Published on Jun 05, 2024 Updated 0 Hours ago

বর্তমানে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ যত দূর সম্ভব দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল

বিচ্ছিন্নতার পথে: অন্যান্য দেশের সঙ্গে মলদ্বীপের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর প্রত্যাশামাফিক দ্রুত গতিতে পছন্দের অংশীদার হিসাবে চিনকে ভারতের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা; বেসামরিক সামরিক বাণিজ্যে দূরবর্তী দেশ তুর্কিয়ের সঙ্গে তাঁর নতুন অংশীদারিত্ব; এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের সঙ্গে তাঁর উন্মুক্ত যোগাযোগ, যার একটি ‘চিন-বিরোধী’ কৌশল বিদ্যমান… এই সব কিছুই অঞ্চলটিতে এক নতুন কৌশলগত সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, মলদ্বীপ সরকারের চিনেগ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভ-এ (জিএসআই) যোগদান এবং তুর্কিয়ে থেকে চাল আটার মতো প্রয়োজনীয় প্রধান পণ্য আমদানি করার বিষয়টি – যাতে ‘কোনও একটি দেশের উপর নির্ভর না করতে হয়’ – আখেরে কৌতূহল উদ্বেগ জাগিয়েছে।

 

মালেতে চিনা গবেষণা/গুপ্তচর জাহাজ জিয়াং ইয়াং হং ০৩-এর নোঙর করার বিষয়টি ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে হাইড্রোগ্রাফিক্যাল বা জল সংক্রান্ত সমীক্ষা না করার বিষয়ে মুইজ্জুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরপরই প্রেসিডেন্টের চিনপন্থী ঝোঁকের ইঙ্গিত দেয়।

 

৯০০০০০ বর্গকিমিব্যাপী মলদ্বীপের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন বা একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজেড) উপর ভারতীয় আকাশ পর্যবেক্ষণকে প্রতিস্থাপন করার জন্য সাম্প্রতিক কালে হওয়া মুইজ্জুর চিন সফর কিংবা তুর্কিয়ে থেকে ৩৭ মিলিয়ন ডলার অর্থের ড্রোন চুক্তি আক্ষরিক অর্থে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের (আইওআর) কৌশলগত পরিসরের মতো ইতিমধ্যেই উপস্থিতিবহুল অঞ্চলে এক নতুন শক্তিকে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে পারে। তা সত্ত্বেও চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত সহযোগিতায় উন্নীত করার মুইজ্জুর সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক উদ্বেগকে উস্কে দিয়েছে। মালেতে চিনা গবেষণা/গুপ্তচর জাহাজ জিয়াং ইয়াং হং ০৩-এর নোঙর করার বিষয়টি ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে হাইড্রোগ্রাফিক্যাল বা জল সংক্রান্ত সমীক্ষা না করার বিষয়ে মুইজ্জুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরপরই প্রেসিডেন্টের চিনপন্থী ঝোঁকের ইঙ্গিত দেয়। মজুদ পূরণ করার জন্যই জাহাজ নোঙর করেছে… মলদ্বীপের তরফে এই ব্যাখ্যা ছিল নিতান্তই সারবত্তাহীন। কারণ গত দু’বছরের মধ্যে করা তিনটি সফরের তৃতীয়টির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা এই ধরনের সুপরিকল্পিত চিনা কার্যকলাপকে স্থগিত করে দিয়েছিল। একই ভাবে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার বাইরে দুবাই তাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলিতে আসন্ধা জনস্বাস্থ্য বিমা প্রসারিত করার মুইজ্জুর সিদ্ধান্তও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের (২০১৩-১৮) ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচিকে নিজের করে নেওয়ার এক প্রচেষ্টা মাত্র।

 

সম্পূর্ণ প্রকাশ

সরকারি সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর প্রথম সফরের গন্তব্য তুর্কিয়ে হলেও তিনি শেষ মুহূর্তে কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই মলদ্বীপের চিরাচরিত সমর্থক ও মিত্র সৌদি আরব সফরে যান। পরবর্তী কালে, স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটা চিন সফর ইঙ্গিত দিয়েছে যে, এই সফর থেকে মুইজ্জু চিনের তরফে অনেক প্রত্যাশাই রাখছেন।

চিনে মুইজ্জু বেজিংয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উপস্থিতিতে ২০টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং ফেরার পথে ফুজিয়ানের আরও বেশ কিছু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। জিএসআই ছাড়াও মলদ্বীপ চিনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ-এ (জিসিআই) যোগ দিয়েছে এবং ইয়ামিনের সময়কাল থেকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-কে (এফটিএ) পুনরুজ্জীবিত করেছে, যেগুলিকে মুইজ্জুর উত্তরসূরি সোলিহ তেমন আমল দেননি। মুইজ্জু চি দ্বারা র্থায়িত প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর এবং মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ, যা ২০১১-১২ সালে ভারতের সঙ্গে ‘জিএমআর দ্বন্দ্ব’-এর কেন্দ্রে ছিল।

 

স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটা চিন সফর ইঙ্গিত দিয়েছে যে, এই সফর থেকে মুইজ্জু চিনের তরফে অনেক প্রত্যাশাই রাখছেন।

 

মুইজ্জুর জন্য ফুশি ধিগগারু হ্রদে ১১৫৩ হেক্টরের রাস মালেপুনরুদ্ধার এবং নির্মাণ প্রকল্পটি স্বপ্নের প্রকল্প। শ্রীলঙ্কার ঠিকাদার আট মাসের মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি সম্পন্ন করা এবং অর্থের পরিবর্তে ৭০ হেক্টর জমি গ্রহণের পরে চিন রাস মালে-তে ৩০০০০ ‘কমিউনিটি হাউজিংইউনিট তৈরি করতে সম্মত হয়েছে। ভোট আকর্ষণের লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও সোলিহের পরাজয় অন্য বাস্তবতা দর্শায়। কর্মসংস্থানই এক মাত্র উপায় সত্ত্বেও চিরাচরিত চিনা পদ্ধতিতে মুইজ্জুর প্রকল্পগুলি কোনও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয় না।

 

সংসদীয় অনুমোদন

প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার মতো অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই ঋণে ডুবে থাকা মলদ্বীপের বর্তমানে নগদ ঋণ বা বাজেট সহায়তা প্রয়োজনকিন্তু চিন শুধুমাত্র উন্নয়নমূলক তহবিলের জন্য ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অর্থনীতির অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুইজ্জু সরকার সম্প্রতি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে এমভিআর ৪.২ বিলিয়নের প্রস্তাব দিয়েছে। নোট ছাপানোর বিষয়ে মুইজ্জুর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হলে ইতিমধ্যেই ব্যাপক চাপে থাকা ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রটি আরও ঋণ গ্রহণের দিকে ধাবিত হবে।

মুইজ্জু তাঁর সমস্ত বৈদেশিক চুক্তির জন্য সংসদীয় অনুমোদন পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর অন্যান্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন কি না, তা-ও দেখার। আগামী দিনে নির্ধারিত সংসদীয় নির্বাচনের দৌড়ে ১৩ জন সাংসদ সোলিহের মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) ছেড়ে যাওয়ার পরে তিনি এমনটা করতে পারেন বলে আশা করা যায়। ভোটারদের পরিবর্তনশীল মেজাজের নিরিখে – যদিও সাংসদদের দলত্যাগ ভারতের প্রতি নতুন নীতিগুলি ভোটারদের মেজাজের নিরিখে পিছনের সারিতেই রয়েছে – মুইজ্জু নিজের উত্থানের ফলে সৃষ্ট শূন্যস্থান পূরণ করতে ব্রতী।

 

প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার মতো অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই ঋণে ডুবে থাকা মলদ্বীপের বর্তমানে নগদ ঋণ বা বাজেট সহায়তা প্রয়োজনকিন্তু চিন শুধুমাত্র উন্নয়নমূলক তহবিলের জন্য ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

 

ইসলামিক রোজার মাসে যাতে নির্বাচন করা যায়, সেই উপলক্ষ্যে এমডিপি বার কাউন্সিলের কাছে একটি বিল প্রস্তাব করে এবং মুইজ্জু প্রত্যেক পরিবারকে তুর্কিয়ে থেকে প্রাপ্ত ১০ কেজি চাল ও আটা বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মুইজ্জুর তরফে গৃহীত বহির্মুখী নীতির সারবত্তা বোঝার জন্য মিত্র এবং প্রতিপক্ষ… দেশের ভেতরে ও বাইরে… সর্বত্র সকলেই প্রেসিডেন্টের প্রথম সংসদীয় ভাষণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, যেটি অবকাশ পরবর্তী সময়ে ৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয়েছিল।

 

লক্ষ্যে আসীন

অনাদিকাল থেকে ভারত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বীপদেশটির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রধান সরবরাহকারী থেকেছেকোভিড-১৯ অতিমারি এবং লকডাউনের মতো অভূতপূর্ব সময়কালে ভারত ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ বা ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির অংশ হিসেবে মলদ্বীপকে খাদ্য ও ওষুধের প্রথম সুবিধাভোগী হিসেবে বেছে নেয় এবং মলদ্বীপের জনগণের জন্য উপহার হিসেবে ভারতে নির্মিত টিকা প্রদান করেএই প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা ও জরুরি পণ্য স্থানান্তরে নিয়োজিত ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার করার জন্য নির্বাচনকালীন দাবির মুইজ্জুর পুনরাবৃত্তি এবং অব্যবহিত পরেই এক কিশোরের মৃত্যু মানুষের মনে খারাপ প্রভাব ফেলেছে।

একই ভাবে, ‘ইন্ডিয়া মিলিটারি আউট’ প্রচার অতীতের দৃষ্টান্তের বিপরীতে মুখ থুবড়ে পড়েছে, যখন ভারতীয় সৈন্যরা নির্দিষ্ট অনুরোধে লক্ষ্যে ব্রতী থাকলেও কাজ মিটে গেলে অবিলম্বে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়অপারেশন ক্যাকটাস (১৯৮৮), তার পরে সুনামি পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা (২০০৪) এবং মালে পানীয় জলের সঙ্কট (২০১৪)… সব কিছুই এমন উদাহরণ, যেখানে ভারতীয় সৈন্যরা নিজেদের কাজ সম্পন্ন করার পরে জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

 

একই ভাবে, ‘ইন্ডিয়া মিলিটারি আউট’ প্রচার অতীতের দৃষ্টান্তের বিপরীতে মুখ থুবড়ে পড়েছে, যখন ভারতীয় সৈন্যরা নির্দিষ্ট অনুরোধে লক্ষ্যে ব্রতী থাকলেও কাজ মিটে গেলে অবিলম্বে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়

 

তা সত্ত্বেও চিন থেকে ফেরার সময় ভারতকে লক্ষ করে একটি প্রচ্ছন্ন অথচ তির্যক মন্তব্যের মাধ্যমে মুইজ্জু বলেছিলেন যে, মলদ্বীপ কার বাড়ির উঠোন নয়, বরং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং আমাদের হুমকি দেওয়ার অধিকার কোনও দেশেরই নেই।’ প্রেসিডেন্ট শি বেজিংয়ে মুইজ্জুকে বলেছিলেন যে, চিমলদ্বীপে বহিরাগত হস্তক্ষেপের দৃঢ় বিরোধিতা করে। এটি চিনা সরকারি অবস্থানের পুনরাবৃত্তি ছিল, যখন মলদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্ব-নির্বাসনে থাকা কারাগারে বন্দী পূর্বসূরি মোহাম্মদ নাশিদের মুক্তির আদেশ দেওয়ার পরে ভারত ইয়ামিনের সমালোচনা করেছিল।

 

নব্য জাতীয়তাবাদী সুর

একাধিক ঘটনাপ্রবাহের মাঝে এবং অবিরাম আস্থা ও বিশ্বাসকে সুনিশ্চিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের প্রথম বৈঠকে প্রস্তাবিত দুই সরকারের ‘হাই লেভেল কোর গ্রুপমালেতে সমাবেশ করে। এর পাশাপাশি মানবিক সহায়তা ত্রাণঅসুস্থ রোগীকে বহন করে এ হেন পরিষেবা প্রদানকারী ভারতীয় বিমান চলাচল প্ল্যাটফর্ম কার্যকর করার উদ্দেশ্যে এবং পারস্পরিক ভাবে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা জন্য আলোচনা চালায় দলটি। কর্মকর্তারা ভারত দ্বারা অর্থায়িত প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করার কাজ-সহ অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পদক্ষেপগুলি নিয়েও আলোচনা করেছেন, যেমন মুইজ্জু তাঁর নির্বাচনের আগে পরে চেয়েছিলেন। মালে বৈঠকের পরে দুই বিদেশমন্ত্রী - ভারতের এস জয়শঙ্কর এবং মলদ্বীপের মুসা জমির - ন্যাম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি আবার তৃতীয় একটি দেশে অর্থাৎ উগান্ডায় সাক্ষাৎ করেনমলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রক সেই সময় থেকে কোর গ্রুপের আলোচনায় ভারতীয় আবেগকে প্রতিধ্বনিত করলেও সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতা করার কোনও সদিচ্ছা প্রদর্শন করেনি।

এরই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া মলদ্বীপের সরকারের তরফে অবমাননাকর এবং মানহানিকর মন্তব্য পোস্ট করার পরে একটি পর্যটন গন্তব্য হিসাবে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বয়কট মলদ্বীপ রব ওঠে। তিনজন উপমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া মন্তব্য থেকে অবিলম্বে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং তাঁদের বরখাস্ত করার বিষয়ে মলদ্বীপ সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ আখেরে বলিউড অভিনেতা ক্রিকেটার-সহ ভারতীয় তারকাদের নব্য জাতীয়তাবাদী মলদ্বীপ বয়কটের সুরকে স্তব্ধ করতে পারেনি।

 

কর্মকর্তারা ভারত দ্বারা অর্থায়িত প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করার কাজ-সহ অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পদক্ষেপগুলি নিয়েও আলোচনা করেছেন, যেমন মুইজ্জু তাঁর নির্বাচনের আগে পরে চেয়েছিলেন।

 

ইয়ামিনের সময়কালে চিন সম্পর্ক দ্রুত পুনরুদ্ধার করার পরে - যা প্রতিটি সরকারের সঙ্গে মলদ্বীপের বিদেশনীতির পরিবর্তনকেই দর্শায় – ভারতকে ভারতীয়দেরকে নতুন স্বাভাবিকের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। মলদ্বীপের দৃষ্টিকোণ থেকে তুর্কিয়েতে রাতারাতি প্রবেশে এই ধরনের পূর্বাভাস অনুপস্থিত ছিল এবং তা সৌদি আরব অন্য উপসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে মলদ্বীপের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে

 

মার্কিন অভিযান

এই সমস্ত কিছুর মাঝে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কম্যান্ডেরম্যান্ডার অ্যাডমিরাল জন অ্যাকুইলিনোর চিন থেকে প্রত্যাবর্তনের কয়েক দিন পরে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠক ভারত এবং সামগ্রিক ভাবে এই অঞ্চলে এক নতুন গ্রহের সৃষ্টি করেছিল। মুইজ্জুর চিন সফরের আগে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জমিরের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা চালান এবং উভয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলে

পূর্ববর্তী শাসনামলে স্বাক্ষরিত চুক্তির ধারাবাহিকতামাফিক অ্যাডমিরাল অ্যাকুইলিনো প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পূর্ণ সহায়তা প্রদানে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেনএবং ‘এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাবে মলদ্বীপের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ছাড়াও শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য মার্কিন সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ মলদ্বীপের সঙ্গে চিনের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে মুইজ্জুর দৃষ্টিভঙ্গি অস্পষ্ট হলেও তদানীন্তন কারাগারে বন্দি ইয়ামিনের সময়ে মুইজ্জুর ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের মাঝেই মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে ২০২০ সালে অক্টোবর মাসে সফরকে স্বাগত জানানো হয়েছিল।

 

ভারতে বয়কট মলদ্বীপ’ ডাকের পরপর মুইজ্জুর উপর চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, তাঁচিন সফরের সময় মুইজ্জু চিনকে মলদ্বীপের পর্যটনের নিরিখে প্রাক-কোভিড শীর্ষস্থানীয় উত্স দেশ হিসেবে ভারতের স্থান দখল করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে। সামরিক বিষয়ে মলদ্বীপের জন্য ‘স্টেটাস অ ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট’-এ (এসওএফএ) স্বাক্ষর করানো এবং দ্বীপদেশে একটি ঘাঁটি স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা মোহাম্মদ ওয়াহিদের স্বল্প দিন প্রেসিডেন্ট পদে থাকার (২০১২-১৩) সময় ব্যর্থ হয়েছিল এর পূর্বে দুই পক্ষই অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মলদ্বীপ পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের (২০০৮-১২) অধীনে একটি ১০ বছরের ‘অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট'-এ (এসিএসএ) স্বাক্ষর করেছিল। সেই সময়ে মলদ্বীপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সামরিক ঘাঁটি প্রস্তাব করেছিল বলেও জানা গিয়েছিল। তবে সেই প্রস্তাবটি আর এগোয়নি।

তবে যেমনই হোক না কেন, ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক এখন কতটা স্বাভাবিক হবে, তা নির্ভর করবে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নব্য-জাতীয়তাবাদী ক্যাডারদের চুপ করিয়ে রাখার ক্ষমতার উপর। ভারতে বয়কট মলদ্বীপ’ ডাকের পরপর মুইজ্জুর উপর চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, তাঁচিন সফরের সময় মুইজ্জু চিনকে মলদ্বীপের পর্যটনের নিরিখে প্রাক-কোভিড শীর্ষস্থানীয় উত্স দেশ হিসেবে ভারতের স্থান দখল করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এটি সফরের সময় অন্য কোন চুক্তি বা প্রতিশ্রুতির বিপরীত ছিল, যেটি নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলছে।

 


এন সত্য মূর্তি চেন্নাইভিত্তিক নীতি বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.