Author : Manoj Joshi

Published on Mar 26, 2025 Updated 0 Hours ago

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি অনিচ্ছাকৃতভাবে চিনকে গবেষণা ও উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করতে উৎসাহিত করেছে, যার ফলে তারা পশ্চিমী আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম হয়েছে।

চিনের প্রযুক্তিগত উত্থান: পশ্চিমী প্রতিষ্ঠানগুলিকে ছাড়িয়ে যাওয়া

 মর্যাদাপূর্ণ বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার কর্তৃক প্রকাশিত একটি সূচক অনুসারে,  চিনের একটি আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয় — চেংডুতে অবস্থিত সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় (এসসিইউ) — সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইটি, অক্সফোর্ড ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে বিজ্ঞান গবেষণার দিক থেকে ১১তম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে উঠে এসেছে। সূচকটি প্রতিষ্ঠানগুলিকে মূল্যায়ন করে শীর্ষস্তরের বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলির নিবন্ধের খতিয়ানে তাদের অবদানের ভিত্তিতে। নেচার-‌এর সূচক পাঁচটি ক্ষেত্র পরিমাপ করে:‌ জৈবিক বিজ্ঞান, রসায়ন, পৃথিবী ও পরিবেশ বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও ভৌত বিজ্ঞান।

হার্ভার্ড শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও, তালিকার অন্য নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটিই চিনে, এবং তারপরে আছে এসসিইউ। যদিও চিন সম্প্রতি এআই কোম্পানি ডিপসিক-‌এর কারণে বিশ্বব্যাপী শিরোনাম অর্জন করেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শক্তি হয়ে ওঠার প্রচেষ্টার কারণে গত দশকেই দেশটি যথেষ্ট ভরবেগ অর্জন করেছে।

সূচকটি প্রতিষ্ঠানগুলিকে মূল্যায়ন করে শীর্ষস্তরের বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলির নিবন্ধের খতিয়ানে তাদের অবদানের ভিত্তিতে।



এই প্রক্রিয়ায়
এসসিইউ-এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গবেষণার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চস্তরের গবেষকদের আকর্ষণ করা, তহবিল বৃদ্ধি করা, শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদারিত্ব প্রসারিত করা, এবং আন্তর্জাতিক অ্যাকাডেমিক বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি কয়েক ডজন দেশ ও অঞ্চল থেকে ৫,০০০-এরও বেশি বিশিষ্ট পণ্ডিতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এবং সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে প্রচারমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ২০০৮ সাল থেকে, চিন ‘‌থাউজেন্ড ট্যালেন্টস প্রোগ্রাম’‌ নামে একটি কর্মসূচি পরিচালনা করছে, যা বিদেশি চিনা ও অ-চিনা বিজ্ঞানীদের চিনে কাজ করার জন্য যথেষ্ট আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কাজ করে।

সম্প্রতি, ইচ্ছাকৃত বা কাকতালীয়ভাবে, আমরা চিনা প্রযুক্তিগত সাফল্যের খবরে প্লাবিত হয়েছি। সন্দেহ নেই যে জানুয়ারি মাসের শেষে দুটি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের কথা প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল প্রভাব ফেলা। এগুলির ছবি তোলা হয়েছিল কম উচ্চতায়, এবং ছবিগুলি প্রচার করা হয়েছিল সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মতামত প্রভাবিত করার জন্য। একইভাবে,
ডিপসিক আর১ চ্যাটবট অ্যাপ্লিকেশনটি, যা উদ্বোধনের পরপরই অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে সর্বাধিক ডাউনলোড করা বিনামূল্যের অ্যাপ হয়ে ওঠে, তা প্রকাশের লক্ষ্য ছিল কার্যকারিতা, যদিও ডিপসিক কোম্পানিটি তার চ্যাটবট লঞ্চের প্রতিক্রিয়াটি আগে থেকেই অনুমান করতে পারেনি।

গত তিন বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক কম্পিউটার চিপ এবং সেগুলি তৈরির জন্য বিশেষায়িত সরঞ্জামগুলিতে চিনের প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য কাজ করেছে। এর লক্ষ্য ছিল লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরিতে চিনের অগ্রগতি ধীর করে দেওয়া। ডিপসিক বলেছে যে
তাদের মডেলটি এনভিডিয়া এইচ৮০০ চিপ ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত। এনভিডিয়া উচ্চমানের প্রযুক্তির উপর বিধিনিষেধের পরে বিশেষভাবে চিনা বাজারের জন্য এইচ৮০০এআই চিপ তৈরি করেছিল।


সন্দেহ নেই যে জানুয়ারি মাসের শেষে দুটি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের কথা প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল প্রভাব ফেলা।



২০২৪ সালে এইচ৮০০-‌ও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর হওয়ার আগেই চিনা কোম্পানিগুলি হাজার হাজার চিপ মজুদ করে রেখেছিল। ডিপসিক দাবি করেছে যে পশ্চিমী কোম্পানিগুলি দ্বারা অনুরূপ প্রযুক্তির জন্য ব্যবহৃত উচ্চমূল্যের চিপগুলির জন্য যা ব্যয় করা হয় তার একটি ভগ্নাংশে তার মডেলগুলি তৈরি করা হয়েছে। এই দাবিটি এই সত্য দ্বারা সমর্থিত হয়েছে যে, এটি কীভাবে তার মডেল তৈরি করেছে তার বিশদ বিবরণী একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে শেয়ার করা হয়েছে। এটি একটি কম খরচের পদ্ধতি চালু করার জন্য একটি প্রণোদনা হতে পারে, যা মার্কিন কোম্পানিগুলির ক্ষতি করবে।

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে এবং এখন
এআই চিপের উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। তারা দেশগুলিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছে:‌ প্রথম স্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ১৮টি মিত্র ও অংশীদার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় স্তরে প্রতিটি দেশে রপ্তানি করা চিপের সংখ্যার উপর সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং লাইসেন্সিং ও বাধ্যতামূলক শেষ-ব্যবহারকারী শংসাপত্র আবশ্যক করা হয়েছে। চিন এবং ভারত এই গোষ্ঠীতে রয়েছে। তৃতীয় স্তরে উত্তর কোরিয়া, ইরাক, ইরান ও রাশিয়ার মতো দেশ রয়েছে, যাদের প্রযুক্তিতে কোনও প্রবেশাধিকার থাকবে না।


শুরু থেকেই চিন বিভিন্ন উপায়ে — কেনা, চুরি করা বা বিদেশি কোম্পানিগুলিকে দিতে  বাধ্য করার মাধ্যমে — মূল প্রযুক্তিগুলি অর্জন করার পরে দেশে ‘‌পুনরুন্নয়ন’‌ বা পুনর্বিকাশ করার চেষ্টা করেছে। একটি প্রাথমিক উদাহরণ ছিল হাই-স্পিড রেল (এইচএসআর) প্রযুক্তি।

স্থানীয়ভাবে এইচএসআর বিকাশে ব্যর্থ হওয়ার পর চিন 
২০০২-২০০৮ সালের মধ্যে, চারটি প্রধান আন্তর্জাতিক নির্মাতাসংস্থার সঙ্গে সহযোগিতামূলক চুক্তিতে প্রবেশ করে: কাওয়াসাকি, বোম্বার্ডিয়ার, অ্যালস্টম ও সিমেন্স। এতে কোম্পানিগুলিকে তাদের প্রযুক্তি চিনা অংশীদারদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে বলা হয়েছিল।


২০০৯ সাল নাগাদ, এই পদ্ধতির মাধ্যমে চিন এইচএসআর প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে, যার মধ্যে নকশা, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পরিচালনা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত, গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়। এর সমান্তরালভাবে, চিনারা ৫০০টি কোম্পানি এবং ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একটি বিস্তৃত দেশীয় সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করে, এবং প্রযুক্তির বিকাশ পরিচালনার জন্য চায়না রেলওয়ে রোলিং স্টক কোম্পানি (সিআরআরসি) নামে একটি একক সংস্থা তৈরি করে। আজ, বিশ্বের মোট এইচএসআর সিস্টেমের তিন-পঞ্চমাংশ চিনা।

যদিও চিন সর্বদা প্রযুক্তির স্বদেশীকরণকে উৎসাহিত করার নীতি অনুসরণ করে আসছে, তবুও ২০১৫ সালের দিকে তারা
‘‌মেড ইন চায়না’‌ কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করার নীতি চালু করে, যা সবুজ ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উপর জোর দেয়। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে এবং চিনা সংস্থাগুলি বেশ কয়েকটি শিল্পে শীর্ষ স্তরে পৌঁছেছে। গত অক্টোবরে ব্লুমবার্গের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চিন পাঁচটি মূল প্রযুক্তিতে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের অবস্থান অর্জন করেছে:‌ ইউএভি, সৌর প্যানেল, গ্রাফিন, হাই-স্পিড রেল, এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন ও ব্যাটারি। একই সঙ্গে, এটি কম্পিউটার চিপস, এআই, রোবট, মেশিন টুলস, বৃহৎ ট্রাক্টর, ওষুধ ও এলএনজি ক্যারিয়ারের মতো প্রযুক্তিতে ‘‌প্রতিযোগিতামূলক’‌ হয়ে উঠেছে।


চিনাদের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি একটি বিপরীতমুখী প্রভাব ফেলছে, এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপদ হতে পারে।



কিছু প্রযুক্তিগত সীমানা এই তালিকায় স্থান পায় না।
দ্য ইকনমিস্ট যেমন উল্লেখ করেছে, এর মধ্যে একটি হল কোয়ান্টাম প্রযুক্তি। প্রকাশনাটি বলে, ‘‘‌‌কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনস-‌এর ক্ষেত্রে চিন অবিসংবাদিত নেতা।’’‌‌ তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে এগিয়ে, আর কোয়ান্টাম সেন্সিংয়ে দেশদুটির তুল্যমূল্য প্রতিযোগিতা চলছে।


আরেকটি ক্ষেত্র হল জৈবপ্রযুক্তি, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, কৃষি জৈবপ্রযুক্তি ও জৈব-উৎপাদনে অগ্রগতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মৌলিক গবেষণায় এগিয়ে, অন্যদিকে চিন ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি বিকাশের জন্য প্রায়োগিক গবেষণায় মনোনিবেশ করছে।


অন্য ক্ষেত্রগুলি হল উন্নত উপকরণ, ব্লকচেন, ইন্টারনেট অফ থিংস, সাইবার নিরাপত্তা, সংযোজন উৎপাদন, পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তি, মহাকাশ প্রযুক্তি, এবং ৫জি ও টেলিকম।

ডিপসিক যে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কম সক্ষম চিপ ব্যবহার করেছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে উচ্চমানের চিপগুলিতে প্রবেশাধিকার থাকলে এটি আরও ভাল করতে পারত। সেই অর্থে, চিনা প্রযুক্তিগত বৃদ্ধি ধীর করার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টা যুক্তিসঙ্গত। তবে,
চিনাদের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি একটি বিপরীতমুখী প্রভাব ফেলছে, এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপদ হতে পারে।


চিনারা এখন তাদের ‘‌মেড ইন চায়না’‌ প্রোগ্রাম বা ‘‌থাউজ্যান্ড ট্যালেন্টস প্রোগ্রাম’‌ নিয়ে গর্ব করা বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে এসবের প্রতিবিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষিত না হয়। তাদের সামগ্রিক কৌশল ত্রিমুখী: পশ্চিমীদের দ্বারা সীমাবদ্ধ প্রযুক্তির প্রতিলিপি তৈরি করা, তাদের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একটি তরুণ এবং আরও উৎপাদনশীল দল তৈরির উপর জোর দেওয়া, এবং তৃতীয়ত, সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, যেখানে পশ্চিমীদের কাছে ইন্টারনাল কমবাশন ইঞ্জিনের মতো নেতৃত্ব নেই, যেমন ফোটোনিক কম্পিউটিং, ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, নিউক্লিয়ার ফিউশন ও টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে।



মনোজ জোশী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন বিশিষ্ট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.