-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে নগর উন্নয়ন তহবিল ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, পরিবহণ ও পরিকাঠামোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আবাসনের জন্য বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
ভারতের নগর জনসংখ্যা বৃহৎ, এবং তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্ভাব্যতা অনুমান অনুসারে, ২০২৫ সালে এই জনসংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি এবং পরবর্তী দশকের মধ্যে ৬০ কোটিতে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশিত। দেশের নগর জনসংখ্যার স্থানিক বণ্টন ব্যাপকভাবে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়: কিছু নগর কেন্দ্রে প্রচুর জনবসতি রয়েছে, যেখানে অন্যগুলি স্থবিরতার মুখোমুখি। দেশের মোট ৪,০০০-এরও বেশি সংবিধিবদ্ধ শহরের মধ্যে ৫০টিরও বেশির জনসংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বৈচিত্র্যময় চাহিদা মেটাতে এবং নগর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য ভারত সরকার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ শুরু করেছে, যার সুবিধাগুলি এখন সহজেই বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার কাছে পৌঁছেছে। তবে, চ্যালেঞ্জগুলি এখনও থেকে গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সমস্যা বিভিন্ন জনসেবার প্রাপ্তিযোগ্যতার অভাবের পাশাপাশি সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত। যেমন, অনেক নগরবাসী নিম্নমানের পরিস্থিতিতে বাস করেন, এবং পরিবেশগত অবস্থার অবনতির সাথে সাথে প্রাকৃতিক সম্পদের তীব্র অবক্ষয়ের মুখোমুখি হন। আবাসন পরিস্থিতি, পানীয় জল ও স্যানিটেশনের মান, গতিশীলতা, কর্মসংস্থান, বায়ুর গুণমান এবং নিরাপত্তার মতো একাধিক সূচক এই বিশ্লেষণের কার্যকারিতা নির্দেশ করে, যা ভারতে নগরায়ণের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি দ্রুত বুঝতে সহায়তা করে।
অনেক নগরবাসী নিম্নমানের পরিস্থিতিতে বাস করেন, এবং পরিবেশগত অবস্থার অবনতির সাথে সাথে প্রাকৃতিক সম্পদের তীব্র অবক্ষয়ের মুখোমুখি হন।
ভারত সরকার নগরায়ণের প্রসারকে অগ্রগতি ও উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসাবে দেখে। নগর এলাকার বিদ্যমান অবস্থার উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, এবং এই প্রেক্ষাপটে তহবিলের বর্ধিত বরাদ্দ হল এমন একটি সূচক।
২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে নগর উন্নয়নের জন্য ৯৬,৭৭৭ কোটি (প্রায় ১,০০০ বিলিয়ন ) রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি পূর্ববর্তী বছরের বাজেটের ৮২,৫৭৬ কোটি (বা ৮২৫.৭ বিলিয়ন) রুপি থেকে ১৭ শতাংশ বেশি।
২০২৫-২৬ সালের বাজেটের মোট বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ পরিবহণ প্রকল্পের জন্য উপলব্ধ হবে, যার মধ্যে মেট্রো রেলের মতো দ্রুত গণ-পরিবহ্ণ ব্যবস্থার (বা এমআরটিএস) উন্নয়নও অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত তহবিল ক্ষেত্র/উদ্যোগ হল আবাসন (২৪ শতাংশ), নগর পুনর্জাগরণ মিশন (অমৃত, ১০ শতাংশ), এবং স্যানিটেশন (৫ শতাংশ)। তহবিলের কিছু অংশ বৈদ্যুতিক বাস (১.৩৫ শতাংশ), জাতীয় নগর ডিজিটাল মিশন (এনইউডিএম, ১.২৯ শতাংশ), এবং সিআইটিআইআইএস প্রকল্প (উদ্ভাবন, সংহতকরণ এবং টেকসইকরণের জন্য নগর বিনিয়োগ) (০.২৬ শতাংশ)-এর জন্যও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫-২৬ সালের বাজেটে ১০০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি অর্থায়নের একটি নতুন বিভাগ হল আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ড। এই অর্থ তিনটি কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে: শহরগুলিকে উন্নয়নের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা, শহরগুলির সৃজনশীল পুনর্বিকাশ, এবং নিরাপদ জল ও স্যানিটেশনের জন্য বর্ধিত বিধান। এই তহবিল ব্যাঙ্কযোগ্য প্রকল্পগুলির ব্যয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা করবে, যার প্রাপ্তি নির্ভর করবে এই বিষয়টির উপর যে ব্যয়ের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বন্ড, ব্যাঙ্ক ঋণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি থেকে অর্থায়ন করা হবে।
গত বছর পর্যন্ত নগর জীবিকা মিশনের অধীনে কার্যক্রমের জন্য তহবিল থাকা সত্ত্বেও, বর্তমান বাজেটে এই খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। তা সত্ত্বেও, রাস্তার বিক্রেতাদের প্রকল্পে (স্বনিধি) প্রচুর বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে। ৩.৭ বিলিয়ন রুপি তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড পেতে সহায়তা করার জন্য থাকছে। সরকারি রেকর্ড অনুসারে, ৬.৮ মিলিয়নেরও বেশি রাস্তার বিক্রেতা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছেন। সরকার অনলাইন কার্যক্রমে নিয়োজিত প্রায় ১ কোটি গিগ কর্মীকে সহায়তা করার দিকেও ঝুঁকছে — অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পরিচয়পত্র তৈরি করা হবে এবং ই-শ্রম পোর্টালে (অসংগঠিত শ্রমিকদের একটি জাতীয় ডেটাবেস) নিবন্ধন করা হবে। এর পাশাপাশি, সরকার দরিদ্র ও দুর্বল গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করারও পরিকল্পনা করছে।
এই তহবিল ব্যাঙ্কযোগ্য প্রকল্পগুলির ব্যয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা করবে, যার প্রাপ্তি নির্ভর করবে এই বিষয়টির উপর যে ব্যয়ের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বন্ড, ব্যাঙ্ক ঋণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি থেকে অর্থায়ন করা হবে
তার উপর, স্মার্ট সিটিজ মিশন (এসসিএম)-এর জন্য তহবিল এখন আর তার মিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে উপলব্ধ না-থাকলেও আরেকটি চলমান উদ্যোগ, যার নাম সিআইটিআইআইএস (ভারতের এসসিএম-এর একটি উপ-উপাদান), শহরের অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করছে। তবে, ২০২৪-২৫ বাজেটে এসসিএম-এর জন্য বরাদ্দের (২৪ বিলিয়ন রুপি) তুলনায় সিআইটিআইআইএস-এর জন্য বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কম (২.৫ বিলিয়ন রুপি)।
বর্তমান (২০২৫-২৬) এবং পূর্ববর্তী বছরের (২০২৪-২৫) মধ্যে বরাদ্দের প্রবণতার তুলনা করলে দেখা যায় যে মেট্রো রেল, ই-বাস, অমৃত, সিআইটিআইআইএস ও এনইউডিএম সম্পর্কিত কার্যক্রমের জন্য তহবিল স্পষ্টতই বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারের বর্তমান অগ্রাধিকারের প্রতিফলন। একই সঙ্গে, আবাসন ব্যবস্থার জন্য তহবিলে হ্রাস লক্ষ্য করা গিয়েছে। একে অংশত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই) আবাসন কর্মসূচির অধীনে অর্জিত অগ্রগতির জন্য দায়ী করা যেতে পারে। পরিশেষে, স্যানিটেশনের জন্য বরাদ্দ ৫০ বিলিয়ন টাকায় স্থবির রয়ে গিয়েছে।
সংক্ষেপে, ২০২৫-২৬ কেন্দ্রীয় বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ভাষনের পর্যালোচনা নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলি তুলে ধরে:
❅ আগামী পাঁচ বছরে রূপান্তরিত হবে এমন ছয়টি ক্ষেত্রের মধ্যে নগর উন্নয়নকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্য ক্ষেত্রগুলি হল কর, বিদ্যুৎ, খনি, অর্থ ও ব্যবস্থাপনা।
❅ নগর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি নগরায়ণের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
❅ গ্রামীণ উন্নয়ন, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই), পর্যটন, ভূ-স্থানিক তথ্য ও গবেষণা অনুদানের প্রস্তাবনাগুলির পাশাপাশি গৃহায়ণ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক, নতুন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রক, বিদ্যুৎ মন্ত্রক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, সড়ক পরিবহ্ণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টাগুলিও নগর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
❅ সরকার মেট্রো রেল, ই-বাস, অম্রুত, সিআইটিআইআইএস ও এনইউডিএম-কে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা বরাদ্দকৃত তহবিলের বৃদ্ধি থেকে স্পষ্ট। অনলাইন কার্যকলাপে নিয়োজিত রাস্তার বিক্রেতা এবং গিগ কর্মীদের জীবন উন্নত করার জন্যও তহবিল পাওয়া যাবে।
স্মার্ট সিটিজ মিশন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ডের অধীনে বাস্তবায়নযোগ্য আরও ভাল পরিচালনামূলক কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
প্রস্তাবিত আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ডের সাফল্য রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থাগুলির বন্ড, ব্যাঙ্ক ঋণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব থেকে তহবিল তৈরির ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এই উদ্যোগ স্থানীয় পর্যায়ে পেশাদারিত্ব বিকাশে এবং সরকারের উচ্চস্তরের উপর স্থানীয় পর্যায়ের সংস্থাগুলির নির্ভরতা হ্রাস করতে সহায়তা করবে। স্মার্ট সিটি্জ মিশন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ডের অধীনে বাস্তবায়নযোগ্য আরও ভাল পরিচালনামূলক কার্যক্রমে সহায়তা করবে। বরাদ্দকৃত তহবিলের যথাযথ ব্যবহার এবং ভারতে বিদ্যমান শহরগুলির উন্নতি রাজ্য এবং স্থানীয় স্তরে বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার মানের উপর নির্ভর করে। এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং পৌরসভার কর্মীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ২০২৫-২৬ সালে নগর উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ উৎসাহব্যঞ্জক। আরও তহবিলের প্রাপ্যতা থাকলে নগরবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। ক্ষেত্রভিত্তিক বরাদ্দের অধ্যয়ন থেকে বোঝা যায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন পরিবহণ ব্যবস্থা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নগর রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য অর্জনে তাদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যকর হবে।
রুমি আইজাজ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আরবান পলিসি রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর সিনিয়র ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Rumi Aijaz is Senior Fellow at ORF where he is responsible for the conduct of the Urban Policy Research Initiative. He conceived and designed the ...
Read More +