পাঁচ বছর বিরতির পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪ সালে দু’বার রাশিয়া সফর করেন, এবং পুনরায় নিশ্চিত করেন যে উভয় দেশই তাদের সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রত্যাশিত নয়াদিল্লি সফরও, যা এই বছরের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গতিপথকে প্রতিফলিত করে, যার চালিকাশক্তি গত দশক ধরে পুনর্নির্মাণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক পশ্চিমী বিশ্ব থেকে যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়েছে, কারণ ভারত রুশ আক্রমণের নিন্দা করা থেকে বিরত ছিল এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলির কারণে পশ্চিমী বাজারে মস্কোর প্রবেশাধিকার হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, যুদ্ধের আগে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার হলেও তা বেড়ে ২০২৩ সালে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়, যা ভারতকে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার করে তুলেছে। ভারত যেমন রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে, পাশাপাশি ভারত থেকে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক উপকরণ রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রুশ সংস্থাগুলিকে বিশেষ ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে, যার ফলে তারা ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিতে তাদের তহবিল রাখতে পারবে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থপ্রদান সংক্রান্ত সমস্যার একটি বড় অংশের সমাধান হয়েছে।
ভারত যেমন রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে, পাশাপাশি ভারত থেকে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক উপকরণ রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের উন্নতির পাশাপাশি ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত সামরিক-কারিগরি অংশীদারি হ্রাস পেয়েছে। রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা আমদানির অংশ ২০০৯ সালের ৭৬% থেকে কমে ২০২৩ সালে ৩৬% হয়েছে। এই হ্রাসের কারণ হল রাশিয়া ছাড়াও ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমী দেশগুলি থেকে অস্ত্র আমদানি করে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্রয়কে বৈচিত্র্যময় করার পরিকল্পনা।
এর কারণ হল আঞ্চলিক নিরাপত্তার সমীকরণ, বিশেষ করে হিমালয় ও ভারত মহাসাগরে চিনের যুদ্ধবাজ মনোভাব, যার ফলে নয়াদিল্লি অত্যাধুনিক সামরিক প্ল্যাটফর্ম সংগ্রহ করে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বিকাশের মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মনোযোগ ইউক্রেন এবং তার চাহিদা পূরণকারী সামরিক-শিল্প জটিলতার উপর কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অবশিষ্ট স্কোয়াড্রন সরবরাহে এবং সেইসঙ্গে ভারতীয় অস্ত্রাগারে বিদ্যমান রুশ অস্ত্রব্যবস্থা ও প্ল্যাটফর্মের খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহে বিলম্বের খবর পাওয়া গেছে। তবে, নিষেধাজ্ঞাগুলি নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করেছে। ভারতের প্রযুক্তি জায়ান্ট ইনফোসিসকে ২০২২ সালে রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছিল, এবং টাটা গ্রুপ ও এলঅ্যান্ডটি-এর মতো বড় বড় সংস্থাগুলিকে তাদের কাজ সীমিত করতে হয়েছিল। ২০২৪ সালে, নিষেধাজ্ঞার পরিধি বৃদ্ধির পর নয়াদিল্লি পুনর্ব্যক্ত করে যে তারা আর্কটিক এলএনজি-২ এর মতো অনুমোদিত প্রকল্পগুলি থেকে এলএনজি কিনবে না। তার উপর, বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিনগুলিতে, গ্যাজপ্রমনেফ্ট ও সুরগুটনেফটেগাস এবং ১৮৩টি জাহাজের উপর, যারা প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের এর বেশি দামে রাশিয়ার তেল পরিবহণ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির উপর এই সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, রাশিয়া-চিন সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে নয়াদিল্লিতে উদ্বেগ রয়েছে। ২০২০-র দশকে বেজিং মস্কোর বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে ওঠে, এবং নৌ-মহড়া ও যৌথ মহড়ার মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। উপরন্তু, চিন রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে। মস্কোর হিসাব-নিকাশে বেজিংয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি রাশিয়ার অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও ভেসে থাকতে সাহায্য করার কারণে চিনের উপর মস্কো ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তবে, ভারত আত্মবিশ্বাসী যে এই ঘটনা রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন যে রাশিয়া ও চিনের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যদি মস্কো বেজিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়, যার ফলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে সরবরাহের অভাবে ভুগতে হতে পারে।
মস্কোর হিসাব-নিকাশে বেজিংয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি রাশিয়ার অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও ভেসে থাকতে সাহায্য করার কারণে চিনের উপর মস্কো ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তবে, নতুন ধারার বৈচিত্র্যের প্রবণতাগুলিকে রুশ অস্ত্রের প্রতি নয়াদিল্লির অনাগ্রহ হিসাবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এখনও রুশ সামরিক প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে রয়েছে টি-৭২ ও টি-৯০ ট্যাঙ্ক; এসইউ-৩০ এমকেআই, মিগ-২৯, ও মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান; কেএ-৩১ হেলিকপ্টার; অ্যাডমিরাল গোর্শকভ বিমানবাহী রণতরী; এবং আকুলা ও কিলো-ক্লাস সাবমেরিন।
সম্প্রতি, সশস্ত্র বাহিনী দেশীয়ভাবে তৈরি ইনসাস রাইফেলকে রাশিয়ার একে-২০৩ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা শুরু করেছে। ক্রয়ের উপর শীতল যুদ্ধের প্রভাবের বাইরে, রাশিয়ার থেকে সামরিক আমদানি আরও সাশ্রয়ী মূল্যের হয়, দেওয়া হয় কম শর্তসাপেক্ষে, এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাশিয়া সামরিক দেশীয়করণের জন্য ভারতের প্রয়াসকেও ধারাবাহিকভাবে সমর্থন করেছে। সম্প্রতি, নয়াদিল্লি ৪ বিলিয়ন ডলারে ভোরোনেজ রাডার সিস্টেম কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যার পরিসর ৬,০০০ কিলোমিটার।
পুতিনের সফরের সময় ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি আসন্ন ২৩তম বার্ষিক ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে এই ধারাবাহিকতা সম্ভবত বজায থাকবে। তার উপর, পুতিন ও মোদী রাশিয়ার সুদূর পূর্ব, আর্কটিক, উত্তর সমুদ্র রুটে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং চেন্নাই-ভ্লাদিভোস্তক অর্থনৈতিক করিডোর বরাবর যানবাহন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবেন। অর্থ প্রদান ও নিষেধাজ্ঞা-প্রতিরোধী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার আরেকটি প্রধান বিষয় হবে। তার উপর, প্রতারণা করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা ভারতীয়দের প্রত্যাবাসনও আলোচ্যসূচিতে আরেকটি বিষয় হবে, এবং সেই সঙ্গে পুতিন কীভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা করছেন তা নিয়ে আলোচনা হবে।
পুতিনের হিসাব অনুযায়ী, ভারত সফর রাশিয়ার জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়। ভারত বেশ কয়েকটি পশ্চিমী দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদার, এবং বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের একটি প্রধান শক্তি। তবে দেশটি এখনও মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ইচ্ছুক। এই সফর ইঙ্গিত দেয় যে রাশিয়াকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার পশ্চিমী প্রচেষ্টা আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের জন্য পুতিনের সফর সমস্ত প্রধান শক্তির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরির জন্য নয়াদিল্লির দায়বদ্ধতাকে আরও শক্তিশালী করে।
ভারত বেশ কয়েকটি পশ্চিমী দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদার, এবং বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের একটি প্রধান শক্তি। তবে দেশটি এখনও মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ইচ্ছুক।
১৯৯০ সাল থেকে নয়াদিল্লি পশ্চিমীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উপর জোর দিয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অভিজাতরা পশ্চিমমুখী মনোভাব বজায় রেখেছেন, এবং রাশিয়ার চেয়ে পশ্চিমী নরম শক্তি ভারতীয়দের কাছে বেশি আবেদন রাখে। যাই হোক, পশ্চিমীরা প্রায়শই ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসের কারণগুলিকে উপেক্ষা করেন, এবং সহযোগিতাকে যা এগিয়ে নিয়ে চলেছে তা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখেন। ফলস্বরূপ, পশ্চিমী ভাষ্যকারেরা প্রায়শই রুশ জ্বালানি কিনে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে ভারত ক্রেমলিনের কোষাগারকে কতটা শক্তিশালী করেছে তা অতিরঞ্জিত করেন, যার ফলে ভারতীয় সত্তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানো হয়।
যাই হোক, নয়াদিল্লির দৃষ্টিকোণ থেকে, ভারত বহিরাগত ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাবলির চাপ এড়িয়ে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের দীর্ঘস্থায়ী নীতি বজায় রেখেছে। সুতরাং, রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক যুক্তিসঙ্গত। এই পদ্ধতিটি ভারতের সামরিক অস্ত্রাগারে ভূমিকা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও দুটি দেশকে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এই পরিবর্তনগুলি সত্ত্বেও, উভয় দেশ তাদের অংশীদারিত্বের প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতার জন্য নতুন ক্ষেত্র খুঁজে পাচ্ছে।
এই ভাষ্যটি প্রথম দ্য মস্কো টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.