প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা ধারণাগুলিকে বর্তমানের মূলধারার সঙ্গে সমন্বিত করার জন্য ‘বুলি পুলপিট’ বা তাঁর নিজস্ব উচ্চ পদাধিকার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মতো আধুনিক সাধনীগুলিকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। যোগ, ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস ২০২৩ বা আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ ২০২৩ এবং মিশন লাইফ-এর (পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা) মতো উদাহরণগুলির মাধ্যমে মোদী সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে সফলভাবে চিরাচরিত অনুশীলনগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এই রূপান্তরমূলক উদ্যোগগুলির বাস্তবায়নে মোদীর সাফল্য তাঁর পরিবর্তনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে একটি আকর্ষক আখ্যান এবং তাঁর স্বপ্নের প্রতি জনসমর্থন অর্জন করার ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্তও। সারা বিশ্বে সাধারণ মানুষের জীবনে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তিনি প্রচলিত প্রজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং সুপরিকল্পিত ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক এক নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন।
এই রূপান্তরমূলক উদ্যোগগুলির বাস্তবায়নে মোদীর সাফল্য তাঁর পরিবর্তনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে একটি আকর্ষক আখ্যান এবং তাঁর স্বপ্নের প্রতি জনসমর্থন অর্জন করার ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্তও।
যোগ: আধুনিক সুস্থতার নিরিখে একটি প্রাচীন অনুশীলন
আধুনিক জীবনযাত্রা থেকে উদ্ভূত রোগের চাপে গোটা বিশ্ব যখন জর্জরিত, তখন শারীরিক ভঙ্গিমা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যান সম্বলিত একটি প্রাচীন অনুশীলন যোগ ক্রমশ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে মোদীর ভাষণের সূত্র ধরে ২০১৫ সাল থেকে ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই আন্তর্জাতিক মঞ্চটি আধুনিক বিশ্বে চিরাচরিত যোগ অনুশীলনকে তুলে ধরেছে এবং লব্ধতা, অন্তর্ভুক্তি ও সম্পৃক্ততার পাশাপাশি বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বিতকরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
যোগ কূটনীতি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরই উন্নতি ঘটায়নি, একই সঙ্গে বিশ্বের সামনে ভারতের ইতিবাচক ভাবমূর্তিও তুলে ধরেছে।
টুইটার, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো মঞ্চগুলি ব্যবহার করে মোদী আন্তর্জাতিক যোগ দিবস নিয়ে সক্রিয় প্রচার চালিয়েছেন; এটিকে একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যাপনে পরিণত করেছেন; যোগব্যায়ামকে আধুনিক, সুবিধাজনক এবং সহজে উপলব্ধ অনুশীলন হিসাবে তুলে ধরেছেন, যা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে যোগকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মোদী ভারতের সফট পাওয়ার বা কূটনৈতিক ক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর জীবনধারার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সম্পৃক্ততাকে সশক্ত করেছেন। যোগ কূটনীতি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরই উন্নতি ঘটায়নি, একই সঙ্গে বিশ্বের সামনে ভারতের ইতিবাচক ভাবমূর্তিও তুলে ধরেছে।
মিলেটের পুনরুজ্জীবন: খাদ্য ব্লিচ করা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া
নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস বা অসংক্রামক রোগের (এনসিডি) ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং সেই ক্ষেত্রটি দ্বারা প্রচারিত খাদ্যরুচির সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে সংযুক্ত। ভারতের কৃষি ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত মিলেট বা বাজরা পুষ্টিগত সুবিধা এবং স্থিতিশীল কৃষি অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি এবং গ্রামীণ উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেগুলির সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে মোদী সরকার বাজরার প্রচারের জন্য একটি কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছে। মিলেটের বিভিন্ন জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং উচ্চ পুষ্টিগত গুণমান তাকে পুষ্টির একটি মূল্যবান উৎস করে তোলে, বিশেষত সেই সব সম্প্রদায়ের জন্য, যাদের কাছে সীমিত খাদ্য বিকল্প রয়েছে।
ভারতের পৃষ্ঠপোষণায় ২০২৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ’ হিসাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণা স্থিতিশীল কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনে তাদের তাত্পর্যকেই তুলে ধরে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিকে কাজে লাগিয়ে মোদী এবং তাঁর সরকার বাজরার উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য প্রচার করেছেন, এই শস্য চাষ ও ব্যবহারকে উত্সাহিত করেছেন এবং মূলধারার খাদ্য ব্যবস্থায় বাজরাকে সমন্বিত করার মাধ্যমে খাদ্য শিল্পকে অতি প্রক্রিয়াজাত ও পুষ্টিগতভাবে দুর্বল খাদ্য থেকে সরে আসার বিকল্প উপায় দিয়েছেন।
ভারতের কৃষি ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত মিলেট বা বাজরা পুষ্টিগত সুবিধা এবং স্থিতিশীল কৃষি অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়।
বাজরার উপর মনোযোগ খাদ্যের ‘শ্বেতকরণ’ (শস্য ব্লিচ করা) থেকে সরে আসা এবং সম্পূর্ণ, ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত শস্য গ্রহণের বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার কথাই বলে। এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকাগত পছন্দের প্রচার এবং আরও স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, যা ব্যক্তি ও পরিবেশ উভয়েরই উপকার করে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ কমিয়ে দেয়। ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে বাজরাকে একটি স্থিতিশীল এবং পুষ্টিকর খাদ্য উত্স হিসাবে প্রচার করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি বৈচিত্র্য এবং স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনে তার ভূমিকার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মিশন লাইফ: পরিবেশগত ভাবে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান
অত্যধিক ভোগ এবং কমোডিটি ফেটিশিজম বা পণ্যের প্রতি মুগ্ধতা স্থিতিশীলতার নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। বস্তুগত সম্পদের পিছনে নিরন্তর দৌড় এবং শুধুমাত্র আর্থিক মূল্যের উপর ভিত্তি করে মূল্যের উপলব্ধি একটি অস্থিতিশীল চক্রকে স্থায়ী করে। পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য মনস্তাত্ত্বিক ও যুক্তিসঙ্গত ব্যয়ের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে অত্যধিক ভোগের দিকে চালিত করে এমন মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির মোকাবিলা করাই হল আসল চ্যালেঞ্জ। স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সামাজিক মূল্যবোধ এবং আচরণের পরিবর্তন প্রয়োজন, যাতে সচেতন ব্যবহারকে তুলে ধরা যায় এবং অতিরিক্ত ভোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়।
এই পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে মোদীর ধারণা এবং মিশন লাইফের প্রচার স্থিতিশীল ভোগ ও উৎপাদনের জন্য ব্যক্তি ও সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিকেই প্রতিধ্বনিত করে। মোদী লাইফ-কে একটি বিশ্বব্যাপী গণ আন্দোলনে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে নির্বোধ এবং ধ্বংসাত্মক ভোগের বদলে পরিবেশের সচেতন ও স্থিতিশীল ব্যবহারের উপর জোর দেন। এটি ২০২১ সালে গ্লাসগোয় কপ২৬-এ প্রথম বারের জন্য প্রবর্তিত হয়েছিল এবং ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের সঙ্গে অনুরণিত হয়, যা লাইফ-এর গুরুত্ব, জাতীয় উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির জন্য দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তগুলি উপস্থাপন করেছে।
পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য মনস্তাত্ত্বিক ও যুক্তিসঙ্গত ব্যয়ের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে অত্যধিক ভোগের দিকে চালিত করে এমন মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির মোকাবিলা করাই হল আসল চ্যালেঞ্জ।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সহজ কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে লাইফ-এর লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। এই কর্মসূচি সামাজিক রীতিনীতিকে প্রভাবিত করতে এবং পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গ্রহণ ও প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ‘প্রো-প্ল্যানেট পিপল’ (পি৩) নামে একটি বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায় তৈরি করতে সামাজিক শৃঙ্খলগুলিকে কাজে লাগাতে আগ্রহী। প্রচারাভিযানটি ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের আচরণের উপর মনোযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ধারণার অনুসন্ধান করে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে জলবায়ু-বান্ধব অনুশীলন এবং বিশ্বাসের সুবিধা গ্রহণ করে।
মোদী সরকার লাইফ-এর প্রচারের জন্য বিভিন্ন মঞ্চের সমাবেশ করেছে এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল আচরণ গ্রহণে উৎসাহিত করেছে। ব্যক্তিগত পছন্দ ও পরিবেশগত প্রভাবের মধ্যে যোগসূত্রের উপর জোর দিয়ে মোদী বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলা করার দিকে লক্ষ্য রেখেছেন। শিক্ষায় লাইফ-কে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যম মঞ্চগুলির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করে মোদী সরকার একটি দূষণহীন, পরিচ্ছন্ন এবং আরও প্রাণবন্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কথা বলেছে।
প্রাচীন জ্ঞানকে পুনরুজ্জীবিত ও জনপ্রিয় করার জন্য আধুনিক সাধনীগুলিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে বর্তমান সময়ে সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার অনুভূতি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঐতিহ্য এবং অগ্রগতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন এবং অতীতের ধারণাগুলিকে মূলধারায় নিয়ে আসা যাতে বর্তমানের দ্রুত বিকাশশীল সমাজের বৈচিত্র্যময় প্রয়োজনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়, তা সুনিশ্চিত করেছেন। তাঁর মেয়াদ জুড়ে তিনি স্থিতাবস্থা বজায় করার পরিবর্তে ‘জীবনধারণের পদ্ধতি’র পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রদায়গুলিকে উদ্দীপ্ত করে আধুনিক রাজনৈতিক নেতাদের আদর্শগত অনুশীলনকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন। তিনি সমসাময়িক মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখার বদলে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছেন এবং আকর্ষক বিষয় হল, তা সত্ত্বেও তিনি বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছেন।
শোভা সুরি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
উম্মেন সি কুরিয়ান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো এবং হেলথ ইনিশিয়েটিভের প্রধান।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.