Author : Sunaina Kumar

Published on Jul 02, 2024 Updated 0 Hours ago

প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ভারতে নির্বাচনী রাজনীতিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের প্রবণতা প্রতিকূল রাজনৈতিক অংশগ্রহণে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান কমাতে তাঁদের প্রস্তুতিকেই দর্শায়।

বন্ধুত্ব এবং সংহতিই ভিত্তি: কী ভাবে ভোটদানের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ব্যবধান কমানো হয়েছে

২০০৯ সালে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) প্রথম বারের মতো নির্বাচনী অংশগ্রহণে লিঙ্গ ব্যবধানকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে মহিলাদের ভোটদানের হার ছিল ৫৫.৮ শতাংশ এবং পুরুষ ভোটদানের হার ছিল ৬০.৩৬ শতাংশ। ফলে মহিলাদের ভোটদানের হার পুরুষের ভোটদানের তুলনায় পয়েন্টের বেশি পিছিয়ে ছিল। এই ব্যবধান মোকাবিলা করার জন্য ইসিআই সিস্টেমেটিক ভোটারস এডুকেশন অ্যান্ড ইলেক্টোরাল পার্টিসিপেশন (এসভিইইপি) চালু করে। এটি এমন একটি কর্মসূচি যার ফলে সারা দেশে ভোটারদের উপস্থিতি এবং ভোটার সাক্ষরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসভিইইপি নারী ম্যাসক, মহিলাদের সমাবেশ সংগঠিত করা এবং দেশব্যাপী প্রচারাভিযান চালিয়ে তৃণমূল স্তরের ভোটারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য নানাবিধ উদ্ভাবনী উপায় ব্যবহার করেছে।

 

এই ব্যবধান মোকাবিলা করার জন্য ইসিআই সিস্টেমেটিক ভোটারস এডুকেশন অ্যান্ড ইলেক্টোরাল পার্টিসিপেশন (এসভিইইপি) চালু করে। এটি এমন একটি কর্মসূচি যার ফলে সারা দেশে ভোটারদের উপস্থিতি এবং ভোটার সাক্ষরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

উত্তরপ্রদেশ হল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মহিলা ভোটারসম্পন্ন এবং কঠোর সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়া সর্বাধিক জনবহুল রাজ্যউত্তরপ্রদেশের ভোটারদের উৎসাহিত করার জন্য এই প্রচারকে এসভিইইপি দ্বারা গৃহীত গণসংহতির একটি উদাহরণ হিসেবে দর্শানো যায়:

মেয়ে: মা, আমাকে আটকে রেখো না, আমি ভোট দিতে যাব।

মা: ‘শোনো মেয়ের কথা! আমি তোমাকে কিছুতেই বাড়ির বাইরে যেতে দেব না। বরং বাড়িতে থাকো এবং কাজগুলো সেরে ফেলো

মেয়ে: মা, তোমার কাকিমা ভোট দিতে যাবে। এমনকি তোমার বৃদ্ধ দিদাও ভোট দিতে যাবে। তা হলে আমি নয় কেন? আমার কথা মন দিয়ে শোনো। আমি আমার ভোটার স্লিপ পেয়েছি। আমার নাম সেই তালিকায় আছে। আর আমি একজন ভোটার।

মা: ‘আমাকে সবটা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি ভোট দেব এবং তুমিও অবশ্যই ভোট দেবে।

 

২০১৪ সালের পরের নির্বাচনে এই কর্মসূচির প্রভাব দেখা গিয়েছিল, যেখানে নারী ভোটারদের বৃদ্ধি এবং লিঙ্গ ব্যবধান কমার পাশাপাশি সামগ্রিক ভোটারের উপস্থিতিতে একটি অবিশ্বাস্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৬৭.১৮ শতাংশের মহিলা ভোটার পুরুষদের ৬৭.০১ শতাংশ হারকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এই ধারাটি এই বছরের নির্বাচনে অব্যাহত থেকেছে। কারণ ইসিআই দ্বারা নিবন্ধিত তালিকাগুলি দর্শায় যে, ১২টি রাজ্যে নথিভুক্ত মহিলা ভোটারদের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি এবং পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশের বেশি নতুন মহিলাদের নাম ভোটারদের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

নারী, যুবক এবং প্রান্তিক মানুষদের ভোটদানের অধিকারের আওতায় আনার জন্য এসভিইইপি-র কাজকে ব্যাপক ভাবে কৃতিত্ব দেওয়া হলেও ভারতে নারী ভোটারের বৃদ্ধির নেপথ্যে আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলি হল নারীদের মধ্যে সাক্ষরতা ও সচেতনতার ক্রমবর্ধমান মাত্রা এবং পুরুষদের শহুরে অভিবাসন ঘটলেও নারীরা গ্রামেই রয়ে গিয়েছেন। ফলে বেশি সংখ্যক নারী ভোট দিয়েছেন। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী অংশ হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়ার ফলেও নারীদের ভোটদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

চিত্র ১: ভারতের জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে লিঙ্গ ব্যবধান (%)

সূত্র: ভয়েস.নেট (ভোটারদের তথ্য, যোগাযোগ ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য)

 

প্রথম সারির মহিলা কর্মী এবং স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীর মহিলাদের সাহায্যে সংঘবদ্ধ করা

মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য এসভিইইপি দ্বারা নিযুক্ত সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগুলির মধ্যে একটি হল বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৃণমূল স্তরে মহিলা কর্মীদের ক্যাডার হিসেবে চিহ্নিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গুজরাতেকথা। সেখানকার একটি উপজাতীয় জেলায় দেখা গিয়েছে যে, অনেক মহিলা নিজেদের ভোট দেওয়ার অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। তাই আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর (এসএইচজি) সদস্যরা সেই দিন গণ সমাবেশ করেছিলেন, যেদিন জেলা শিশুদের টিকাদান করা হয়। আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং এএনএম-এর একচেটিয়া ভাবে মহিলা ক্যাডারের সংখ্যা ভারতে ৬০ লক্ষেরও বেশি বলে অনুমান করা হয়। তাঁরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা, দুর্যোগ জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রদান এবং সমাজকর্মী হিসাবে প্রথম সারিতে কাজ করে

 

আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং এএনএম-এর একচেটিয়া ভাবে মহিলা ক্যাডারের সংখ্যা ভারতে ৬০ লক্ষেরও বেশি বলে অনুমান করা হয়।

 

স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে মহিলাদের ক্যাডার আসলে প্রথম সারির কর্মীদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুডস মিশনের (এনআরএলএম) অধীনে ১০ কোটিরও বেশি মহিলা সদস্যের পাশাপাশি বিশ্বে মহিলাদের এসএইচজিগুলির বৃহত্তম নেটওয়ার্ক ভারতে রয়েছে এবং এই গোষ্ঠীটি দেশের মহিলা ভোটারদের সংগঠিত করতে অবদান রেখেছে। গবেষণা দর্শায় যে, এসএইচজি সদস্যরা অ-সদস্যদের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক ভাবে জড়িত। তাঁদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে তাঁরা কাকে ভোট দেবে তা বেছে নেওয়া, গ্রামসভার মিটিংয়ে যোগ দেওয়া এবং অন্য মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, একে অপরকে চেনার মাধ্যমে বাকি মহিলাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকেন

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, গড়ে প্রতি গ্রামে ১৪টি এসএইচজি রয়েছে এবং প্রতি আটজন ভারতীয় মহিলার মধ্যে এক জন করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি মূলত সঞ্চয়কারী গোষ্ঠী, যা সঞ্চয় করা এবং ঋণ পাওয়ার মাধ্যমে মহিলাদের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করে এবং জীবিকার সুযোগগুলিকে উন্নত করার জন্য এই গোষ্ঠীগুলি ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত। কর্মসূচি অধীনে সংহতি শৃঙ্খল তৈরি হয় এবং তা সামাজিক প্রচারের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে মহিলাদের সম্পৃক্ত করে। কোভিড-১৯ অতিমারির প্রাদুর্ভাবের সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই গোষ্ঠীগুলিই সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। এসএইচজিগুলি মহিলাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে দৃঢ় ভাবে প্রভাবিত করে, যার মধ্যে রয়েছে তাঁদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, প্রশাসনিক জ্ঞান, আর্থিক সাক্ষরতা, গতিশীলতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

 

কর্মসূচি অধীনে সংহতি শৃঙ্খল তৈরি হয় এবং তা সামাজিক প্রচারের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে মহিলাদের সম্পৃক্ত করে।

 

বাস্তব জমিতে করা সমীক্ষা দর্শিয়েছে যে, এনআরএলএম এবং স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীর প্রভাব যথেষ্ট। অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ৬০ শতাংশ মহিলা ভোটার এসএইচজি-র অন্তর্গত এবং নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। অন্ধ্রপ্রদেশকে ভারতে স্বনির্ভর আন্দোলন শুরু করার জন্য কৃতিত্ব প্রদান করা হয়। অনেক রাজ্যের তথ্য সে ভাবে উপলব্ধ না হলেও কথা বলা যেতে পারে যে, স্বনির্ভর গোষ্ঠী গণতন্ত্র ও প্রশাসনকে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব দর্শিয়েছে।

রাজ্য ও জাতীয় স্তরে শ্রমশক্তি এবং আইন প্রণয়ন সংস্থাগুলিতে নারীদের প্রতিনিধিত্বের কারণে ভারতে নির্বাচনী রাজনীতিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের প্রবণতা একটি অসঙ্গতি হয়ে উঠেছে। এটি দর্শায় যে, অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের একটি বড় ব্যবধান থাকলেও নারীরা এ ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে যথেষ্ট সদিচ্ছা পোষণ করেন এবং তাঁদের সক্ষমতাও রয়েছে। এই বছর মহিলা সংরক্ষণ বিল প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংস্থাগুলিতে (গ্রামীণ এবং শহর উভয়ই) মহিলাদের অভিজ্ঞতার দিকে নজর দিলেই সামনের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব, যেখানে মহিলাদের জন্য ৩০ বছরের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ মহিলার অধিকারে একটি পরিবর্তনমূলক প্রভাব পড়েছে। নারীরা তাই স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থায় আসন অর্জন করতে এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে প্রস্তুত।

 


সুনয়না কুমার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.