-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
পশ্চিমী শক্তিগুলি ইউক্রেনীয় সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকাকালীন ২০২৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনশীল সময়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
ইউক্রেন সঙ্কট এবং ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের সমতুল্য ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে ইরানের মতো বিবাদের বিষয়গুলি, যা কয়েক মাস আগেই অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে ছিল, সেগুলি গুরুত্ব হারিয়েছে। এই সময়ে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়া ও ইরান বিদ্যমান পরিস্থিতিকে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির কাজে ব্যবহার করেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে নতুন সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান আমদানি করতে চলেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলি তেহরান দ্বারা তার পুরনো বিমানবাহিনীর জন্য এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কারণ আশ্চর্যজনক ভাবে ইরানের বিমানবাহিনী এখনও ১৯৭৯ সালের বিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের এফ-১৪ এবং এফ-৫-এর মতো মার্কিন বিমান-সহ ১৯৯০-এর প্রথম দিকে প্রাপ্ত সোভিয়েত নির্মিত মিগ-২৯-এর উপরে নির্ভরশীল। ইরান কয়েক দশক যাবৎ কঠোর নিষেধাজ্ঞার অধীনে থেকেছে, যা অন্য দেশের কাছ থেকে তার অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষমতাকে ব্যাপক ভাবে খর্ব করেছে। তবু ইরানের জন্য আশার আলো দেখিয়েছে দেশটির শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলি, বিশেষত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, যা যৎসামান্য বাহ্যিক সাহায্য সত্ত্বেও ইরানের পুরনো সামরিক পরিকাঠামোকে সচল ও কার্যকর রেখেছে।
ইরান কয়েক দশক যাবৎ কঠোর নিষেধাজ্ঞার অধীনে থেকেছে, যা অন্য দেশের কাছ থেকে তার অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষমতাকে ব্যাপক ভাবে খর্ব করেছে।
বলা যেতেই পারে, এ প্রচেষ্টার সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফলটি হল ইরানের দেশীয় ড্রোন কর্মসূচি। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য তেহরান দ্বারা মস্কোকে প্রদত্ত ইরানে নির্মিত শহিদ-১৩৬ ড্রোনগুলি ইরান-রাশিয়া বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে এমন এক সময়ে, যখন ক্রেমলিন যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সামরিক জয় লাভে সফল হচ্ছিল না এবং অন্য দিকে তুর্কিয়ের মতো অন্যান্য দেশ কিয়েভকে বিশ্বব্যাপী সফল হওয়া বায়রাক্তর টিবি-২ ড্রোন জোগান দিচ্ছিল। ইরান সরকার যুদ্ধে কোনও পক্ষ অবলম্বন না করার কথা বললেও, যা হয়তো বা কৌশলগত ভাবে সত্যি, বাস্তব সাক্ষ্যপ্রমাণ অন্য দিকে ইঙ্গিত করে।
এসইউ-৩৫ তেহরানের পুরনো অস্ত্রাগারকে উল্লেখযোগ্য রকম শক্তিশালী করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে এই বিমানগুলি অঞ্চলটিতে এক অস্থিতিশীলতা এবং ক্রমশ পরিবর্তনশীল স্বার্থের আখ্যানকেই তুলে ধরে। প্রাথমিক ভাবে এগুলি মিশরের জন্য বানানো হলেও এসইউ-৩৫গুলিকে বর্তমানে ইরান দ্বারা রাশিয়াকে নিরবচ্ছিন্ন ড্রোন সরবরাহের বিনিময় মূল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে (ড্রোন সংক্রান্ত মস্কো-তেহরান সহযোগিতার সম্পর্ক ইউক্রেন যুদ্ধের বহু আগে থেকেই বিদ্যমান)। মিশরের দৃষ্টিকোণ থেকে এসইউ-৩৫গুলি দেশটির রুশ মিগ-২৯ বিশিষ্ট বিমানবাহিনীতে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন ছিল। দেশটি উভয় ধরনের বিমান আমদানিতে বাধ্য হয় যখন অংশত তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাসের দরুন ওয়াশিংটন কায়রোকে এফ-১৫ বিক্রি করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে (এটি এমন এক দাবি যা ১৯৭০-এর দশক থেকে চলে আসছে)। কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘ সময় নেওয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে তার অংশীদার দেশগুলিকে মস্কো অথবা বেজিং-এর স্বার্থের সঙ্গে সমন্বিত হতে বাধ্য করেছে এবং সেই কারণে সমালোচনার মুখেও পড়েছে।
ইরানের প্রথম সারির যুদ্ধবিমানবাহিনীর আংশিক আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া) ইরান পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) ভেঙে যাওয়া এবং সেটির পুনর্বহালের চেষ্টার সাক্ষী থাকছে। পশ্চিমী শক্তি দ্বারা ইরানকে সাহায্য করার বিষয়টি তলানিতে ঠেকেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা সর্বতোভাবে ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনে বাধা দেবে , আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোরকে (আইআরজিসি) একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। যখন ইউরোপে যুদ্ধের প্রত্যাবর্তনের বাস্তবতায় ইউরোপীয় দেশগুলি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্তম্ভিত, তখন মধ্যপ্রাচ্য ২০২৩ সালে সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্থনের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যার মধ্যে এই অঞ্চলটির পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং এমনটা শুধুমাত্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রেই নয়, বরং অঞ্চলস্থিত পারমাণবিক শক্তিপ্রত্যাশী অন্য দেশগুলির ক্ষেত্রেও সত্যি।
সৌদি আরব – যে দেশের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের এখনও একটি ভঙ্গুর সম্পর্ক রয়েছে – সেই দেশই বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারকারী ওপিইসি+ গঠনের অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হলেও চিন এবং রাশিয়ার মতো অন্য শক্তিও নিজেদের পথ তৈরি করে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠতম মিত্রদের অন্যতম হলেও প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জে মস্কোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সময় তারা পিছপা হয়েছিল। এর নেপথ্যে ছিল যুদ্ধের হাত থেকে নিস্তার পেতে চাওয়া ব্যাপক পরিমাণ রুশ অর্থ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লড়াই, যা শেষ পর্যন্ত দুবাইয়ের মতো জায়গায় পৌঁছে আমিরশাহির অর্থনীতিকেই সশক্ত করে তোলে। অন্য দিকে সৌদি আরব – যে দেশের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের এখনও একটি ভঙ্গুর সম্পর্ক রয়েছে – সেই দেশই বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারকারী ওপিইসি+ গঠনের অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। এর পাশাপাশি, এই অঞ্চলস্থিত বেশিরভাগ দেশই বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মতো ভবিষ্যতের বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝখানে জড়িয়ে পড়তে চাইছে না।
এই দেশগুলির মধ্যে ইজরায়েলও অন্তর্ভুক্ত, যা অঞ্চলটিতে আমেরিকার ‘সব সময়ের সাথী’। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির একটি জোটের নেতৃত্বে ইজরায়েল আগামী বছর ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান কঠোর করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানের এসইউ-৩৫ কেনার খবর পেয়ে ইজরায়েল ইতিমধ্যেই ২৫টি এফ-১৫ইএক্স বিমান কেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গিয়েছে, যা বর্তমানে ইজরায়েলি বিমানবাহিনী (আইএএফ) দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত বিমানের অত্যাধুনিক সংস্করণ। এই ক্রয়ের প্রধান কারণ হল ইরানের ব্যাপকভাবে সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আঘাত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ইজরায়েল ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে এফ৩৫ লাইটনিং টু-এর মতো সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান পরিচালনা করছে এবং নেতৃত্বের ভূমিকায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের পাশাপাশি তার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার নিরিখে উভয় দেশ দ্বারাই ২০২০ সালে ঐতিহাসিক আব্রাহাম অ্যাকর্ডে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে সমান শক্তি অর্জনে বাধা প্রদান করেছে। এটি দর্শায় যে, ইজরায়েল ও আরবের মধ্যকার বাহ্যিক সম্প্রীতির আড়ালেও দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে ইজরায়েলের রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার মতপার্থক্য লক্ষ করা গিয়েছে, তবু উভয় দেশই সর্ববৃহৎ দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের আঞ্চলিক নিরাপত্তা স্বার্থকে সম্পূর্ণ সমর্থন জুগিয়েছে। মহড়ার সময় একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন প্রতিরক্ষা আধিকারিক এ কথাও বলেছেন যে, ‘ইরানকে কোনও মতেই পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে দেওয়া হবে না।’
যদিও সাম্প্রতিক অতীতে ইজরায়েলের রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার মতপার্থক্য লক্ষ করা গিয়েছে, তবু উভয় দেশই সর্ববৃহৎ দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের আঞ্চলিক নিরাপত্তা স্বার্থকে সম্পূর্ণ সমর্থন জুগিয়েছে।
এ কথা বলাই যায়, ইরানের সঙ্গে জড়িত থাকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বেশ কিছু সময় যাবৎ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং ইউক্রেনে সংঘাত রাশিয়া-ইরান সহযোগিতার পরিসরে এক নতুন উদ্যমের সঞ্চার করেছে। মস্কো এবং তেহরানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও চিন আপাতত এক নীরব বহিরাগত দেশ হয়েই রয়ে গিয়েছে, একটি জটিল কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতা ভবিষ্যতে উভয় পক্ষকেই সুবিধা প্রদান করতে পারে, যার মধ্যে সিরিয়ায় রুশ উপস্থিতিও একটি বিবেচ্য বিষয়। আপাতত ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বাইরে বেরিয়ে বাইডেনের কাছে এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী অংশীদারদের মধ্যে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ রয়েছে। এবং এর পাশাপাশি ওবামা-যুগের স্বার্থসিদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে কাজ করানোর বদলে ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প জমানার একরোখা নীতি বহাল রাখার মাধ্যমে বাইডেন এই অঞ্চলের দেশগুলির পক্ষে গ্রহণযোগ্য কঠোর পন্থাই নিতে পারেন।
যাই হোক, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এ বছরটি কেমন হবে, এ বিষয়ে একাধিক মত রয়েছে। ইরান ধারাবাহিক ভাবে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেওয়ার পাশাপাশি তার কৌশলগত এবং ধারণাগত নীতিগুলি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া ও দেশটির স্বার্থের পরিসরগুলিকে খর্ব না হতে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে বিদ্যমান স্থিতাবস্থা থেকে দূরে সরে গিয়ে ২০২৩ সালটি এই অঞ্চলে এক পরিবর্তন-বিন্দু হতে পারে। ইজরায়েল এর আগে তার নিজস্ব ইচ্ছা এবং গতিতে ইরানের অভ্যন্তরে গোপনে পরমাণু কর্মসূচির উপরে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করলেও এ হেন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একটি স্থবিরতা দেখা গিয়েছে, যা তেহরানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বর্তমান অবস্থা এবং দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয়ের দেশেরই কৌশলগত ভুল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +