Published on Jun 12, 2024 Updated 0 Hours ago

বিশ্বজোড়া পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভারত এবং এর উপসাগরীয় অংশীদারদের মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতার মৌলিক বিষয়গুলিকে বদলে দেয় না, তবে উপলব্ধ সুযোগের পরিসরকে প্রশস্ত করে।

অনভ্যস্ত অংশীদার: পরিবর্তমান পশ্চিম এশিয়ায় ভারত-উপসাগরীয় গোয়েন্দা সম্পর্ক

ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)–এর এভিয়েশন রিসার্চ সেন্টারের অন্তর্গত গালফস্ট্রিম জেটটি যখন ৩০ জানুয়ারি ২০১৯  তারিখে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামল, তখন গুপ্তচরেরা সেটির দিকে তাকিয়েছিলেন। তার ভেতরে ‘‌‘‌দুটি প্রস্তুত পার্সেল” ছিল — ব্রিটিশ অস্ত্র ব্যবসায়ী ক্রিশ্চিয়ান মিচের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাজীব সাক্সেনা ও দীপক তলওয়ার, যাঁদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য দুবাই থেকে এই ফ্লাইট নয়াদিল্লি এসেছিল। এটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তাদের উপসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান গোয়েন্দা সহযোগিতার আরেকটি প্রাপ্তির দৃষ্টান্ত হিসাবে চিহ্নিত  হয়েছিল।



যেহেতু ভারতের কৌশলগত স্বার্থগুলি প্রায়শই এই দেশগুলির সঙ্গে একটি বহুমেরু যুগে ক্রমবর্ধমানভাবে মিলিত হয়, তাই গোয়েন্দা সহযোগিতা তাদের অংশীদারিত্বের একটি কম চর্চিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে গিয়েছে।



সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ভারত উপসাগরীয় আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চেয়েছে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) ও সৌদি আরব (কেএসএ) -‌এর সঙ্গে। যেহেতু ভারতের কৌশলগত স্বার্থগুলি প্রায়শই এই দেশগুলির সঙ্গে একটি বহুমেরু যুগে ক্রমবর্ধমানভাবে মিলিত হয়, তাই গোয়েন্দা সহযোগিতা তাদের অংশীদারিত্বের একটি কম চর্চিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে গিয়েছে। তাহলে, ভারত-উপসাগরীয় গোয়েন্দা সম্পর্কের সঙ্গে কী কী সুযোগ ও ঝুঁকি যুক্ত? এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে?

পটভূমি

ভারতীয় ও উপসাগরীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির, বিশেষ করে কেএসএ ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির গোয়েন্দাদের সঙ্গে, সহযোগিতার মাত্রার উদাহরণ দেয় রাজীব সাক্সেনার ঘটনাটি। এটি অন্য কয়েকটি ঘটনার মধ্যে একটি। ২০১০-‌২০১৮-‌এর মধ্যে প্রত্যর্পণ করা ২৪ জন পলাতকের মধ্যে ১৮ জন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে এসেছেন, যা স্পষ্টতই দুই পক্ষের মধ্যে অংশীদারিত্বকে সংজ্ঞায়িত করে এমন বিশ্বাসের উদাহরণ। এর মধ্যে
সাইয়েদ জাবিহুদ্দিন আনসারি (মুম্বইয়ে ২৬/‌১১ হামলার পরিকল্পনায় জড়িত এবং ২০১২ সালে তাঁকে কেএসএ থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল) এবং সাবিল আহমেদ (২০২০ সালে কেএসএ থেকে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল) -‌এর মতো নাম রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এই সহযোগিতা মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও প্রসারিত হয়েছে। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি নেপালের সঙ্গে ভারতের ছিদ্রযুক্ত সীমান্তে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এলইটি নিয়োগকারী আব্দুল করিম 'টুন্ডা', এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন ভাটকলের গ্রেপ্তার, এই উভয় ক্ষেত্রেই আমিরশাহি গোয়েন্দাদের সহায়তা করেছিল। এই ধরনের সহযোগিতা ভারত-উপসাগরীয় সম্পর্কের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী গতিপথের সঙ্গে, এবং সৌদি আরবের প্রেসিডেন্সি অফ স্টেট সিকিউরিটি (পিএসএস)-‌র সঙ্গে এপ্রিল ২০২৩-এ অনুমোদিত ‘‌‘‌সন্ত্রাসবাদী অপরাধ ও অর্থায়ন” সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাড়তেই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।



ভারতের কৌশলগত স্বার্থ চরিত্রগতভাবে ও উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ক্রমবর্ধমানভাবে বৈশ্বিক হয়ে উঠতে থাকলে, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি ব্যাকচ্যানেল কূটনীতির জন্য বেশ গোপনীয় ও নিরপেক্ষ তৃতীয় পাক্ষিক জায়গা প্রদান করতে সহায়তা করে, যদিও এমনকি ভারতের জন্য এই দেশগুলির সঙ্গে ব্যাকচ্যানেলগুলি বিকশিত করার প্রয়োজন আছে।



তবুও, বৈশ্বিক হুমকির ভূদৃশ্য পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং এর সঙ্গে ভারত-উপসাগরীয়  গোয়েন্দা সম্পর্কের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হতে হবে। এক সময় অংশীদারিত্বের কেন্দ্রবিন্দু ও বিশ্বের নিরাপত্তা কর্মসূচি ছিল সন্ত্রাস দমন। তা যদিও এখনও উদ্বেগের একটি ক্ষেত্র, তবে আন্তঃরাষ্ট্র প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে সরবরাহ  শৃঙ্খল ও অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রতিরক্ষার জন্য এর পরিণতি, এবং উদীয়মান প্রযুক্তির উপর প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়গুলি ক্রমবর্ধমানভাবে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করছে। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ভারতের কৌশলগত বিনিয়োগগুলি অ্যাব্রাহাম অ্যাকর্ডের পটভূমিতে ২০২০-র দশকের গোড়ার দিকে আবির্ভূত হওয়া
আই২ইউ২-এর মতো, তার ক্ষুদ্রপাক্ষিক কূটনীতির আঞ্চলিক ডেরিভেটিভের মাধ্যমে আরও আবদ্ধ হয়েছে। তার উপর, ভারতের কৌশলগত স্বার্থ চরিত্রগতভাবে ও উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ক্রমবর্ধমানভাবে বৈশ্বিক হয়ে উঠতে থাকলে, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি ব্যাকচ্যানেল কূটনীতির জন্য বেশ গোপনীয় ও নিরপেক্ষ তৃতীয় পাক্ষিক জায়গা প্রদান করতে সহায়তা করে, যদিও এমনকি ভারতের জন্য এই দেশগুলির সঙ্গে ব্যাকচ্যানেলগুলি বিকশিত করার প্রয়োজন আছে। এই ধরনের বিবেচনাগুলি ভারত-উপসাগরীয় গোয়েন্দা সম্পর্কের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, এবং তার থেকে উদ্ভূত সুযোগ, চ্যালেঞ্জ ও সমাধানগুলির একটি বিচ্ছিন্ন মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়ে উঠছে।


পরিবর্তিত পরিস্থিতি

সমসাময়িক বৈশ্বিক হুমকির ভূদৃশ্যের বিষয়গত পরিবর্তন, এবং গোয়েন্দা কার্যকলাপের জন্য তাদের পরিণতি, ভারত এবং উপসাগরীয় উভয় জায়গাতেই স্বীকৃত হয়েছে, বিশেষ করে ইউএই ও কেএসএ-তে। উভয় রাজতন্ত্রই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাদের কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলির পুনর্নির্মাণ করেছে, এবং একটি বহুমেরু বিশ্বে স্বতন্ত্র ক্ষমতা হিসাবে কাজ করার ক্ষমতাকে সংহত করার জন্য ভারতীয় স্বার্থের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার নতুন পরিসর তৈরি করেছে, যেমনটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে
ব্রিকস সদস্যপদে তাদের অন্তর্ভুক্তির মধ্যে এবং রিয়াদের স্পষ্ট আগ্রহ থেকে দেখা যায়।


এই ধরনের কৌশলগত পরিবেশে সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষিত করা এবং আঞ্চলিক সংযোগকে উৎসাহিত করার যৌথ প্রতিশ্রুতি ভারত-মধ্যপ্রাচ্য অর্থনৈতিক করিডোর (আইএমইসি)-‌এর মতো অর্থনৈতিক করিডোরগুলির পরিকল্পনাকে সহজতর করেছে। অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তির উপর জোর দিয়ে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শক্তি তুলে ধরার উপর একটি ফোকাস — যেমন সৌদি আরবের নিঅম-‌এর মতো
স্মার্ট শহরগুলিতে এবং অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খাতে বিনিয়োগ, এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নতুন প্রযুক্তির উপর জোর দিয়ে শক্তি ক্ষেত্রে, যেমন সবুজ হাইড্রোজেনে — একটি বহুমুখী বিশ্বে প্রভাবের একটি পৃথক খুঁটি হিসেবে অধিকতর সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলির জাতীয় নিরাপত্তার অস্ত্রাগার এবং বৈদেশিক নীতির সরঞ্জাম উভয়েরই সমান অংশ। বহুমেরুবিশিষ্টতা রিয়াদ ও আবুধাবি উভয়েরই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বৃহত্তর সদিচ্ছা নিয়ে এসেছে, যেমন আইএমইসি-র মতো বৃহৎ কৌশলগত উদ্দেশ্য সাধনে উভয় দেশই গাজায় ইজরায়েলের সঙ্গে চলতি যুদ্ধের সমাপ্তির পরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা বজায় রাখে। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে, সৌদি ও আমিরশাহির কৌশলগত স্বার্থ ভারতের সঙ্গে মিলে যায়। এটি এমন একটি ঐকমত্যের পরিসর যা বিদ্যমান গোয়েন্দা সহযোগিতা অগ্রাধিকারগুলির পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যেতে পারে।



বহুমেরুবিশিষ্টতা রিয়াদ ও আবুধাবি উভয়েরই ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বৃহত্তর সদিচ্ছা নিয়ে এসেছে, যেমন আইএমইসি-র মতো বৃহৎ কৌশলগত উদ্দেশ্য সাধনে উভয় দেশই গাজায় ইজরায়েলের সঙ্গে চলতি যুদ্ধের সমাপ্তির পরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা বজায় রাখে।



জাতীয় নিরাপত্তা গুরুত্বের এই উদীয়মান ক্ষেত্রগুলি তাই আরব সাগরজুড়ে গোয়েন্দা অগ্রাধিকারের বৈচিত্র্য আনতে বাধ্য করবে। ইয়েমেনের হুথিদের মতো খেলোয়াড়দের আক্রমণের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ট্র্যাফিক ও সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষিত করতে সামুদ্রিক গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করে নেওয়া অবশ্যই একত্রিত হওয়ার একটি ক্ষেত্র হতে পারে। এখন গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির যে ক্ষেত্রগুলি রয়েছে,
ব্রিকস, আই২ইউ২, বা এমনকি এসসিও-র মতো বহুপাক্ষিক স্তরে এবং দ্বিপাক্ষিকভাবেও, এগুলিকে প্রসারিত করা যেতে পারে রিয়াদ ও দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক অর্থের কেন্দ্র হিসাবে ক্রমাগত বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক বুদ্ধিমত্তা (ফিনইন্ট) ভাগাভাগির উপর নজর রেখে। গোয়েন্দা কার্যকলাপের জন্য এই ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উপর ফোকাসও প্রসারিত হতে পারে, কারণ এর অবস্থান হল সেই প্রাথমিক পরিসর যার মধ্যে হুমকি খেলোয়াড়েরা অর্থ প্রবাহকে অস্ত্রায়িত করে এবং অবৈধ তহবিল পাচার করে, এবং যার স্বচ্ছতা এটিকে প্রতিপক্ষের তরফে বৃহত্তর সমঝোতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।


এই অন্তর্নিহিত স্বচ্ছতার দ্বারা উত্থাপিত কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স চ্যালেঞ্জগুলি সমানভাবে আরঅ্যান্ডডি ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত, যে কারণে ভারত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (আইপি) চুরির মতো বিষয়ে বৃহত্তর ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজন। যেহেতু এই পরিসরের মধ্যে বিকশিত প্রযুক্তিগুলি শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ও আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পগুলিকে পরিব্যাপ্ত করে, এবং সমঝোতার ক্ষেত্রে কৌশলগত শত্রু খেলোয়াড়দের দ্বারা অস্ত্রায়িত করা হতে পারে, তাই প্রতিরোধ প্রচেষ্টা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই এটি সুপারিশ করা হয় যে তিনটি দেশের মধ্যে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সহযোগিতা যেন বিভিন্ন ধরনের মানবিক ও সাইবার সক্ষমতা ব্যবহার করে, এবং আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক উভয় উপায়ে প্রতিকূল খেলোয়াড়দের আপস থেকে জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বের ক্ষেত্রগুলিকে পৃথগীকৃত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।

অফ-রোড কূটনীতি: উপসাগরীয় ও গোয়েন্দা ব্যাকচ্যানেল

উপসাগরীয় দেশগুলি অন্য আঞ্চলিক এবং বহির্মুখী শক্তিগুলির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মধ্যে বৈচিত্র্য এনেছে, এবং গোপন ও ব্যাকচ্যানেল কূটনীতির বাহন হিসাবে উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলির ঐতিহাসিক ভূমিকা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির জন্য নজর কেড়েছে৷ কেএসএ ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ইতিমধ্যে রাশিয়া, চিন ও এমনকি ইরানের সঙ্গে
ক্রমবর্ধমানভাবে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে;‌ ইরান হল একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিপক্ষ, এখন যার জন্য হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের চলতি যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন থেকে আসা বার্তাগুলি পূর্বোক্ত দেশটি রিলে করছে। ব্যাকচ্যানেল কূটনীতি উভয় উপসাগরীয় রাজতন্ত্রকে বৈশ্বিক সংঘাতের একটি পরিসরে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করার মাধ্যমে বহুমেরু বিশ্বে একটি বড় ভূমিকা পালন করার সুযোগ দেয়।



কেএসএ ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ইতিমধ্যে রাশিয়া, চিন ও এমনকি ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে;‌ ইরান হল একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিপক্ষ, এখন যার জন্য হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের চলতি যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন থেকে আসা বার্তাগুলি পূর্বোক্ত দেশটি রিলে করছে।



কেএসএ ও ইউএই-‌র নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সঙ্গে নয়াদিল্লির সহযোগিতা তাই আশা এবং প্রত্যাশা নিয়ে আসতে পারে যে এর ফলে প্রতিকূল ও বন্ধুত্বপূর্ণ উভয় ধরনের দেশের সঙ্গে ভারতের ব্যাকচ্যানেল স্থাপনে তাদের ইচ্ছা আরও শক্তিশালী হতে পারে। উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে নয়াদিল্লিকে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে শান্ত, গোপন কূটনীতি পরিচালনা করতে  সক্ষম করেছে - বিশেষ করে
জানুয়ারি ২০২১ সালে, যখন এটি প্রকাশ করা হয়েছিল যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি দুবাইতে ভারতীয় ও পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ পরবর্তীতে তা তীব্রভাবে অস্বীকার করে


তবুও ঝুঁকি থেকে যায়। ২০২৩ সালে কথিত গুপ্তচরবৃত্তির জন্য
কাতারে আট ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার এবং সাজা দেওয়া শুধু এই ক্ষেত্রের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলিকেই বোঝায় না, তবে উপসাগরীয় শক্তিগুলির জন্য কার্যকর গোয়েন্দা ব্যাকচ্যানেলগুলির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে তাই মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরেও তাদের দিগন্ত বিস্তৃত করতে হবে, এবং অন্য আঞ্চলিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, বিশেষ করে ভারত ও কাতার উভয়ের ক্ষেত্রেই তাদের সৌহার্দ্য বা নিরপেক্ষতার ইতিহাসের ভিত্তিতে। মূল দাবিদার হিসাবে অন্যদের মধ্যে মরক্কো, ওমান বা বাহরাইনের গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক পরিষেবা থাকতে পারে। ভারত-উপসাগরীয় নিরাপত্তা গতিশীলতার ক্ষেত্রে আবারও প্রতিকূল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আঞ্চলিক দক্ষতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এই সংস্থাগুলি এবং তাদের উপসাগরীয় সমকক্ষদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।


উপসংহার

ভারত-উপসাগরীয় সম্পর্ক যদিও একটি দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ভাগাভাগির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাদের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা অংশীদারিত্ব আরও দৃশ্যমান 'কৌশলগত' বর্ণ ধারণ করেছে, যদিও যা এতদিন মূল সূত্র হিসাবে কাজ করেছে সেই সন্ত্রাসবাদ বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা কল্পনায় ইদানীং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। তবে দিগন্তের প্রসারণ একটি বহুমেরু যুগে বুদ্ধিমত্তা সহযোগিতার জন্য নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। উদীয়মান প্রযুক্তির উপর বৃহত্তর জোর, বৈশ্বিক আর্থিক চ্যালেঞ্জ ও বেসরকারি ক্ষেত্রকে অবশ্যই অংশীদারিত্বের আলোচনাকে ক্রমবর্ধমানভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। একইভাবে, গোয়েন্দা সহযোগিতা ব্যাকচ্যানেল ও গোপন কূটনীতির জন্য শক্ত ভিত্তি স্থাপনে সাহায্য করতে পারে, উভয় দেশের মাধ্যমে এবং উপসাগরীয় শক্তিগুলির সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত, বিশ্বজোড়া পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভারত এবং এর উপসাগরীয় অংশীদারদের মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতার মৌলিক বিষয়গুলিকে বদলে দেয় না, তবে উপলব্ধ সুযোগের পরিসরকে প্রশস্ত করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন তাদের সুবিধা নিতে পারি।



অর্চিষ্মান গোস্বামী একজন স্নাতকোত্তর ছাত্র যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.