Published on Jul 16, 2022 Updated 0 Hours ago

তালিবানের চাপ বাড়ায় আফগান নারী সাংবাদিকদের পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

আফগান নারী সাংবাদিকদের উপর তালিবানের অবিরাম দমন অভিযান

দশ মাস আগে ক্ষমতা দখলের পর পরই তালিবান প্রতিনিধিরা শাসনের এমন একটি নতুন পথ অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যেখানে আফগান নারীদের প্রতি কোনও বিরূপ মনোভাব রাখা হবে না, এবং তাঁরা হিংসার শিকারও হবেন না। কিন্তু পরিবর্তে কয়েক মাসের মধ্যে পুরুষসর্বস্ব অন্তর্বর্তিকালীন তালিবান সরকারকে ধারাবাহিক ভাবে এমন কিছু ডিক্রি জারি করতে দেখা গেছে যা এমনকি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মতো নারীর মৌলিক অধিকারগুলিকে অস্বীকার করেছে। এর ফলে মহিলাদের জনজীবনের প্রতিটি দিক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে একটি শক্তিশালী মুক্ত মিডিয়া উপভোগ–করা একটি দেশে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি, যারা প্রায়শই ইসলামি আইনের একটি মৌলবাদী ব্যাখ্যা অনুসরণ করে, তারা নারীদের সংবাদমাধ্যমে বলার অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে মারাত্মক ভাবে খর্ব করেছে। নতুন জমানায় বিপুল মূল্য দিতে হচ্ছে মহিলা সাংবাদিক ও নিউজকাস্টারদের। চরমপন্থী গোষ্ঠীটি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংবাদিকদের বেত্রাঘাত করেছে, মারধর করেছে, নির্বিচারে আটক করেছে, এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে অনেক নারীকে মিডিয়া থেকে বার করে দিয়েছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মিডিয়ার উপর নজর রাখার সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এবং আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত একটি যৌথ সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ৮৪ শতাংশ নারী সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। আফগান ন্যাশনাল জার্নালিস্টস ইউনিয়ন পরিচালিত ২০২২ সালের মার্চ মাসের আরেকটি সমীক্ষায় ৭৯ শতাংশ আফগান নারী সাংবাদিক তালিবান শাসনের অধীনে অপমানিত ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, যার মধ্যে তালিবান প্রতিনিধিদের শারীরিক ও মৌখিক হুমকিও রয়েছে। আফগান মহিলা সম্প্রচারকারীরাও তালিবান কর্মকর্তাদের দ্বারা ‘‌কালো তালিকাভুক্ত’‌ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

চরমপন্থী গোষ্ঠীটি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংবাদিকদের বেত্রাঘাত করেছে, মারধর করেছে, নির্বিচারে আটক করেছে, এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যমূলক অনুশীলনের মাধ্যমে অনেক নারীকে মিডিয়া থেকে বার করে দিয়েছে।

আফগানিস্তানের সংবাদ, শিল্পকলা ও বিনোদন শিল্প জুড়ে মহিলাদের সাম্প্রতিক  অগ্রগতি সত্ত্বেও এই ঘটনা ঘটেছে। তালিবান আগেই আফগান টিভি চ্যানেলগুলোর নারীদের নিয়ে নাটক ও সোপ অপেরা সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল। তারপরে তারা খবর পড়ার সময় মহিলাদের মাথা বোরখায় ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়, এবং সাংবাদিকদের জন্য ১১টি নিয়মের ডিক্রি জারি করে। ডিক্রি অনুযায়ী সাংবাদিকদের রিপোর্ট সম্প্রচারের আগে তালিবানের অনুমোদন নিতে হয়, ফলে সংবাদ উপস্থাপকেরা  যে বিষয়গুলি দেখাতে চান সে বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

যে মহিলারা তাঁদের বাড়ি থেকে ৪৫ মাইলেরও বেশি দূরে ভ্রমণ করতে চান তাঁদের সঙ্গে একজন পুরুষ অভিভাবকের থাকাও তালিবান বাধ্যতামূলক করেছে, যার ফলে মহিলা সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া এবং সংবাদ কভারেজের জন্য বহু দূর ভ্রমণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সমস্ত নির্দেশ একত্রে আফগানিস্তানের মহিলা সাংবাদিকদের জন্য ক্রমশ বেশি করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে, কারণ তালিবান তাদের দমন অভিযান শিথিল করার কোনও লক্ষণ দেখায়নি।

যে মহিলারা তাঁদের বাড়ি থেকে ৪৫ মাইলেরও বেশি দূরে ভ্রমণ করতে চান তাঁদের সঙ্গে একজন পুরুষ অভিভাবকের থাকাও তালিবান বাধ্যতামূলক করেছে, যার ফলে মহিলা সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া এবং সংবাদ কভারেজের জন্য বহু দূর ভ্রমণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর উপর, তাদের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধের সর্বশেষ ঘটনায় তালিবানের ভাইস অ্যান্ড ভারচু মন্ত্রক আদেশ দিয়েছে যে ২১ মে থেকে মহিলা নিউজকাস্টার ও অ্যাঙ্করদের উপস্থাপনা করার সময় তাঁদের মুখ ঢেকে রাখতে হবে, এবং ইঙ্গিত করেছে যে এর জন্য একটি আদর্শ পোশাক হবে বোরখা। কিছু মহিলা উপস্থাপক প্রথম দিকে এই নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করলেও জঙ্গি গোষ্ঠীটি মিডিয়া সংস্থাগুলির উপর চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার পরে শীঘ্রই তাঁদের মুখ ঢেকে সংবাদ উপস্থাপন করতে দেখা যায়। এই আদেশটি মহিলা কর্মচারীরা পোষাক বিধি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষকে তাদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দিয়েছে, এবং তাঁদের মহিলা আত্মীয়রা আদেশ না–মানলে পুরুষদের সাময়িক বরখাস্তের ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে।

অনেকের জন্য এই ভয়ঙ্কর নির্দেশটি তাঁদের আরও একটি ধাপ পিছনে ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, যা আফগান নারীদের মিডিয়াতে কাজ করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কারণ, প্রথমত, মুখ ঢেকে একটানা দুই থেকে তিন ঘণ্টা কথা বলা যে কোনও মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। দ্বিতীয়ত, নিকাব পরা এবং মুখ ঢেকে রাখার সময় মহিলা সাংবাদিকরা তাঁদের শ্রোতাদের কাছে স্পষ্টতার সঙ্গে বক্তব্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন না। তৃতীয়ত, ডিক্রিটি মহিলা সাংবাদিকদের উপর একটি বিশাল নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তাঁরা পেশা থেকে পুরোপুরি নিজেদের সরিয়ে নিতে পারেন।

নিকাব পরা এবং মুখ ঢেকে রাখার সময় মহিলা সাংবাদিকরা তাদের শ্রোতাদের কাছে স্পষ্টতার সঙ্গে বক্তব্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন না।

অনেক অধিকার কর্মী যে আশঙ্কা করেছিলেন তালিবানের কট্টরপন্থীরা সেটাকেই ঠিক প্রমাণ করেছেন। তাঁরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১–এ পুরো আফগানিস্তানকে যেমন মহিলাদের জন্য নিছক একটি বড় কারাগারে পরিণত করে তাঁদের নিপীড়নমূলক নিয়মের মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য করেছিলেন, এখন আবার পূর্বের সেই শাসন পদ্ধতিই ফিরিয়ে আনছেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা আফগান নারীরা নীরব নন। আফগানিস্তান এবং সারা বিশ্বে অনেক সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মী #FreeHerFace হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের মুখ ঢাকা ছবি শেয়ার করে তালিবানের সাম্প্রতিক নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন  ।

ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে, এবং স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের কূটনৈতিক বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি মূল শর্ত হবে মহিলাদের অধিকার ও স্বাধীনতাকে সম্মান করা। এমনকি উন্নয়ন তহবিল ও হিমায়িত নগদ ব্যবহার করার সুযোগও মহিলাদের প্রতি সঠিক আচরণ করার উপর নির্ভর করবে। এভাবে, জঙ্গি গোষ্ঠীটি যদি নারীদের বিরুদ্ধে তাদের দমনমূলক কৌশল অব্যাহত রাখে, তাঁদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, এবং নারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত আক্রমণ বন্ধ না–করে, তবে এই জমানা বিশ্বের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.