-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নয়াদিল্লির জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
আফগানিস্তানে নাটকীয় পটপরিবর্তন অঞ্চলটিতে নতুন ভূ-অর্থনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত সমস্যার সূত্রপাত করেছে। এই ক্রমপরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মধ্য এশিয়া এবং ককেশাস পর্বতমালা সংলগ্ন অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামনে নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, যা ভারতকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটিতে তার অবস্থান পুনরায় খতিয়ে দেখতে বাধ্য করেছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর অক্টোবর মাসের শুরুতে অঞ্চলটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, যা গত চার মাসে এই অঞ্চলে তাঁর তৃতীয় সফর। জয়শংকর তাঁর এই সফরে কিরঘিজস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পের সাহায্যার্থে ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছেন এবং হাই-ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি প্রোজেক্টস (এইচ আই সি ডি পি) সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র বা মউ স্বাক্ষর করেছেন। তাঁর পরবর্তী গন্তব্য ছিল কাজাখস্তানের রাজধানী নুর সুলতান, যেখানে তিনি বিদেশমন্ত্রীদের কনফারেন্স অন ইন্টারঅ্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়া-র (সি আই সি এ) ষষ্ঠ অধিবেশনে যোগদান করেন।
সি আই সি এ-তে জয়শংকর চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বি আর আই-এর উদ্যোগের সমালোচনা করেন। বি আর আই উদ্যোগের প্রচারার্থে চিনের অবলম্বন করা পন্থার নিন্দা করে তিনি বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আরও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও কেবল মাত্র সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির কাজে তা কখনওই ব্যবহার করা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক সীমান্তের অপর দিক থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি পাকিস্তানেরও সমালোচনা করেন। ১৩ অক্টোবর আর্মেনিয়া পৌঁছনোর আগে জয়শংকর আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য রাশিয়া, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে সম্মিলিত হন।
জয়শংকরই প্রথম ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী যিনি আর্মেনিয়া পরিদর্শনে গেলেন। তিনি এবং আর্মেনিয়ার বিদেশমন্ত্রী আরারত মিরজোইয়ান ভারত এবং আর্মেনিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার জন্য বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বৃদ্ধির কথায় সহমত হন। জয়শংকর তাঁর সফরে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ দ্বন্দ্বের অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন-এর (ও এম সি ই) মিনসক গোষ্ঠীর মধ্যস্থতায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টাকেও সমর্থন জানান।
আফগানিস্তানের মাটিতে তালিবানদের কর্তৃত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘটনা সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন-এর (এস সি ও) মতো জোটগুলির অক্ষমতার ছবি তুলে ধরেছে, যা আফগানিস্তানের মাটি থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রোখার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল। যদিও এই এস সি ও-টি অধিকাংশ দেশগুলিই তাদের নিজেদের আঞ্চলিক ভূ-কৌশলগত এবং সুরক্ষার স্বার্থে ব্যবহার করেছে, যা ফোরামটির অন্তর্গত দেশগুলির মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে।
এস সি ও যৌথ ভাবে আফগান সংকটের মোকাবিলায় সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন পরে মধ্য এশীয় দেশগুলির শীর্ষ নেতারা আগস্ট মাসে তুর্কমেনিস্তানে সমবেত হন এবং আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি তাঁরা আফগানিস্তানের ভেতরে এবং তাঁদের নিজ নিজ দেশের সীমানা বরাবর মধ্য এশীয় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির উপস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে এবং মধ্য এশিয়ায় স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশগুলি গড়ে ওঠার পরবর্তী সময়ে ভারত কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটির সঙ্গে তার সম্পর্কের দিকটি নতুন প্রেক্ষিতে দেখতে শুরু করে। এই অঞ্চলটির উন্নতিকল্পে ভারত অর্থ সাহায্য করে এবং নতুন দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সুরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতা এবং পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করতে নিউ দিল্লি কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টস (এস পি এ) বা কৌশলগত অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১২ সালে নিউ দিল্লির তরফে গৃহীত ‘কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া’ বা ‘মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তিকরণ’ নীতির প্রধান লক্ষ্যই ছিল অঞ্চলটির সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে তোলা। যদিও নিজের মাটি দিয়ে ভারতকে মধ্য এশিয়ার দিকে এগোতে দিতে পাকিস্তানের অনীহা ভারতের সদিচ্ছার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চিন কাজাখস্তানে তার বহু চর্চিত বি আর আই বা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সূচনা করে।
বি আর আই-এর অন্তর্গত চিন এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডোর (সি পি ই সি) নিয়ে বাড়তে থাকা ভূ-রাজনৈতিক এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা এবং এর ফলে ভারতের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশগুলির প্রতি নয়া দিল্লি তার পুরনো কৌশল পরিবর্তনে তৎপর হয়। ক্ষমতায় আসার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মধ্য এশিয়ার সব ক’টি দেশ ঘুরে আসেন। অবশেষে ইউরেশিয়াকে নয়া দিল্লির আগ্রহের আওতায় আনার ক্ষেত্রে মধ্য এশিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে চাবাহার বন্দর নির্মাণের জন্য ভারত মউ স্বাক্ষর করে, যে বিষয়টি ২০০৩ সাল থেকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে চাপা পড়ে ছিল। মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ শীর্ষ নেতাই চাবাহার বন্দর নির্মাণে ভারতের কর্মসূচিকে নিজেদের সম্ভাব্য রফতানির বাজারের প্রসারণ এবং চিনের ক্ষমতায়নকে খর্ব করার এক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। চিনের আগ্রাসী মানসিকতা এবং প্রতিবেশী অঞ্চল জিনজিয়াংয়ে বসবাসকারী তাঁদের সঙ্গে জাতিগত সূত্রে সম্পর্কিত মানুষদের উপরে হওয়া বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
নিজেদের কৌশলগত সম্পর্কের প্রসারণ ঘটাতে মধ্য এশীয় দেশগুলি ভারতকে তাদের পরিকল্পনার অংশীদার করতে চাইছে। এই দেশগুলি আশগাবাত চুক্তিতে নয়া দিল্লিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যার ফলে ভারত মধ্য এশিয়া এবং ইউরেশিয়া উভয় জায়গাতেই রফতানি এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত সংযোগ স্থাপনের সুবিধে পাওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর সুযোগও পেতে পারে। চিনের আগ্রাসী মানসিকতার বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা ক্ষোভ এবং তালিবানদের তরফে সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের আশঙ্কা নয়া দিল্লি এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলিকে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। নিজের প্রতিবেশী অঞ্চলে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়নে ভারতের আর এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করা উচিত নয়।
এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Ayjaz Wani (Phd) is a Fellow in the Strategic Studies Programme at ORF. Based out of Mumbai, he tracks China’s relations with Central Asia, Pakistan and ...
Read More +