এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এনডিটিভি-তে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী, এস জয়শঙ্কর, লাওসে আসিয়ান বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে এবং জাপানে কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এই বছরের শুরুর দিকে আস্তানায় হওয়া শেষ বৈঠকের পরে লাওসে জয়শঙ্করের সফরটি চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। জয়শঙ্করের সফরের প্রেক্ষাপট প্রধান স্বার্থের বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে চিনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধ দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। তর্কসাপেক্ষ ভাবে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনাকারীদের জন্য চিন প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে রয়েছে। ভারতের সামনে চিনের চ্যালেঞ্জ বহুমুখী। সেখানে এক দিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ রয়েছে এবং অন্য দিকে রয়েছে ভারত মহাসাগরে বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি, বিশেষ করে দক্ষিণ চিন সাগর অঞ্চলে, ভারতের কোয়াড অংশীদার এবং একাধিক অন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশকে বেজিংয়ের মোকাবিলায় পদক্ষেপ সুদৃঢ় করতে বাধ্য করেছে। তাই লাওস ও জাপান উভয় সফরের সময়েই চিনা সমস্যাটিই জয়শঙ্করের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
চিন কোয়াডের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ
কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে গোষ্ঠীটির চার সদস্য দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের যুদ্ধবাজ মনোভাব সম্পর্কে তাদের অভিন্ন সাধারণ উদ্বেগগুলি তুলে ধরা হয়েছে। কোয়াড সদস্যরা দীর্ঘ দিন ধরে বলে এসেছে, গোষ্ঠীটি গঠনের লক্ষ্য বেজিংকে প্রতিহত করা নয়, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ সহযোগিতার উদীয়মান সুযোগগুলিকে কাজে লাগানো। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কোয়াড চতুর্পাক্ষিকে চিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে। কোয়াড দেশগুলি দ্বারা প্রকাশিত সর্বশেষ যৌথ বিবৃতিটিতে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের উত্থান সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি গোষ্ঠীটির চিন্তাভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে। যৌথ বিবৃতিতে পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলপ্রয়োগ ও জবরদস্তির মাধ্যমে চিনের একতরফা পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে নাম প্রকাশ না করেই দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের উপকূলরক্ষী এবং সামুদ্রিক সেনার ব্যবহারকে এই অঞ্চলে ‘বিপজ্জনক কৌশল’ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে।
ভারত-চিন সম্পর্কের অবস্থা সম্পর্কে জয়শঙ্করের ব্যক্তিগত মন্তব্য আরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলেছিলেন যে, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই।’ এই স্বীকারোক্তিটি ২০২০ সাল থেকে সীমান্ত সংঘর্ষ এবং সংঘাতের আলোকে চিনের বিরুদ্ধে ভারতের স্থায়ী প্রতিরোধের ধারাবাহিকতাকেই দর্শায়। যাই হোক, ইন্দো-প্যাসিফিক প্রেক্ষাপটে, চিনের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হচ্ছে। অতীতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। এর পরিবর্তে, কোয়াড সম্মেলনে জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও যৌথ বিবৃতি ইন্দো-প্যাসিফিক প্রেক্ষাপটেও চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভারতের সদিচ্ছাকেই দর্শায়।
দূরবর্তী সমুদ্ররাশির উপর নজর
প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধের কারণ কী? যদিও দক্ষিণ চিন সাগরের ভূগোল ভারতের আগ্রহের প্রাথমিক সামুদ্রিক অঞ্চলের আওতায় পড়ে না, তা সত্ত্বেও এটি ভারতের অগণিত কৌশলগত স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেমন সি লাইনস অব কমিউনিকেশনের (এসএলওসি) সুরক্ষা, জ্বালানি নিরাপত্তা ইত্যাদি। তা ছাড়া, সমুদ্রে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার জন্য ভারতের ধারাবাহিক প্রচার এবং ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশনস অন দ্য ল অব দ্য সি (আনক্লজ) মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়ার বিষয়টি আখেরে অঞ্চলটির স্থিতাবস্থা পরিবর্তনে চিনা প্রয়াসের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়াকে অপরিহার্য করে তোলে।
বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিকের মধ্যে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে প্রবেশ করার জন্য চিনের ক্রমাগত প্রচেষ্টা – অতি সম্প্রতি এই অঞ্চলে সমীক্ষামূলক ও নজরদারি জাহাজ পাঠানোর মাধ্যমে - নয়াদিল্লির জন্য এক স্থায়ী নিরাপত্তা সংশয় সৃষ্টি করেছে এবং এই উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির (পিএলএএন) ক্যারিয়ার টাস্ক ফোর্স টহলদার জাহাজ নামানোর বিষয়টি। তাই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর বিষয়টি সমুদ্র সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে ভারতের মূল স্বার্থগুলি রক্ষায় বেজিংয়ের অগ্রগতিকে প্রতিহত করার নিরিখে ভারতের অবিরাম চেষ্টার এক যৌক্তিক উদাহরণ।
ভারতের বার্তা
উল্লেখযোগ্য ভাবে, চিন যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ উত্থাপন করেছে, তার মোকাবিলা করার জন্য জয়শঙ্কর ভারতের পরিকল্পনায় সূক্ষ্মতা এবং জটিল চিন্তাভাবনা প্রদর্শন করেছেন। ইন্দো-প্যাসিফিক পরিসরে ভারত চিনকে মোকাবিলা করার জন্য ক্ষুদ্রপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সক্রিয় থাকতে চেয়েছে। যখন জয়শঙ্করকে জিজ্ঞেস করা হয়, এলএসি বরাবর ভারত-চিন আঞ্চলিক সীমান্ত সংঘাতের সমাধানের জন্য নয়াদিল্লি কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে রাজি কি না, তখন তিনি স্পষ্ট জানান, শুধুমাত্র ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক সংবেদনশীলতা’র ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে।
ভারতের বার্তাটি অত্যন্ত স্পষ্ট: চিনের ভারত-বিরোধী অবস্থান পুনর্নির্মাণ করার জন্য সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি বেজিংয়ের বিরুদ্ধে তার প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে পিছপা হবে না।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.