Author : Ankita Dutta

Published on Aug 07, 2023 Updated 0 Hours ago
ইউক্রেন সংকটের পর ইইউ: ঐকমত্য ও মতভেদ

ইউক্রেন সঙ্কটের ফলে দ্বন্দ্বদীর্ণ ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অভূতপূর্ব একতা তৈরি হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক সামরিক সহায়তা দিয়েছে, রাশিয়ার উপর সুদূরপ্রসারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করেছে, এবং লাখ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে। একই সময়ে, সূক্ষ্ম ভিন্নতাও দেখা দিয়েছে, এবং তার কারণ দেশগুলির রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সংক্রান্ত এবং তাদের নিজ নিজ বিপদ সংক্রান্ত ধারণা। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির অভ্যন্তরীণ অভিন্নতা বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রগুলির মূল্যায়ন করে, এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুসংহত বৈদেশিক নিরাপত্তা নীতি তৈরি করার প্রশ্নে গোষ্ঠীটি কী শিক্ষা নিতে পারে তা তুলে ধরে।


আরোপণ: অঙ্কিতা দত্ত, ‘‌‘‌দি ইইউ আফটার দি ইউক্রেন ক্রাইসিস: জাক্সটাপোজিং ইস্যুজ অফ কনভারজেন্স অ্যান্ড ডাইভারজেন্স,’‌’‌ ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নং ৬৩৫, এপ্রিল ২০২৩, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।


ভূমিকা
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন সংঘাত এখনও অব্যাহত রয়েছে, এবং এই সংকটটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। শুরুতে ভাবা হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে রাশিয়ার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে সঙ্গতি থাকবে না;‌ কিন্তু গোষ্ঠীটি রাশিয়ার উপর অবিলম্বে কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে সমর্থন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক ঐক্য প্রদর্শন করেছে।

সংঘাতের মধ্যে ইউরোপ যখন একটি কৌশলগত পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গেছে, সেই সময় তার নিরাপত্তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর এবং তার জ্বালানি সম্পদের জন্য রাশিয়ার উপর তার ক্রমাগত নির্ভরতা আরও বেড়ে গিয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে, দ্বন্দ্বটি পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক এবং রাশিয়ার থেকে আসা বিপদের উপলব্ধির গতিপথ নিয়ে উত্তেজনা পুনরুজ্জীবিত করেছে। উচ্চ খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কীভাবে সঙ্কটের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রশমিত করা যায়, তা নিয়ে সদস্য দেশগুলির মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটি সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অভিন্নতা ও বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রগুলি বিশ্লেষণ করে ইউক্রেন সংকট নিয়ে ইইউ–এর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে। এটি একটি সুসঙ্গত বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতি তৈরির প্রশ্নে ইইউ–এর জন্য এই স্বার্থগুলির পরিণতিকে তুলে ধরে৷

সংঘর্ষ বাধার পথ
ইউক্রেন রয়েছে ইউরোপে নবীকৃত মহাশক্তি প্রতিযোগিতার প্রথম সারিতে, যা একটি নতুন ঠান্ডা যুদ্ধের আভাস নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে বর্ধিত ‘‌পারমাণবিক বাগাড়ম্বর, একটি পুনরুত্থিত রাশিয়া, ইউরোপে একটি প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র, এবং একটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো’‌ অন্তর্ভুক্ত।[১] রুশ আখ্যানটি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘‌রুশি ও ইউক্রেনীয়দের ঐতিহাসিক ঐক্যের উপর’‌ শিরোনামের একটি দীর্ঘ গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে জোর দিয়ে বলা হয়েছিল যে ‘‌রুশি ও ইউক্রেনীয়রা তাদের ভাগ করে–নেওয়া সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও ধর্মীয় ইতিহাসের ভিত্তিতে একই মানুষ’‌।[২] পুতিন লিখেছিলেন যে ‘‌আধুনিক ইউক্রেন সম্পূর্ণরূপে সোভিয়েত যুগের পণ্য’‌, এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে পশ্চিমীরা ইউক্রেনকে ‘‌মস্কো–বিরোধী রাশিয়ায় পরিণত করার উপায় খুঁজছে...ইউক্রেনের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব শুধু রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেই সম্ভব’‌। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘‌বিশেষ সামরিক অভিযান’‌ ছিল রাশিয়ার নিকটবর্তী প্রতিবেশ ও প্রভাব বলয়ের মধ্যে ন্যাটোর বৃদ্ধি এবং পশ্চিমী ভূ–রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে ইউক্রেনের  একীভূতকরণ প্রয়াসের প্রতিক্রিয়া।

সংঘাত শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে মস্কো ‘‌রাশিয়ান ফেডারেশন ও উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপের চুক্তি’‌ প্রকাশ করেছিল।[৩] নথিতে ইউরোপ থেকে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র অপসারণ, ন্যাটোর আরও পরিবর্ধন থেকে বিরত থাকা, ন্যাটো সেনা মোতায়েনের আগে রাশিয়ার সম্মতি চাওয়া, এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার করার মতো বেশ কিছু নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। মোট কথা, মস্কো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পরে প্রতিষ্ঠিত এবং ঠান্ডা যুদ্ধের পরে শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্থাপত্যের মৌলিক বিষয়গুলোকে সংশোধন করতে চেয়েছিল।

এই গ্যারান্টিগুলির মূলে ছিল ছিল ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশগুলির[ক] ন্যাটো সদস্য হওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ। এই বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার অস্বস্তি ২০০৭ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পুতিনের বক্তৃতার সময় তুলে ধরা হয়েছিল, যেখানে তিনি বলেছিলেন: ‘‌‘‌ন্যাটো আমাদের সীমান্তে তার অগ্রবর্তী বাহিনী স্থাপন করেছে...এটা স্পষ্ট যে ন্যাটো সম্প্রসারণের সঙ্গে জোটের আধুনিকীকরণ বা ইউরোপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি গুরুতর প্ররোচনার প্রতিনিধিত্ব করে যা পারস্পরিক বিশ্বাসের স্তরকে হ্রাস করে। এবং আমাদের জিজ্ঞাসা করার অধিকার আছে: এই সম্প্রসারণ কাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে? এবং ওয়ারশ চুক্তি বিলুপ্তির পরে আমাদের পশ্চিমী অংশীদাররা যে আশ্বাস দিয়েছিল তার কী হল? আজ সেই ঘোষণাগুলো কোথায়?’‌’[৪]

এর পরে, রাশিয়া বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, যেমন ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় তার কর্মকাণ্ড এবং ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা। এগুলি ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তার অনুভূত নিরাপত্তা উদ্বেগের সঙ্গে আপস করা হলে দেশটি কী করবে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছ থেকে যে গ্যারান্টিগুলি চাওয়া হয়েছিল, তা ছিল এই অঞ্চলে তার স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার শেষ সীমা, এবং এর লক্ষ্য ছিল পশ্চিমী প্রভাব ও তার সীমান্তের দিকে ন্যাটোর বিস্তৃতি হ্রাস করা।

ন্যাটো নেতারা রাশিয়ার উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক হলেও মস্কোর মূল দাবিগুলিতে, যার মধ্যে ছিল ন্যাটোর পরিবর্ধন সীমিত করা, ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিলেন না।[৫] সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও ন্যাটো দেশগুলি রাশিয়ার উপর ১০ দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, মানবিক ও সামরিক সহায়তার মাধ্যমে ইউক্রেনকে সমর্থন করেছে। একই সময়ে, তারা এমন পদক্ষেপগুলি এড়িয়ে গেছে যা তাদের দেশগুলিকে সরাসরি সংঘাতে টেনে আনতে পারে বা কৌশলগত ভুল হিসাবের মাধ্যমে সংঘাতকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সংকটের প্রতি ইইউ-এর প্রতিক্রিয়ার একটি ছবি
সংঘাত শুরু হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই ইইউ নেতারা ‘‌ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নজিরবিহীন সামরিক আগ্রাসনকে সবচেয়ে জোরালো ভাষায় নিন্দা করেছেন... আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং ইউরোপীয় ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য’‌।[৬] তাঁরা রাশিয়াকে ‘‌অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার, ইউক্রেন থেকে তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করা, এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণরূপে সম্মান করার’‌ আহ্বান জানিয়েছিলেন, এবং উল্লেখ করেছিলেন যে ‘‌ ২১ শতকে এ ধরনের বলপ্রয়োগ ও জবরদস্তির কোনও জায়গা নেই’‌।

সংকট উদ্ঘাটিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই ইইউ অভূতপূর্ব ঐক্য দেখিয়েছিল এবং নিষেধাজ্ঞা, মানবিক সহায়তা ও সামরিক সহায়তা সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইইউ এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ৬৭ বিলিয়ন ইউরো (৭৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহায়তা হিসাবে ৩৭.৮ বিলিয়ন ইউরো (৪১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), শরণার্থীদের সমর্থনে ১৭ বিলিয়ন ইউরো (১৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), এবং সামরিক সহায়তা হিসাবে ১২ বিলিয়ন ইউরো (১৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।[৭] ২০২২ সালের মার্চ মাসে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত ইউক্রেনীয় নাগরিকদের জন্য ইইউ অস্থায়ী সুরক্ষা নির্দেশিকা[৮] জারি করেছিল। এই ব্যবস্থাটি ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সুরক্ষা প্রদান করে, যার মধ্যে বসবাসের অধিকার ও শ্রম বাজারে প্রবেশাধিকার, চিকিৎসা সহায়তা ও শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত।

ইইউ ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে সমর্থন করার জন্য ইউরোপিয়ান পিস ফেসিলিটি (ইপিএফ)[খ] সক্রিয় করেছে। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ইপিএফ–এর মাধ্যমে ইইউ ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে ৩.৬ বিলিয়ন ইউরো (৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, এবং ইউক্রেনের সমর্থনে (ইইউএমএএম ইউক্রেন)  ইউরোপীয় ইউনিয়ন সামরিক সহায়তা মিশনের অধীনে দিয়েছে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো (৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।[৯] অধিকন্তু তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে ইইউ প্রকাশ করেছে তার স্ট্র‌্যাটেজিক কম্পাস ফর সিকিউরিটি  অ্যান্ড ডিফেন্স[গ], এবং ঘোষণা করেছে দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী গঠনের কথা। সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি, ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা, এবং আরও সমন্বিত সমর্থনের জন্য ন্যাটোর সঙ্গে কাজ করা। রাশিয়ার পদক্ষেপগুলি দেশগুলিকে তাদের কৌশলগত নিরাপত্তা অবস্থান ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করার জন্য চাপ দিয়েছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান পরিত্যাগ করে ন্যাটো সদস্যতার জন্য আবেদন করেছে;‌ আর ডেনমার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা নীতিতে অংশগ্রহণের জন্য ভোট দিয়েছে৷ [১০]

ইইউ এবং এর মিত্ররা — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জি ৭ ও ন্যাটো — রাশিয়ার উপর সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত এটি রাশিয়ার শক্তি সংস্থানগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা, সুইফট আর্থিক ব্যবস্থা থেকে রুশ ব্যাঙ্কগুলিকে বাদ দেওয়া, এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়ার লেনদেন ক্ষমতাকে ব্লক করা–সহ ১০ দফা নিষেধাজ্ঞা[১১] কার্যকর করেছে। এই পদক্ষেপগুলির লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার সীমিত করা, এর বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস করা, এবং শক্তি, পরিবহণ ও পরিকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ স্থগিত করা। এই ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে আর্থিক ও বাণিজ্য বাজারকে অস্ত্র করা হয়েছে। এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির মধ্যে অভিন্নতার তিনটি মূল ক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও ভিন্নতার বিষয়গুলিও উঠে এসেছে।

মিলনের ক্ষেত্র

সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ, এবং সেগুলি কার্যকর করা হয়েছিল ‘‌রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার কর্মের জন্য গুরুতর পরিণতি আরোপ করা এবং আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার ক্ষমতাকে কার্যকরভাবে ব্যর্থ করার লক্ষ্যে’‌।[১২] তার মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ইইউ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার আওতায় এসেছে একটি বড় পরিসর। রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ভরতা সত্ত্বেও দেশগুলি দ্রুত এইসব ব্যবস্থা নিতে সম্মত হয়েছিল। যাই হোক, নিষেধাজ্ঞাগুলি ইইউ–র জন্যও অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে শক্তির ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি ও বৃদ্ধির নিম্ন হার। তারপরও নিষেধাজ্ঞার প্রতি সমর্থন উচ্চ রয়ে গেছে। একটি ইউরোব্যারোমিটার[ঘ] সমীক্ষা অনুসারে, উত্তরদাতাদের ৮০ শতাংশ রাশিয়ার সরকার, সংস্থা ও ব্যক্তিদের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গে একমত হয়েছেন।[১৩]

আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ মূল রুশ ব্যাঙ্কগুলিকে সুইফট সিস্টেম থেকে বাদ দিয়েছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে দেশটির প্রবেশযোগ্যতা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং রাশিয়ার ব্যবসার জন্য লেনদেনের স্থান সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এছাড়াও ইইউ আন্তর্জাতিক বাজারে সীমিত সুযোগের সম্ভাবনা নিশ্চিত করার জন্য মূল রুশ ব্যাঙ্কগুলির উপর লেনদেনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এবং তাদের সম্পদ আটক করেছে।[১৪]

নিষেধাজ্ঞার অধীনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল রুশ জ্বালানি। ২০২২ সালের মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছিল, যা এই অঞ্চলে রাশিয়ার তেল আমদানির ৭৫ শতাংশকে প্রভাবিত করে। হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রকে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল সরবরাহ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[১৫] একই সময়ে, ইইউ রাশিয়ার কাছে তেল শোধনাগারের পণ্য ও প্রযুক্তি বিক্রি ও সরবরাহ নিষিদ্ধ করে, এবং এইভাবে মস্কোর জন্য তার তেল শোধনাগারগুলিকে আপগ্রেড করা কঠিন করে তোলে। রাশিয়ার সব ধরনের কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি এই ব্যবস্থাগুলো এসেছে। উপরন্তু, অক্টোবরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৃতীয় দেশগুলিতে রাশিয়ার তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের সামুদ্রিক রপ্তানির উপর মূল্যসীমা আরোপ করে।[১৬]

প্রযুক্তি, বিমান চলাচল ও মিডিয়া শিল্পও নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে। ১,৩৮৬ ব্যক্তি এবং ১৭১টি সত্তার উপরও বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছে,[১৭] যার মধ্যে রয়েছে সম্পদ আটক করা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রবেশ বা যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা, এবং তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ও সত্তার ক্ষেত্রে তহবিল উপলব্ধ করার উপর নিষেধাজ্ঞা। এই সমন্বিত ব্যবস্থাগুলি হল সবচেয়ে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা যা ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছে। এইসব নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইইউ তার কাজ করার ইচ্ছা এবং তার আর্থিক ব্যবস্থা ব্যবহারে তার শক্তি প্রদর্শন করেছে।

নিরাপত্তা নিয়ে পুনরায় ব্যবস্থাগ্রহণ
ইউক্রেন সংকট ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর পুনর্মূল্যায়ন এবং ইউরোপীয় নেতৃত্বের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত বিতর্ককে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইইউ নেতাদের ভার্সাই শীর্ষ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মন্তব্যে স্পষ্ট ছিল, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইউরোপকে অবশ্যই সমস্ত পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে...ইউরোপকে রাশিয়ার গ্যাস থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, নিজের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাধীন হতে হবে।’‌’‌[১৮]

২০২২–এর মধ্যে, ইইউ নিজেকে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে শক্তিশালী করার জন্য বেশ কয়েকটি অতি–গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রথমত, এটি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য বহুল প্রতীক্ষিত কৌশলগত কম্পাস প্রকাশ করেছে,[১৯] যার মধ্যে একটি বিষয় হল ৫,০০০ সৈন্যের দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী গঠন করা। দ্বিতীয়ত, ইইউ–তে জয়েন্ট কমিউনিকেশন অন ডিফেন্স ইনভেস্টমেন্ট গ্যাপ গৃহীত হয়েছে, যা ‘‌গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার ব্যবধান কমাতে এবং ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও শিল্প ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য সম্মিলিত উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বর্ধিত প্রতিরক্ষা ব্যয়’‌[২০] করার আহ্বান জানিয়েছে। এর অধীনে এটি একটি প্রতিরক্ষা যৌথ প্রকিউরমেন্ট টাস্ক ফোর্সও প্রতিষ্ঠা করেছে, যার লক্ষ্য ‘‌সদস্য দেশগুলির স্বল্পমেয়াদি যৌথ সংগ্রহের প্রয়োজনগুলির সমন্বয় ও বিরোধ নিরসনকে সমর্থন ও সহজতর করা’‌।[২১] তৃতীয়ত, ইইউ ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে এবং এই ধরনের সমর্থন সমন্বিত ও সুসংহত করতে দুই বছরের ইউম্যাম ইউক্রেন স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু সদস্য রাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও লাটভিয়ার মতো পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৩ শতাংশ বাড়িয়েছে,[২২] আর আয়ারল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ দেশগুলিও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে।[২৩] অতিরিক্তভাবে, বিরোধপূর্ণ এলাকায় প্রাণঘাতী অস্ত্র হস্তান্তর না–করা সহ জার্মানি কিছু মূল নীতির বিপরীত পথে হেঁটেছে। [২৪]

ন্যাটো ট্রান্সআটলান্টিক স্তরে হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, স্লোভাকিয়া ও রোমানিয়াতে চারটি নতুন এনহ্যান্সড প্রেজেন্স মিশন যুক্ত করেছে, যা এই অঞ্চলে ‘‌মিত্রশক্তির নিবৃত্তিমূলক সতর্কতা ও প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে’‌ এই ধরনের মিশনের সংখ্যা মোট আটটিতে নিয়ে এসেছে।[২৫] অধিকন্তু, এটি তার মিত্রদের সমর্থন করার জন্য তার বহুজাতিক বাহিনী র‌্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্সকে সক্রিয় করেছে। এর অবস্থান আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রতিক্রিয়া বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ৪০,০০০ থেকে ৩০০,০০০–এ উন্নীত করা হয়েছে।[২৬] ন্যাটো ২০২২ সালের জুন মাসে তার নতুন স্ট্র‌্যাটেজিক কনসেপ্ট বা কৌশলগত ধারণাও গ্রহণ করে,[২৭] যা পরবর্তী দশকে জোটের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। নথিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি ছিল জোটের ভবিষ্যৎ পরিবর্ধনের উল্লেখ, যা ইউক্রেন ও জর্জিয়ার সদস্যপদ সংক্রান্ত  ২০০৮ বুখারেস্ট শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।

ইউক্রেন সঙ্কট নিরপেক্ষ ইউরোপীয় দেশগুলিকে তাদের নিরাপত্তা স্থাপত্য পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য চাপ দিয়েছে। এটি উত্তর ইউরোপের দিকে ন্যাটো সম্প্রসারণের সম্ভাবনার মধ্যে দৃশ্যমান ছিল। ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও নরওয়ে হল মূল ন্যাটো স্বাক্ষরকারী, ফিনল্যান্ড ৪ এপ্রিল ২০২৩–এ জোটে যোগদান করেছে, এবং সুইডেনের আবেদন হাঙ্গেরি ও তুর্কিয়ের মতামতের জন্য মুলতুবি রয়েছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন (যখন তারা যোগ দেবে) উন্নত সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে আসবে।

ন্যাটোর সম্ভাব্য সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর অর্থ হল সুইডেন ও ফিনল্যান্ড তাদের প্রতিরক্ষা ভঙ্গির এতদিনকার বৈশিষ্ট্য ‘‌নিরপেক্ষতা’‌ ত্যাগ করবে। উভয় দেশ যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহ না–করার নীতিও বাতিল করেছে; তারাই প্রথম অস্ত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে ইউক্রেনকে সমর্থন করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছিল। সুইডেন সামরিক সহায়তার জন্য ৫৭২ মিলিয়ন ইউরো (৬৭২ মিলিয়ন ডলার)–সহ ১০,০০০ অ্যান্টি–ট্যাঙ্ক অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।[২৮] আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনে ১১ দফা সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে,যার মূল্য মোট ১৮৯.২ মিলিয়ন ইউরো (২০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।[২৯]

শক্তি বৈচিত্র্য একটি বাস্তবতা হয়ে ওঠা
২০২১ সাল থেকে ইইউ–এর জন্য বিদ্যুৎ শক্তির সমস্যা সর্বাগ্রে রয়ে গেছে। ইউক্রেন সংকট রাশিয়ার শক্তি সংস্থানগুলির উপর তাদের নিজ নিজ নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। সংঘাতের আগে, ২০২০–২০২১ সালে, ইইউ তার বেশিরভাগ শক্তি সম্পদ (গ্যাস, অপরিশোধিত  তেল ও কয়লা) রাশিয়া থেকে আমদানি করেছিল।[৩০]

ইউক্রেন সঙ্কট ইইউ–কে তার শক্তি সংস্থান বৈচিত্র্যময় করার জন্য কাজ করতে রাশিয়া থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। সঙ্কটটি মস্কোর শক্তি সম্পদের উপর বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এবং সব ধরনের কয়লা, সমুদ্রপথে সরবরাহ করা অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একই সময়ে, এটি সম্পদের এক নতুন সরবরাহ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যেও কাজ করছে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, কাতার, আজারবাইজান ও মিশরের মতো সম্পদসমৃদ্ধ দেশগুলির  কাছে পৌঁছেছে।[৩১]

ইইউ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জন্য তার জোরালো প্রয়াসের পুনর্নবীকরণ করে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির উপর সংকটের প্রভাবকে নরম করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাও সামনে রেখেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে রিপাওয়ারইইউ প্ল্যান চালু করার লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে শক্তির সরবরাহ দুই–তৃতীয়াংশ হ্রাস করা। মে ২০২২ সালে একটি উন্নততর পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছিল, যা পরিচ্ছন্ন শক্তির পরিমাণ বাড়ানো ও পরিবহণের মাধ্যমে শক্তি ম্যাট্রিক্সে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির সামনে একটি ব্লুপ্রিন্ট উপস্থাপন করেছিল। রিপাওয়ারইইউ হল ২০২১ সালে ইইউ গ্রিন ডিল থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগমন, এবং এটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিস্তৃত:‌ শক্তি সঞ্চয়, সরবরাহ বৈচিত্র্যকরণ, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে আরও দ্রুত রূপান্তর।[৩২]  এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য ইইউ–এর ২০২৭ সাল পর্যন্ত ২১০ বিলিয়ন ইউরো (২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন।[৩৩]  উপরন্তু, এটি ২০৩০ সালের মধ্যে তার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি  উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষ্য সংশোধন করে ১২৩৬ গিগাওয়াট করেছে।[৩৪]

ইইউ দেশগুলিও তাদের বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে, এবং এ ক্ষেত্রে সম্পদসমৃদ্ধ আফ্রিকা একটি মূল বিকল্প হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। জার্মানি, ইতালি ও পোল্যান্ড সেই অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে বিভিন্ন জ্বালানি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে৷[৩৫] জার্মানি কাতারের সঙ্গে ১৫ বছরের এলএনজি চুক্তিও করেছে, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে, এবং সরকার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য লাইসেন্সিং ও পদ্ধতিগত প্রয়োজনীয়তাগুলি ত্বরান্বিত করতে ‘‌এলএনজি অ্যাকসিলারেশন অ্যাক্ট’‌ প্রণয়ন করেছে।[৩৬] উপরন্তু, ডিসেম্বরে বাজারে তেলের প্রবাহ বজায় রেখে মস্কোর রাজস্ব সীমিত করার জন্য জি৭ মিত্রেরা রুশ অপরিশোধিত তেলের মূল্যসীমা (ব্যারেলপ্রতি ৬০ মার্কিন ডলারে)[৩৭] বেঁধে দিতে সম্মত হয়েছিল। উপরন্তু, অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানি সহ রুশ জ্বালানি ক্ষেত্রের উপর সুদূরপ্রসারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ভিন্নতার ইস্যুগুলি

যদিও ইইউ অনেক ক্ষেত্রে অভিন্নতা দেখিয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য থেকে গিয়েছে। এই ভিন্নতাগুলি গোষ্ঠীটির মধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণকে ব্যাহত করেনি, তবে দীর্ঘমেয়াদে ইউরোপের জন্য এর নানা রকম ফলাফল আছে, কারণ গোষ্ঠীটি রাশিয়া সম্পর্কে একটি ব্যাপক নীতি ও একটি সুসংহত কৌশল তৈরি করার চেষ্টা করছে। ভিন্নতার তিনটি মূল ক্ষেত্র বিদ্যমান:‌ আখ্যানের লড়াই, শক্তির সমস্যা ও নিরাপত্তা নীতি।

আখ্যানের লড়াই: পূর্ব বনাম পশ্চিম বিভাজন
ইউক্রেন সংঘাত রাশিয়ার বিষয়ে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের আখ্যানের মৌলিক পার্থক্য এবং তাদের অনুভূত বিপদের ধারণা সামনে নিয়ে এসেছে। সংঘাতের শুরু থেকে পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি ছিল ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে (উদাহরণস্বরূপ, সামরিক সহায়তা ও শরণার্থী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে) সবচেয়ে সক্রিয় ইইউ দেশ। তাদের দখলীকৃত থাকার উত্তরাধিকার ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং দেশটি কী অর্জন করার চেষ্টা করছে সে সম্পর্কে তাদের অনুধাবনের কথা স্পষ্ট করেছিল। এই দেশগুলি পশ্চিম ইউরোপকে, বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানিকে, রাশিয়ার শক্তি সংস্থানগুলির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার পরিণতি এবং রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এই অঞ্চলটিকে দেখার বিষয়ে দীর্ঘকাল ধরে সতর্ক করে আসছিল। এই দেশগুলি সেই পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সমালোচনা করে এসেছে যারা মস্কোর বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক তুষ্টির পথ অনুসরণ করেছিল।[৩৮]  উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘাতের শুরুতে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক–ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার বলেছিলেন যে তাঁর দেশের উচিত ছিল ‘‌রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির আগেকার সতর্কবার্তাগুলি মেনে নেওয়া’‌।[৩৯] ইউক্রেনকে তাদের সমর্থন সত্ত্বেও ফ্রান্স ও জার্মানি রাশিয়া নিয়ে মিশ্র সংকেত পাঠিয়েছে,[৪০] এবং বোঝা গিয়েছে যে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা আর ইইউ–এর ঐক্য ধরে রাখার মধ্যে দ্বন্দ্বে দীর্ণ।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে এই ভিন্নতাগুলি বিভিন্ন বিপদের উপলব্ধি থেকেও উদ্ভূত হয়। পশ্চিম ইউরোপের জন্য নিরাপত্তা স্থাপত্যের যে কোনও বিবেচনা রাশিয়াকে কোনও না কোনওভাবে জড়িত রাখে, আর পূর্ব ইউরোপের জন্য নিরাপত্তা হচ্ছে সম্ভাব্য রুশ হস্তক্ষেপের থেকে নিজেকে রক্ষা করা। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির ক্ষেত্রে সোভিয়েত শাসনের সময়কার নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তাদের চালিত করে, এবং সেই অনুযায়ী তারা বর্তমান সংঘাতের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। কেন তারা সংঘাতে ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর ভূমিকার জন্য চাপ দিয়েছে, তা এ থেকেও বোঝা যায়।

সংঘাত শেষ হলে, এই পার্থক্যগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য একটি শক্তিশালী বিদেশ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি তৈরি করা কঠিন করে তুলবে। জার্মানি ও ফ্রান্সের বিপরীতে পূর্ব ইউরোপ রাশিয়াকে ইউরোপীয় স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য হিসাবে দেখে না, দেখে বিপদ হিসাবে। পূর্ব ইউরোপের জন্য এই দ্বন্দ্বটি ঠান্ডা যুদ্ধ–পরবর্তী ইউরোপীয় মানচিত্রকে নতুন করে আঁকার দ্বন্দ্ব।[৪১]

এই পার্থক্যটি রাশিয়ার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বল্পমেয়া্দি ও দীর্ঘমেয়া্দি দৃষ্টিভঙ্গিকে জটিল করে তোলে। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাগুলিকে এবং ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার স্বল্পমেয়া্দি নীতিকে শক্তিশালী করেছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে হবে:‌ বিরোধ–পরবর্তী ইউরোপের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ; ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর ধরন এবং এতে যদি রাশিয়ার স্থান থাকে তবে তার প্রকরণ; ইউক্রেনে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের জন্য প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র কতটা ভার বহন করতে পারবে।

শক্তি নিয়ে প্রশ্ন

যদিও প্রাথমিকভাবে হালকা শীতের কারণে ইউরোপ ‘‌শক্তি যুদ্ধ’‌ জিতেছে বলে মনে করা হয়,[৪২] তার কয়েক মাস আগে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পরিপূর্ণ মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল শক্তি নিরাপত্তার বিষয়ে, বিশেষ করে রুশ শক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে। রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি হ্রাস অনেক ইউরোপীয় দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে থেকে গিয়েছে, কারণ প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শক্তির খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে এবং অর্থনীতিগুলিতে প্রভাব ফেলবে।

২০২২ সালের মার্চ মাসে ইইউ ঘোষণা করেছিল যে তারা এক বছরের মধ্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি দুই–তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেবে। নভেম্বরের মধ্যে সদস্য দেশগুলি রাশিয়ার গ্যাসের উপর তাদের নির্ভরতা কমিয়ে ২০ শতাংশের কম (২০২১ সালের ৮৩ শতাংশ থেকে) করতে সক্ষম হয়েছিল।[৪৩] এই অঞ্চলে নির্ভরতা হ্রাস করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে, যদিও ইইউ দেশগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মতো উৎপাদকদের থেকে ট্যাঙ্কারে করে এলএনজি আনার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু এলএনজি দিয়ে সস্তা রুশ প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিস্থাপন করা অনিবার্যভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে, কারণ শক্তির দাম বাড়িয়ে জ্বালানি সম্পদের খরচ তুলতে হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের বিদ্যুতের বিলের উপর চাপ তৈরি হবে। উপরন্তু, এলএনজি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য আরও ডেডিকেটেড টার্মিনালের প্রয়োজন হবে, যা চালু হতে দুই থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনার সময়েও ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়ার মতো সদস্য রাষ্ট্রগুলি জানিয়েছিল তাদের নির্ভরশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় কমিশনের ২০২২ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার সংস্থানগুলি পর্যায়ক্রমে আমদানি বন্ধ করার প্রস্তাবিত সময়রেখা তাদের অর্থনীতিগুলির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছিলেন যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি হাঙ্গেরির অর্থনীতিতে ‘‌পারমাণবিক বোমার প্রভাব’‌[৪৪] ফেলবে, এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই ধরনের পদক্ষেপগুলি ‘‌রাশিয়ার চেয়ে ইউরোপকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে’‌। এই আপত্তিগুলি পাইপলাইন দ্বারা সরবরাহকে বাদ দিয়ে শুধু সমুদ্রবাহিত আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পথে নিয়ে গিয়েছিল।

সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়ায় হাঙ্গেরি অবশ্য একটি বিচ্ছিন্ন দেশ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে; দেশটি ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত ১৫ বছরের চুক্তি ছাড়াও প্রতিদিন ৫.৮ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস পাওয়ার জন্য রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তা ছাড়া হাঙ্গেরিতে পর্যাপ্ত সংস্কারের অভাবের কারণে ইইউ কমিশন থেকে তহবিলের সুপারিশ থেকে ছাড় পেতে বুদাপেস্ট ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেনের জন্য ১৮ বিলিয়ন ইউরো (১৯.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের ইইউ এর আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ আটকে দেয়। তার ভিটো তুলে নেওয়ার জন্য কোভিড–১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার তহবিল হিসাবে ইইউ দেশটিকে ৫.৮ বিলিয়ন ইউরো (৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হাঙ্গেরি জোরাজুরি করে যে ইইউ-এর বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থার তালিকা থেকে নয় জনকে অপসারিত করতে হবে, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা হ্রাস পাবে।[৪৭] যেহেতু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জ্বালানি মূল্যের তীব্র বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এবং তা অংশত ঘটেছে নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ হিসাবে রাশিয়ার ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ কমানোর কারণে, অরবান তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন যে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মূল্যায়ন করা হোক।[৪৮]

হাঙ্গেরি সরকারের নেওয়া এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও চেক রিপাবলিক নিয়ে তৈরি ভিসেগ্রাদ গ্রুপের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে, এবং নভেম্বরে সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়ার জন্য নেতাদের বৈঠক সত্ত্বেও তা অব্যাহত আছে।[৪৯] উদাহরণস্বরূপ, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি, এক সময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্র, এখন ভিন্ন পথ নিয়েছে। ওয়ারশ এখন কিয়েভের অন্যতম শক্তিশালী মিত্র ও প্রবক্তা, এবং তারা প্রায়ই মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বুদাপেস্টের সক্রিয়তা এবং কিছু ইইউ নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করার সমালোচনা করেছে।[৫০]

নিরাপত্তা নীতি: অলঙ্কারশাস্ত্র বনাম বাস্তবতা

সংঘাতের ফলে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা একীকরণ বাড়ানোর বিষয়ে এখন আগের থেকে বেশি করে কথাবার্তা হচ্ছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলির বহুমাত্রিক প্রকৃতির একটি ক্রমবর্ধমান উপলব্ধি রয়েছে, যার ফলে তারা তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা মূল্যায়ন করছে। যাই হোক, প্রাথমিকভাবে দুটি কারণে এই গতি বজায় থাকবে কি না তা একটি দেখার বিষয়।

প্রথমে আসবে ইউক্রেনের কাছে অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্ন। সঙ্কটের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে নিরাপত্তা নীতিগুলির পুনর্বিবেচনা শুরু হয়, যার একটি মূল ফলাফল ছিল ইউক্রেনকে অস্ত্র সমর্থনের ঘোষণা৷ যাই হোক, আলঙ্কারিক কথা ও বাস্তবতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য থেকে গিয়েছে। ইউক্রেনে বেশিরভাগ অস্ত্রই ব্রিটেন, পোল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করেছে, আর বাকি ইউরোপ তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে (চিত্র ১ ও ২ দেখুন)। অঙ্গীকার ও অস্ত্র সরবরাহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি হল জার্মানি–সহ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির৷ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ স্কোলজ ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এবং যুদ্ধের অঞ্চলগুলিতে প্রাণঘাতী সহায়তা প্রদান না–করার নীতি পরিবর্তন করেছিলেন;‌ কিন্তু তারপর ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র প্রদানের প্রশ্নে তিনিই জোর দিয়ে বলেছিলেন যে জার্মানি ‘‌একা যাবে না’‌।[৫১] জার্মানি ধীরে চলার জন্য প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে,এবং ৬২০ মিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মাত্র ২৯০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।

চিত্র ১: ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা—প্রতিশ্রুতি বনাম যা বিতরণ করা হয়েছে (২৪ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ১৫ জানুয়ারি ২০২৩)

সূত্র: কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দি ওয়র্ল্ড ইকনমি [৫২]

চিত্র ২: ইউক্রেনকে সরকারি সাহায্য—প্রতিশ্রুতি বনাম যা বিতরণ করা হয়েছে (বিলিয়ন ইউরোয়)


সূত্র: কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দি ওয়র্ল্ড ইকনমি

সাম্প্রতিক ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা সম্পদ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি–সহ  ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির সিদ্ধান্ত একটি প্রতিক্রিয়ানির্ভর নীতি বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া, পশ্চিমে প্রতিরক্ষা খাতে ৩০ বছরের কড়াকড়ি এবং গোলাবারুদ মজুতের ক্রমাগত হ্রাস এখন বিদ্যমান ভান্ডার থেকে ইউক্রেনকে সরবরাহ করার ক্ষমতাও হ্রাস করেছে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ন্যাটো দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে তাদের জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতিটিই জোটের জন্য স্থায়ী উদ্বেগের বিষয়। ক্রিমিয়ার সংকটের পর ২০১৪ সালের ওয়ারশ শীর্ষ সম্মেলনে এটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সর্বশেষ তথ্য দেখায় যে ৩০টি ন্যাটো দেশের মধ্যে মাত্র নয়টি দেশ এই লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে (চিত্র ৩ দেখুন)।

চিত্র ৩: ন্যাটো দেশগুলির দ্বারা প্রতিরক্ষা ব্যয় (২০১৪ থেকে ২০২২)

সূত্র: ন্যাটো

পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। যদিও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি রাশিয়ার কাছ থেকে তাদের বিপদের কারণে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছে, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি প্রতিরক্ষায় বছরের পর বছর বিলগ্নীর কারণে জর্জরিত হয়েছে। বর্তমান সংকটের সময় ওই বিষয়টি তাদের অতি–গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতার অভাব, কম মজুদ, এবং তাদের নিজ নিজ বাহিনীর সীমিত প্রস্তুতির মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে। যদিও ইইউ এবং এর সদস্য দেশগুলি তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে, তবে এর জন্য অধিগ্রহণ, সংগ্রহ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

সংঘাতের এক বছর: ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর প্রভাব

ইউক্রেন সংঘাত সম্পর্কিত সমস্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলির মধ্যে অভিন্নতা বজায় রাখতে অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ইইউ তার ঐক্য প্রদর্শন করেছে। এই সংকট নিরপেক্ষ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে, ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধকে শক্তিশালী করতে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামো ও গোষ্ঠীটির কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য চাপ দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি কৌশলগত জাগরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, এবং নতুন খেলোয়াড়রা ইউরোপীয় আখ্যান ও নীতি তৈরি করে দিচ্ছে। যাই হোক, সঙ্কটের সময় একতা দেখানো সত্ত্বেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, নিরাপত্তা স্থাপত্য বা ইউক্রেনের পুনর্গঠনের প্রশ্নে ব্যাপক নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। একই সময়ে, পারমাণবিক বাগাড়ম্বর বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে ভুল হিসাবের মাধ্যমে সংঘাত বৃদ্ধির বিপদ একটি বাস্তব সম্ভাবনা। তবুও, ইইউ–এর জন্য কিছু মূল প্রভাব রয়েছে:

  • ইউক্রেনের জন্য নীতিনির্ধারণের ভরকেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনর্বিন্যাস হয়েছে ব্রাসেলস থেকে ওয়ারশয়। ইউক্রেনের সংঘাত এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে, এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের সদস্য রাষ্ট্রগুলি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য নীতি প্রণয়নকে চালিত করে সংঘাতের প্রথম দিকে পশ্চিমী দেশগুলির তৈরি শূন্যতা পূরণ করেছে। তারা কিয়েভকে সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে, শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে, সাহায্যের প্রতি ঐকমত্যকে চালিত করেছে, এবং বৃহত্তর ইইউ–র জন্য একটি আখ্যান তৈরিতে সহায়তা করেছে। সংঘাতটি রাশিয়ার থেকে বিপদের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক উদ্বেগকে বৈধ করেছে। স্বল্প থেকে মাঝারি মেয়াদে এই দেশগুলি ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিকে প্রভাবিত করতে থাকবে। যাই হোক, দীর্ঘমেয়াদে তারা ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন, এবং রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি সম্পর্কিত প্রশ্নে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে সক্ষম হবে কি না তা দেখা বাকি রয়েছে। সংক্ষেপে, ইইউ–তে এই ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন দৃশ্যমান হলেও দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত জরুরি সক্রিয়তার অনুভূতি চলে গেলে এগুলি স্থায়ী নাও হতে পারে।• ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন থেকে গেলেও বাস্তবতা বদলে যাচ্ছে। আলোচনাগুলি সংঘর্ষ ও যুদ্ধ থেকে সরে যাচ্ছে যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হতে পারে এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী হবে সেই দিকে। যেহেতু নাগরিকেরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, স্ফীত জ্বালানি বিল ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তাই জাতীয় সরকার ও ইইউ থেকে জরুরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দাবিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট দেখা যাচ্ছে।

    • সংঘাতের বিরুদ্ধে জনসমর্থন ধরে রাখার মধ্যে দিয়ে ইউরোপীয় গণতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতার ক্ষমতাও পরীক্ষিত হবে। এমনটি ঘটবে মূলত জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের মতো বিভিন্ন নীতিগত অগ্রাধিকারের কারণে। এই ধরনের বৈচিত্র্যময় অগ্রাধিকার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরিতে অবদান রাখতে পারে, যা ইতিমধ্যেই জ্বালানি বিল, অভিবাসন ও সংঘাতের কারণে চাপে পড়ে থাকা অর্থনীতিগুলিকে আরও চাপে ফেলতে পারে। ইইউ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মতামত ভিন্ন হওয়ার কারণে, রাশিয়া প্রসঙ্গে ঐক্য তৈরি করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে সম্ভবত কঠিন হবে।

    • সংঘাতের ফলে কঠোর নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপে একটি উল্লেখযোগ্য পুনর্নির্মাণ হয়েছে। বেশিরভাগ ইইউ সদস্য রাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পর্যালোচনা করেছে, এবং তাদের ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাজেট ও শিল্প ভিত্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাদের অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে। এ ছাড়াও, তারা ইউক্রেনের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য যথেষ্ট সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যাই হোক, যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং কিয়েভকে যা দেওয়া হয়েছে, এবং তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামো ও গোলাবারুদ মজুতের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনকে আরও সমর্থন করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলি সক্ষম কি না, এই সব নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। ইউক্রেনীয় সংকটের ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও যোগ্যতা মূল্যায়ন করেছে, এবং গোষ্ঠীটির সংস্কারের বিষয়ে কথোপকথন শুরু হয়েছে। যাই হোক, এটি একটি স্বল্প না দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা তা দেখা বাকি আছে।

    • নিষেধাজ্ঞাগুলি কাজ করছে কি না তা নিয়ে ক্রমশ বেশি করে প্রশ্ন উঠছে। যেমন, ইইউ রাশিয়ার শক্তির উৎসগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, এবং মস্কোর উপর নির্ভরতা কমিয়ে উৎস বহুমুখী করেছে;‌ কিন্তু রাশিয়ার তেলের দামের উপর ছাড় দেশটিকে উদীয়মান অর্থনীতিগুলির জন্য একটি আকর্ষণীয় উৎস করে তুলেছে। চিন, ভারত ও তুর্কিয়ের মতো দেশে এর রপ্তানি বহুগুণ বেড়েছে, এবং তা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন তৈরি করেছে। উল্লেখযোগ্য, রাশিয়ার অর্থনীতি ২০২২ সালে ২.১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম। অধিকন্তু, আইএমএফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে পণ্য রপ্তানির কারণে ২০২৩ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে নিষেধাজ্ঞার শাসনের বাইরের দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

উপসংহার

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি যতটা উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপ তার চেয়ে বেশি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সংকটের একটি কার্যকর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া ইইউ–এর নীতিনির্ধারণী পদ্ধতিতে অনুপস্থিত বলে মনে হচ্ছে। যাই হোক, যখন সঙ্কটটি উত্তপ্ত সংঘাত ও ক্ষমতা হ্রাসের জন্য যুদ্ধের মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে, সেই সময় এই বিষয়টি দেখতে হবে যে কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি রাশিয়ার  সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, ইউক্রেনের পুনর্গঠন এবং ইইউ এর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত বিষয়ে জটিল প্রশ্নগুলির বিশ্বাসযোগ্য সমাধান খুঁজে বার করার জন্য কাজ করবে।

সঙ্কটটি শক্তি সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা ব্যয়, ইউক্রেনে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা, এবং নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত বিষয়ে ইইউ দেশগুলির ঐকমত্যে পৌঁছনোর ক্ষমতা তুলে ধরেছে। একই সময়ে, সদস্য দেশগুলির ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় স্বার্থ ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি কিছু ভিন্নতার দিকেও চালিত করেছে। যদিও এগুলি ইইউকে ভেঙে ফেলবে এমন সম্ভাবনা কম, তবে এর থেকে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে। রাশিয়া নীতি ও ইউক্রেন নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে উভয় প্রয়াসই ইউরোপীয় নিরাপত্তার ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।


পাদটীকা


[ক] ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (ওয়ারশ চুক্তি নামেও পরিচিত) ছিল একটি রাজনৈতিক ও সামরিক জোট, যা ১৯৫৫ সালের মে মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বেশ কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওয়ারশ চুক্তির মূল স্বাক্ষরকারীরা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, আলবেনিয়া, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া ও জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।

[খ] ইউরোপিয়ান পিস ফ্যাসিলিটি (ইপিএফ) হল ইইউ ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি অফ–বাজেট ফান্ডিং মেকানিজম, এবং সাধারণ বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতির অধীনে এর সামরিক ও প্রতিরক্ষা প্রভাব আছে। ইপিএফ দুটি স্তম্ভ নিয়ে গঠিত, একটি সামরিক অভিযানের জন্য এবং একটি সহায়তা ব্যবস্থার জন্য। আরও বিস্তারিত জানার জন্য, দেখুন

[গ] স্ট্র্যাটেজিক কম্পাস ২০৩০ সালের মধ্যে তার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতিকে শক্তিশালী করার জন্য ইইউ–এর কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা দেয়। স্ট্র্যাটেজিক কম্পাস যে কৌশলগত পরিবেশে ইইউ কাজ করছে, এবং এটি যে হুমকি ও চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছে তার একটি ভাগ–করা মূল্যায়ন প্রদান করে। দস্তাবেজটি বাস্তবায়নের জন্য একটি সময়সূচি–সহ সঙ্কটের সময় নির্ধারকভাবে কাজ করা এবং নিরাপত্তা ও নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রস্তাব দেয়। আরও বিস্তারিত জানার জন্য, দেখুন

[ঘ] ইউরোব্যারোমিটার সমীক্ষা ইইউ সদস্য দেশগুলিতে জনমত পরিমাপ করে।

[১] অজয় বিসারিয়া ও অঙ্কিতা দত্ত, "হোয়্যার ইজ দ্য ক্ল্যামার ফর গেটিং রাশিয়া অ্যান্ড ইউক্রেন অফ দ্য র‌্যাম্প?‌", এক্সপার্ট স্পিক, নভেম্বর ৫, ২০২২, ওআরএফ৷

[২] ভ্লাদিমির পুতিন, "রুশি ও ইউক্রেনীয়দের ঐতিহাসিক ঐক্যের উপর", ক্রেমলিন, ১২ জুলাই, ২০২১।

[৩] " রাশিয়ান ফেডারেশন ও উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থার বিষয়ে চুক্তি", বিদেশ মন্ত্রক, রাশিয়া, ডিসেম্বর ১৭, ২০২১।

[৪] "নিরাপত্তা নীতি সম্পর্কিত মিউনিখ সম্মেলনে বক্তৃতা এবং নিম্নলিখিত আলোচনা", ক্রেমলিন, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০০৭।

[৫] “ইউএস, ন্যাটো নিরাপত্তার দাবিতে রাশিয়াকে লিখিত জবাব দিয়েছে”, পলিটিকো, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২।

[৬] প্রেস বিবৃতি, "ইউক্রেনে রাশিয়ার অভূতপূর্ব ও অপ্রীতিকর সামরিক আগ্রাসনের বিষয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন", ইউরোপীয় কাউন্সিল, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২।

[৭] "ইউক্রেনের সঙ্গে ইইউ–এর সংহতি", কাউন্সিল অফ ইউরোপ, ২০২২।

[৮] প্রেস রিলিজ, "ইউক্রেন: কমিশন ইউক্রেনে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লোকেদের জন্য অস্থায়ী সুরক্ষা এবং সীমান্ত প্রহরার জন্য নির্দেশিকা প্রস্তাব করেছে", ইউরোপীয় কমিশন, ২ মার্চ, ২০২২।

[৯] প্রেস রিলিজ, "ইউক্রেন: কাউন্সিল ইউরোপীয় শান্তি সুবিধার অধীনে আরও সামরিক সহায়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছে", কাউন্সিল অফ ইউরোপ, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

[১০] "ইইউ প্রতিরক্ষার বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত রদ করার জন্য '‌ঐতিহাসিক' গণভোটে ডেনমার্ক ভোট দিয়েছে", বিবিসি, জুন ১, ২০২২।

[১১] "ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থার সময়রেখা", ইউরোপীয় কাউন্সিল, মার্চ ৩, ২০১৪-বর্তমান সময়।

[১২] "রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা", ইউরোপীয় কাউন্সিল, ২০২২।

[১৩] "আমাদের সময়ের মূল চ্যালেঞ্জ - ২০২২ সালে ইইউ", ইউরোব্যারোমিটার সার্ভে, জুন ২০২২।

[১৪] প্রেস বিবৃতি, "ইউক্রেন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থার পঞ্চম প্যাকেজে ইইউ সম্মতি", ইউরোপীয় কমিশন, ৮ এপ্রিল, ২০২২।

[১৫] “কেট অ্যাবনেট, জ্যান স্ট্রুপজেউস্কি ও ইনগ্রিড মেলান্ডার, “ইইউ রাশিয়ার তেল নিষেধাজ্ঞায় সম্মত, হাঙ্গেরিকে ছাড় দেয়; জেলেনস্কি আরও নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন” , রয়টার্স, জুন ১, ২০২২।

[১৬] প্রেস রিলিজ, "ইইউ ইউক্রেনের দোনেস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের অবৈধ দখলের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ গ্রহণ করেছে", ইউরোপীয় কাউন্সিল, অক্টোবর ৬, ২০২২।

[১৭] প্রেস রিলিজ, "ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধ: ইইউ অতিরিক্ত ১৪১ ব্যক্তি এবং ৪৯টি সত্তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে", ইউরোপীয় কাউন্সিল, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২।

[১৮] "ইইউ নেতারা ইউক্রেন যুদ্ধ ও শক্তির স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করতে ভার্সাইতে মিলিত হয়েছেন", ইউরোনিউজ, মার্চ ১০, ২০২২।

[১৯] "প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য একটি কৌশলগত কম্পাস", ইউরোপ এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিস, মার্চ ২০২২।

[২০] প্রেস রিলিজ, "ইইউ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, শিল্প ও প্রযুক্তিগত ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য ইইউ–এর পদক্ষেপ: যৌথ প্রতিরক্ষার জন্য একটি ইইউ কাঠামোর দিকে", ইউরোপীয় কমিশন, ১৮ মে, ২০২২।

[২১] "যৌথ সংগ্রহ: ইইউ টাস্ক ফোর্স প্রথম পর্যায়ের উপসংহার উপস্থাপন করেছে", ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা, অক্টোবর ১৪, ২০২২।

[২২] ডেভিড হাট, "মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ চায় আরও নিরাপত্তা বাহিনী। বর্ধিত ব্যয় কি যথেষ্ট হবে?", ইউরোনিউজ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩।

[২৩] "আয়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ব্যয় ২০২৮ সালের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন ইউরোতে বৃদ্ধি পাবে", বিবিসি, ১২ জুলাই, ২০২২।

[২৪] “ওলাফ স্কোলজ, ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানির চ্যান্সেলর ও জার্মান বুন্ডেস্ট্যাগের সদস্যের নীতি বিবৃতি”, ফেডারেল সরকার, বার্লিন, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।

[২৫] "ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের প্রেস কনফারেন্স", ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন, ন্যাটো, ২৪ মার্চ, ২০২২।

[২৬] "ন্যাটো ২০২২ কৌশলগত ধারণা - মাদ্রিদ সামিট", ন্যাটো, জুন ২০২২।

[২৭] “সুইডেন ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত ১৭.৯ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করবে”, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২।

[২৮] “ফিনল্যান্ড ইউক্রেনে ১১তম সামরিক সহায়তা প্যাকেজ পাঠাল”, ইউরাক্টিভ, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২।

[২৯] "ফোকাসে: আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ইইউ–এর নির্ভরতা হ্রাস করা", ইউরোপীয় কমিশন, ব্রাসেলস, এপ্রিল ২০, ২০২২।

[৩০] "ইউরোপের শক্তির বিকল্পগুলি কী যে এখন রাশিয়ান গ্যাস কার্ড বন্ধ রয়েছে?", ইউরোনিউজ, এপ্রিল ২৭, ২০২২।

[৩১] প্রেস রিলিজ, "রিপাওয়ারইইউ: রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা দ্রুত কমানোর এবং সবুজ পরিবর্তনকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা ", ইউরোপীয় কমিশন, ১৮ মে, ২০২২, ব্রাসেলস।

[৩২] স্টুয়ার্ট লাউ, "'আমরা আপনাকে তাই বলেছিলাম!' কীভাবে যারা রাশিয়াকে সবচেয়ে ভাল জানে এমন দেশগুলির কথা পশ্চিমীরা শোনেনি", পলিটিকো, ৯ মার্চ, ২০২২।

[৩৩] "জার্মান প্রেসিডেন্ট স্টেইনমায়ার রাশিয়ার ব্যাপারে ভুল স্বীকার করেছেন", ডিডাবলু, মে ৪, ২০২২।

[৩৪] জুডি ডেম্পসি, "ফ্রান্স ও জার্মানি কি রাশিয়ার ক্ষেত্রে নড়বড়ে?", কার্নেগি ইউরোপ, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২।

[৩৫] জুডি ডেম্পসি, 'জার্মান দোলাচলের উচ্চ মূল্য', কার্নেগি ইউরোপ, ১২ এপ্রিল, ২০২২।

[৩৬] ডাঃ ফাতিহ বাইরল, "এক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী শক্তি সংকটে জিনিসগুলি কোথায় দাঁড়িয়েছে", কমেন্টারি ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

[৩৭] "ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস কোথা থেকে আসে?Where does the EU’s gas come from?", ইউরোপীয় কাউন্সিল, ২০২২।

[৩৮] “জোল্টান সাইমন, "অরবান বলেছেন রাশিয়ার তেল নিষেধাজ্ঞা হবে অর্থনীতির জন্য 'পারমাণবিক বোমা", ব্লুমবার্গ, মে ৬, ২০২২।

[৩৯] "ইউক্রেন যুদ্ধ: হাঙ্গেরি কিইভের জন্য ১৮ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা ব্লক করেছে এবং ইইউ-এর সঙ্গে ফাটল আরও গভীর করেছে", ইউরোনিউজ, ডিসেম্বর ৭, ২০২২।

[৪০] "হাঙ্গেরি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে ইইউ নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে নয়জনকে অপসারণ করতে চায়", রেডিও ফ্রি ইউরোপ, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩।

[৪১] আলেকজান্দ্রা ব্রজোজোস্কি, "হাঙ্গেরি রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাবে", ইউরাক্টিভ, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২।

[৪২] “নড়বড়ে ভি-৪ ইউক্রেন মাইগ্রেশনের জন্য সাধারণ ভিত্তি খোঁজে”, ইউরাক্টিভ, নভেম্বর ২৫, ২০২২।

[৪৩] পাওলা তাম্মা, "পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি: কীভাবে একটি প্রেমের সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠেছে", পলিটিকো, নভেম্বর ২৯, ২০২২।

[৪৪] "স্কোলজ বলেছেন কিয়েভকে ট্যাঙ্ক সরবরাহের জন্য চাপবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বার্লিন একা এগোবে না", রয়টার্স, জানুয়ারি ১০, ২০২৩।

[৪৫] ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ, আরিয়ানা আন্তেজা, ক্যাটলিন বুশনেল, আন্দ্রে ফ্রাঙ্ক, প্যাসকেল ফ্রাঙ্ক, লুকাস ফ্রাঞ্জ, ইভান খারিটোনভ, ভরত কুমার, একাটেরিনা রেবিনস্কায়া ও স্টেফান স্ক্র‌্যাম, "ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার: কোন কোন দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করে এবং কিভাবে?", ওয়ার্কিং পেপার ২২১৮, কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়র্ল্ড ইকনমি, কিয়েল, ফেব্রুয়ারি ২০২৩, পৃষ্ঠা ৪০

[৪৬] ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ, আরিয়ানা আন্তেজা, ক্যাটলিন বুশনেল, আন্দ্রে ফ্রাঙ্ক, প্যাসকেল ফ্রাঙ্ক, লুকাস ফ্রাঞ্জ, ইভান খারিটোনভ, ভরত কুমার, একাটেরিনা রেবিনস্কায়া ও স্টেফান স্ক্র‌্যাম, "ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার: কোন কোন দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করে এবং কিভাবে?" পৃষ্ঠা ৩৩

[৪৭] "ন্যাটো দেশগুলির প্রতিরক্ষা ব্যয় (২০১৪-২০২২)", ন্যাটো, ২৭ জুন ২০২২।

[৪৮] উইলিয়াম রঙ্কেল ও টনি লরেন্স, "প্রতিরক্ষা ব্যয়: কে কী করছে?", ভাষ্য, আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩।

[৪৯] এফি কোউটসোকোস্টা ও জর্গে লিবোরেইরো, "ইউক্রেন যুদ্ধের উপর ইইউ ঐক্য বজায় রাখা 'সবসময় সহজ ছিল না,' জোসেপ বোরেল স্বীকার করেছেন", ইউরোনিউজ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩।

[৫০] "ফ্যাক্টবক্স: জীবনযাত্রার খরচ ও বেতন নিয়ে ইউরোপে ধর্মঘট, বিক্ষোভ", রয়টার্স, নভেম্বর ৭, ২০২২।

[৫১] বেথ টিমিন্স ও বেন কিং, "রাশিয়ার অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে কম সংকুচিত হয়েছে", বিবিসি, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩।

[৫২] পিয়ের ব্রায়ানকন, "রাশিয়ার বিষয়ে আইএমএফ–এর দৃষ্টিভঙ্গি সত্য হওয়ার পক্ষে খুব বেশি আশাবাদী", রয়টার্স, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩৷

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.