবর্তী কয়েক বিলিয়ন মানুষ বাস করবেন সেগুলি এখনও তৈরি হয়নি। নগরায়ণের এই নতুন ঢেউ শুধু মেগা মেট্রোপলিসই নয়, এমন ছোট শহরগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করবে যেগুলি অ-নগর অঞ্চলের রূপান্তরিত আকার হিসাবে আবির্ভূত হবে। বর্তমানে,
১০০,০০০-এর কম বাসিন্দাদের শহরগুলিতে বিশ্বের শহুরে জনসংখ্যার এক-‌তৃতীয়াংশ বাস করে। এই সংখ্যাটি ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঘটনা মাঝারি আকারের শহরগুলিকে দ্রুততম বর্ধনশীল শহুরে সমষ্টিতে পরিণত করবে। এই উন্নয়নশীল শহরগুলি উদ্ভাবন, স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য একটি উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করে। তারা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি ফাঁকা ক্যানভাস অফার করে এমন পরিবেশ তৈরি করার সুযোগ দেয় যা বাসিন্দাদের জন্য প্রাপ্তিযোগ্যতা ও জীবনযাত্রার মানকে অগ্রাধিকার দেয়। যাই হোক, এই শহরগুলির সম্ভাব্যতা অর্জনের জন্য টেকসই গতিশীলতাকে মূল পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার মধ্যে যুক্ত করতে হবে। এখানে মোটর চালিত সিস্টেমগুলি তৈরি করা হবে না, কারণ সেগুলিকে আবার নতুনভাবে ডিজাইন করতে হবে৷

শহরগুলির শতাব্দীটি উদ্ভাবনী গতিশীলতা ব্যবস্থার যুগে পরিণত হতে চলেছে, যা মানুষের মঙ্গল এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব উভয়ই উন্নত করতে পারে। যাই হোক, এই নতুন শহুরে ব্যবস্থাগুলি অর্জনের জন্য মানুষের উদ্ভাবনী বুদ্ধিমত্তা ও পরিকল্পনাকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দ্রুততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।



প্রমিত মুখার্জি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.