-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
নয়াদিল্লির ‘বিগ-স্টিক’ বা কড়া পদক্ষেপের মনোভাব কি বেজিংকে এলএসি প্রসঙ্গে নম্র হতে বাধ্য করবে?
যখন পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপে দ্বন্দ্ব বেড়ে চলেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের কথা সহজাত ভাবেই আলোচনা করা হচ্ছে, তখন ভারত ও চিনের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা হ্রাস সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্বের সামগ্রিক সচেতনতায় একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। থিওডোর রুজভেল্ট একবার বলেছিলেন যে, প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালানোর সময় নরম ভাবে কথা বললেও কঠোর মনোভাব বজায় রাখতে হবে। সঙ্কট সমাধানের জন্য নয়াদিল্লির গণকূটনীতির উপর সকলের নজর থাকলেও এই প্রশ্ন উঠেছে যে, বেজিংয়ের অপেক্ষাকৃত নরম মনোভাবের নেপথ্যে ভারতের ‘বিগ-স্টিক’ মনোভাব রয়েছে কি না।
২০২৪ সালের শেষ মাসগুলিতে উভয় দেশই তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছে, যেটি ইতিপূর্বে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই ভ্রান্ত ধারণার দরুন সমস্যায় পড়েছিল যে, একটি পুনরুজ্জীবিত পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে চিনের তরফে দুঃসাহসিক পদক্ষেপের পরপরই চিন সীমান্ত বরাবর ঘাঁটি গেড়ে বসে। এর প্রত্যুত্তরে কোভিড-১৯ অতিমারি সত্ত্বেও ভারত সীমান্তে যথাযোগ্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
চার বছর ব্যাপী অচলাবস্থার পর অবশেষে বেজিং প্রথম সুর নরম করে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চিন - যারা ডেপসাং ও ডেমচোকে ভারতের প্রবেশে বাধা দিয়েছিল - এই চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল যে, উভয় পক্ষই সীমান্ত বরাবর তাদের নিজ নিজ ধারণা অনুযায়ী ক্ষেত্রগুলিতে টহল দিতে পারবে। এর ফলে পাঁচ বছরের ব্যবধানের পর রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনের পাশাপাশি শি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠকে বসতে সম্মত হন। উভয় নেতাই বর্তমানে এই সম্পর্ক পুনর্গঠনের উপর মনোযোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি প্রায় পাঁচ বছরের বিরতির পর উভয় দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের (এসআর) ২৩তম বৈঠকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ও পলিটব্যুরোর সদস্য ওয়াং ই-র বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০৩ সালে একটি চুক্তিতে এসআর-এর কার্যপ্রক্রিয়া গঠিত হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সীমানা প্রশ্নের সমাধান খোঁজা।
ভারতীয় বিবৃতি অনুযায়ী, ডোভাল এবং ওয়াং ই উভয়ই ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছিলেন। এর ফলে তিব্বতের কৈলাস মানসরোবর তীর্থযাত্রার পথ, সীমান্ত এলাকায় বাণিজ্য এবং আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির তথ্য আদান-প্রদানের পথ খুলে গিয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হলেও দিল্লির কঠোর অবস্থান কী ভাবে বেজিংকে নমনীয় করে তুলেছে, তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। শীর্ষ পর্যায়ে রাজনৈতিক আলোচনা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এই সঙ্কটের মধ্য দিয়ে পথ খুঁজে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান এই ছিল যে, ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আসলে এলএসি-তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উপর নির্ভর করে। মোদী এবং শি বহুপাক্ষিক মঞ্চগুলিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বিনিময় করলেও উভয়ের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হয়নি। তা সত্ত্বেও অন্যান্য নানা স্তরে সম্পৃক্ততা বজায় থেকেছে।
প্রথমত, ব্রিকস এবং সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চগুলি ভারতকে নরম কূটনীতি চালিয়ে যাওয়া সুযোগ দিয়েছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা এই লক্ষ্যে চিনা প্রতিপক্ষকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং কিছু কিছু সংঘাত বিন্দুকে কেন্দ্র করে বাফার জোন সৃষ্টির সঙ্কল্প গৃহীত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের জন্য কার্যপ্রণালীর মতো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কার্যকর করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে ডিপ্লোম্যাটিক কোর বা কূটনৈতিক সংস্থাগুলি ১৭বার বৈঠক করেছে। তৃতীয়ত, যখন সীমান্তের উভয় দিকের সৈন্যরা চোখে চোখ রেখে সংঘর্ষে নিয়োজিত ছিল, তখন সামরিক কম্যান্ডাররাও ২১ দফার আলোচনার নিরিখে কড়া মনোভাব বজায় রেখেছিল।
প্ররোচনামূলক কূটনীতি অবশ্য কড়া মনোভাবের সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। ফলে শক্তি ও সংকল্পের প্রদর্শন চিনকে এই কথা বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে, ভারত ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে না। চিনা শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এলএসি বরাবর সৈন্য মোতায়েনের সময় ভারত সীমান্ত অঞ্চলে রাস্তা, সেতু ও সুড়ঙ্গ শৃঙ্খলের মাধ্যমে অবকাঠামোর উন্নতি করতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ লাদাখের উমলিং লা পাস সড়ক, লাহৌল ও স্পিতিতে অটল টানেল, নেচিফু ও সেলা টানেল থেকে তাওয়াং পর্যন্ত অবকাঠামোর উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের (বিআরও) জন্য ৬৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যা আগের বছরের বরাদ্দের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
অতীতের ভুলগুলির অন্ধ পুনরাবৃত্তি করার মধ্যে কোনও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নেই। অচলাবস্থা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
সন্দেহাতীত ভাবে এ কথা প্রমাণ করেছে যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জরুরি।
এর পাশাপাশি বেজিং অরুণাচলের স্থানগুলির নাম পরিবর্তন করে এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা অঞ্চলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি মানচিত্র প্রকাশ করার মাধ্যমে দিল্লির উপর মানসিক চাপ বাড়িয়েছিল। ভারত সরকার ভাইব্রেন্ট ভিলেজেস প্রোগ্রাম চালু করেছে, যার অধীনে ভারতীয় সীমান্তের গ্রামগুলিতে সড়কপথ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং মোবাইল সংযোগের মতো অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হবে। ২০২৩ সালে চালু হওয়ার পর থেকে ১৩৬টি সীমান্ত গ্রামকে ২৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১০০টিরও বেশি সারাবছর ব্যাপী কার্যকর সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে। শেষ কেন্দ্রীয় বাজেটে এই উদ্যোগের জন্য ১০৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কৃষি, উদ্যানপালন, সাংস্কৃতিক পর্যটন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তাদের প্রচারের মাধ্যমে কাজের সুযোগ সৃষ্টিতেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সবেরই উদ্দেশ্য হল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জীবনযাত্রার গুণমান উন্নত করা, স্থানীয়দের থাকার জন্য উত্সাহিত করা এবং জীবিকার সুযোগের সন্ধানে যুবকদের শহুরে অভিবাসন রোধ করা, যার ফলে ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা বৃদ্ধি করা যায়।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (আইওআর) চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে - যেখানে ত্রিমুখী পরিষেবা কম্যান্ড অবস্থিত -সামরিক অবকাঠামোগুলি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে সাহায্য করবে এমন অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা চলছে এবং বড় ও আরও বেশি যুদ্ধজাহাজ, বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ও সৈন্যদের জন্য সংস্থান বরাদ্দ করা হয়েছে। চলাচল ও অভিযান স্থিতিশীল করার জন্য সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো-সহ কন্টেনার ট্রান্সশিপমেন্ট টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি নজরদারি, পুনঃসংবেদন ও দূর-সংবেদন ক্ষমতা, যোগাযোগ সুবিধা উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারত সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা থেকে পিছপা থাকেনি। ২০২০ সালের অগস্ট মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী পিএলএ সেনা মোতায়েনের উপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পূর্ব লাদাখের প্রধান বৈশিষ্ট্য কৈলাস পর্বতমালা দখল করে নেয়। এই ঘটনাপ্রবাহকে পরবর্তীতে নর্দার্ন কম্যান্ডের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং-ইন-চিফ জেনারেল ওয়াই কে জোশি ‘বিচ্ছিন্নকরণ সংক্রান্ত আলোচনার নিরিখে একটি বাঁকবদলকারী বিন্দু’ হিসাবে বর্ণনা করেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে, তিব্বতিদের নিয়ে গঠিত একটি গোপন ইউনিট স্পেশ্যাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (এসএফএফ) এই অভিযানে জড়িত ছিল। ২০২২ সালে এলএসি বরাবর সামরিক অচলাবস্থার সমাধানের জন্য আলোচনা চলতে থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী পিএলএ-র বিরুদ্ধে গোপন অভিযান চালিয়েছিল, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সামরিক সাহসিকতার পুরস্কারের সময় প্রকাশ্যে আসে। আক্রমণও প্রতিরক্ষার সর্বোত্তম রূপ। চিন তাইওয়ান, তিব্বত ও দক্ষিণ চিন সাগরকে তার মূল স্বার্থ বলে অভিহিত করেছে এবং তা সত্ত্বেও ভারত তার বিপদসীমার কাছাকাছি সক্রিয়তা বজায় রেখেছে।
ভারতীয় রাজনৈতিক অভিজাতদের তরফে চিনা অনুপ্রবেশকে ‘গুরুত্বহীন সমস্যা’ বলে উল্লেখ করার সময় এ বার পেরিয়ে গিয়েছে। ভারত কূটনৈতিক ও সামরিক কর্মীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আলোচনার ন্যায়সঙ্গত পন্থা অবলম্বন করে এলএসি বরাবর অচলাবস্থা দূর করার চেষ্টা চালিয়েছে। ভারত সামরিক অবকাঠামো ও লজিস্টিক ব্যবধান দূর করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদে চিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সদিচ্ছা দর্শিয়েছে। এর পাশাপাশি সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে ভারত এবং বেজিং সীমান্ত সঙ্কটকে বাড়িয়ে তোলায় চিনের স্বার্থে আঘাত করার ক্ষমতাও দেখিয়েছে।
তবুও, এখনও এ হেন মতবাদ উঠে আসছে যে, ভারত ও চিনের উচিত নিজেদের অতীত ভুলে এক কাল্পনিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রতী হওয়া এবং এই মতবাদের নেপথ্যে রয়েছে এই ভ্রান্ত ধারণাই যে, বেজিংকে তোষামোদ করলে তা লাভজনক হতে পারে। অতীতের ভুলগুলির অন্ধ পুনরাবৃত্তি করার মধ্যে কোনও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নেই। অচলাবস্থা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সন্দেহাতীত ভাবে এ কথা প্রমাণ করেছে যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জরুরি। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভারতীয় জনমানসের সেই আবেগকে বুঝতে হবে যে, ভারত চিন সংক্রান্ত নীতিতে পিছু হঠার মতো কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই সংঘাতের প্রাথমিক কারণ এখনও বিদ্যমান। বিশাল সংখ্যক সৈন্য সরিয়ে নেওয়া (বিচ্ছিন্নকরণ) এবং সামরিক অবকাঠামোর প্রশ্নটি এখনও প্রাসঙ্গিক, ঠিক যতটা প্রাসঙ্গিক সীমানা নির্ধারণের বৃহত্তর সমস্যাটি। ভারত-চিন সমীকরণ পুনর্নির্ধারণ করার পরিবর্তে একটি সতর্ক স্বাভাবিকীকরণই শ্রেয়।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওপেন-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +