Author : Ayjaz Wani

Published on Jun 19, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত এবং ইরানের মধ্যে চাবাহার বন্দর চুক্তি ভারতকে ইউরেশিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে এবং চিনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে

চাবাহার বন্দর: ইউরেশিয়ায় চিনের বিআরআই-এর মোকাবিলায় ভারতের পাল্টা অস্ত্র

১৩ মে ভারতের বন্দর, নৌপরিবহণ ও জলপথ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বালুচিস্তান প্রদেশের সিস্তানে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দর পরিচালনা ও বিকাশের জন্য ইরানের সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল) মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান,  দক্ষিণ ককেশাস এবং বৃহত্তর ইউরেশীয় অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সংযোগকে শক্তিশালী করতে চাবাহার বন্দরে প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং লোহিত সাগরে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মধ্যে চুক্তিটি ভারতকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রবেশাধিকার এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপক সংযোগের জন্য ইউরেশিয়া জুড়ে চলাচলের অধিকার প্রদান করবে। উপরন্তু, এই চুক্তি ভারতকে চিন-পাকিস্তান জোট এবং চিনের বহুল প্রচারিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ব্যবহারিক সুবিধা এবং কৌশলগত প্রভাব দেবে। এই প্রকল্পটি ভারতকে ইউরেশিয়ার সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে বাধা দিতেও সাহায্য করে, যারা বেজিংয়ের আধিপত্যবাদী ও যুদ্ধবাদী মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত এবং ইউরেশিয়ায় নতুন দিল্লির অতীত সংযোগ উদ্যোগগুলিকে ঐতিহ্যগতভাবে অবরুদ্ধ করেছে 


বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং লোহিত সাগরে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মধ্যে চুক্তিটি ভারতকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রবেশাধিকার এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপক সংযোগের জন্য ইউরেশিয়া জুড়ে চলাচলের অধিকার প্রদান করবে।


ইউরেশিয়ায় ভারতের প্রবেশদ্বার

যদিও ভারত ২০০৩ সালে কৌশলগত চাবাহার বন্দরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, তবে শুধুমাত্র ২০১৫ সালে নয়াদিল্লি ও তেহরানের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৬ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেহরান সফরের সময় চাবাহার বন্দর উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখন চাবাহার বন্দর নির্মাণে গতি আসে। ২০১৮ সালে আইপিজিএল ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পর বন্দরের শহিদ বেহেশতি টার্মিনালটি চালু হয়। ২০১৯ সাল থেকে আইপিজিএল ১০০ থেকে ১৪০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি মোবাইল ক্রেন স্থাপন করার পর বন্দরটি দক্ষতার সঙ্গে ৯০,০০০ টিইইউ এবং ৮.৪ মিলিয়ন টন সাধারণ কার্গো চালনা করেছে

চাবাহার বন্দর আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোর (আইএনএসটিসি)–এর বিভিন্ন করিডোরের মাধ্যমে মুম্বইকে ইউরেশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র। আইএনএসটিসি ৭,২০০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত, এবং এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপথ ও মুম্বইকে ইউরেশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য রেল ও সড়ক সংযোগ। ভারত, রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সেপ্টেম্বর ২০০০ চুক্তিতে এটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারপর থেকে রাশিয়া, ভারত, ইরান, তুর্কিয়ে, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুলগেরিয়া, আর্মেনিয়া, মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলি, ইউক্রেন এবং ওমান সহ ১৩টি দেশ আইএনএসটিসি চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। অনুমান অনুসারে, আইএনএসটিসি ট্রানজিট সময়কে ৪৫-৬০ দিন থেকে ২৫-৩০ দিনে কমিয়ে আনবে এবং যা সম্প্রতি আঞ্চলিক সংঘাতের কারণে বাধার সম্মুখীন হয়েছে সেই সুয়েজ খাল রুটের তুলনায় ৩০ শতাংশ মালবহন খরচ কমিয়ে দেবে।


২০১৬ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেহরান সফরের সময় চাবাহার বন্দর উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখন চাবাহার বন্দর নির্মাণে গতি আসে


২০১৬ সালে নয়াদিল্লি ও তেহরান দ্ব্যর্থহীনভাবে একটি ৬২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চাবাহার-জাহেদান রেল সংযোগ নির্মাণের মাধ্যমে চাবাহার বন্দরকে আইএনএসটিসি-র সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে যৌথ ব্যাপক কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) থেকে একতরফাভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করে, এবং ইরানের উপর এমনকি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ইরানের অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে, যার ফলে ইরানের
রেলওয়ে ব্যবস্থার সঙ্গে চাবাহার সংযোগকারী এই গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন নির্মাণে একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা লেগেছে।

কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে নয়াদিল্লি ২০১৮ সালে চাবাহার বন্দর এবং অন্যান্য পরিকাঠামো প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছাড় পেতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীকালে ভারত ২০২০-২১ সালের ৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বন্দর উন্নয়ন বাজেট দ্বিগুণ করে ২০২২-‌২৩ সালে ১২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে গিয়ে চাবাহার বন্দরের প্রতি তার দায়বদ্ধতা জোরদার করেছে। ভারতের সক্রিয় অবস্থান সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা,
আন্তঃ-আঞ্চলিক বিরোধ এবং আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলির মধ্যে বারবার অর্থায়ন বিলম্বের কারণে গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার-জাহেদান রেললাইন নির্মাণের গতি কমে যায়, এবং ২০২৩ সালে প্রকল্পের মাত্র ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। একবার রেল সংযোগ স্থাপন করা হলে, আইএনএসটিসি-র পূর্ব এবং পশ্চিম করিডোরের মাধ্যমে ভারতের বিশাল ইউরেশীয় বাজারে, প্রধানত মধ্য এশিয়ার, প্রবেশের সুযোগ থাকবে।

ভূ-অর্থনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত যুক্তি

ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি, এবং আগামী দুই বছরে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে। বৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে কেন্দ্রীয় বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে, নয়াদিল্লিকে তার ইউরেশিয়া জুড়ে ট্রানজিটের জন্য স্থিতিস্থাপক, নির্ভরযোগ্য এবং বৈচিত্রপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল এবং সংযোগের বিকাশ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি করার সম্ভাবনা থাকবে, যার জন্য স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির প্রয়োজনে বৃহত্তর ইউরেশিয়ার সঙ্গে সংযোগের নতুন শক্তিশালী যোগাযোগের প্রয়োজন হবে। চাবাহার বন্দর এবং এর উন্নয়ন ভারত ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে, যার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনা ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।


ইউরেশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির আঞ্চলিক সংযোগ ২০২০ সালে কৌশলগতভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পায় যখন ২০১৬ সালের চাবাহার, আইএনএসটিসি ও আশগাবাত চুক্তিতে বৃহত্তর সহমতের লক্ষ্যে ইরান ও ভারতের সঙ্গে উজবেকিস্তানের উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি হয়।


হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইউরেশীয় অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য চাবাহার বন্দর এবং আইএনএসটিসি ব্যবহার করে নয়াদিল্লি একটি সাহসী ও সক্রিয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এই পদ্ধতিটি সার্বভৌমত্ব ও  ভূখণ্ডগত অখণ্ডতাকে সমর্থন করে, যা এটিকে বিআরআই এবং চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পগুলি থেকে আলাদা করেছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলি ভারতের নেতৃত্বাধীন সংযোগ প্রকল্পগুলিকে এই অঞ্চলের জন্য গেম-চেঞ্জার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। তারা চিনের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এবং সংশ্লিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক হুমকি প্রশমিত করতে আইএনএসটিসি ও চাবাহারের মাধ্যমে তাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইউরেশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির আঞ্চলিক সংযোগ ২০২০ সালে কৌশলগতভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পায় যখন ২০১৬ সালের চাবাহার, আইএনএসটিসি ও আশগাবাত চুক্তিতে বৃহত্তর সহমতের লক্ষ্যে ইরান ও ভারতের সঙ্গে উজবেকিস্তানের উদ্যোগে
একটি ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি হয়

একইভাবে,
২০২২ সালে প্রথম ভারত-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সময়, পাঁচটি মধ্য এশিয়ার দেশের প্রেসিডেন্ট দুই ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে আরও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে আইএনএসটিসি-তে কৌশলগত চাবাহার বন্দরকে যুক্ত করার উপর জোর দিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের এপ্রিলে এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভারত, ইরান এবং মধ্য এশিয়া বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য চাবাহার বন্দরের কাজের বিষয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউপি) গঠন করে। বিআরআই-এর আধিপত্যবাদী প্রকৃতির আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে, মধ্য এশিয়ার দেশগুলি এবং ভারত সর্বদা অংশগ্রহণকারী দেশগুলির সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছে।

সামনের পথ

ভারতীয় বিনিয়োগকারী এবং জাহাজিরা চাবাহার বন্দরে বিনিয়োগ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন, কারণ ভারত মূলত বন্দর পরিচালনার জন্য স্বল্পমেয়াদি চুক্তি করে। যাই হোক, ১৩ মে ইরানের সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে। এটি অতিমারি, ইউক্রেনের সংঘাত এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকটের পরে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার মুখে ভারতের দৃঢ় এবং সক্রিয় বিদেশনীতিকেও তুলে ধরে। তা ছাড়া, নয়াদিল্লি পূর্ব ইউরোপীয় বাজার, কাস্পিয়ান অঞ্চল এবং এর বাইরেও প্রবেশাধিকার পেতে ট্রান্স-ক্যাস্পিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট রুট (টিআইটিআর) ব্যবহার করতে পারে, যাকে কখনও কখনও আইএনএসটিসি-র পশ্চিম রুটের মধ্য করিডোর বলা হয়। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের চাবাহার বন্দর এবং আইএনএসটিসিতে বিনিয়োগকে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে চিনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাবের কৌশলগত পাল্টা চাল হিসাবে দেখা উচিত। এই সম্ভাবনা বিকাশের জন্য, বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের, যাঁরা চাবাহার সংক্রান্ত ১০-বছরের চুক্তিকে একটি সুযোগ হিসাবে দেখেন, তাদের কর ছাড় দেওয়া উচিত।



আইজাজ ওয়ানি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.