-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
জাপান এআই-কে এমন একটি প্রয়োজনীয় সংযোজন হিসাবে দেখে যা জাপানের সামরিক সক্ষমতা উন্নত করতে পারে, বিশেষ করে এমন একটি বিশ্বে যেখানে উচ্চ প্রযুক্তির প্রয়োগগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যাই হোক, উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন।
জুলাই মাসে জাপান প্রতিরক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের বিষয়ে তার প্রথম নীতি প্রকাশ করেছে। এআই-এর দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়ে জাপানের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবং ২০২২ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে বলা হয়েছে, এটি দেশের সামরিক সক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এআই গ্রহণ করার জন্য জাপানের আগ্রহ আংশিকভাবে যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান চরিত্রের ফলাফল, বিশেষ করে ইজরায়েল-হামাস ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো চলতি শত্রুতা এবং সংঘাতে এআই-এর প্রয়োগের আলোকে। তা ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের এআই ব্যবস্থা গ্রহণ এর আরেকটি কারণ।
জাপানি সামরিক বাহিনীতে এআই বিবর্তন
জাপানি সামরিক বাহিনীতে এআই উপাদান যোগ করা সাম্প্রতিক প্রবণতা মাত্র। দেশটির ২০২২ সালের এআই কৌশল খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে সেখানে এআই স্পষ্টভাবে জাপানি প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার উপায় হিসাবে উল্লেখিত হয়েছিল। সামরিক উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ব্যবহারের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের কারণে জাপানে ধীরে ধীরে এই পথে এগোয়। এই প্রতিরোধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার পরে বেসামরিক ও অ্যাকাডেমিক সম্প্রদায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কোনও সম্ভাব্য সহযোগিতা এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (এমওডি) অ্যাকুইজিশন, টেকনোলজি অ্যান্ড লজিস্টিক এজেন্সি (এটিএলএ) প্রতিষ্ঠা করেছে, যা সামরিক বাহিনীতে এআই প্রকল্পগুলি গ্রহণের সুবিধার্থে এবং অর্থায়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। সংস্থাটি ২০১৫ সালে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অধীনে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল: জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্সেস (এসডিএফ)-এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সুগম করা এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অর্জন। এআই-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলি চিহ্নিত করা, তাদের অর্থায়ন, এবং জাপানি সামরিক কর্মীদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অনেক অগ্রগতি হয়েছে (সারণী ১ দেখুন)। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিরক্ষা এআই-এর বাজেট ২০২৩ অর্থবর্ষের তুলনায়, যখন তা ছিল মোট বাজেটের প্রায় ১ শতাংশ, ২০২৪ অর্থবর্ষে দ্বিগুণ হয়ে ২০০ বিলিয়ন জেপিওয়াই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও, সরকার জাপানের সামুদ্রিক ও বায়ু এসডিএফ-এ এআই-সম্পর্কিত চাকরির জন্য সিনিয়র ও জুনিয়র পদের লোকদের প্রশিক্ষণের দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একটি প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছে, এবং আনইনহ্যাবিটেড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) এবং জলের নিচে যুদ্ধের জন্য রোবোটিক ও অটোনমাস সিস্টেমে বিনিয়োগ করছে। জাতীয় উদ্যোগ ছাড়াও, জাপান তার মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে, যেমন প্রতিরক্ষা এআই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
সারণী ১: জাপানের সামরিক এআই উদ্যোগ
সূত্র: মোতোহিরো সুচিয়া
প্রতিরক্ষা এআই এবং জাপান: কৌশলগত যুক্তি
জাপান এআই-কে একটি প্রয়োজনীয় সংযোজন হিসাবে দেখে, যা জাপানের সামরিক সক্ষমতাকে গুরুত্বের সঙ্গে উন্নত করতে পারে, বিশেষ করে এমন একটি জটিল বিশ্বে যেখানে উচ্চ প্রযুক্তির প্রয়োগ শুধুমাত্র আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই কারণে, মহাশক্তিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রাসঙ্গিক থাকতে হলে শুধু প্রতিরক্ষা বাজেটে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেইভাবে প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং যা ভবিষ্যতের যুদ্ধের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সেই পরবর্তী প্রজন্মের সক্ষমতাগুলিতে বিনিয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । ২০২২ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে (এনএসএস) জাপান তার উদ্বেগ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে, যা চিনের এআই-মিলিটারি ফোকাসকে তুলে ধরেছে। এনএসএস বলেছে যে, "চিন উল্লেখযোগ্যভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-ভিত্তিক মানবহীন সম্পদের উপর নির্ভরশীল সামরিক সক্ষমতা বিকাশকে ত্বরান্বিত করছে।"
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এসডিএফ-এর উপর বোঝা কমাতে এবং ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চিত্র ১-এ প্রদর্শিত সাতটি ক্ষেত্রে, এআই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার লক্ষ্য রাখে। মিনোরু কিহারা, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (ডিএম), বলেছিলেন যে "আমাদের দেশে, যেখানে জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং বার্ধক্য হচ্ছে, কর্মীদেরকে আগের চেয়ে আরও বেশি দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা অপরিহার্য", এবং তাই তিনি মনে করেন এআই একটি "সম্ভাব্য প্রযুক্তি যা এই চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করতে পারে।" বৃদ্ধ জনসংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ও চিনের মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জন্য একটি গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। এইভাবে, এআই সংযুক্তকরণ জাপানকে সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত জনসংখ্যা হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
স্বয়ংচালিত অস্ত্রগুলি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে এআই আগামী কয়েক বছরে সংযোজিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ সামরিক বাহিনী তার কার্যগত দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে।
যাই হোক, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মানদণ্ডের কঠোর আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য জাপান সরকার এমন আইন প্রণয়ন করার পরিকল্পনা করেছে যা বাধ্যতামূলক করে যে এআই অপারেশনে জড়িত ডেভেলপাররা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে সরকারের কাছে 'কিছু তথ্য প্রকাশ করবে'। এমনকি চ্যাট জিপিটি ও অন্য এআই মডেলগুলি ব্যবহার করার ফলে উদ্ভূত সামরিক ঝুঁকিগুলিকে "গবেষণা ও উন্নয়নে বাধা না দিয়ে সুরক্ষা" উন্নত করার জন্য একটি সংস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে। সম্প্রতি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জেনারেটিভ এআই-এর নিয়ন্ত্রক বিধিনিষেধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য একটি এআই সিস্টেম স্টাডি গ্রুপের সভায় যোগ দিয়েছিলেন। স্বয়ংচালিত অস্ত্রগুলি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে এআই আগামী কয়েক বছরে সংযোজিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ সামরিক বাহিনী তার কার্যগত দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে। যাই হোক, জাপান সরকারের মানুষের সিদ্ধান্তগ্রহণ এড়িয়ে "সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনও ইচ্ছা নেই"। এইভাবে, আমরা কঠোর চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস-সহ সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্ত ক্ষেত্রে এআই-এর সীমিত সম্পৃক্ততা দেখতে পাব, যার সমস্ত চেন অফ কমান্ড মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করে। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীল এলাকাগুলি অন্যদের তুলনায় ন্যূনতম এআই সংযোজনের সাক্ষী হবে, যেমন প্রশাসন ও লজিস্টিকস।
চিত্র ১: এআই প্রয়োগের ক্ষেত্র
সূত্র: লেখক দ্বারা নির্মিত
জাতীয় পর্যায়ে প্রতিরক্ষা এআই উন্নত করার পদক্ষেপ করার সময় জাপান আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নীতিগুলির দ্বারা পরিচালিত সুযোগগুলি অন্বেষণ করতে নতুন অংশীদারিত্ব তৈরি করছে৷ জাপানের এআই নীতি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে একটি নীতিসম্মত পদ্ধতির দ্বারা চালিত: মানব-কেন্দ্রিকতা বজায় রাখা, সচেতনতা বৃদ্ধি করা, এবং কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন ও বহু-অংশীদারের সম্পৃক্ততা প্রসারিত করা। এই নীতিগুলি সম্মিলিত পশ্চিম ও সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে সারিবদ্ধ, যারা প্রাণঘাতী স্বয়ংচালিত অস্ত্রব্যবস্থায় (এলএডব্লিউএস) এআই-এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রধান উদ্বেগ চিন থেকে উদ্ভূত হয়, যেটি ক্রমবর্ধমানভাবে এআই-কে তার সামরিক প্রয়োগগুলিতে সংযুক্ত করেছে। অতএব, আমরা দেখেছি যে প্রতিটি আন্তর্জাতিক এআই প্ল্যাটফর্মে, যেখানে সামরিক ও বেসামরিক ব্যবহারের বিষয়ে কথা হয় — যেমন পলিটিকাল ডিক্ল্যারেশন অন রেসপনসিবল মিলিটারি ইউজ অফ আর্টিফিশিয়াল ইনট্যালিজেন্স অ্যান্ড অটোনমি বা হিরোশিমা এআই প্রসেস — জাপান মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখার উদ্যোগকে সমর্থন করেছে ও নেতৃত্ব দিয়েছে।
উৎসাহজনক লক্ষণ, কিন্তু সামনে এক দীর্ঘ রাস্তা
সামরিক বাহিনীতে এআই অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি একটি স্বাগত উদ্যোগ। এটি দেখায় যে জাপান ধীরে ধীরে ইয়োশিদা মতবাদ থেকে উদ্ভূত তার অতীত দ্বিধা ত্যাগ করছে, এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের "প্রোঅ্যাকটিভ প্যাসিফিজম"-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক, জাপানে প্রতিরক্ষা এআই-এর সাফল্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভর করে: এটি 'স্পিন অন' পদ্ধতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে পারে কি না, অর্থাৎ, নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে সামরিক বাহিনী কত দ্রুত বেসামরিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে, এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র সামরিক প্রয়োগে এআই-এর নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা বিবেচনার মধ্যে দিয়ে কতটা মসৃণভাবে এগিয়ে যেতে পারে। বর্তমান গতির দিকে তাকালে এটি একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ শিল্প-দৈত্যরা এখনও এআই-এর সামরিক ব্যবহারের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে দ্বিধা করে। তা সত্ত্বেও, মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে তার প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার জন্য জাপানের ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে যতটা অগ্রগতি হচ্ছে তা উৎসাহজনক।
অভিষেক শর্মা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Abhishek Sharma is a Research Assistant with ORF’s Strategic Studies Programme. His research focuses on the Indo-Pacific regional security and geopolitical developments with a special ...
Read More +