Published on Jun 28, 2023 Updated 0 Hours ago

দেশজ বুদ্ধিমত্তার প্রজ্ঞার সঙ্গে এআই-এর শক্তিকে সমন্বিত করে আরও কার্যকর জলবায়ু কর্মসূচির বিকাশ করা যেতে পারে

জলবায়ু কর্মসূচির জন্য দেশজ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উভয়েরই প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে মানবতার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির অন্যতম, যা পৃথিবী এবং তার বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর ও সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করা এবং তার সঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার জন্য জরুরি এবং কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এই মুহূর্তে সর্বাধিক। আমরা ধরে নিই যে, শুধুমাত্র উদীয়মান প্রযুক্তিই সমাধান প্রদানে সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু বেশিরভাগ জলবায়ু আলোচনায় একটি ব্লাইন্ড স্পট বা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিসর রয়েছে এবং সেটি হল নেটিভ ইন্টেলিজেন্স  বা দেশজ বুদ্ধিমত্তা। দেশজ বা ঐতিহ্যগত জ্ঞান আসলে সেই জ্ঞান, অনুশীলন এবং প্রজ্ঞাকেই বোঝায়, যা জনজাতি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রচলিত। এটি বাস্তুতন্ত্রের স্বনিয়ন্ত্রণ, পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং ভারসাম্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। দেশজ বুদ্ধিমত্তা প্রজাতির মধ্যে সম্পর্কের জটিল ও সূক্ষ্ম শৃঙ্খল, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার এবং যে কোনও রকমের ব্যাঘাত থেকে পুনরুদ্ধার করার জন্য বাস্তুতন্ত্রের ক্ষমতার মধ্যে সুস্পষ্ট।

জনজাতীয় সম্প্রদায়ের কাছে প্রায়শই উদ্ভিদ, প্রাণী, আবহাওয়ার ধরন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ-সহ তাঁদের স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি এবং জ্ঞান থাকে।

জলবায়ু কর্মসূচির ক্ষেত্রে দেশজ বুদ্ধিমত্তা একাধিক উপায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে প্রায়শই উদ্ভিদ, প্রাণী, আবহাওয়ার  ধরন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ-সহ তাঁদের স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি এবং জ্ঞান থাকে। এই জ্ঞান জলবায়ু কার্যকলাপের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল: গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলি চিহ্নিত করা ও রক্ষা করা, বাস্তুতন্ত্রগুলির কার্যকারিতা ও জলবায়ু প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়তা সম্পর্কে ধারণা এবং বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতাকে উন্নত করে এমন সাস্টেনেবেল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বা স্থিতিশীল সম্পদ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনগুলির উন্নতি ঘটানো। জনজাতি সম্প্রদায়গুলি চিরাচরিত ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা-সহ পরিবর্তিত পরিবেশগত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরিমার্জিত হতে থাকা এই কৌশলগুলি জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টার জন্য মূল্যবান পাঠ প্রদান করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, টেরেসিং বা ধাপ চাষ, জল সংগ্রহ এবং কৃষি অরণ্যায়নের মতো জনজাতীয় অনুশীলনগুলি জলসম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং মাটির ক্ষয় রোধে সাহায্য করতে পারে, যা জলবায়ু সহনশীল কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়শই চিরাচরিত অভ্যাস রয়েছে, যা স্থিতিশীল ভূমি ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করে এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, প্রথাগত কন্ট্রোলড বার্নিং বা নিয়ন্ত্রিত দহনপদ্ধতির মতো ফায়ার ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস বা অগ্নি ব্যবস্থাপনা অনুশীলন অনিয়ন্ত্রিত দাবানল প্রতিরোধ করতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে সক্ষম। একই ভাবে মিশ্র চাষ (মিক্সড ক্রপিং) এবং ক্রপ রোটেশন বা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ফসল চাষের মতো ট্র্যাডিশনাল অ্যাগ্রো-ইকোলজিক্যাল বা চিরাচরিত কৃষি-বাস্তুতান্ত্রিক অনুশীলনগুলি মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং মাটিতে কার্বন পৃথগীকরণ করতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে অবদান রাখে। জনজাতীয় সংস্কৃতির কাছে প্রায়শই পরিবেশের সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক সংযোগ থাকে, যা প্রকৃতির প্রতি তাঁদের মূল্যবোধ এবং আচরণের রূপরেখা প্রদান করে। এই গভীর প্রোথিত প্রজ্ঞা পরিবেশের প্রতি স্টুয়ার্ডশিপ বা দায়িত্ববোধ এবং সম্মানের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে, যা স্থিতিশীল অনুশীলন এবং আচরণের দিকে পরিচালিত করে। এর ফলে তাঁরা সংরক্ষণ, বর্জ্য হ্রাস এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক প্রশাসনের মতো জলবায়ু কর্মসূচিতে অবদানদারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হন।

যন্ত্র এবং মানুষ

ডিফরেস্টেশন বা অরণ্যবিনাশ, শিল্পজাত নিঃসরণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মতো মানুষের কার্যকলাপ দ্বারা চালিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনাগুলি মারাত্মক পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, অভিযোজন এবং পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন দিকগুলিতে সাহায্য প্রদানকারী একটি স্থিতিশীল এবং স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের দিকে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা যেতে পারে। স্মার্ট অটোমেশনের মাধ্যমে গতিশীলতার সঙ্গে নির্ভুল ভাবে ও মানুষের একঘেয়েমি ছাড়াই প্রচুর পরিমাণে তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ করা যেতে পারে এবং মেশিনও এই জলবায়ু কর্মপ্রচেষ্টায় সাহায্য করতে পারে।

জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়শই চিরাচরিত অভ্যাস রয়েছে, যা স্থিতিশীল ভূমি ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করে এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে।

এআই বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি তুলে ধরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবদান রাখতে পারে। এআই অ্যালগরিদমগুলি জটিল ডেটা সেটগুলি প্রক্রিয়া এবং বিশ্লেষণ করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু মডেল, উপগ্রহের চিত্র, আবহাওয়ার নিদর্শন ও চিরাচরিত তথ্য এবং সিদ্ধান্ত প্রদর্শনে সক্ষম নানা ধরনের বিন্যাস ও প্রবণতা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সৌর এবং বায়ুর মতো রিনিউয়েবল বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্সগুলির স্থাপনা এবং ব্যবস্থাপনাকে অনুকূল করতে আবহাওয়ার ধরন, শক্তির চাহিদা এবং গ্রিড অপারেশনগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করে এআই। এর ফলে এআই পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থার ক্ষমতা সর্বোচ্চ করতে সাহায্য করতে পারে। এআই পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সুদক্ষ ব্যবহারকে সুনিশ্চিত করতে এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে ব্যাটারির মতো শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থার চার্জিং এবং ডিসচার্জিংকেও সর্বোচ্চ করতে সক্ষম।

এআই জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস এবং মডেলিংয়ের উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু প্যাটার্ন বা বিন্যাস এবং প্রভাব অনুকরণ ও পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জলবায়ু মডেলের জটিল এবং ব্যাপক গণনা শক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এআই বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রক্রিয়া ও বিশ্লেষণ করার জন্য মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে জলবায়ু মডেলগুলির নির্ভুলতা এবং দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি এই মডেলগুলিতে আবার জনজাতিলব্ধ পরিবেশগত জ্ঞান – যেমন চিরাচরিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস পদ্ধতি বা স্থানীয় সম্প্রদায় দ্বারা ব্যবহৃত ফেনোলজিক্যাল সূচকগুলির ব্যবহার – অন্তর্ভুক্ত করে এআই স্থানীয় প্রেক্ষাপটে তাদের যথার্থতা এবং প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি করতে পারে। জলবায়ু বিপত্তি, পরিকাঠামোগত দুর্বলতা এবং সামাজিক কারণগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করে এআই বন্যা, খরা বা অন্যান্য জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ঝুঁকির সম্মুখীন এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করতে পারে। এই তথ্যটি স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো নির্মাণ, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার উন্নতি  এবং অরক্ষিত জনসংখ্যাকে সুরক্ষা জোগানোর কৌশল নির্মাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি জলবায়ু গতিবিদ্যা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে উন্নত করতে, চরম  আবহাওয়ার ঘটনাগুলির পূর্বাভাস দিতে এবং বাস্তুতন্ত্র ও মানবজাতির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।

এআই রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধিতে এবং পরিবেশগত প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এআই নিখুঁত কৃষিকাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে সেন্সর এবং তথ্য বিশ্লেষণ ফসল ব্যবস্থাপনা অনুশীলনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, জল এবং রাসায়নিক ব্যবহার কমাতে পারে এবং বর্জ্য হ্রাস করতে পারে। এটিকে ট্র্যাফিক প্রবাহকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে, যানবাহন থেকে নিঃসরণ কমাতে এবং লজিস্টিক ও সরবরাহ শৃঙ্খলের কার্যকারিতাকে উন্নত করতে স্মার্ট পরিবহণ ব্যবস্থায় নিযুক্ত করা যেতে পারে, যা আরও সুদক্ষ এবং স্থিতিশীল পরিবহণের দিকে চালিত করবে।

এআই বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রক্রিয়া ও বিশ্লেষণ করার জন্য মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে জলবায়ু মডেলগুলির নির্ভুলতা এবং দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

এআই অরণ্য, সমুদ্র এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এআই অরণ্যবিনাশ বা অবৈধ মাছ ধরার কার্যকলাপ শনাক্ত করতে, বন্যপ্রাণী স্থানান্তরের ধরনগুলির উপর নজরদারি চালাতে এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করতে স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এই তথ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) ন্যাশনাল কার্বন প্রজেক্ট তৈরি করেছে, যেটি ভারতের অরণ্যের আয়তনের মানচিত্র তৈরি ও নিরীক্ষণ করতে এবং কার্বন নিঃসরণ ও অপসারণের পরিমাণ অনুমান করতে এআই এবং রিমোট সেন্সিং ব্যবহার করে। এর ফলে প্রমাণভিত্তিক অরণ্য সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর করে।

সর্বোপরি, এআই সম্প্রদায় এবং সরকারগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে অবদান রাখতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এআই উপকূলীয় ক্ষয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের বিন্যাসের তথ্য বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এর ফলে সমুদ্রের প্রাচীর নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলিকে স্থানান্তরিত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রক্ষা করার মতো অভিযোজন ব্যবস্থাগুলির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকে সমর্থন জোগানো যায়।

এআই কার্যকর জলবায়ু নীতির বিকাশ ও বাস্তবায়নে অংশীদারদেরও সাহায্য করতে পারে। এটি নিঃসরণ, অর্থনৈতিক সূচক এবং সামাজিক কারণগুলির নিরিখে তথ্য বিশ্লেষণ করতে সক্ষম যা বিভিন্ন নীতি বিকল্পের সম্ভাব্য প্রভাবগুলির মডেল তৈরি করতে পারে। এটি নীতিনির্ধারকদের বিভিন্ন নীতি পরিস্থিতির ব্যয়, সুবিধা এবং ভারসাম্য বিবেচনা করে জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়াও এআই প্যারিস চুক্তিতে বর্ণিত উপগ্রহ তথ্য বিশ্লেষণ করে, রিমোট সেন্সিং এবং জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলির অগ্রগতি মূল্যায়ন করার মতো জলবায়ু প্রতিশ্রুতিগুলির পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের সুবিধা প্রদান করতে পারে।

এআই এবং মেশিন লার্নিং (এমএল) জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্প, ঝুঁকি এবং ফলাফল সম্পর্কিত বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়ন ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলিকে সহজতর করে তোলে। এটি স্থিতিশীল প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগের সুযোগ চিহ্নিত করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে উচ্চতর প্রভাব ফেলে এমন জলবায়ু কর্মসূচির জন্য সম্পদ বরাদ্দকরণে সহায়তা করতে পারে।

জনজাতি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং অনুশীলনগুলিকে অন্তর্ভুক্তকারী দেশজ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ জলবায়ু কর্মসূচির জন্য শক্তিশালী সমাধানসূত্র প্রদান করতে পারে৷[/pullquote]

এটি জলবায়ু কার্যকলাপে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা এবং ক্ষমতায়নকে সহজতর করতে পারে। এআই-চালিত মঞ্চগুলির মাধ্যমে নাগরিকরা তথ্য ব্যবহারের সুযোগ পান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত উদ্যোগগুলিতে অবদান রাখতে সক্ষম হন। এআই পরিবেশগত তথ্যের রিয়েল-টাইম মনিটরিং এবং রিপোর্টিং সক্ষম করার পাশাপাশি ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করতে পারে, যাতে তারা পরিবেশগত প্রভাবগুলির জন্য ব্যবসায়ী সংস্থা ও সরকারকে দায়ী করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জনসাধারণের উপলব্ধি, মনোভাব এবং আচরণ বোঝার জন্য এআই সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক গণমাধ্যমের তথ্য, অনুভূতি বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য যোগাযোগ শৃঙ্খলগুলির বিশ্লেষণ করতে পারে।

উপসংহার

এটি মেনে নেওয়া জরুরি যে, জলবায়ু কার্যকলাপে এআই-এর অন্তর্ভুক্তি নৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ উত্থাপন করে, যেগুলি যত্নপূর্বক মোকাবিলা করা দরকার। তথ্যের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং গোপনীয়তার মতো সমস্যাগুলিকে অবশ্যই সুষ্ঠু, ন্যায্য ও দায়িত্বশীল পদ্ধতির মাধ্যমে এআই ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে এবং লক্ষ রাখতে হবে যে, জলবায়ু কার্যকলাপে এআই-এর সুবিধা যেন বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করা হয়। জনজাতি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং অনুশীলনগুলিকে অন্তর্ভুক্তকারী দেশজ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ জলবায়ু কর্মসূচির জন্য শক্তিশালী সমাধানসূত্র প্রদান করতে পারে৷ সর্বোপরি দেশজ বুদ্ধিমত্তা হল শতবর্ষ ধরে সঞ্চিত মানুষের প্রজ্ঞা এবং এটিকে ব্যবহার করে এআই ইঞ্জিনগুলিকে আরও কার্যকর করে তোলা সম্ভব। দেশজ বুদ্ধিমত্তার প্রজ্ঞার সঙ্গে এআই শক্তির সংমেল ঘটিয়ে আমরা আরও কার্যকর, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল জলবায়ু কর্মসূচি গড়ে তুলতে পারি, যা মানুষ এবং গ্রহ উভয়ের জন্যই মঙ্গলময় হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.