-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের ২০২৫ সালের বাজেট কার্যকরভাবে দেশীয় অগ্রাধিকার ও বিশ্বব্যাপী অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয়, কারণ এর লক্ষ্য ম্যানুফ্যাকচারিংকে শক্তিশালী করা এবং বাণিজ্য আলোচনায় নিজের অবস্থান উন্নত করা।
২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট সরকারের সরবরাহ শৃঙ্খল কৌশলের উপর বৃহত্তর আস্থা এবং উৎপাদনশীলতা ও বৃদ্ধির প্রতি অঙ্গীকারের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। অর্থ বিলটি শুল্ক যুক্তিযুক্তকরণ, এবং ভারত যেসব ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে সেই সব ক্ষেত্রে ইনভার্টেড ডিউটি স্ট্রাকচার (যেখানে উপাদানগুলির উপর করহার উৎপাদিত পণ্যের উপর করহারের থেকে বেশি) মোকাবিলার একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুশীলন।
এই বছরের বাজেটের দুটি স্পষ্ট লক্ষ্য রয়েছে বলে মনে হচ্ছে: উপভোগ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন সহজীকরণ। প্রথম অংশটি আয়কর ধাপগুলিতে করা সংশোধনগুলিতে প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। দ্বিতীয়টি করা হয়েছে উৎপাদনকে শক্তিশালী করার জন্য তিনটি প্রধান নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে।
প্রথমটি হল বহিঃশুল্ক যুক্তিযুক্তকরণ। কার্যকর শুল্ক বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্যবিধান করেও বহিঃশুল্ক আটটি হারে নামিয়ে আনা ভারতীয় শুল্ক কাঠামোর অনেক গোলমালের অবসান ঘটায়। ১৫০, ১৩৫ ও ১০০ শতাংশ শুল্ক স্তরকে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা একটি বড় পদক্ষেপ। কিন্তু ল্যাবরেটরি কেমিক্যালস-এর মতো ক্ষেত্রে ৭.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে কার্যকর শুল্ক , এবং কৃষির জন্য ৭০ শতাংশ , এগুলো এখনও বেশি। তা ছাড়া কিছু পণ্যের উপর পরিকাঠামো ও উন্নয়ন সেস (এআইডিসি) রয়েছে। সব মিলিয়ে সব পণ্যের উপর করহার কমানো হয়নি।
অটোমোবাইল ক্ষেত্রে শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যেমন বিলাসবহুল গাড়ির উপর এখন পূর্বের ১২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই হার হ্রাসের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল কিছু পণ্যের উপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। অটোমোবাইল ক্ষেত্রে শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যেমন বিলাসবহুল গাড়ির উপর এখন পূর্বের ১২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের উপর ৫০ শতাংশ থেকে হার ১০ শতাংশ কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে, আর সম্পূর্ণ নকড ডাউন (সিকেডি) বাইকের উপর ১০ শতাংশ এবং সেমি-নকড ডাউন (এসকেডি) বাইকের উপর ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ধার্য হয়েছে। এগুলি শুধু ভারতের উৎপাদন কৌশলের জন্য —যেখানে এসকেডি ও সিকেডি বাইকগুলি ভারতেই সংযুক্ত করা হবে — অপরিহার্য নয়; ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সময় এটি আন্তর্জাতিক সংকেতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও বটে। যারা ভারতের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য কথনের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে সেই টেসলা ও হার্লে ডেভিডসন উভয়েরই এই শুল্ক হ্রাস থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে, লিথিয়াম-আয়ন ও ব্যাটারি উৎপাদনে ব্যবহৃত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও উপাদানের উপর হার আরও কমানোর ফলে অ্যাপলের মতো টেক-জায়ান্টদের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, এবং এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী ও নির্মাতাদের আকর্ষণ করার জন্য ভারতের নিজস্ব লক্ষ্যও পূরিত হবে। অবশ্যই, ভারতে উৎপাদন ইউনিট তৈরির পথ সুগম করার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামোগত বিনিয়োগ করতে হবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও উপাদানের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার ইঙ্গিতও দেয়।
যারা ক্ষমাহীনভাবে শুল্ক প্রয়োগ করে সেই মার্কিন প্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে এটি এই মর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পাঠিয়েছিল যে, ভারত পারস্পরিকভাবে লাভজনক বাণিজ্য আলোচনার জন্য প্রস্তুত। রাসায়নিক ও ওষুধ ক্ষেত্রে হার হ্রাসও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠায়।
ভারতের জন্য রপ্তানি বাজার হিসাবে তাদের গুরুত্বের কারণে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই আলোচনাগুলি সম্পন্ন করা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহের জায়গা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্বচ্ছন্দ করার পাশাপাশি এই পদক্ষেপ অটোমোবাইল এবং খাদ্য ও পানীয় ক্ষেত্রে (অধ্যায় ৩৩) ইইউ-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং যুক্তরাজ্য-ভারত এফটিএ আলোচনার ফ্রন্টেও কাজ করা সহজ করবে। ভারতের জন্য রপ্তানি বাজার হিসাবে তাদের গুরুত্বের কারণে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই আলোচনাগুলি সম্পন্ন করা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহের জায়গা। ইইউ-এর কথা বলতে গেলে, ২০২৬ সালে কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে দ্রুত এগনোর প্রয়োজনও রয়েছে। যদিও এফটিএ সরাসরি সিবিএএম নিয়ে ভারতের কাজকর্মের উপর প্রভাব ফেলবে না, এফটিএ-তে নির্ধারিত গ্যারান্টিগুলি ব্যবসায়িক পরিবেশকে স্পষ্ট করবে, বিশেষ করে অনিশ্চিত মার্কিন বাণিজ্য নীতির মুখে।
বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের জন্য দ্বিতীয় যুগান্তকারী ঘোষণা ছিল ভারত ট্রেড নেট (বিটিএন), যা ইন্ডিয়া স্ট্যাক পরিবারের সর্বশেষ উদ্ভাবন। দেশ যখন লাল ফাঁসের বাধা কমাতে কাজ করছে, সেই সময় একক জানালা বিনিয়োগ প্রকল্পের মতোই ডকুমেন্টেশনের জন্য একটি 'একক জানালা' তৈরির এন্ড-টু-এন্ড সমাধানটি দেশটি বিদ্যমান লাল ফাঁসের মধ্যে দিয়ে এগনো সহজতর করবে। এই ধরনের উদ্ভাবন দেশে ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দও বৃদ্ধি করবে। জটিলতার দিকটি হল কাস্টমস কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) পর্যন্ত কর্মীদের একটি বিশাল বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাদের বিটিএন ব্যবহার ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ভারতে বিনিয়োগকৃত প্রিমিয়াম-সহ উচ্চমানের বিমা পণ্যের প্রাপ্যতা অবশ্যই পরীক্ষামূলক প্রযুক্তির উদীয়মান উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে বৃহত্তর ব্যবসায়িক আগ্রহের সুযোগও করে দেবে
পরিষেবা ক্ষেত্রে তৃতীয় প্রধান সংস্কার হল বিমা ক্ষেত্রে পূর্বের ৭৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ এফডিআই অনুমোদন করা। এটি ভারতে ব্যবসার প্রবেশকে সহজতর করবে,কারণ বাকি ২৬ শতাংশ পরিষেবা প্রদানের জন্য আর দেশীয় অংশীদার খুঁজে বার করতে হবে না। এটি আমাদের দেশীয় বিমা খাতের জন্য উচ্চমানের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে। ভারতে বিনিয়োগকৃত প্রিমিয়াম-সহ উচ্চমানের বিমা পণ্যের প্রাপ্যতা অবশ্যই পরীক্ষামূলক প্রযুক্তির উদীয়মান উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে বৃহত্তর ব্যবসায়িক আগ্রহের সুযোগও করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে, এই বছরের বাজেট অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই সাফল্যের সঙ্গে সংকেত পাঠিয়েছে। এটি ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং বাড়ানোর একটি পথ নির্দেশ করে, এবং অংশীদারদের সঙ্গে দর-কষাকষির জন্য আরও ভাল জায়গা তৈরি করে দেয়। এর অর্থ হল কেন্দ্র ও রাজ্যকে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পুনর্দক্ষতায়ণের জন্য তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কারণ কিছু ঐতিহ্যগতভাবে সুরক্ষিত ক্ষেত্র এখন প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত।
জাহ্নবী ত্রিপাঠী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Jhanvi Tripathi is an Associate Fellow with the Observer Research Foundation’s (ORF) Geoeconomics Programme. She served as the coordinator for the Think20 India secretariat during ...
Read More +