Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 21, 2025 Updated 0 Hours ago

স্থায়ী সমাধান জটিল কারণ নিরাপত্তা সম্পর্কে উভয় পক্ষের ধারণার মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির নড়বড়ে ভিত্তি

তিন বছর আগে রাশিয়ার সৈন্যরা উত্তরে বেলারুশ, দক্ষিণে ক্রিমিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে ডনবাস এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে খারকিভ সুমি থেকে ইউক্রেনে প্রবেশ করে। মস্কোর লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে সামরিকীকরণ থেকে মুক্ত করা এবং নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনে (ন্যাটো) যোগদানের জন্য ইউক্রেনের অভিপ্রায়ে রাশিয়ার বিপদ রেখা স্পষ্ট করা। রাশিয়ার কৌশলগত পরিকল্পনাকারীরা দ্রুত বিজয়ের প্রত্যাশা করেছিলেন এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনকে পরাজিত করতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন। যাই হোক, সংঘাত শুরু হওয়ার প্রায় ১,১০০ দিন পরে পশ্চিমিদের সহায়তায় ইউক্রেন মস্কোকে তার যুদ্ধক্ষেত্রের লক্ষ্যগুলি সম্পূর্ণ রূপে অর্জন করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে। যুদ্ধের দরুন উভয় দেশই সুবিশাল মূল্য চোকাতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে জনবলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ এবং মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের সম্ভাব্য পুনর্নির্মাণের পর যুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের আলোচনাটিও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। তবে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা জটিল দীর্ঘ কারণ প্রতিটি পক্ষের তাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণার মধ্যেই মৌলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে।

যুদ্ধের দরুন উভয় দেশই সুবিশাল মূল্য চোকাতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে জনবলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে।

ভূখণ্ডের অবস্থান

মস্কোর হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের উদ্দেশ্য কেবল ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করার প্রশ্ন দ্বারা চালিত হয়নি। ইউক্রেনের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা এবং কিয়েভের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করা মস্কোর এই অবস্থান ছিল ২০২২ সালের বসন্তে ইউক্রেন ইস্তানবুলে আলোচনার সময় নীতিগত ভাবে এই দাবি মেনে নিলেও পশ্চিমিদের সমর্থন না পাওয়ায় চুক্তিটি ভেস্তে যায়। তবে ভূখণ্ডের বিষয়ে মস্কোর অবস্থান তখন থেকেই পরিবর্তি হয়েছে। গত বছর সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন শান্তি শীর্ষ সম্মেলনের  আগে পুতিন ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন জাপোরিঝিয়া অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি করেছিলেন, যা ইউক্রেন প্রত্যাখ্যান করেছিল।

মার্কিন প্রশাসনের পরিবর্তন এবং ইউক্রেনের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের প্রকৃতি আরও বাস্তবসম্মত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভূখণ্ডের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে।

বিভিন্ন অনুমান অনুযায়ী, রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯% অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে দোনেৎস্ক, খেরসন জাপোরিঝিয়ার ৭৫% অঞ্চল এবং লুহানস্কের ৯৯% অঞ্চল রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের পরিবর্তন এবং ইউক্রেনের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের প্রকৃতি আরও বাস্তবসম্মত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভূখণ্ডের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। যেখানে ইউক্রেন আগে রাশিয়াকে ক্রিমিয়া থেকেও সরে যেতে এবং ১৯৯১ সালের সীমান্ত পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছিল, সেখানে এখন জেলেনস্কি বর্তমান সম্মুখ সমরে সংঘাত স্থগিত করতে ইচ্ছুক তবে যদি পশ্চিমিরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় - যার মধ্যে ইউক্রেনে থাকা ন্যাটো শান্তিরক্ষীদের বিষয়টি দেশের পশ্চিম অংশকে ন্যাটো সদস্যপদ দেওয়া অন্তর্ভুক্ত তা হলে ইউক্রেন পিছু হঠতে রাজিমস্কো এর বিরোধিতা করেছে। কারণ রাশিয়া সংঘাত স্থগিত করার জন্য তাড়াহুড়ো করছে নাএমনটা করলে ইউক্রেনীয় বাহিনী পুনরায় সংগঠিত হয়ে রাশিয়ার উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে সুবিধা পাবে। সুতরাং, রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা কঠোর চুক্তি ছাড়া যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে না। স্বল্পমেয়াদে এই ধরনের চুক্তি জটিল বলে মনে হচ্ছে।

অর্থনৈতিক যুদ্ধের উত্তেজনা কমানো?

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়গুলিও জটিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি রিয়াধে অনুষ্ঠিত মার্কিন-রাশিয়া আলোচনায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রাশিয়া ইউক্রেনের একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর শর্তসাপেক্ষ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার উপর ২১,০০০-এরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা  প্রত্যাহার করা স্পষ্টতই মস্কোর স্বার্থের অনুকূল। কারণ যুদ্ধ এর ফলে নিষেধাজ্ঞাগুলি রাশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। রাশিয়ার রফতানি-আমদানি ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে, বিদেশের বাজারগুলি সঙ্কুচিত হয়েছে এবং বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করার কাজ সহজ হবে না কারণ নিষেধাজ্ঞা নীতির তীব্রতা দেশভেদে ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউরোপীয় কাউন্সিল ইইউর জেনারেল কোর্ট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। আমেরিকা তার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কথাবার্তায় সুর নরম করলেও ইইউ রুশ অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর আরও কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, ১৩টি ব্যাঙ্ককে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) অর্থপ্রদান ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং ৬০ ডলারের নিম্ন মূল্যের তেল পরিবহকারী রুশ তেল ট্যাঙ্কারগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সুতরাং, ইউক্রেনের বিষয়ে যদি কোনও  চুক্তি আদতেই হয়, তা হলেও নিষেধাজ্ঞা অপসারণ সহজ কথা নয় এবং সম্ভবত মস্কোর কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য এটিকে নেহাতই প্রলোভন দেখানোর কাজে ব্যবহার করা হবে।

ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে, যার ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ৫০% হস্তান্তর করবে।

ইউক্রেনের জন্য চ্যালেঞ্জ

ইউক্রেনীয় স্বার্থের বিনিময়ে নতুন মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। রাতারাতি ওয়াশিংটনের ইউক্রেন নীতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং ইউক্রেনের জন্য আর কোনও সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়নি। ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে, যার ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ৫০% হস্তান্তর করবে। সর্বোপরি, ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধকালীন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। সুতরাং, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় আমেরিকার আগ্রহের অভাব ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় উৎস।

রুশ বাহিনী ইউক্রেনে তাদের সাফল্য আরও প্রসারিত করার আশঙ্কায় কিয়েভকে সম্ভবত অন্য ইউরোপীয় ন্যাটো দেশগুলির সমর্থনের বিষয়ে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। কিয়েভের জন্য বিকল্প সীমিত কারণ মস্কোর কাছ থেকে জেলেনস্কি যে কোনও চুক্তি গ্রহণ করলে, তা অনিবার্য ভাবে ইউক্রেনের মূল জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে ব্যাহত করবে। অন্য কথায় বলতে গেলে, ইউক্রেনকে দ্রুত সামরিকীকরণ বন্ধ করতে হবে, নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে। আলোচনায় জেলেনস্কির একমাত্র দর কষাকষির বিষয় হল কুরস্ক ওব্লাস্টে ইউক্রেনীয় বাহিনী যে অঞ্চল দখল করেছে, সেটুকুতবে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তা হলে ইউক্রেন সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুরক্ষার গ্যারান্টি এবং সামরিক সহায়তা পেতে সক্ষম হবে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি কী ভাবে রূপান্তরিত হবে বা মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক কী ভাবে এই যুদ্ধকে আকার দেবে, তা সময়ই বলবে। ইউক্রেনের যুদ্ধে স্থায়ী শান্তি আনার জন্য আলোচনা চলাকালীন ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনগুলির অর্থ কী এবং উদীয়মান ইউরোপীয় নিরাপত্তা সমীকরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কী ভূমিকা পালন করবে, তা আগামিদিনেই নির্ধারিত হবে। যে ভাবেই দেখা হোক না কেন, ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর একটি উল্লেখযোগ্য পুনর্গঠন প্রয়োজন।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.