Published on Jun 08, 2024 Updated 0 Hours ago

নানাবিধ বাধা সত্ত্বেও কোয়াড যা করছে, তা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে অর্থাৎ সাফল্যের ক্ষেত্র নির্মাণকে সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রদানের দিকে কোয়াডের মনোনিবেশ জারি রাখতে হবে।

ইন্দো-প্যাসিফিকে কোয়াডের ভবিষ্যৎ

২০১৭ সালে যখন কোয়াড পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, তখন চিনেবিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সমুদ্রের ফেনার মতো মিলিয়ে যাবে। ই ধারণাকে অবশ্যই তাঁর খামখেয়ালি চিন্তাভাবনা বলা চলে। কোয়াড সদস্যরা কোয়াডে যথেষ্ট সুনামসম্পন্ন পুঁজি বিনিয়োগ করেছে এবং কোয়াড ব্যর্থ হয়ে যাক, এমনটা তারা কখনওই চাইবে না, বিশেষ করে ২০২১ সালে নেতা স্তরের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পরে।

আশাবাদীদের করা দাবি যে, কোয়াড পুরো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা সমৃদ্ধিতে একটি বড় অবদান রাখবে… তাতে বাস্তবের চেয়ে আশাবাদই বেশি পরিলক্ষিত হয়। যখন পরপর দুই নেতার বৈঠকের সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করতে হয় তখন তা নিঃসন্দেহে একটি নেতিবাচক পরিস্থিতিকেই দর্শায়। অস্ট্রেলিয়ার বৈঠকটি এক সপ্তাহ আগে বাতিল করা হয়েছিল যখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি ঋণ সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে ভ্রমণ করতে অসমর্থ ছিলেন। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানুয়ারি মাসে ভারতে নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীআমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি, যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, এই সম্মেলন ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে স্থগিত করা হবে। যারা কোয়াডকে ‘সমুদ্রের ফেনা’র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তারা এই সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়ার খবরে পুলকিত হবেন নিশ্চয়ই।

 

অস্ট্রেলিয়ার বৈঠকটি এক সপ্তাহ আগে বাতিল করা হয়েছিল যখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি ঋণ সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে ভ্রমণ করতে অসমর্থ ছিলেন।

 

সুতরাং, কোয়াডের গতিপথ কী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, চার সদস্যের প্রতিশ্রুতিতে আদৌ কোন পরিবর্তন আসবে কি?

একটি ইঙ্গিত দর্শায় যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন অস্ট্রেলীয় বৈঠকে যোগ দিতে অসমর্থ হওয়ার পরে জি বৈঠককে ঘিরে হিরোশিমা চারটি অংশীদারের বৈঠক আহ্বান করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে লিডারস সামিটের সমাপ্তি হয় একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, কোয়াড লিডারস ভিশন বিবৃতি কোয়াডের মাধ্যমে কাজ করার জন্য নেতৃ দেশগুলির অটল প্রতিশ্রুতি’কেই পুনর্নিশ্চিত করেছে।

মূল ঘোষণায় যা যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তা হল:

  • ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্লিন এনার্জি সাপ্লাই চেনের নীতির একটি বিবৃতি এবং তার পাশাপাশি একটি ক্লিন এনার্জি সাপ্লাই চেন ইনিশিয়েটিভ দূষণহীন জ্বালানি উৎপাদন বণ্টন সম্পর্কিত গবেষণা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে সহজতর করার নির্দেশ দেয়।
  • কোয়াড হেলথ সিকিউরিটি পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠার কথা বলে হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অতিমারি অতিমারির সম্ভাবনা-সহ রোগের প্রাদুর্ভাব সনাক্তকরণ প্রতিক্রিয়া জানাতে অঞ্চলের ক্ষমতা তৈরি করার কার্যক্রম। এর মধ্যে বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থার জন্য সমর্থন প্রাদুর্ভাবের প্রতিক্রিয়াগুলি সমন্বয় করার কাজও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  • কোয়াড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফেলোশিপ প্রোগ্রাম-এর কথা বলা হয়েছে, যার লক্ষ্য এই অঞ্চলের ১৮০০টিরও বেশি অবকাঠামো অনুশীলনকারীদের তাদের নিজ দেশে গুণমানসম্পন্ন অবকাঠামো পরিকল্পনা, নির্মাণ পরিচালনা করতে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কেবল সিস্টেমকে শক্তিশালী করার জন্য কেবল সংযোগ স্থিতিস্থাপকতার উদ্দেশ্যে একটি কোয়াড অংশীদারিত্ব
  • ওপেন রেডিও অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক (ওপেন আরএএন) স্থাপনের জন্য পালাউয়ের সঙ্গে সহযোগিতা দেশগুলিকে তাদের টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কগুলি প্রসারিত আধুনিকীকরণ করতে সক্ষম করবে

ই বিবৃতি দর্শায় যে, কোয়াডের প্রতি চারটি কোয়াড দেশের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রয়েছে, যা আসলে নেতৃ দেশগুলির তরফে বর্ণিত কোয়াডের ইতিবাচক, ব্যবহারিক কর্মসূচি’র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

দ্বিগুণ উদ্দেশ্য পূরণকারী উদ্যোগগুলি কোয়াডেধারাকেই অব্যাহত রাখে: অর্থাৎ কোয়াড সদস্যদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগ তৈরি করা এবং অন্যান্য দেশের জন্য জনসাধারণের পণ্য সরবরাহ করতে অংশীদারিত্বের ব্যবহার করা। এই প্রথম লক্ষ্যটি সাধনের জন্য চতুর্পাক্ষিক জোটটির গতিপথ, কর্মকর্তা, সামরিক কর্মরত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।

 

কোয়াড ওয়ার্কিং গ্রুপগুলি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, মহাকাশ, যোগাযোগ সাইবার থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী জনস্বার্থের মূল বিষয়গুলিতে নিযুক্ত রয়েছে, যা জনসাধারণের পণ্য সরবরাহে অবদান রাখে।

 

শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক নিয়মিত ঘটনা এবং এই বৈঠকে চার সদস্যের নৌবাহিনী প্রধানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াকে কোয়াড অংশীদারদের সঙ্গে ২০২০ সালে বার্ষিক মালাবার নৌ মহড়ায় পুনরায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং এ ক্ষেত্রে একাধিক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোয়াড ওয়ার্কিং গ্রুপগুলি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, মহাকাশ, যোগাযোগ সাইবার থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী জনস্বার্থের মূল বিষয়গুলিতে নিযুক্ত রয়েছে, যা জনসাধারণের পণ্য সরবরাহে অবদান রাখে। এ ছাড়াও কোয়াড তার সদস্যদের মধ্যে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক জোরদাকরার উপর মনোযোগ দিয়েছে। কোয়াড ফেলোশিপ ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বার্ষিক ১০০ জন ডক্টরাল (গবেষক) মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) ছাত্রদের কোয়াড সদস্যরা মার্কিন স্টেম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি গ্রহণে সাহায্য করেছে।

এগুলি সবই নিঃসন্দেহে ইতিবাচক উন্নয়ন। কিন্তু যাঁরা কোয়াডকে কৌশলগত পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন হিসেবে দেখেছেন, তাঁরা সম্ভবত হতাশ হবেন। বিস্তীর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে স্থিতিশীলতা সমৃদ্ধির জন্য এই ধরনের পদক্ষেপগুলি অবিলম্বে রূপান্তরকারী নয়। প্রায়শই সেগুলি খুব আকর্ষকও হয় না। কিন্তু তারা চার কোয়াড সদস্যদের মধ্যে সমন্বিতকরণের জাল তৈরির লক্ষ্য পূরণ করে, যদিও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে অল্প মাত্রায় হলেও ব্যবহারিক অবদান রাখে। আরও সূক্ষ্ম ভাবে বলতে গেলে, কোয়াড মান নীতির উপর যে কাজ করছে — যেমন কোয়াড প্রিন্সিপলস অন ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি স্ট্যান্ডার্ড, কোয়াড জয়েন্ট প্রিন্সিপলস ফর সিকির সফটওয়্যার এবং কোয়াড জয়েন্ট প্রিন্সিপলস ফর সাইবার সিকিউরিটি অব ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার — সবই চিনা গুণমানের মানদণ্ডের বিকল্প প্রদান করে।

প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে এবং গতি বৃদ্ধি করার পরে বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ, নেটওয়ার্ক এবং কর্মকর্তা পর্যায়ের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে এবং ধীরে ধীরে সহযোগিতার অভ্যাস গড়ে উঠবে। কোয়াডের সমর্থকদের নির্বাচনী এলাকা প্রতিটি দেশে নিরাপত্তা বৃত্তের ঊর্ধ্বে প্রসারিত হচ্ছে।

 

সর্বোপরি, কোয়াড ধীরে ধীরে চারটি দেশের মধ্যে সংযোগ তৈরি করবে, যা অন্যান্য ইন্দো-প্যাসিফিক দেশের উপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

এই সমস্ত উপাদানের অর্থ হল এই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ এটিকে উৎসাহ প্রদান করেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোয়াডের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে কোয়াড কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে, সেটাই মূল প্রশ্ন। সবচেয়ে নেতিবাচক হবে, যদি কোয়াড আন্তর্জাতিক বিষয়ে বৃহদাকার ক্ষমতাহীন মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম হয়ে ওঠে। সর্বোপরি, কোয়াড ধীরে ধীরে চারটি দেশের মধ্যে সংযোগ তৈরি করবে, যা অন্যান্য ইন্দো-প্যাসিফিক দেশের উপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চারটি সদস্য দেশের প্রতিশ্রুতি কোয়াডের প্রভাবকে নির্ধারণ করবে, যার মধ্যে দেশগুলির সম্পৃক্ততার জোর, অভ্যন্তরীণ সহায়তার স্তর আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা রয়েছে।

সুতরাং, চার সদস্য কি কোয়াডের মাধ্যমে সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক হতে আগ্রহী? কোয়াড অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর বিদেশনীতির লক্ষ্যগুলির মধ্যে সম্পূর্ণ সঙ্গতির কারণে কোয়াডের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইতিবাচক অবস্থান পরিবর্তন করার কোনও সম্ভাবনা নেই। মার্কিন জোট, জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো এবং ভারতের সঙ্গে সব স্তরে যোগসূত্র বাড়ানো অস্ট্রেলিয়ার মূল উদ্দেশ্য। কোয়াডকে অস্ট্রেলিয়ার বিদেশনীতির একটি মূল স্তম্ভ হিসাবে দেখা হয়, যা অন্যান্য সহযোগিতার পরিপূরক। তাতে এটি প্রস্তাব করা হয় যে, অস্ট্রেলিয়া উৎসাহ সম্ভবত বজায় থাকবে এবং তারা সংস্থান প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাপানেরও ক্ষেত্রেও একই ভাবে দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনসুস্পষ্ট পরিবর্তন নেই।

কোয়াড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খানিক বিভ্রান্ত এবং সম্ভবত তেমনটাই থাকবে।  মার্কিন নির্বাচনের বছরে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি প্রাধান্য পাবে। এমনকি আন্তর্জাতিক নীতিতেও ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অর্থ হল এই যে, এশিয়ার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ আরও কমে আসবে।

 

মার্কিন জোট, জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো এবং ভারতের সঙ্গে সব স্তরে যোগসূত্র বাড়ানো অস্ট্রেলিয়ার মূল উদ্দেশ্য।

 

তা হলে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কোয়াডের সাফল্যের জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং জোটটির সাফল্যে তার অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে

বর্তমানে, আপাত ভাবে মনে করা হচ্ছে যে, চারটি সদস্য দেশেই কোয়াডের জন্য একটি স্থিতিশীল সমর্থন ভিত্তি রয়েছে।

তাই কোয়াডের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলি কী হওয়া উচিত? কোয়াডের উচিত তার কাজ চালিয়ে যাওয়া, তার প্রতিশ্রুতি প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করা এবং সাফল্যের ক্ষেত্রগুলি তৈরি করা। কোয়াডই শেষ পর্যন্ত নিজেকে সমুদ্রের ফেনা অর্থাৎ ফলহীন বাগাড়ম্বরের চেয়েও বেশি উপযোগী বলে প্রমাণ করে তুলতে পারে। একটি উন্মুক্ত ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য কোয়াডের সাফল্য অপরিহার্য।

 


মেলিসা কনলি টাইলার এশিয়া-প্যাসিফিক ডেভেলপমেন্ট, ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড ডিফেন্স ডায়লগ-এর (এপি৪ডি) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। এই উদ্যোগটি অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্টস অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ডিফেন্স দ্বারা অর্থায়িত এবং অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট দ্বারা সমর্থিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Melissa Conley Tyler

Melissa Conley Tyler

Melissa comes to Asialink after 13 years as National Executive Director of the Australian Institute of International Affairs (AIIA). Under her leadership the AIIA was ...

Read More +