বাংলাদেশ একটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে, যা তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের গতিপথকে অনিশ্চয়তায় ঢেকে দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন ১৫ বছরের মেয়াদ দেশে স্থিতিশীলতার সূচনা করেছিল, যা পরিবহণ, জ্বালানি এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে একটি সুবিধাজনক পদ্ধতি হিসাবে আবির্ভূত হয়, যা সামগ্রিক বৈদেশিক সহায়তার বৃহত্তম অনুপাতের জন্য দায়বদ্ধ। প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়নমূলক রূপরেখাসম্পন্ন শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত বাংলাদেশের অগ্রণী উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা অর্জনের জন্য অপরিহার্য দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করেছে। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বাংলাদেশ থেকে হঠাৎ বিদায়ে দেশ থমকে যায়। ঢাকায় মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনর্গঠন করার জন্য সচেষ্ট হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক সংযোগ প্রকল্পের সমাপ্তির ভবিতব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন ১৫ বছরের মেয়াদ দেশে স্থিতিশীলতার সূচনা করেছিল, যা পরিবহণ, জ্বালানি এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
ভারত-বাংলাদেশ সংযোগের পরিসর
দুই দেশের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃসম্পর্কের কারণে সংযোগ সহযোগিতা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের একটি কেন্দ্রীয় নীতি। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম সীমানা (৪০৯৬ কিমি) এবং বাংলাদেশের সীমান্তে রয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গ। দ্বিপাক্ষিক অংশীদারদের মধ্যে সংযোগ সহযোগিতা পারস্পরিক ভাবে উপকারী। তিন দিক থেকে ভারতীয় ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত বাংলাদেশকে প্রায়শই ‘ইন্ডিয়া লকড’ বা ‘ভারতবেষ্টিত’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিশালী সংযোগের প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে। নয়াদিল্লির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগও অত্যাবশ্যক। কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি বাংলাদেশের মাধ্যমেই বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার পাবে এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি ভারতের নিকটতম পূর্ব প্রতিবেশী এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলসেতু হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ বা ‘প্রতিবেশ প্রথম’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ বা ‘পূর্ব অভিমুখী’ নীতির একটি মূল অংশ।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগও দুই দেশের শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্কের কারণে পারস্পরিক ভাবে উপকারী। ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে জ্বালানি, খাদ্য ও কাপড়ের তন্তু থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও প্লাস্টিক পর্যন্ত… নানাবিধ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিদ্যমান। এর ফলস্বরূপ, রেল যোগাযোগ, বাস রুট, অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং বাণিজ্য ও পরিবহণের জন্য সমুদ্র বন্দর-সহ দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংযোগ শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে জ্বালানি, খাদ্য ও কাপড়ের তন্তু থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও প্লাস্টিক পর্যন্ত… নানাবিধ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিদ্যমান।
ভারত এবং বাংলাদেশ বিস্তৃত ভাবে সংযোগকেই সংজ্ঞায়িত করে, যাতে ভৌত সংযোগের ঊর্ধ্বে উঠে জ্বালানি ও ডিজিটাল শৃঙ্খলগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনার শেষ ভারত সফরের সময় দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে এমনটা প্রকাশ করা হয়েছিল। বিবৃতিতে এই তিনটি বিভাগে গৃহীত বেশ কয়েকটি যৌথ প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন এই প্রকল্পগুলির ভাগ্য অনিশ্চিত, তখন এই উদ্যোগগুলি পুনর্বিবেচনা করা এবং সেগুলির প্রয়োজনীয়তা ও বর্তমান অবস্থা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
সারণি ১: বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সংযোগ প্রকল্পের অবস্থা
ক্ষেত্রসমূহ
|
প্রকল্প
|
সমাপ্তির বছর
|
বর্তমান অবস্থা
|
জ্বালানি
|
এসএএসইসি ১০০০ মেগাওয়াট-এইচভিডিসি বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ইলেকট্রিক্যাল গ্রিড ইন্টারকানেকশন প্রজেক্ট ১
|
২০১৬
|
সম্পূর্ণ
|
পরিবহণ
|
রাধিকাপুর-বিরল রেললাইনের সংস্কার
|
২০১৭
|
সম্পূর্ণ
|
জ্বালানি
|
এসএএসইসি ৫০০ মেগাওয়াট-এইচভিডিসি বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ইলেকট্রিক্যাল গ্রিড ইন্টারকানেকশন প্রজেক্ট ২
|
২০১৭
|
সম্পূর্ণ
|
পরিবহণ
|
হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেললাইনের সংস্কার
|
২০২০
|
সম্পূর্ণ
|
পরিবহণ
|
গেদে-দর্শনা রেললাইনের সংস্কার
|
২০২১
|
সম্পূর্ণ
|
পরিবহণ
|
পেট্রাপোল-বেনাপোল রেললাইনের সংস্কার
|
২০২২
|
সম্পূর্ণ
|
পরিবহণ
|
আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন ১
|
২০২৩
|
সম্পূর্ণ*
|
পরিবহণ
|
খুলনা-মংলা পোর্ট রেল
|
২০২৩
|
সম্পূর্ণ
|
জ্বালানি
|
মৈত্রী থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ১, ২
|
২০২৩
|
সম্পূর্ণ*
|
জ্বালানি
|
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন
|
২০২৩
|
সম্পূর্ণ
|
জ্বালানি
|
রূপপুর নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট ১
|
২০২৪
|
নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে
|
জ্বালানি
|
কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর ৭৬৫ কেভি ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিশন লাইন
|
২০২৫
|
নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে
|
জ্বালানি
|
রূপপুর নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট ২
|
২০২৭
|
নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে
|
ডিজিটাল
|
ইসরো-বাংলাদেশ স্যাটেলাইট লঞ্চ
|
প্রযোজ্য নয়
|
মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে
|
ডিজিটাল
|
ভারতীয় সংস্থা দ্বারা ৪জি/৫জি সংযোগ প্রকল্প
|
প্রযোজ্য নয়
|
মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে
|
মোট ক্ষেত্রের সংখ্যা: ৩
|
মোট প্রকল্প: ১৬
|
|
|
উত্স: এমইএ ড্যাশবোর্ড, বিদেশমন্ত্রক, ভারত (*শুধুমাত্র এই প্রকল্পগুলির কিছু অংশ/ কিছু পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে)।
ভৌত সংযোগ: ভারত ও বাংলাদেশের একটি অভিন্ন সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হল তাদের বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে গ্লোবাল সাউথের আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সমন্বিতকরণের নোঙর হিসেবে ব্যবহার করা। এর জন্য বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক), সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক) এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মতো আঞ্চলিক অভিন্ন সাধারণ মঞ্চগুলিকে কাজে লাগানো হয়েছে। এই উদ্দেশ্যের লক্ষ্যে উপ-আঞ্চলিক সংযোগকে উন্নীত করার জন্য দুই দেশই বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিকেল চুক্তির প্রাথমিক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হওয়া ভারত-বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যকে পরিপূরক করে তোলার জন্য সড়ক ও মহাসড়ক সংযোগ বৃদ্ধি করাও অপরিহার্য।
রেলওয়ে ক্ষেত্রে গেদে (ভারত)-দর্শনা (বাংলাদেশ) থেকে চিলাহাটি (বাংলাদেশ)-হলদিবাড়ি (ভারত) হয়ে ভারত-ভুটান সীমান্তে ডালগাঁও (ভারতের অসমে) রেলপথ ধরে হাসিমারা (ভুটানের কাছে ভারতীয় সীমান্ত শহর) পর্যন্ত পণ্য-ট্রেন পরিষেবা শুরু করার সিদ্ধান্তের দরুন রেলওয়ে সংযোগের একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়। ভুটান সীমান্তে গেদে-দর্শনা এবং চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ ভারতকে ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করতে এবং ট্রানজিট বাণিজ্য থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেবে। সর্বোপরি আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে এই সুবিধা নেপালেও প্রসারিত হতে পারে। এই পথে যাত্রী পরিষেবা শুরু হলে পর্যটনের সুবিধা হবে, বাংলাদেশের পর্যটকরা হিমালয় রাজ্যগুলি এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরে দেখতে সক্ষম হবেন। তবে এই পরিকল্পনাটি শুধু কাগজ-কলমে হয়েই রয়ে গিয়েছে, যেখানে তার বাস্তবায়নের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।
ভুটান সীমান্তে গেদে-দর্শনা এবং চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ ভারতকে ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করতে এবং ট্রানজিট বাণিজ্য থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেবে।
জ্বালানি সংযোগ: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের আর একটি ভিত্তি হল জ্বালানি সহযোগিতা। উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, যা ডিজেল সরবরাহের খরচ হ্রাস করে, বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রশমিত করে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে যৌথ ভাবে বাংলাদেশে মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়ন (দ্রষ্টব্য সারণি ১) করে। সর্বোপরি, তৃতীয় দেশে পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য ভারত-রাশিয়া চুক্তির অধীনে ভারত রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করছে, যা ‘পারমাণবিক ক্লাবে’ বাংলাদেশের প্রবেশের পথ প্রশস্ত করছে।
সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও আন্তঃ-আঞ্চলিক বিদ্যুতের উন্নয়নের জন্য দুই দেশই কাটিহার (ভারত)-পার্বতীপুর (নেপাল)-বরনগরের (বাংলাদেশ) মধ্যে ভারতীয় আর্থিক সহায়তায় ৭৬৫ কেভি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃসংযোগের নির্মাণকে ত্বরান্বিত করার কথা ভাবছে, যাতে বিদ্যুৎ গ্রিডের সংযোগকে সহজতর করা যায়। এটি ছিল নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তির অংশ, যা এই বছরের ২৮ জুলাই স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল, যাতে নেপাল ভারতীয় পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করতে পারে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হবে। তবে এই সম্পর্কে আর বিশেষ কোনও তথ্য পাওয়া যায় না।
ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল অংশীদারিত্ব ২০৪১ স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনার পাশাপাশি ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন সহায়তার সমন্বয় সাধনের উপর নির্ভরশীল।
ডিজিটাল সংযোগ: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভারত সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল অংশীদারিত্বের জন্য একাধিক সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করেন, যা ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আন্তঃসীমান্ত ডিজিটাল আদান-প্রদান ও আঞ্চলিক সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে।’ ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল অংশীদারিত্ব ২০৪১ স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনার পাশাপাশি ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন সহায়তার সমন্বয় সাধনের উপর নির্ভরশীল। এটি চারটি উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগের অবকাঠামো বিকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং সেগুলি হল স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ। প্রাথমিক অংশীদারিত্বের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য আন্তঃসীমান্ত বিবিআইএন-এমভিএ অনুমতিপত্র ডিজিটাইজ করা এবং ভারতীয় সংস্থা ভারতী এয়ারটেল ও জিও ইনফোকম দ্বারা ৪জি/৫জি চালু করাও অন্তর্ভুক্ত।
সংযোগ সহযোগিতা স্থিতিস্থাপক সম্পর্কের দিকে চালিত করে
বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর ভারত দুই দেশের মধ্যে ছ’টি প্রধান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেয়, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য রেল যোগাযোগ স্থগিত করে। যাই হোক, কয়েক সপ্তাহ পরে বাণিজ্য স্বাভাবিক করার জন্য পেট্রাপোল (ভারত) এবং বেনাপোলের (বাংলাদেশ) সঙ্গে সংযোগকারী বৃহত্তম স্থলবন্দরটি পুনরায় চালু করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরশীলতা ও একাধিক সংযোগব্যবস্থা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে সাহায্য করেছে। এই ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ায় নয়াদিল্লির জন্য একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাফল্যের প্রতীক, যা সামগ্রিক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করার জন্য এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতা এবং ভৌত সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোর আন্তঃসংযোগ দ্রুত স্বাভাবিকীকরণের একমাত্র কারণ না হলেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় বটে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমূলক ভাবে পুনরুদ্ধার করার ভারতের ক্ষমতা আসলে এ কথাই দর্শায় যে, ভারত তার প্রতিবেশীকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।
নয়াদিল্লি এবং ঢাকার সরকারকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা খুঁজে বের করতে হবে, যা সীমান্তের উভয় দিকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্ত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য অপরিহার্য।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক বৃদ্ধিতে ভারতের ভূমিকা আংশিক ভাবে (এখনও উল্লেখযোগ্য ভাবে) সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত সংযোগ প্রকল্পগুলির দ্বারা ফুটে উঠেছে। অন্যান্য দেশের জাতীয় দলগুলি ক্ষমতা অর্জনের জন্য ভারত-বিরোধী বক্তব্যকে সাধনী করে তুললেও তারা আঞ্চলিক উন্নয়নে নয়াদিল্লির বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও ভৌত সংযোগের গুরুত্ব স্বীকার করে। এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে সত্য। কারণ বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেটি ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে চায় এবং এটি অর্জনের জন্য একাধিক উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। নয়াদিল্লি এবং ঢাকার সরকারকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা খুঁজে বের করতে হবে, যা সীমান্তের উভয় দিকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্ত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য অপরিহার্য।
উপসংহার
এই অঞ্চলে নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য নয়াদিল্লিকে ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ভারতের প্রভাব এবং এই অঞ্চলের উন্নয়ন প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে তার সক্রিয় সম্পৃক্ততার উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে বর্ধিত ব্যাপক ভাবে অব্যবহৃত ক্রেডিট লাইন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ উভয়ই উপস্থাপন করে। ভারতের ক্রেডিট লাইন ব্যবহারে অন্তর্বর্তী সরকারের সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের গতিপথকে মন্থর করতে পারে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য একটি দ্বৈত পদ্ধতির প্রয়োজন: বিদ্যমান প্রকল্পগুলি বজায় রাখা এবং সহযোগিতার নতুন উপায়গুলি অন্বেষণ করা। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার মতো ক্ষেত্রগুলি সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতির কথাই দর্শায়। ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক অগ্রগতি চালনা করার ক্ষেত্রে ভারতের মানিয়ে নেওয়ার ভূমিকা এবং সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।
সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
পৃথ্বী গুপ্ত অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জুনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.