-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ট্রাম্পের সঙ্গে ইশিবার প্রথম সাক্ষাৎ মার্কিন-জাপান জোটকে আরও শক্তিশালী করেছে, এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংগ্রামের সময় গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উৎসাহ নিশ্চিত করেছে।
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা তাঁর তিন দিনের মার্কিন সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ওয়াশিংটনে এটি ছিল তাঁর প্রথম সফর এবং কোনও বিদেশি নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। এই সাক্ষাৎটি ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার মধ্যে তাদের জোটকে শক্তিশালী করার জন্য ওয়াশিংটন ও টোকিও উভয়ের দায়বদ্ধতার উপর জোর দেয়।
ধারাবাহিক জাপানি সরকারগুলি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাদের নেতার সাক্ষাতের সময়টিকে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অগ্রাধিকারে জাপানের গুরুত্বের বিষয়ে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সূচক হিসাবে বিবেচনা করেছে। তবে, এই সাক্ষাৎ ইশিবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, শুধু কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং নিজের রাজনৈতিক জয় অর্জনের জন্যও, যা এই মুহূর্তে তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে, ২০২৪ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর, ইশিবার সংখ্যালঘু সরকার একটি অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে ইশিবার সাক্ষাতের লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাজনৈতিক জয় নিশ্চিত করা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সামলানোর ক্ষেত্রে তাঁর ক্ষমতা জাপানে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত ছিল, এবং মিডিয়া অনুমান করেছিল যে অপ্রত্যাশিত কাজ করার জন্য বিশিষ্ট মার্কিন নেতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাঁকে লড়াই করতে হবে। সমালোচকেরা তাঁকে সামাজিকভাবে বেমানান ও ঔজ্জ্বল্যহীন হিসাবে চিত্রিত করে সতর্ক করেছিলেন যে, ট্রাম্প আলোচনায় তাঁর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন।
সমালোচকেরা তাঁকে সামাজিকভাবে বেমানান ও ঔজ্জ্বল্যহীন হিসাবে চিত্রিত করে সতর্ক করেছিলেন যে, ট্রাম্প আলোচনায় তাঁর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন।
যেহেতু উভয় নেতার নিজ নিজ প্রশাসন শুরু হওয়ার পর এটিই প্রথম বৈঠক ছিল, তাই আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক অবস্থা, মূল উচ্চ বিন্দু ও অভিন্নতার ক্ষেত্রগুলি স্পর্শ করা হয়েছিল। দুই নেতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মার্কিন-জাপান নিরাপত্তা জোটকে একটি ভিত্তিগত অংশীদারি হিসাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন, আর জাপান তার প্রতিরক্ষা অবস্থানকে মৌলিকভাবে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে। তাঁরা সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে জাপান-মার্কিন নিরাপত্তা চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫-এর প্রযোজ্যতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন, এবং ওকিনাওয়া একত্রীকরণ পরিকল্পনা, হেনোকোতে ফুটেনমা প্রতিস্থাপন সুবিধাকেন্দ্র নির্মাণ, এবং মেরিন কোর এয়ার স্টেশন (এমসিএএস) ফুটেনমা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করেছেন। উভয় নেতা পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের একতরফা পদক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এবং তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইশিবার কূটনৈতিক জয়ের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে হোয়াইট হাউস জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ককে সমর্থন অব্যাহত রাখবে, যা ট্রাম্প জমানার থেকে সম্ভাব্য ধাক্কা সম্পর্কে টোকিওর উদ্বেগ কমিয়েছে।
উভয় নেতা পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের একতরফা কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।
আলোচনার একটি কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাপানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা স্পষ্টভাবে উড়িয়ে না দিলেও এই সমস্যাটি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সমাধানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের উপর জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে টানা পাঁচ বছর ধরে জাপানের যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে আবার ভারসাম্য স্থাপনের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য জাপানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, জাপানি গাড়ি নির্মাতারা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে, অন্যদিকে টোকিও মার্কিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিও সম্প্রসারণ করবে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জ্বালানি-পন্থী অ্যাজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেমনটি তিনি তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে "ড্রিল, বেবি, ড্রিল" নীতি হিসাবে ঘোষণা করেছেন। আলাস্কার তেল ও গ্যাসের সঙ্গে যুক্ত একটি যৌথ উদ্যোগের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছে।
দুই নেতা নিপ্পন স্টিলের বিতর্কিত ইস্যুতেও অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেতে সক্ষম হন, যেখানে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন যে কোম্পানিটি পেনসিলভানিয়া-ভিত্তিক ইউএস স্টিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারিত্ব অর্জন না করেই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তার কারণে নিপ্পন স্টিলের ইউএস স্টিল অধিগ্রহণের প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পরে এই চুক্তিটি করা হয়েছে। অধিকন্তু, আর্থিক স্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈদেশিক মুদ্রার বিষয়গুলি দুই দেশের নিজ নিজ অর্থমন্ত্রীদের দেখতে দিতে সম্মত হন। এই পদ্ধতির লক্ষ্য হল একদিকে বাজারের অস্থিতিশীলতা রোধ করা এবং অন্যদিকে সমন্বিত আর্থিক নীতির গুরুত্বের পারস্পরিক স্বীকৃতি ও বোঝাপড়া প্রতিফলিত করা।
জোটটি একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) রক্ষা এবং বিদ্যমান নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও প্রতিযোগিতামূলক আঞ্চলিক স্বার্থের কারণে তাদের এই নীতিগুলি প্রয়োগ করার ক্ষমতা মাঝে মাঝে ব্যাহত হয়।
দুই দেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক হিসাবে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি সোনালী সামুরাই হেলমেট উপহার দেন, যা ‘চিরন্তন হেলমেট’ নামে পরিচিত। এই হেলমেটটি মার্কিন-জাপান সম্পর্কের স্থায়ী বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক। জাপানে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি উত্তেজনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা নিশ্চিত করে; অন্যদিকে জাপানের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা ব্যয় আঞ্চলিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সিওলের সঙ্গে ওয়াশিংটন-টোকিও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা প্রায়শই অনিশ্চিত উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় যৌথ নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করে। জোটটি একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) রক্ষা এবং বিদ্যমান নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও প্রতিযোগিতামূলক আঞ্চলিক স্বার্থের কারণে তাদের এই নীতিগুলি প্রয়োগ করার ক্ষমতা মাঝে মাঝে ব্যাহত হয়। পরিশেষে, যদিও ইন্দো-প্যাসিফিক স্থিতিশীলতার জন্য মার্কিন-জাপান অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ, এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নির্ভর করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা, জাপানের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা অবস্থান, এবং অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জগুলি একসঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতার উপর।
ইশিবা এই বৈঠক থেকে কূটনৈতিকভাবে জয়লাভ করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, যিনি তাঁর জটিল ও দীর্ঘ সংসদীয় বক্তৃতার জন্য পরিচিত, যা প্রায়শই বিরোধীদের বিভ্রান্ত করে এবং শ্রোতাদের ক্লান্ত করে তোলে। কিন্তু তাঁর মার্কিন সফরের আগে, ইশিবার উপদেষ্টারা তাঁকে সরাসরি ও সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এই বিবেচিত পদ্ধতি তাঁকে অপ্রয়োজনীয় বিরোধ এড়িয়ে মার্কিন-জাপান জোটের প্রাধান্য রক্ষা করার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী ইশিবার মধ্যে প্রথম বৈঠক মার্কিন-জাপান সম্পর্কের জন্য একটি গঠনমূলক সুর তৈরি করেছে, এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
প্রত্নশ্রী বসু কলকাতার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম এবং সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসির অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...
Read More +