-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ইজরায়েলের উপর ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আগামী দিনে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার নিরিখে একটি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরে।
সম্প্রতি সিরিয়ার দামাস্কাসে নিজেদের দূতাবাসের উপর ইজরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইজরায়েলের উপর শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তেহরান রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের ৫১তম অনুচ্ছেদ দর্শিয়ে তার সামরিক পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে, যে অনুচ্ছেদে ‘ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত আত্মরক্ষা’র অধিকারের উপর জোর দেওয়া হয়।
সম্ভাব্য অন্যান্য শক্তির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সহায়তায় ইজরায়েল তার ভূখণ্ডের দিকে নিক্ষেপ করা সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৭ শতাংশই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০২২ সালে হামাস কর্তৃক গাজা থেকে নিক্ষেপ করা বেশ কয়েকটি রকেট প্রতিহত করার ক্ষেত্রেও ইজরায়েল এর আগে একই রকমের নিপুণতা দর্শিয়েছিল, যা এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও সফল বিমান প্রতিরক্ষা সাধনীর অধিকারকেই দর্শায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন – যিনি এক অত্যন্ত কঠিন নির্বাচনী প্রচারাভিযানের দিকে এগিয়ে চলেছেন – তিনিও এমন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম এশিয়া (মধ্যপ্রাচ্য) চান না, যা ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ ভাবে টানাপড়েনময় পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।’
ইজরায়েলি যুদ্ধ মন্ত্রক বলেছে যে, হামলার ঘটনা এখনও শেষ না হলেও তারা এই মুহূর্তে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয়ের বার্তা প্রবল ভাবে ডি-এস্কেলেশন বা যুদ্ধবিরতির কথা বলছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ইরানের স্থায়ী মিশন বলেছে, ‘বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন – যিনি এক অত্যন্ত কঠিন নির্বাচনী প্রচারাভিযানের দিকে এগিয়ে চলেছেন – তিনিও এমন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম এশিয়া (মধ্যপ্রাচ্য) চান না, যা ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ ভাবে টানাপড়েনময় পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বাইডেন ইজরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে অংশ নেবে না। জানা গিয়েছে, বাইডেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘আপনি একটি যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। সেটিই উপভোগ করুন।’ ইরানিরাও নিজের স্বভাবোচিত আগ্রাসী সুরে কার্যকর ভাবে এই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করেছে যে, এই যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও উদ্দেশ্য তাদের নেই।
ইজরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি
এই অঞ্চলের পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল হয়েছে বলে মনে করা হলেও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সম্ভাবনা আগের চেয়ে আরও বেশি স্পষ্ট। মার্কিন চাপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কারণে ইজরায়েল আপাতত প্রতিশোধ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও একেবারেই যে করবে না, এমনটা নয়। ইজরায়েল ইতিমধ্যেই ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে তার অপ্রতিরোধ্য নিরাপত্তাকরণের ধারণায় একটি ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। তেহরানের সঙ্গে এই বিনিময়ে একটি কৌশলগত এবং বিচক্ষণ সুবিধা অর্জন না করা এবং অন্য দিকে এই বিরোধে ইরানিদের হাতে এক ধরনের সমতা হস্তান্তর করার বিষয়টিকে ইজরায়েলিরা গ্রহণযোগ্য ফলাফল বলে মনে করেন না। এবং বর্তমানে পরিস্থিতি ঠিক এখানেই আটকে রয়েছে।
ইজরায়েলের অস্তিত্ব তার ভৌগোলিক অঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য এবং ইহুদি জনগণের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার বাধ্যতামূলক ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। যদিও ইজরায়েল বলেছে যে, সে তার নিজস্ব সময় ও পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবে। তবে এ কথাও জোর দিয়ে বলা যেতে পারে যে, ইজরায়েলের কাছে ইরানের অভ্যন্তরে ইরানি স্বার্থের উপর হামলা চালানোর বিকল্প তার কাছে রয়েছে, যেমনটা ইজরায়েল আগেও করেছে। অবশ্য ইজরায়েল ৭ অক্টোবরের আগে আপাতদৃষ্টিতে এই ধরনের হামলা শুরু করা থেকে সম্ভবত বিরত থেকেছে।
ইজরায়েল ইতিমধ্যেই ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে তার অপ্রতিরোধ্য নিরাপত্তাকরণের ধারণায় একটি ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে।
নেতানিয়াহুর জন্য সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাঁর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জকারী অভ্যন্তরীণ চাপ ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি গত ছ’মাসের বেশির ভাগ সময় ধরে চেষ্টা করেছেন, যেন তিনি একজন দুর্বল রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রতিভাত না হন। বর্তমানে তিনি তাঁর নিজস্ব জোটের তরফ থেকেই যথেষ্ট বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারেন, যে জোটের এক উল্লেখযোগ্য অংশ শক্তিশালী দক্ষিণপন্থী সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন গভির ইরানের বিরুদ্ধে ‘তার শিরদাঁড়া গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো আক্রমণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অন্যরা এ হেন পদক্ষেপের বিরোধিতা করে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। ইরানের পাশাপাশি নেতানিয়াহুর কাছেও তাঁর নিজের সরকারের তরফে অভ্যন্তরীণ বিবাদ সামলানোর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর পাশাপাশি হামাসের হাতে ইজরায়েলিদের বন্দি হওয়ার সঙ্কটটিও অব্যাহত। এই আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের ফলে হামাস কাতার, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা একটি চুক্তির সর্বশেষ পুনরাবৃত্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, যে চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে ইজরায়েলি কারাগারে আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হল এই যে, ইজরায়েলি বন্দিরা আরও বেশ কিছু দিন হামাসের বন্দিদশাতেই থাকবেন। ইজরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব গাজা সমস্যা পিছনের সারিতে ঠেলে দিয়েছে বলে অনেকে মনে করলেও নেতানিয়াহুর জন্য বন্দি-সহ এই সঙ্কট তাঁর আগামিদিনের সিদ্ধান্তের নিরিখে এক চালিকাশক্তি হয়ে থাকবে।
ইরানের অবস্থান
দামাস্কাসে ইরানি দূতাবাসে হামলা এবং দেশটির সর্বশক্তিমান ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পোরালস-এর (আইআরজিসি) এক বর্ষীয়ান কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদির হত্যার পর তেহরানের জন্য বিকল্পগুলি দ্ব্যর্থহীন হয়ে ওঠে। প্রথমটি ছিল ইজরায়েলকে হুমকি দেওয়া, কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি না করা। কিন্তু আইআরজিসি-কে এ বিষয়ে সম্মত করা প্রায় অসম্ভব ছিল, এমনকি আয়াতুল্লা খামেইনির জন্যও, যাঁর কাছে বাহিনী সরাসরি দায়বদ্ধ। ২০২০ সালেও একই রকম পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদে বিখ্যাত আইআরজিসি সামরিক নেতা জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করেছিল। তার পরে ইরানিরা ক্ষেপণাস্ত্র-চালিত প্রতিশোধের সূচনা করে, তবে সেটি ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
তেহরান দৃঢ় ভাবে হামাসকে সমর্থন জানিয়েছে এবং লেবাননের হিজবুল্লা ও ইয়েমেনের হুতিদের মতো অঞ্চলব্যাপী তার প্রক্সি-বিন্যাসকে সাহস জুগিয়ে এসেছে। তারা আইআরজিসির অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান হিসাবে সোলেমানির মেয়াদের একটি প্রসারিত উত্তরাধিকারীও।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানিরা বরাবরই একটি সাহসী অবস্থান বজায় রেখেছে। তেহরান দৃঢ় ভাবে হামাসকে সমর্থন জানিয়েছে এবং লেবাননের হিজবুল্লা ও ইয়েমেনের হুতিদের মতো অঞ্চলব্যাপী তার প্রক্সি-বিন্যাসকে সাহস জুগিয়ে এসেছে। তারা আইআরজিসির অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান হিসাবে সোলেমানির মেয়াদের একটি প্রসারিত উত্তরাধিকারীও। যাই হোক, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা এবং প্রতিরোধ’কে পুনরুদ্ধারের জন্য এই প্রচলিত দ্বন্দ্বকে শুধুমাত্র আংশিক ভাবে অর্থবহ বলে মনে হয়। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করার সময় দেশীয় ভাবে ইরানি প্রশাসনকে শক্তিশালী করলেও তা গাজা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একমাত্র রাষ্ট্র হিসাবে আঞ্চলিক ভাবে তার আখ্যানকে খানিকটা জনপ্রিয় করে তোলে। এটি এই অঞ্চলের অন্যান্য আরব সরকার এবং তাদের কৌশলগত অবস্থানকে প্রভাবিত করতে না পারলেও আরব জনসাধারণের মানসিকতাকে প্রভাবিত করতে যথেষ্ট সক্ষম।
যত দূর প্রতিরোধের কথা বলা যায়, এই পরিকল্পিত হামলাগুলি বিভ্রান্তিকর। ইরানের প্রতিরোধের প্রধান পন্থা ছিল প্রক্সি গোষ্ঠী এবং সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরাক-সহ অঞ্চলব্যাপী তাদের চালানো যুদ্ধগুলি। ইরানি প্রশাসনের সঙ্গে সংযুক্ত বলে পরিচিত দলগুলি প্রায়শই তাদের মতাদর্শগত বিভাজন নির্বিশেষে - উদাহরণস্বরূপ, হামাস হল সুন্নি - প্রথাগত সামরিক কৌশলের চেয়ে বেশি কার্যকর বিঘ্ন প্রদানকারী শক্তি। এই ধরনের বিঘ্ন ঘটানোর একটি ফলাফল ছিল সৌদি-ইরান বৈরিতার অবসান। এগুলি ইরানকে উল্লেখযোগ্য রকমের অস্বীকার করা এক সুযোগ প্রদান করে, যেমনটা সম্প্রতি লোহিত সাগরে হুতিদের আক্রমণের ঘটনায় দেখা গিয়েছে। সেখানে ইরানকে হুতিদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করা হলেও তেহরান তা স্পষ্টতই অস্বীকার করে। ইজরায়েলের সঙ্গে একটি প্রচলিত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে এই নীলনকশার অনেকটাই ঘেঁটে যাবে।
উপসংহার
ইরান বলেছে যে, তারা হামলা শুরু করার ৭২ ঘণ্টা আগে এই অঞ্চলে তার ‘বন্ধু ও প্রতিবেশী’দের সতর্ক করেছিল। এর অর্থ সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল এবং অন্যদেরও কাছে কখন এবং কী ঘটতে চলেছে, তা সম্পর্কে পূর্বাভাস ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা প্রসঙ্গে ইজরায়েলের প্রতি অটুট সমর্থন দর্শিয়েছে, যার জন্য এই বছরের শেষের দিকে বাইডেনকে এক বড় রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হতে পারে। এবং এই মুহূর্তে কোনও পূর্ণ মাত্রার সংঘাতে ইজরায়েলের জড়িয়ে না পড়া সম্ভবত ওয়াশিংটনের অনুরোধ নয়, দাবিরও ফলাফল। ২০২৪ সালের বাকি মাসগুলিতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। যদিও অনেকে উল্লেখ করেছেন যে, ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের সমাধান সবসময়ই আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি প্রধান দাবি হতে চলেছে। ইজরায়েল-ইরানের বৈরিতার সদা ঘনিয়ে আসা কালো ছায়ার সমাধান করা সমান গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ।
কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +