Published on Mar 25, 2025 Updated 0 Hours ago

কী ভাবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক অগ্রসর হচ্ছে, তার উপর চিনা কৌশলগত সম্প্রদায় নিবিড় নজর রাখছে এবং এই সম্পর্কটিকে চিন-ভারত সম্পর্কের জন্য হুমকি বলে মনে করছে।

ক্রমবর্ধমান মার্কিন-ভারত সহযোগিতা এবং চিনের কৌশলগত প্রতিক্রিয়া: উত্তেজনাময় ২০২৫

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চিন-ভারত সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করলেও চিন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী (ইএএম) এস জয়শঙ্করের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছদিনের সফরকে চিন নিবিড় ভাবে প্রত্যক্ষ করেছে। কারণ এটি কেবল ভারত এবং জো বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে শেষ উচ্চ স্তরের যোগাযোগই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে বিজয়ের পর একজন উচ্চ স্তরের ভারতীয় কর্মকর্তার তরফে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সফরও ছিল। বেশ কিছু চিনা পর্যবেক্ষক কৌতুক করে বলেছিলেন যে, এই সফরটি ট্রাম্পের কাছে ভারতের আত্মসমর্পণের চিঠি! আবার চিনা গণমাধ্যমের অন্যান্য প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছিল যে, এই আত্মসমর্পণ অবশ্য মোদীর মার্কিন সফরের পরে বা ট্রাম্পের ভারত সফরের পরে হবে, যা নাকি মার্কিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চ স্তরে নিয়ে যাবে। চিনা পর্যবেক্ষকদের মূল উদ্বেগ ছিল, ইএএম জয়শঙ্কর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ কথা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ভারত চিনকে প্রতিস্থাপন করতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সস্তা পণ্য সরবরাহ করতে পারেকারণ ট্রাম্প চিনা পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন। চিনা পর্যবেক্ষকরা অনুমান করেছে যে, ট্রাম্পের মেড ইন আমেরিকা কৌশলের সঙ্গে মিল রেখে মোদী সরকার মার্কিন সংস্থাগুলিকে ভারতে সরবরাহ শৃঙ্খল স্থাপন করতে এবং কম দামের পণ্য উত্পাদন করতে আরও অগ্রাধিকারমূলক শর্ত প্রদান করবেচিনের আলোচনায় আর কটি আকর্ষণীয় বিষয় ছিল ইউক্রেন সঙ্কটে ভারতের ভূমিকা। রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে বিরোধের অবসান ঘটাতে ট্রাম্পের আগ্রহ এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বিশেষ ভাল সম্পর্ক থাকার কারণে চিনা পর্যবেক্ষকরা মূল্যায়ন করেছেন যে, রাশিয়া একটি অতিরিক্ত উপাদান হয়ে উঠতে পারে, যা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে।

বেশ কিছু চিনা পর্যবেক্ষক কৌতুক করে বলেছিলেন যে, এই সফরটি ট্রাম্পের কাছে ভারতের আত্মসমর্পণের চিঠি! আবার চিনা গণমাধ্যমের অন্যান্য প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছিল যে, এই আত্মসমর্পণ অবশ্য মোদীর মার্কিন সফরের পরে বা ট্রাম্পের ভারত সফরের পরে হবে, যা নাকি মার্কিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চ স্তরে নিয়ে যাবে।

চিনা পর্যবেক্ষকরা ২০২৫ সালের ৫-৬ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার) জেক সুলিভানের সাম্প্রতিক ভারত সফরের উপরেও নজর রেখেছেন। চিনা পক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছে যে, বাইডেন প্রশাসন হোয়াইট হাউসকে বিদায় জানালেও তারা এশিয়ায় বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিজের মূল দলকে দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জাপান-সহ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। চিনা পর্যবেক্ষকরা এই যুক্তি দিয়েছিলেন, বাইডেন প্রশাসন গত চার বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে তৈরি করা ব্যবস্থা ও সম্পর্কের উপর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা প্রাথমিক লক্ষ্য হল চিনকে প্রতিহত করা। এর ফলে ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাইডেনের কূটনৈতিক উত্তরাধিকার সুসংহত হয়েছে

নয়াদিল্লিতে সুলিভানের বিদায়ী সফর নিয়ে একটি অনলাইনে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। চিনা গণমাধ্যম যুক্তি দিয়েছিল যে, বিশেষ করে বাঁধ প্রসঙ্গে ভারতের মন জয় করতে চেয়ে এবং চিন ও ভারতের মধ্যে বৈরিতা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যেই ছিল সুলিভানের সফরআবার চিনা তরফে এই মনোভাবও প্রকাশ পেয়েছে যে, এই সফর ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে হলেও আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত চিন ও ভারতের মধ্যে বিকশিত সহযোগিতামূলক গতিশীলতা নিয়ে চিন্তিত। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার নতুন নিয়ম নিয়ে আলোচনা করতে চায় এবং নিশ্চিত করতে চায় যে, ভারত যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিন কৌশলের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।

এক দিকে, চিনা পর্যবেক্ষকরা সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী বিকাশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সুলিভানের প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা আবার উচ্চ-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চিনের প্রভাবকে দুর্বল করে তোলার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সহযোগিতায় একটি প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির চেষ্টা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে। চিনারা মার্কিন-ভারত সামরিক সহযোগিতা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে এবং অভিযোগ করেছে যে, এমনটা হলে তা এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে চালিত করবে এবং চিনের নিরাপত্তা পরিবেশকে খারাপ করবে।

অন্য দিকে, সফরের সময় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে তিব্বতে চিনের বাঁধ প্রকল্পের বিষয়টি উত্থাপনের কারণে চিনারা সুলিভানের নিন্দা করেছে। চিনা গণমাধ্যমের বিভিন্ন নিবন্ধে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য চিভারতের নিজস্ব যোগাযোগের শৃঙ্খল রয়েছে এবং এই স্পর্শকাতর বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। গ্লোবাল টাইমসের প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক হু জিজিনের বক্তব্য একটি প্রতিবেদনে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল: সুলিভান চলে যাওয়ার আগে চিন-ভারত সম্পর্কের জন্য সমস্যা তৈরি করতে চান। আমেরিকানরা এমনই, বিশ্ব শান্তি যাতে না আসে, তার জন্য যেখানেই দ্বন্দ্ব, সেখানেই নাক গলানো।’

সফরের সময় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে তিব্বতে চিনের বাঁধ প্রকল্পের বিষয়টি উত্থাপনের কারণে চিনারা সুলিভানের নিন্দা করেছে। চিনা গণমাধ্যমের বিভিন্ন নিবন্ধে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য চিভারতের নিজস্ব যোগাযোগের শৃঙ্খল রয়েছে এবং এই স্পর্শকাতর বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।

এর পরে চিনের কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্বস্তি আরও বাড়ে। কারণ ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক এক দিন পরেই ‘কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ’-এ বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছিল। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে মন্ত্রী জয়শঙ্করের উপস্থিত থাকার বিষয়টি থেকেও চিনা কৌশলবিদদের উদ্বেগের বিষয়টি স্পষ্ট।

সামগ্রিক ভাবে, চিনা পর্যবেক্ষকরা অনুমান করেছেন যে, চিন-ভারত সম্পর্ক সম্প্রতি উষ্ণ হলেও ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার কূটনৈতিক মিথস্ক্রিয়া শিথিল করেনি। ২০২৫ সালে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক কী ভাবে আকার পাবে? ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সময় মার্কিন-ভারত মিথস্ক্রিয়া চিনের উপর কী প্রভাব ফেলবে? চিনা কৌশলগত সম্প্রদায় এ বিষয়েও বেশ উদ্বিগ্ন যে, ২০১৭ সালের ডোকলাম দ্বন্দ্ব এবং ২০২০ সালের গলওয়ান সংঘাত দুই-ই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ঘটেছিল।

সম্ভবত, বেজিংয়ের মোকাবিলার কৌশলের অংশ হিসাবে চিনা বিশ্লেষকরা বলছেন যে, চিনের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির অনিশ্চয়তার বিপরীতে ভারতের জন্য একটি ব্যাপক দর কষাকষি বটেচিন আবার সতর্ক করেছে এই বলে যে, ভারত যদি চিনের মূল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ নেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে খুব বেশি লাভ অর্জন করতে পারবে না। এর পাশাপাশি ভারত আবার চিনা পুঁজি প্রযুক্তি থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও হারাবে।

ভারত, চি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিকশিত কৌশলগত গতিশীলতা সম্ভবত ২০২৫ সালে বিশ্বরাজনীতির একটি সংজ্ঞায়িত উপাদান হতে চলেছে এবং এই তিনটি দেশের উপর তাই সকলের নজর থাকবে।

 


অন্তরা ঘোষাল সিং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.