Published on Feb 11, 2025 Updated 0 Hours ago

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অষ্টম কেন্দ্রীয় বাজেট আর্থিক আপ ছাড়াই অর্থনৈতিক স্বস্তি প্রদান করেছে।

বাজেট ২০২৫: মধ্যবিত্তের পক্ষে অবিশ্বাস্য, অর্থনীতির জন্য আর্থিক ভাবে দায়বদ্ধ

এমনটা মনে হচ্ছে যে, রোমাঞ্চকর ঘরানার চলচ্চিত্র নির্মাতা আলফ্রেড হিচকক তাঁর ছবির জন্য এক চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছেন, যার নাম ‘বাজেট ২০২৫’। তাঁর শৈলী ছিল দর্শককে ‘রহস্য উন্মোচন’-এর জন্য অপেক্ষায় রাখা যেখানে রহস্যের উন্মোচন নিশ্চিত, তবে প্রশ্ন শুধু সময়ের। অনুচ্ছেদ ৬-এ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে, তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর মনোযোগ দেবেন। কিন্তু তিনি এমনটা করেছেন অনুচ্ছেদ ১৬১-তে গিয়ে। এমনটা করার মাধ্যমে এই সুবিধার সম্ভাব্য প্রাপকদের তিনি তাঁএক ঘণ্টা ১৪ মিনিট দীর্ঘ  বক্তৃতার সময়ে টিভি-র পর্দায় আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছেন। এটিই ছিল নির্মলা সীতারামনের দেওয়া সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের বাজেট বক্তৃতা।

সীতারামনের অষ্টম কেন্দ্রীয় বাজেট মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অবাক করেছে। এই সুবিধাগুলির দরুন বিদ্যমান রাজস্ব হ্রাস পেলেও এটি আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা বজায় রেখেছে ও তার প্রতি দায়িত্বশীল থেকেছে। এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের আসন্ন আলাপ-আলোচনাকে মসৃণ করবে। কারণ এটিতে শুল্ক ও রাজস্ব ছাড়ের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আলাপ-আলোচনার জন্য জমি প্রস্তুত করার পাশাপাশি উন্মুক্ত মানসিকতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বাজেটে এমন ঘোষণা করা হয়নি, যা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে অথবা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারি আইনের কড়াকড়ির বিষয়টিকে শিথিল করতে পারে, যেমনটা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৫-২০২৬-এ ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।

যে সব ধনী ব্যক্তি ৩০ লাখ টাকার বেশি উপার্জন করা সত্ত্বেও কর ফাঁকি দেন, তাঁদেরকেও এই শুল্ক বলয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এই সব ব্যক্তির অপরিশোধিত করের পরিমাণ ২৩.৪ লক্ষ কোটি টাকা।

ব্যক্তিগত আয়কর সীমাকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার মাধ্যমে (অর্থাৎ ১২.৭৫ লাখ টাকা বেতনভোগীদের জন্য, যাঁরা ৭৫০০০ টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বা বিধিবদ্ধ ছাড় পান) সীতারামন সেই মানুষদের হাতে বার্ষিক ৮০,০০০ টাকা (বা প্রতি মাসে ৬৬৬৬ টাকা করে) তুলে দিচ্ছেন, যাঁরা প্রতি মাসে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন। বেস রেট বা ভিত্তি হারের এই লাফ যে কোনও গৃহস্থ মানুষেরই আশাতীত – কারণ এই ক্ষেত্রটিতে সাধারণত সামান্য পরিবর্তনই লক্ষ করা যায়। ২০১৪ সালে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি শূন্য করের মাত্রাকে ২.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থির করেছিলেন। সীতারামন এই মাত্রাটিকেই ২০১৯ সালে ৫ লাখ টাকা এবং ২০২৩ সালে লাখ টাকায় উন্নীত করেছিলেন। যাঁরা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন, তাঁদের হাতে অতিরিক্ত নগদের পরিমাণ দাঁড়াবে ১,১০,০০৭ টাকা (অর্থাৎ প্রতি মাসে ৯১৬৭ টাকা)।

এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের দিকে চালিত হতে পারে এবং স্বাভাবিক ভাবেই উপভোগের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে অথবা ব্যাঙ্ক বা বাজার দ্বারা মূলধন বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়ের দিকে চালিত হতে পারেসব দিক থেকেই এটি অর্থনীতির জন্য ভাল। এক দিকে যেমন সেনসেক্স নিফটি উত্থানবিহীন থেকেছে, তেমনই ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) স্টক ২.৯ শতাংশ, ভোক্তা স্থিতিশীলতা ২.৫ শতাংশ এবং রিয়েল এস্টেট ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি এ কথাই দর্শায় যে, করদাতাদের হাতে অর্থের প্রত্যাশা সম্ভাব্য ভাবে দাঁতের মাজন, সাবান বিস্কুটের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র রেফ্রিজারেটরের মতো গৃহস্থালির পণ্য কিংবা আবাসনের দিকে চালিত হতে পারে। এটি মধ্যবিত্তদের রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর না থাকার অভিযোগেরও অবসান ঘটায়। এই অর্থনৈতিক সুনাম নয়াদিল্লির নির্বাচনে রাজনৈতিক ভাবে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়।

কিন্তু এর একটি বিপরীত দিক আছে। ভারতে ৯৮ মিলিয়ন এমন পরিবার রয়েছে, যাদের উপার্জন ৫ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে। এদের মধ্যে মাত্র ১৫ মিলিয়ন মানুষ আয়কর প্রদান করেন এবং সেই সম্মিলিত পরিমাণ ১.৪ লক্ষ কোটি টাকাএই পরিসংখ্যান সত্যি হওয়ার অর্থ এই যে, ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রায় ৭.৮ লক্ষ কোটি টাকা কর দেয় না। এক লাখ কোটি টাকার পরিত্যক্ত রাজস্ব - যা এই বাজেট প্রস্তাবে উল্লিখিত হয়েছে – সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে, যদি কর ফাঁকিদাতা বা কর  পরিহারকারীদের শুল্ক বলয়ের আওতায় আনা যায়। সুতরাং, এই ক্ষেত্রটিতে নজর দেওয়ার জন্য সীতারামনের কাছে এখনই আদর্শ সময়। যে সব ধনী ব্যক্তি ৩০ লাখ টাকার বেশি উপার্জন করা সত্ত্বেও কর ফাঁকি দেন, তাঁদেরকেও এই শুল্ক বলয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এই ব্যক্তিদের অপরিশোধিত করের পরিমাণ ২৩.৪ লক্ষ কোটি টাকা।

রাজস্ব উৎপাদনের মূলে রয়েছে স্বতন্ত্র আয়কর প্রদানকারীরা, যাঁদের মোট প্রাপ্তির অংশ ২০১৮ সালের বাজেটে ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের বাজেটে ২২ শতাংশ হয়েছে।

লাভ সত্ত্বেও সীতারামন বাজেট ২০২৫-কে আর্থিক ভাবে দায়বদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ৪.৮ শতাংশ হারে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ শুধু মাত্র পূর্ববর্তী বছরের পরিসংখ্যানের তুলনায় আনুমানিক ১০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসই পায়নি, ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের জন্য এটির আনুমানিক মাত্রা দাঁড়াচ্ছে ৪.৪ শতাংশ এ কথা উল্লেখযোগ্য যে, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ বাজেটের – যখন এটি বেড়ে হয়েছিল ৯.২ শতাংশ – পর থেকে প্রতিটি কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি ধারাবাহিক ভাবে কমছে। ২০২১ সালের বাজেটে ৬.৮ শতাংশ, ২০২২ সালের বাজেটে ৬.৪ শতাংশ, ২০২৩ সালের বাজেটে ৫.৮ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের বাজেটে তা  ৫.১ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থমন্ত্রী হিসাবে সীতারামন আর্থিক দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক পরিপক্বতা দর্শিয়েছেন।

৫০.৬৫ কোটি টাকা নিঃসন্দেহে পূর্ববর্তী বছরের বাজেটের আকারের তুলনায় শতাংশ বৃদ্ধিকে দর্শায়গত ১১ বছরে কেন্দ্রীয় বাজেট ১০.৫ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা ২০১৪-১৫ সালের ১৬.৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান আকারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ ও পেনশনের মাত্রা ১১.৫ শতাংশের দ্রুততর হারে বাড়ছে। এগুলি হ্রাস করা দরকার।

রাজস্ব উৎপাদনের মূলে রয়েছে স্বতন্ত্র আয়কর প্রদানকারীরা, যাঁদের মোট প্রাপ্তির  অংশ ২০১৮ সালের বাজেটে ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের বাজেটে ২২ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে, কর্পোরেশন কর থেকে প্রাপ্তির অংশ ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশ এবং পণ্য ও পরিষেবা করের অংশ ২৩ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। একই ভাবে, ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ হল সুদ প্রদান, যা ১৮ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বাজেট ২০২৫-এ এ ছাড়াও ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীশুল্ক সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার জন্য ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এটিতে বাজেট ২০২৪- অনুরূপ অপসারণের পথ ধরে সাতটি শুল্ক হার অপসারণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ভারতকে আলোচনার জন্য পরিসর করে দেওয়ার পাশাপাশি এটি দেশীয় ব্যবসার জন্যও ভাল, যাঁরা এই পণ্যগুলিকে মধ্যবর্তী পণ্য হিসাবে ব্যবহার করেন। ওয়াশিংটন ডি.সি. ভারতের এ হেন পদক্ষেপকে কী নজরে দেখবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনার অবকাশ থাকলেও এ কথা সুনিশ্চিত যে, নয়াদিল্লি বেশ কিছু প্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়েছে।

সীতারামন দর্শিয়েছেন যে, সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আর্থিক ভাবে উদার, অর্থনৈতিক ভাবে বিচক্ষণ, রাজনৈতিক ভাবে চৌকস হওয়ার পাশাপাশি প্রকাশভঙ্গিমায় নাটকীয় হয়ে উঠতে পারেন।

তবে ফসোসের বিষয় হল এই যে, বাজেটে প্রবৃদ্ধির কোন সরাসরি আহ্বান নেই। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৫-এ সরকারি আইনের রাশ আলগা করার জন্য সুপারিশ করা হলেও ২০২৫ সালের বাজেটে সেই দাবির সুরাহা হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম হল জন বিশ্বাস ২.০, যেখানে কেবলমাত্র আরও ১০০টি বিধানকে অপরাধমুক্ত করা হবে (জন বিশ্বাস ১.০-তে ১১৩টি ধারা অপরাধমুক্তকরণ করা হয়েছিল, যা অপরাধমূলক ধারার সংখ্যাকে কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারিতে ৫১২৬০-এ কমিয়ে আনে)। এর থেকে চারটি লেবার কোড-কে সরিয়ে রাখা হলেও - যা আসলে সংখ্যাটিকে ২,৫০০-এ নামিয়ে আনবে – তা অপ্রতুলই থাকবে। এই সব কিছু এ কথাই দর্শায় যে, সংস্কার সাধনের কাজটি কতটা কঠিন। মোদীর দিক নির্দেশ সত্ত্বেও সরকার এখনও গড়িমসি করছে এবং এই সুবিশাল ক্ষমতা আমলাদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে, যাঁরা সম্পদ নির্মাতা ও উদ্যোগপতিদের শোষণের মাধ্যমে নাজেহাল করে চলেছেন।

সীতারামন দর্শিয়েছেন যে, সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আর্থিক ভাবে উদার, অর্থনৈতিক ভাবে বিচক্ষণ, রাজনৈতিক ভাবে চৌকস হওয়ার পাশাপাশি প্রকাশভঙ্গিমায় নাটকীয় হয়ে উঠতে পারেন।

 


গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.