-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
সম্প্রতি ঘোষিত জাতীয় মুদ্রাকরণ কর্মসূচির ভাল–খারাপের তুল্যমূল্য বিচার।
মোদী সরকার নতুন কোনও উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে অবাক করা ঔজ্জ্বল্যের মধ্যে। ২৩ আগস্ট ঘোষিত ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন বা এনএমপি (জাতীয় মুদ্রাকরণ কর্মসূচি ) অবশ্য হতাশ করেনি। এর লক্ষ্য চালু রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সম্পদ লিজ দিয়ে চার বছরে (আর্থিক বছর ২০২২ থেকে ২০২৫) ৬ লক্ষ কোটি টাকা তোলা।
এই বছরের, যার আর ৬ মাস বাকি, লক্ষ্যমাত্রা হল ৯০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে বাজেটে ঘোষিত ৭৫ হাজার কোটির জায়গায় বিলগ্নিকরণ থেকে এসেছে তার মাত্র ১০ শতাংশ। ২০২৪ অর্থবর্ষের, যা শেষ হবে লোকসভার ভোটের ঠিক আগে, লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি, ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা। তারপর তা কমে গিয়ে ২০২৫ আর্থিক বছরে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকায়।
ভবিষ্যতে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সংস্থাগুলিতে (পিএসইউ) সরকারের সংখ্যালঘু মালিকানা জনগণের কাছে বেচে দিয়ে যা পাওয়া যাবে, এবং সম্পদ লিজ দিয়ে যা আসবে, তা যোগ করলে ঋণ–বাদে মূলধনী আয় ২০২১ থেকে ২০২৪ অর্থবর্ষের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
এই বছরের, যার আর ৬ মাস বাকি, লক্ষ্যমাত্রা হল ৯০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে বাজেটে ঘোষিত ৭৫ হাজার কোটির জায়গায় বিলগ্নিকরণ থেকে এসেছে তার মাত্র ১০ শতাংশ।
২০১৯ সাল থেকে যে বিশাল পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে, তার টাকার জোগানের জন্যই এনএমপি–র কথা ভাবা হয়েছে। ওই পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২০২৫ পর্যন্ত ছ’বছরে পরিকল্পিত ১১১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যার ৪৫ শতাংশ দেবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো। বাকি ৫৫ শতাংশ তোলা হবে ঋণ নিয়ে। ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন বা এনআইপি (জাতীয় পরিকাঠামো কর্মসূচি ) অনুযায়ী মোট ৮,১৬০টি প্রকল্প নেওয়া হবে। এর ২৩ শতাংশের কাজ শুরু হয়ে গেছে, যদিও কাজের গতি যা প্রত্যাশিত ছিল তার থেকে কম।
ইউপিএ জমানার শেষ দিক ও মোদী জমানার গোড়ার দিকের সময়ে ব্যাপ্ত দ্বাদশ পরিকল্পনায় ২০১২–২০১৭ সালে সরকারের পরিকাঠামোগত বিনিয়োগ ছিল জিডিপি–র ৫.৮ শতাংশ (যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ শতাংশ)। এনআইপি–র লক্ষ্য হল তা প্রায় দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।
দুঃখের কথা হল, অতীতের প্রবণতা কিন্তু উৎসাহব্যঞ্জক নয়। গত দুই দশক ধরে পরিকাঠামোর জন্য বিনিয়োগ ঘোরাফেরা করেছে বাজপেয়ী সরকারের আমলের জিডিপি–র ৫.২ শতাংশ থেকে (২০০২—২০০৭) মনমোহন সিংহের ইউপিএ আমলের জিডিপি–র ৭.২ শতাংশের মধ্যে (২০০৭-২০১২)। এই বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক শ্লথগতির সময় অতীতের প্রবণতার থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রয়াস হয় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ হিসেবে হোঁচট খাবে, আর তা না–হলে, যদি লক্ষ্যপূরণ হয় তা হলে সত্যিকারের বিরাট পরিবর্তন ঘটাবে।
জাতীয় পরিকাঠামো কর্মসূচি ( ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন বা এনআইপি) অনুযায়ী মোট ৮,১৬০টি প্রকল্প নেওয়া হবে। এর ২৩ শতাংশের কাজ শুরু হয়ে গেছে, যদিও কাজের গতি যা প্রত্যাশিত ছিল তার থেকে কম।
এনআইপি শুরু হওয়ার দু’বছর পরে, এবং অতিমারির প্রকোপ চলাকালীন, এনএমপি নিয়ে আসাটা স্পষ্টতই বর্তমান কঠিন সময়ের মোকাবিলার একটা কৌশলগত চাল। এই সময়ে দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক শ্লথতার বিরূপ আর্থিক পরিণতি দেখা যাচ্ছে, এবং অতিমারির কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ধসের দরুন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এর ফলে অত্যধিক সঙ্কুচিত জিডিপি–র ‘নিখুঁত ঝড়’ উঠেছে, যার দরুন আর্থিক ঘাটতি ও রাষ্ট্রীয় ঋণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
এই সময়ে যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সেই ঋণ–বাদে বাজেটভুক্ত মূলধনী আয়ের আর একটি উৎস হিসেবে কার্যকর রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করা আর্থিক দিক থেকে যুক্তিপূর্ণ। তা ছাড়া চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে অর্থনীতি ধসে যেতে থাকলে কর্পোরেট সংস্থাগুলো যেমন নিজেদের সম্পদ বেচে ঋণের পরিমাণ কমাতে থাকে, এই পথটি তারই অনুসরণ।
এই ভাবে টাকা তোলার চেষ্টা করতে হচ্ছে কারণ আগের দুটি আর্থিক উদ্যোগের ফল পাওয়া গেছে খুবই শ্লথগতিতে। এর একটা হল বেসরকারিকরণ, অর্থাৎ পরিচালন–সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির সিংহভাগ শেয়ার বেচে দেওয়া। ১৯৯৯ সালে এই চেষ্টা শুরু হলেও প্রাথমিক সাফল্যের পর ধীরে ধীরে তা শ্লথ হয়ে যেতে থাকে, কারণ বিজেপি–র দিক থেকে শুরু করে সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক বাধা বাড়তে শুরু করেছিল।
দ্বিতীয় উদ্যোগটা ছিল সরকারি–বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি), যা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। এই উদ্যোগ ধরে রাখার মতো সরকারি কাঠামো না–থাকা, অনমনীয় চু্ক্তি, এবং সরকারের অভ্যন্তরে কোনও ঝুঁকি না–নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য নিয়মবিধি তৈরি করা, এই সব কারণে পিপিপি হোঁচট খেতে থাকে। পরিণতিতে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক কাজের ধরনধারণ একত্র করার প্রক্রিয়াটি প্রায় বিকল হয়ে যায়। ২০১৫ সালে কেলকার কমিটির রিপোর্টে কিছু সংশোধনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, যার মধ্যে মুদ্রাকরণের কথাও ছিল। কিন্তু তা নিয়ে কিছু করা হয়নি।
ঋণ–বাদে বাজেটভুক্ত মূলধনী আয়ের আর একটি উৎস হিসেবে কার্যকর রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করা আর্থিক দিক থেকে যুক্তিপূর্ণ। তা ছাড়া চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে অর্থনীতি ধসে যেতে থাকলে কর্পোরেট সংস্থাগুলো যেমন নিজেদের সম্পদ বেচে ঋণের পরিমাণ কমাতে থাকে, এই পথটি তারই অনুসরণ।
২০২০ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের (কৌশলগত ক্ষেত্র বাদে) ‘বেসরকারিকরণ’ প্রক্রিয়াকে বিনিয়োগের অন্যতম বিকল্প হিসেবে ঘোষণা করে আবার নতুন করে আগ্রহ জাগিয়েছিলেন। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ পর্যন্ত অতিমারির কারণে তৈরি–হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে।
এনএমপি–র সূচনা করার সময় অর্থমন্ত্রী বার বার এই আশ্বাস দিয়েছেন যে এখানে কোনও কিছু বিক্রি করার কথা বলা হচ্ছে না। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত ‘বাড়ির সোনাদানা বিক্রি করা’র মতো বিষয়কে রাজনৈতিক আত্মহত্যা হিসেবেই দেখা হয়, এবং এখনও ‘গোপনে অর্থনৈতিক সংস্কার’ করার বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে বেশ সক্রিয় অবস্থায় আছে।
মুদ্রাকরণ রাজনৈতিক ভাবে একটি নিরাপদ বিকল্প। ঠিক যেমনটা এখনও পর্যন্ত যা বেশ সমর্থন পেয়ে আসছে সেই সংখ্যালঘু শেয়ার বেচে বিলগ্নীকরণ। দুটোতেই রাজনৈতিক লক্ষ্মণরেখা হিসেবে গণ্য ‘বাড়ির সোনাদানা বিক্রি’ এড়িয়ে যাওয়া হয়।
মুদ্রাকরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সম্পদ একজন মূল বেসরকারি বিনিয়োগকারীর কাছে ১৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারী এই সম্পদ রাখতে পারেন বাণিজ্যিক সংস্থা বা সেবি–তে নথিভুক্ত বিশেষ ভাবে তৈরি হওয়া ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট–এর হাতে, যার সংখ্যালঘু শেয়ার জনগণের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এই ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট সেই সব দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করে যাঁরা একটা নিরাপদ ও পেশাদার–পরিচালিত নিশ্চিন্ত বিকল্প খুঁজছেন।
সরকার এর থেকে লাভবান হতে পারে হয় বছরে বছরে লিজের ভাড়া থেকে, অথবা যিনি লিজ নিলেন তিনি যে পরিমাণ লাভ করবেন তার বর্তমান দামের একটা অংশ আগাম (আপ–ফ্রন্ট কনসিডারেশন) নিয়ে।
‘সংখ্যালঘু শেয়ার বিলগ্নীকরণ’ করে সরকার যে টাকা পায় তার থেকে বেশি পাবে মুদ্রাকরণের মাধ্যমে। কিন্তু এটি ‘বেসরকারিকরণ’–এর চেয়ে নিকৃষ্ট বিকল্প। একই সম্পদের এই বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যা পার্থক্য তৈরি করে দেয় তা হল পরিচালন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ সরকার কতটা ছেড়ে দিচ্ছে — বিলগ্নীকরণের ক্ষেত্রে একটুও ছাড়ছে না, বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিচ্ছে, লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া হলেও তা সাময়িক।
বিনিয়োগকারীরা পরিচালন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে খুব মূল্যবান বলে মনে করেন, কারণ এটিই হল লাভের সুযোগ বাড়ানোর চাবিকাঠি।। এই ভাবে পূর্ণ পরিচালন নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কী ভাবে বাজারে সংস্থার দাম বাড়িয়ে দেয় তার প্রমাণ হল শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত পিএসইউ–গুলোর দামের ওঠা–নামার ক্ষেত্রে পার্থক্য। বিএসই পিএসইউ সূচক ২০১১ সালের আগস্ট থেকে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে সময় বিএসই সেনসেক্স ৩ গুণ বেড়েছে সেই সময় মারুতির মতো বেসরকারি হাতে চলে যাওয়া পিএসইউ–এর দাম বেড়েছে ৬ গুণ।
মুদ্রাকরণের মাধ্যমে মালিকানার চরিত্র বদল না–করেও ব্যবসার ইউনিটগুলোর কাঠামো বদলে ফেলে পিএসইউ–এর উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। উন্নয়নের জন্য অর্থসংস্থান ছাড়াও এখানে নানা ভাগে বিভক্ত অংশের জন্য কৌশল নির্ধারণ করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হচ্ছে এক একটা অংশকে এক একটা দ্বীপ হিসেবে ধরে নিয়ে তার লিজ দিয়ে। এর সঙ্গে সম্ভবত থাকবে ফের কিনে নেওয়ার (বাই ব্যাক) নিশ্চয়তা। অর্থাৎ পরিষেবা শিল্পে যে ভাবে আউটসোর্সিং করা হয়, এ ক্ষেত্রে সেই একই পথ নেওয়া হচ্ছে।
একচেটিয়া ব্যবস্থার বিপরীতে এনএমপি পরবর্তী প্রজন্মের পরিকাঠামো শিল্পোদ্যোগীদের এক নয়া প্রজন্মের ভিত তৈরি করে দিতে পারে।
ঠিক ভাবে কাজটা করা হলে মুদ্রাকরণ মাঝারি পরিকাঠামো–উদ্যোগপতিদের একটা নতুন শ্রেণি তৈরি করতে পারে। একটা পুরো পিএসইউ কেনার জন্য বিশাল মূলধন প্রয়োজন। কিন্তু সেগুলোর সম্পদের এক একটা অংশ যদি লিজে নেওয়া হয়, তা হলে নতুন শিল্পোদ্যোগীরা, যাঁদের মূলধন কম হলেও পরিকাঠামো সম্পদের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ আছে, তাঁরা এই পরিকাঠামো কিনতে পারেন। একচেটিয়া ব্যবস্থার বিপরীতে এনএমপি পরবর্তী প্রজন্মের পরিকাঠামো শিল্পোদ্যোগীদের এক নয়া প্রজন্মের ভিত তৈরি করে দিতে পারে।
বেসরকারি পরিচালন ও মূলধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির পুনরুজ্জীবনের একটা উজ্জীবিত কর্মসূচি এমন ধৈর্যশীল মূলধন আকৃষ্ট করতে পারে যা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল লাভের মুখ দেখতে চায়—যেমন বিমা সংস্থা, পেনশন ও সভ্রেন ওয়েল্থ ফান্ড। সরকারের সম্পদ কাজে লাগানোর পর এনআইপি–তে যে ৫৫ শতাংশ (ভারতীয় টাকায় ৬০ লক্ষ কোটি) ফাঁক থাকছে, তা পূরণে সাহায্য করতে পারে এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের সম্প্রসারিত প্রবেশ, যার মূল্য নির্ধারিত হয়েছে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে।
মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে বেসরকারিকরণের মতোই এখানেও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের চাকরির কিছু বিঘ্ন ঘটবে। দক্ষ কর্মীরা কাজে বহাল থাকলেও, যারা লিজ নেবে তারা সম্ভবত চাইবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যানেজার নিয়োগের স্বাধীনতা। এ ক্ষেত্রে একটা বিকল্প হল ওয়েট লিজ, যেখানে সম্পদের দায়িত্ব পেলেও কর্মীদের বহাল রাখতে হয়। এই শর্ত থাকলে লিজের ভাড়া বা আগাম মূল্য কমে যাবে। তবে এখনকার কঠিন সময়ে যখন ভাল কাজ পাওয়া দুষ্কর, তখন চাকরির নিরাপত্তা বজায় রাখাটাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।
পরিষেবার দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে কি ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? দুটো কারণে তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম। এক, অধিকাংশ কার্যকর পরিকাঠামো সম্পদের (বিদ্যুৎ পরিবহণ লাইন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলের পাইপলাইন, বন্দরের জেটি, বিমানবন্দর) একটা নিয়ন্ত্রিত দাম থাকে, যা নির্ধারিত হয় কস্ট প্লাস ভিত্তিতে অথবা সার্ভিস লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতামূলক নিলামের মাধ্যমে। রেলের লিজ–দেওয়া রোলিং স্টক প্রতিযোগিতায় নামবে সরকারের ট্রেনের সঙ্গে, যার দাম নিয়ন্ত্রিত। ওয়্যারহাউজ–এর ক্ষেত্রে যেমন হয়, তেমনই এখানেও যিনি লিজ নিয়েছেন তিনি সম্পদের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত কোনও কাজ করলে, বা কিছু প্রতিস্থাপন করলে, তা ক্ষেত্র–নিয়ামক বা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগের শর্তাধীনে করতে হবে।
টেলিকম ও বিমান পরিবহণ পরিষেবায় বেসরকারিকরণের ফলে গ্রাহকের জন্য দাম কমে গেছে। গ্রাহকের জন্য দাম বাড়ার পরিবর্তে আসল ঝুঁকিটা হল লিজগ্রহীতার ব্যবসাজনিত ক্ষতি, যার মূলে থাকে যিনি সম্পদের লিজ নিলেন সেই বেসরকারি পরিচালকের সারাক্ষণ বৈষম্যের শিকার হওয়া ও নিয়ামকের সিদ্ধান্তজনিত অনিশ্চয়তা।
ওয়্যারহাউজ–এর ক্ষেত্রে যেমন হয়, তেমনই এখানেও যিনি লিজ নিয়েছেন তিনি সম্পদের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত কোনও কাজ করলে, বা কিছু প্রতিস্থাপন করলে, তা ক্ষেত্র–নিয়ামক বা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগের শর্তাধীনে করতে হবে।
ভুল ভাবে এগোলে মুদ্রাকরণের ফলে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের শিল্পপতিদের ছোট গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে বান্ধব–পুঁজিবাদ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) তৈরি হতে পারে। কিন্তু একচেটিয়া ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং করা হয়। চুক্তির ক্ষেত্রে জরুরিভিত্তিক সমাধানের প্রশ্নে জনস্বার্থ রক্ষায় সব সময় সজাগ থাকতে হবে বিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোল, বন্দর, বিমানবন্দরের মতো ক্ষেত্রগুলির সক্ষম নিয়ামকদের এবং রেল, কয়লা ও খনি, ভূতল পরিবহণ সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিভাগকে ও কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া–কে।
স্পেকট্রাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কয়লা খননে ঠিক ভাবে পরিকল্পিত নিলাম যথেষ্ট সফল হয়েছে। নিলামের দর ঠিক ভাবে সাজানোর মধ্যে কতগুলো বিষয় থাকতে হবে। যাঁরা বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যার উপকার সরকার পরে পাবে বা পরে ক্ষমতা প্রসারণের ফলে পরোক্ষ অর্থনৈতিক লাভ আসবে, এমন প্রস্তাবের পরিবর্তে যাঁরা সরাসরি দায় নিতে তৈরি তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। মুদ্রাকরণের আগে দেখে নিতে হবে এখন সরকার কতটা লাভ পাচ্ছে আর লিজ দিলে বর্ধিত নিট প্রাপ্তি কী হবে। একটা বিকল্প পথ হল এখনকার ক্ষতি কমানোর সম্ভাবনা, যেমনটা এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে করা হয়েছে।
সরাসরি বেসরকারিকরণের পরে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ভাল বিকল্প হল মুদ্রাকরণ। লিজ শেষের পরে যে পরিবর্তন ঘটবে তা বেদনাদায়ক হতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতি এখন যে ভাবে রা্ষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যালঘু মালিকানা বেচে বিলগ্নিকরণ হচ্ছে তার থেকে বেশি লাভদায়ক, তা সে সরাসরি বাজেটের প্রাপ্তিই ধরা হোক বা বৃদ্ধি, কর বাবদ আয় ও ভাল চাকরির উপর পরোক্ষ সদর্থক অর্থনৈতিক প্রভাব। এ এমন একটা ভাবনা যা রূপায়ণের সময় এসে গিয়েছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sanjeev S. Ahluwalia has core skills in institutional analysis, energy and economic regulation and public financial management backed by eight years of project management experience ...
Read More +