Published on Jun 05, 2024 Updated 4 Days ago

ইউক্রেনের সামরিক অভিযান প্রকৃতপক্ষে দুর্বল হয়ে পড়লেও এটি পশ্চিমের রাজনৈতিক কৌশলকে উন্মোচন করছে।

কিয়েভ ফ্রন্টে পশ্চিমীরা জমি হারাচ্ছে

এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।


ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি তাঁর শীর্ষ সামরিক কম্যান্ডার জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি-র জায়গায় ইউক্রেনীয় স্থলবাহিনীর অভিজ্ঞ কম্যান্ডার জেনারেল আলেকজান্দার সিরস্কি-কে ক্ষমতায় বহাল করেছেন। ইউক্রেনের সামরিক নেতৃত্বের শীর্ষে এই পরিবর্তনটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ যুদ্ধের এই পর্যায়ে কিয়েভ রুশ বাহিনীর তরফে সামরিক চাপের মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর একজন প্রাক্তন কম্যান্ডার হিসেবে সিরস্কি সম্পূর্ণ অপরিচিত বা অ-বিতর্কিত বিকল্প নন কারণ তাঁকে বাখমুত রক্ষার কাজে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়, যে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউক্রেনীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সিরস্কি নিজের আদেশমূলক দক্ষতার জন্য ভীষণ রকম সম্মানিত তিনি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ আক্রমণের পরে কিয়েভের শক্তিশালী প্রতিরক্ষার নমুনা প্রদর্শন করেছিলেন। নিজেকার্যকরী স্বকীয়তার মুকুটে তিনি আরও একটি পালক যোগ করেন যখন ইউক্রেনীয় স্থলবাহিনী সফল ভাবে প্রতি-আক্রমণের মাধ্যমে খারকিভকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করেছিল। বাখমুতকে রক্ষা করার জন্য প্রচুর রক্তপাত হওয়া সত্ত্বেও সিরস্কির শক্তি তাঁকার্যক্ষমতা ও আদেশ প্রদানের ইতিহাসে কোনও দাগ ফেলেনি।

 

ইউক্রেনীয় বাহিনীর একজন প্রাক্তন কম্যান্ডার হিসেবে সিরস্কি সম্পূর্ণ অপরিচিত বা অ-বিতর্কিত বিকল্প নন কারণ তাঁকে বাখমুত রক্ষার কাজে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়, যে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউক্রেনীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল।

 

কৌশলগত পর্যায়ে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) সদস্য দেশগুলি ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন নিয়ে ক্রমশ বিভক্ত হয়ে পড়ছে। ইউক্রেনের জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক সহায়তা প্যাকেজ সরবরাহ করার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার মাধ্যমে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকান সদস্যরা কিয়েভের জন্য ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা প্যাকেজ অবরুদ্ধ করেছে। এটি রুশ সামরিক অগ্রগতির বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুতর সমস্যাকেইত্থাপন করে। মার্কিন কংগ্রেসে অচলাবস্থার ফলে কিয়েভ গোলাবারুদ অস্ত্র ব্যবহারে রাশ টানতে বাধ্য হয়। তার ফলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার অবস্থানের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তরফে কোনও প্রকার স্থিতিশীল অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই ঘটনাপ্রবাহ ইউক্রেনের ব্যর্থ পাল্টা আক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যা গত বছর জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল এবং বর্তমানে মার্কিন সামরিক সহায়তা হারানোর সম্ভাবনার ফলে পরিস্থিতি গুরুতর বিপজ্জনক রকমের জটিল হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনীয় যুদ্ধক্ষেত্রের কর্মক্ষমতা সাফল্য মার্কিন সামরিক সাহায্যের উপরেই নির্ভরশীল। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) জেক সুলিভান যেমন স্পষ্টতই বলেছেন: এই (মার্কিন) তহবিলের কোন বিকল্প নেই।

এর ফলস্বরূপ, ডনবাস ক্রিমিয়ার অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা তো দূর, ইউক্রেন অতিরিক্ত অঞ্চলগুলি হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন, মস্কো দ্বারা ২০১৪ সালে দখলকৃত উপরোক্ত দু’টি অঞ্চল ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ২০%। র ফলে কিয়েভের প্রাপ্য ত্রাণ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং তা রাশিয়াকে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে আরও সুবিধা প্রদান করবে। এই পশ্চিমাঞ্চলটি ইতিমধ্যেই রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন। ইউক্রেনের জন্য একমাত্র আশার আলো হল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তরফে ৫০ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা প্রদানের ঘোষণা। হাঙ্গেরির নেতা ভিক্টর অরবানের ইউক্রেনকে সহায়তার বিষয়ে ভেটো তুলে নেওয়ার পরে এই সহায়তা প্রদানের ঘোষণা করা হয়। ইইউ ত্রাণ প্রাথমিক ভাবে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য কাজে লাগলেও সেই অর্থ দিয়ে ইউক্রেনের সরকারকে কার্যকর রাখা এবং দেশটির অবকাঠামো সচল রাখা হয়েছে। এটি রাশিয়ার পুনরুজ্জীবিত সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টা মেটাতে মোটেই যথেষ্ট নয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কোনও রকমের উল্লেখযোগ্য অঞ্চল দখল করেনি।

 

রুশ গোলাবারুদ হামলাগুলি ইতিমধ্যেই আভদিভকা ও প্রথম সারির অন্যান্য অঞ্চলের আশপাশে ইউক্রেনের গোলাবারুদকে সংখ্যায় ও ক্ষমতা ছাপিয়ে গিয়েছে।

 

কৌশলগত স্তরে তিনটি ঘটনাক্রম কিয়েভের সামরিক অভিযানের প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ্যে এনেছে। প্রথমত, পূর্ব ইউক্রেনের আভদিভকা শহরের সম্ভাব্য পতন, যা রুশরা দখল করতে চলেছে। রুশ গোলাবর্ষণ ইতিমধ্যেই আভদিভকা ও  সামনের অন্যান্য অঞ্চলের আশপাশে ইউক্রেনের কামানগুলিকে সংখ্যায় ও ক্ষমতা ছাপিয়ে গিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা কিয়েভকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোনগুলি ঠেকাতে বাধা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি রুশ ড্রোনগুলি অবকাঠামোগুলি ধ্বংস করছে। তৃতীয়ত, মার্কিন কংগ্রেসের অর্থায়নে বিলম্ব অব্যাহত থাকায় ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা পশ্চিম ইউক্রেনকে লক্ষ্যকারী রুশ জেটগুলিকে ঠাহর করতে পারছে না। ওয়াশিংটনে কৌশলগত নীতি সংক্রান্ত অচলাবস্থা শুধু মাত্র সামরিক লাভকেই নয়, বরং পশ্চিম ইউক্রেনের ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে, যেমনটা কয়েক মাস আগেও ধারণা করা কঠিন ছিল।

কিয়েভের বর্তমান গোলাবারুদ অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতি এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য শক্তি সংরক্ষণের অপরিহার্যতার প্রেক্ষিতে, ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্ব দিকে অঞ্চল ছেড়ে দিতে এবং বিশেষ করে দেশের পশ্চিমে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য হতে পারে। ইউক্রেনের জন্য হতাশাজনক বা মনোবল ভেঙে দেওয়ার মতো হলেও, এটিই তার জন্য সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সত্যি যে… ওয়াশিংটন যত দিন না ক্যাপিটল হিলের অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারছে এবং কিয়েভের প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদান করছে, তত দিন ইউক্রেনকে অপেক্ষা করতে হবে।

 

ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা কিয়েভকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোনগুলি ঠেকাতে বাধা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি রুশ ড্রোনগুলি অবকাঠামোগুলি ধ্বংস করছে

 

এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী মনে করা হচ্ছে যে, বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ তাঁর পক্ষে যাচ্ছে এবং তাঁকে শুধু মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ন্যাটোর তহবিলে প্রয়োজনীয় অবদান রাখতে ব্যর্থ যে কোনও সদস্য দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে রাশিয়াকে ‘উৎসাহিত করবেন। প্রাক্তন ফক্স নিউজের সাংবাদিক টাকার কার্লসনের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে পুতিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, রাশিয়া ‘আলোচনার জন্য প্রস্তুত এবং ‘দর কষাকষিতে ইচ্ছুক’। কারণ তিনি এটিকে এমন একটি মুহূর্ত হিসাবে দেখছেন, যখন যুদ্ধের জোয়ার তার পক্ষে মোড় নিচ্ছে এবং ন্যাটো বুঝতে শুরু করেছে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব। ক্ষমতার এই অবস্থান থেকে পুতিন এই যুক্তি দিতে পারেন যে, ‘আগে হোক অথবা পরে, সমঝোতাতেইই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে।’

ইউক্রেনের সামরিক অভিযান প্রকৃতপক্ষে দুর্বল হয়ে পড়লেও এটি পশ্চিমের রাজনৈতিক কৌশলকে উন্মোচন করছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti is a Senior Fellow with the Strategic Studies Programme. Kartik specialises in space military issues and his research is primarily centred on the ...

Read More +