Author : Ayjaz Wani

Published on Jun 22, 2024 Updated 0 Hours ago

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী ভূ-অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে নিজের অবস্থান জাহির করতে এবং চিনের প্রভাব রোধ করতে টিআইটিআর-এর উন্নয়নকে পুঁজি করতে হবে।

ইউরোপে চিনা বিআরআই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ককেশাসের উপর নির্ভরশীল

চিন কৌশলগত ভাবে ট্রান্স-ক্যাস্পিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট করিডোর (টিআইটিআর)-- যাকে মিডল করিডোরও বলা হয় -- এর সঙ্গে তাদের উচ্চাভিলাষী আন্তর্মহাদেশীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-কে (বিআরআই) যুক্ত করতে আগ্রহী, এবং তাদের এই পরিকল্পনা এখন আজারবাইজানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। আজারবাইজান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যেখানে পূর্ব মিলিত হয় পশ্চিমে। টিআইটিআর হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) দ্বারা অনুমোদিত এমন একটি মাল্টিমোডাল বা বহুমুখী পরিবহণ পথ, যা মধ্য এশিয়া, কাস্পিয়ান সাগর এবং ককেশাস জুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন সিল্ক রোডের ছায়া। ইইউ এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে নির্ভরযোগ্য সংযোগের প্রয়োজনীয়তা দ্বারা চালিত এই প্রকল্পের গতি বেড়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে। বেজিং টিআইটিআর বরাবর একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে তার বিআরআই-কে শক্তিশালী করার লক্ষ্য স্থির করেছে। চিনা গবেষক এবং সরকারি কর্মকর্তারা দুটি সংযোগ প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে আজারবাইজানের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন।

 

আজারবাইজান এবং বিআরআই

আজারবাইজান কৌশলগত ভাবে কাস্পিয়ান সাগরে তীরে অবস্থিতইরান রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার পরে মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে সংযোগ পথ এবং পাইপলাইনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু হিসাবে আজারবাইজানের তাত্পর্য বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে চিনে একটি সরকারি সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বিআরআই-এর প্রচার চালাতে এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর করেন। যাই হোক, বেজিং-এর টিআইটিআর সম্পর্কে মিশ্র অনুভূতি ছিল কারণ এটি ইউরোপে রাশিয়ার উত্তর পথের প্রতিযোগিতামূলকতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। মস্কোর সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপড়েনে অনিচ্ছুক বেজিং আজারবাইজান টিআইটিআর-এ খুব সামান্য বিনিয়োগ করেছে। ২০১৭ সালের মধ্যে চিন আজারবাইজানে ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মাত্র পাঁচটি বিআরআই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। চিনা সংস্থাগুলি আজারবাইজানে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, বিশেষ করে তেল ও টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে, যেখানে বাকু চিনে ১৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। কিছু অংশগ্রহণকারী টিআইটিআর দেশও বিআরআই-এর সীমিত সাফল্য এবং চিনের সন্দেহজনক অভিপ্রায় উল্লেখ করে বেজিংয়ের সঙ্গে যৌথ প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করেছে।

 

আজারবাইজান কৌশলগত ভাবে কাস্পিয়ান সাগরে তীরে অবস্থিতইরান রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার পরে মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে সংযোগ পথ এবং পাইপলাইনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু হিসাবে আজারবাইজানের তাত্পর্য বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

পরবর্তী কালে আজারবাইজান তার বেশির ভাগ প্রকল্পে অর্থায়ন করে, আধুনিক সুবিধার সঙ্গে তার অবকাঠামো সংস্কার করে। এই অবকাঠামোগুলির মধ্যে অন্যতম হল জর্জিয়ায় নতুন কাস্পিয়ান সমুদ্র বন্দর, আটালে মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী এবং তুর্কিয়ে আজারবাইজানকে সংযুক্তকারী বাকু-তিবিলিসি-কারস রেললাইন ২০১৭ সালে ৮২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকু-তিবিলিসি-কারস রেললাইনটির সূচনা করা হয় এবং বাকু ৪২৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই রেলপথের ৬০ শতাংশ বিদ্যুদয়িত এবং প্রায় ৪০ শতাংশ একটি ডাবল-ট্র্যাক লাইন। এই রেলপথগুলি বাকুর নতুন কাস্পিয়ান সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, যা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংযোগের সুবিধা প্রদান করে।

 

ইইউ-এর জন্য টিআইটিআর-এর কৌশলগত তাৎপর্য

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব এবং পরবর্তী কালে মস্কোর উপর মার্কিন ও ইইউ কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর করিডোরটি অকার্যকর হয়ে পড়ে, যার ফলে ইউরোপীয় পরিবহণ অপারেটর এবং শিপাররা অন্য বিকল্পের সন্ধান করে। সর্বোপরি, ইউক্রেনের উপর রুশ আক্রমণ তাদের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল, চিনের উপর অত্যধিক নির্ভরতা হ্রাস করার পাশাপাশি তারা টিআইটিআর-কে রাশিয়ার উপর তাদের নির্ভরতা হ্রাস করার একটি উপায় বলে মনে করে।

৪৫০০ কিলোমিটার রেললাইন এবং ৫০০ কিলোমিটার সমুদ্রপথে বিস্তৃত টিআইটিআর রাশিয়ান নর্দার্ন রিডোরের থেকে ২০০০ কিমি ছোট, যা এটিকে পরিবহণের জন্য পছন্দের বিকল্প করে তুলেছে। টিআইটিআর বরাবর  কন্টেনার ট্র্যাফিক ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ইইউ তার শক্তির উত্সগুলিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে তার ভূ-কৌশলগত ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থকে সমর্থন জোগানোর উদ্দেশ্যে টিআইটিআর-এর উন্নতি সাধনে আগ্রহী কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণ গ্যাস করিডোরের মাধ্যমে গ্যাস ক্রয় রাশিয়ান সরবরাহ প্রতিস্থাপনের জন্য অপ্রতুল হলেও ইইউ এটিকে একটি কৌশলগত বিকল্প বলেই মনে করে। তুর্কমেনিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রান্স কাস্পিয়ান পাইপলাইন-এর (টিসিপি) মাধ্যমে কাস্পিয়ান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ইউরোপে গ্যাস ক্রয় বাড়ানোর অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাকৃতিক গ্যাস বাজারের উপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইউরোপ তার ৩৯ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে, যা ২০২৩ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মাত্র ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।

ইইউ এবং মধ্য এশিয়ার নেতৃত্ব ভূ-কৌশলগত ভূ-অর্থনৈতিক কারণে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ইইউ কাউন্সিলের সভাপতি টিআইটিআর-এ ইউরোপের আরও উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা করতে মধ্য এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় বসেছেন। ২০২২ সালে প্রথম ইইউ-সেন্ট্রাল এশিয়া সামিট পারস্পরিক স্বার্থ ও অভিন্ন সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী প্রগতিশীল অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনের সময় নেতারা মধ্য এশীয় অঞ্চল এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ পথের বিকাশ এবং সংযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্য স্থির করেছেন। ইইউ নেতৃবৃন্দ এবং ইইউ দেশগুলির প্রধানমন্ত্রীদের উচ্চ পর্যায়ের সফরের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাও এই শীর্ষ সম্মেলনগুলিকে সমর্থন জুগিয়েছে।

 

২০২৩ সালে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনের সময় নেতারা মধ্য এশীয় অঞ্চল এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ পথের বিকাশ এবং সংযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্য স্থির করেছেন।

 

ইইউ এবং বিআরআই

চিনের তরফে বিদেনীতির একটি সাধনী হিসাবে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ২০১৩ সালে বিআরআই-এর সূচনা করা হয়েছিল। চিনারা এটিকে তার বিদেশে উন্নয়ন কৌশল এবং বৈদেশিক নীতির উপর ভিত্তি করে নিজের অতিরিক্ত কর্মক্ষমতাকে ‘অন্য খাতে’ চালিত করার উপায় বলে মনে করেছিল। যাই হোক, ইইউ কর্মকর্তারা যুক্তি দেন যে, বিআরআই-তে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং তা এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলিকে অস্থিতিশীল ঋণ ফাঁদে ফেলেছে। নিরাপত্তা, নজরদারি এবং দমন-পীড়নের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী জোটের মতো সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কেও তাঁরা সতর্ক। এই ঝুঁকিগুলি ব্রাসেলসকে চিনের বিআরআই-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চালিত করেছে। ইতালি ইইউ-এর যে দেশ বিআরআই-কে সমর্থন করেছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এই প্রকল্প থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়

 

চিনের তরফে বিদেনীতির একটি সাধনী হিসাবে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ২০১৩ সালে বিআরআই-এর সূচনা করা হয়েছিল। চিনারা এটিকে তার বিদেশে উন্নয়ন কৌশল এবং বৈদেশিক নীতির উপর ভিত্তি করে নিজের অতিরিক্ত কর্মক্ষমতাকে ‘অন্য খাতে’ চালিত করার উপায় বলে মনে করেছিল।

 

কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পর ইইউ গ্লোবাল গেটওয়ে পরিকল্পনা চালু করেছে, যার লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গবেষণা শিক্ষা, ডিজিটাইজেশন, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, জলবায়ু ও জ্বালানি শক্তিতে ৩৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করাএই পরিকল্পনার অধীনে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ইইউ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা সম্পূর্ণ রূপে সমর্থিত টিআইটিআর এবং মধ্য এশিয়া বরাবর স্থিতিশীল অবকাঠামোর সংস্কার করতে ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তী কালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিআইটিআর-এর উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক অবকাঠামো এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জি৭ অংশীদারিত্বকে ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দেয়। চি, রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা পরিচালনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইইউকে সাহায্য করার ক্ষমতা টিআইটিআর-এর রয়েছে।

চিনের অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্নীতি, ঋণের চাপ এবং ব্যর্থ অবকাঠামো প্রকল্প বেজিংকে তার উচ্চাভিলাষী বিআরআই-তে ব্যয় হ্রাস করতে বাধ্য করেছে। চিন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন ভূ-কৌশলগত এবং ভূ-অর্থনৈতিক সমীকরণে, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নকরণ এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে তার অবস্থান সশক্ত করার জন্য টিআইটিআর-এর উপর প্রভাব অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছেটিআইটিআর ইইউ-কে একটি উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক ভূ-অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার সুযোগ করে দেবে, বিশেষ করে মধ্য এশিয়ায় চিন এবং রাশিয়া উভয়কেই প্রতিহত করতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী ভূ-অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে তার অবস্থান জাহির করতে এবং দক্ষিণ ককেশাসের সঙ্গে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে টিআইটিআর-এর উন্নয়নকে পুঁজি করতে হবে। এই কৌশলগত পদক্ষেপ কার্যকর ভাবে এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে খর্ব করবে এবং তার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।

 


আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.