-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতীয় গণতন্ত্রের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ভারতের সাংবিধানিক নৈতিকতার প্রোথিত মূল্যবোধগুলি দেশকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সংবিধানকে প্রাথমিকভাবে আইনি কাঠামো হিসাবে দেখা হয়, যা একটি দেশকে পরিচালনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নীতি ও বিধিগুলি উপস্থাপিত করে। ঔপনিবেশিকতা–উত্তর স্বাধীন দেশকে শাসন করার জন্য ভারতীয় সংবিধান শ্রদ্ধেয় নির্দেশক দলিল হিসাবে এমন সুপারিশ, ঘোষণা ও বিধান নিয়ে তৈরি, যা ভারতের আইনি রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থাকে রূপ দিয়েছে। যাই হোক, আইনি নির্দেশ বা বিধানের বাইরে নথিটি একপ্রস্ত আদর্শ নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত করে, যা ভারতীয় সংবিধান প্রণেতারা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিস্থাপনের ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য বলে মনে করেছিলেন। সংবিধানের আইনি–তত্ত্বগত পাঠের অতিরিক্ত একপ্রস্ত ‘মূল নৈতিক দায়বদ্ধতার’ প্রতি এই ধরনের ঝোঁক সাংবিধানিক নৈতিকতার মূল ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠিত করে। এটি সেই সব ধারণা ও অনুপ্রেরণার নির্দেশক যা একটি দেশকে শুধু অক্ষরে অক্ষরে নয়, নেপথ্যের মূল ভাবনাকে আত্মস্থ করে সাংবিধানিক জীবন অনুশীলন করতে সক্ষম করে। এ এমন এক নৈতিকতা যা একটি দেশকে সংবিধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অবিরত চাপ দেয়। ভারতীয় সংবিধানের প্রতিশ্রুতি ও অনুশীলনকে পর্যাপ্তভাবে বোঝার জন্য এই ধরনের অন্তর্নিহিত নীতিমূলক বা নৈতিক বিষয়গুলি উন্মোচিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভারতে সাংবিধানিকতার আলোচনাকে আকার দিয়েছে বা দিচ্ছে।
এই বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারত তার সাংবিধানিক কার্যকালের ৭৪ বছর পূর্ণ করেছে। তাই এখন দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের গতিপথকে যা অভূতপূর্বভাবে রূপ দিয়েছে সংবিধানের সেই নীতিগত ও নৈতিক চেতনা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। শুরুতেই খেয়াল করা গুরুত্বপূর্ণ যে ভারতের সাংবিধানিক নৈতিকতার ধারণা ও প্রয়োগ বৈচিত্র্যময়, এবং তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত আছে। কিন্তু, সাংবিধানিক নৈতিকতার ভিত্তিকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য সেই বৃহত্তর নৈতিক গতিশীলতাকে এর সঙ্গে যুক্ত করা দরকার যা ভারতে গণতন্ত্রের রূপ ও সারবত্তা সুসংহত করেছে। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের অনুশীলন দুটি মাত্রা দিয়ে তৈরি: পদ্ধতিগত গণতন্ত্র ও প্রকৃত গণতন্ত্র। প্রথমটি নির্বাচনী গণতন্ত্রের অনুশীলনের উপর আলোকপাত করে, আর দ্বিতীয়টি জনগণের জীবনে নির্বাচনী গণতন্ত্রের বৃহত্তর উপাদান বা গুণগত প্রভাবকেও অন্তর্ভুক্ত করে। স্বাধীনতার সময় ভারতকে একটি ‘অসম্ভাব্য গণতন্ত্র’ হিসাবে অভিহিত করা সত্ত্বেও ভারতে সাংবিধানিক গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে স্থিতিশীল ও টেকসই থেকে গিয়েছে, এবং গত সাত দশকে তার অদম্য স্থিতিস্থাপকতা প্রকাশ করেছে। বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য, ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত বিস্তৃতি এবং অন্যান্য আর্থ–সামাজিক বাধার বিশাল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারতের প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার সাফল্যের জন্য ভারতীয় সংবিধানের নীতিগত ও নৈতিক চালিকাশক্তিকে কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে। এই বিষয়টির আরও গভীর অধ্যয়ন প্রয়োজন।
ভারতীয় সংবিধানের প্রতিশ্রুতি ও অনুশীলনকে পর্যাপ্তভাবে বোঝার জন্য এই ধরনের অন্তর্নিহিত নীতিমূলক বা নৈতিক বিষয়গুলি উন্মোচিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভারতে সাংবিধানিকতার আলোচনাকে আকার দিয়েছে বা দিচ্ছে।
‘পলিটিক্স অ্যান্ড এথিকস অফ ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন’ বইটি উল্লেখ করেছে যে সংবিধানের সূচনাতেই নথিটিকে ‘জনগণের’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং এভাবে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে চিহ্নিত করেছে। সংবিধানের সত্যিকারের সমতাবাদী ভাবনাটি শ্রেণি, লিঙ্গ, জাতি, সাক্ষরতা বা অন্য কোনও পরিচিতিমূলক বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে ভারতের সকল অংশের জনগণকে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার প্রদানের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়েছে। অন্তর্ভুক্তির প্রতি তার সাংবিধানিক প্রবণতার কারণে ভারত স্বাধীনতার পরপরই সর্বজনীন রাজনৈতিক ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করে, যেখানে স্থিতিশীল পশ্চিমী গণতন্ত্রে নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে তাদের স্বাধীনতার অনেক পরে। ভারতে সাংবিধানিকভাবে বিধিবদ্ধ নির্বাচন কমিশন একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসাবে কাজ করে, এবং ১৯৫০–এর দশকের গোড়ার দিক থেকেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সাফল্য পেয়েছে। এখানে জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন যে গোড়ার সময়ে ভোটার তালিকায় লক্ষাধিক ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা, বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে নারী ভোটারদের চিহ্নিত করার কাজ, মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী মাঠে হাজার হাজার প্রার্থীর প্রচারের তদারকি, এসব ছিল একটি কঠিন কাজ যা ভারত সম্পন্ন করতে পেরেছে। নির্বাচন কমিশন এবং অন্য অনেক ফোরাম ও সংস্থা বৃহত্তর সংখ্যক ভোটারকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহদানের উপায় তৈরি করার চ্যালেঞ্জিং কাজ হাতে নিয়েছে, বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের, এবং তার ফলে গত সাত দশকে ভারতে ভোটদানকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, বড় নির্বাচনী হিংস্রতার ঘটনাগুলো সময়ের সঙ্গে কমে আসায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও শক্তিশালী হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের সম–রাজনৈতিক সুযোগের ধারণার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিকরণের নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত এখনও পর্যন্ত প্রান্তিক ও দুর্বল অংশের জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বের ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে। ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে ইতিবাচক বৈষম্যের উপাদানটি রাজনৈতিক অংশগ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, এবং এর ফলে ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। সংবিধানে অন্তর্নিহিত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সমতাবাদের নীতিগুলি ভারতের নির্বাচনী গণতন্ত্রের নাগাল প্রসারিত করেছে সামাজিক–রাজনৈতিক বৃত্তের দূরতম অংশগুলিতে। তাছাড়া, সংবিধান প্রবর্তিত মৌলিক অধিকারগুলি ‘আধুনিক নাগরিক’কে ব্যক্তি স্বাধীনতার অপরিবর্তনীয় নীতির ভিত্তিতে তাদের রাজনৈতিক, আইনি ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রামাণিকতাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত সহায়ক উপাদান হিসাবে কাজ করেছে। অধিকারের সঙ্গে কর্তব্যের সংমিশ্রণ সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নাগরিকদের মধ্যে সম্মিলিত আত্মসংযম ও দায়িত্ববোধ অনুশীলনের পূর্বশর্ত তৈরি করেছে। ভারতীয় সংবিধানের বিস্তৃত, অ–বাধ্যতামূলক অথচ গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণমূলক বিধান ‘রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশক নীতিসমূহ’ (ডায়রেকটিভ প্রিন্সিপলস) প্রতিভাত হয়েছে কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক বণ্টনের অপরিহার্যতা–ভিত্তিক নির্বাচনী রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে, এবং এভাবে তা ভারতে কল্যাণ রাজনীতির পরিধি প্রসারিত করছে। এটি একটি বৃহৎ অংশের মানুষকে জীবনের মৌলিক সুযোগ–সুবিধা পেতে সক্ষম করেছে, যা একটি উন্নত জীবনের অন্তর্নিহিত মৌলিক গণতান্ত্রিক আদর্শের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সকলের জন্য ন্যূনতম মর্যাদার জীবনকে সহজতর করেছে।
ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে ইতিবাচক বৈষম্যের উপাদানটি রাজনৈতিক অংশগ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, এবং এর ফলে ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে।
ভারতীয় সংবিধানের ভিত্তিতে নিহিত স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অন্তর্নিহিত মৌলিক আদর্শগত মূল্যবোধ এ দেশের গণতন্ত্রের কিছু পদ্ধতিগত ও মৌলিক মাত্রাকে একীভূত করার দিকে চালিত করেছে। কারণ, সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত নির্বাচনী রাজনীতির প্রক্রিয়াগুলি শুধু ভোটার ও প্রার্থী হিসাবে নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণেরই ব্যবস্থা করেনি, সেইসঙ্গেই একটি প্রাণবন্ত ও স্বশাসিত নাগরিক সমাজ ও কর্তব্যপরায়ণ নাগরিকদের সমন্বয়ে রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকশ্রেণিও তৈরি করেছে। এছাড়াও, ডায়রেকটিভ প্রিন্সিপলসের উপর সংবিধানে জোর দেওয়ার বিষয়টি নাগরিকদের কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক শাসন নিশ্চিত করার জন্য গণসংহতিকরণের উপকরণগুলি কাজে লাগাবার প্রেরণা দিয়েছে। বিধি ও নির্দেশাবলির স্পষ্ট অনুচ্ছেদগুলির বাইরে ভারতীয় গণতন্ত্রের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যুক্ত একটি ভাল জীবনের অন্তর্নিহিত আদর্শগত নীতিগুলি নিয়ে এখন আবারও চিন্তা করা এবং উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে ভারতের সাংবিধানিক নৈতিকতার অবিচ্ছেদ্য মূল্যবোধগুলি নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গণতন্ত্রের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, এবং তার ফলে ভারতের গণতান্ত্রিক স্থিতিস্থাপকতা আরও উন্নত হয়েছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Ambar Kumar Ghosh is an Associate Fellow under the Political Reforms and Governance Initiative at ORF Kolkata. His primary areas of research interest include studying ...
Read More +