Author : Sayantan Haldar

Published on Mar 25, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারতের তিনটি নতুন নৌ-‌সম্পদ কমিশনিং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার নিরাপত্তা নেতৃত্ব, প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান দেশীয়করণ, এবং নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত করে

ভারতীয় নৌবাহিনীর সশক্তকরণ: ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার জন্য তিনটি যুদ্ধজাহাজ কমিশন করা

ভারত মহাসাগর ও বৃহত্তর ইন্দো‌-‌প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে উঠে এসেছে। এই অঞ্চলে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রচারণা ভারত মহাসাগরে একটি শীর্ষস্থানীয় নৌশক্তি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা দৃশ্যপটে একটি মূল স্থপতি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর নির্ভর করে। ভারতের নৌশক্তি বৃদ্ধির গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমুদ্রে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলির কারণে, যা মূলত ভারত মহাসাগরে চিনের উপস্থিতি বৃদ্ধির জটিল কৌশল থেকে উদ্ভূত। ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুম্বইতে তিনটি নৌ-‌যুদ্ধজাহাজ কমিশন করেন —‌ একটি ডেস্ট্রয়ার, আইএনএস সুরাত; একটি ফ্রিগেট, আইএনএস নীলগিরি; এবং একটি সাবমেরিন, আইএনএস ভাগশির  — যেগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর দক্ষতা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতিকে আরও জোরদার করে।


ভারতের নৌশক্তি বৃদ্ধির গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমুদ্রে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলির কারণে, যা মূলত ভারত মহাসাগরে চিনের উপস্থিতি বৃদ্ধির জটিল কৌশল থেকে উদ্ভূত।



ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিবেশ জটিল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারত এবং তার সমমনস্ক অংশীদারেরা এক
অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের পক্ষে কথা বলে চলেছে, তবে চিনের আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমা ও বলপ্রয়োগমূলক কৌশল ক্রমবর্ধমানভাবে নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে। এই ক্ষেত্রে, নৌ-শক্তি বৃদ্ধি দ্বৈত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রথমত, সমুদ্রে ক্রমবর্ধমান সম্পদ এই অঞ্চলে নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় একটি দেশের বস্তুগত নৌ-ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। দ্বিতীয়ত, এটি সমুদ্রে আক্রমণাত্মক অগ্রগতির বিরুদ্ধে নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা রক্ষার প্রতি গুরুত্ব ও দায়বদ্ধতার ইঙ্গিতও দেয়। এই প্রেক্ষাপটে, ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে, ভারত একটি প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে অবস্থান করার চেষ্টা করেছে, এবং প্রায়শই সে নিজেকে এই অঞ্চলে প্রথম প্রতিক্রিয়া-‌শক্তি   বা পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করে। তবে, ইন্দো--প্যাসিফিক নিরাপত্তা স্থাপত্যে ভারত ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিবেশের ভূ-রাজনৈতিক মাত্রার উপর মনোনিবেশ করার চেষ্টা করেছে। অতএব, তিনটি যুদ্ধজাহাজের কমিশনিং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিজের নৌ-শক্তি বৃদ্ধির প্রতি নয়াদিল্লির দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরে।

তার উপর, ভারতীয় নৌবাহিনীর এই নৌ-‌সম্পদের কমিশনিং প্রতিরক্ষা উৎপাদনে স্বদেশীকরণের জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকেও এগিয়ে নিয়েছে। একটি স্বনির্ভর শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার বিস্তৃত কাঠামোর মধ্যে ভারত ক্রমাগত প্রতিরক্ষা স্বদেশীকরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে উদীয়মান জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি মনোযোগের দাবি রাখে। ইউরোপে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ঐতিহ্যবাহী প্রতিরক্ষা সরবরাহকারীদের উপর নির্ভরতা ক্রমবর্ধমানভাবে একটি
গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত দুর্বলতা তৈরি করেছে। তা ছাড়া, ভারতে প্রতিরক্ষা উৎপাদন জোরদার করার উপর জোর দেওয়া তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও মন্থনের সূত্রপাত ঘটাতে চায়। সম্প্রতি কমিশন করা তিনটি নৌ যুদ্ধজাহাজ — আইএনএস সুরত, আইএনএস ভাগশির ও আইএনএস নীলগিরি — অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা উৎপাদনে এক বিরাট অগ্রগতি চিহ্নিত করে, কারণ জাহাজের সম্পদের আনুমানিক ৭৫ শতাংশ ভারতে বিকশিত হয়েছে।


একটি স্বনির্ভর শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার বিস্তৃত কাঠামোর মধ্যে ভারত ক্রমাগত প্রতিরক্ষা স্বদেশীকরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।



তিনটি নৌ-সম্পদের কমিশনিং ভারতের নৌ-শক্তির একটি ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে। দুটি যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন ভারতের নৌ-সম্পদের ক্ষেত্রে একটি বিরাট অগ্রগতি ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশাখাপত্তনম-শ্রেণীর ডেস্ট্রয়ার জাহাজের চতুর্থ ও শেষ জাহাজ
আইএনএস সুরাতকে তার শ্রেণীর সেরা করে তুলতে চাওয়া হচ্ছে, যা তার পূর্বসূরী আইএনএস বিশাখাপত্তনম, আইএনএস মোরমুগাও ও আইএনএস ইম্ফল-এর চেয়েও উন্নত। এটি ভারতের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সক্ষম যুদ্ধজাহাজ, যা ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আইএনএস নীলগিরি হল নীলগিরি-শ্রেণীর ফ্রিগেটের সপ্তম, যাকে আক্রমণ ও রাডার এড়ানোর (‌স্টেলথ)‌ ক্ষমতার জন্য উন্নত বৈশিষ্ট্যগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে রিডিজাইন করা হয়েছে। আইএনএস ভাগশির হল স্করপিন-শ্রেণীর ষষ্ঠ সাবমেরিন , যা অ্যান্টি-‌সারফেস ও অ্যান্টি-‌সাবমেরিন মিশনের ক্ষমতা রাখে। একত্রে, এই তিনটি যুদ্ধ সম্পদ ভারতের নৌ-সম্পদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি চিহ্নিত করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রথম তিনটি প্রধান নৌ-সম্পদ একসঙ্গে কমিশন করা হয়েছে। তিনটি নৌ-সম্পর্কিত জাহাজ ভারতের উৎপাদন ক্ষমতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকও অর্জন করেছে। প্রতিরক্ষা স্বদেশীকরণের জন্য ভারতের প্রচেষ্টা চলতে থাকলেও, এই তিনটি সম্পদ রেকর্ড সময়ের মধ্যে তৈরি ও কমিশন করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কমিশনযোগ্য জাহাজ ও সাবমেরিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Class

Naval Combatant

Commissioning Date

বিশাখাপত্তনম-শ্রেণীর ডেস্ট্রয়ার (পি-‌১৫ ব্র‌্যাভো শ্রেণী)

আইএনএস বিশাখাপত্তনম আইএনএস মোরমুগাও আইএনএস ইম্ফল আইএনএস সুরাত

নভেম্বর, ২০২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

নীলগিরি-শ্রেণীর ফ্রিগেট (পি-‌১৭ আলফা)

 আইএনএস নীলগিরি আইএনএস উদয়গিরি আইএনএস হিমগিরি আইএনএস তারাহরি আইএনএস দুনাগিরি আইএনএস বিন্ধ্যগিরি আইএনএস মহেন্দ্রগিরি

জানুয়ারি, ২০২৫ প্রত্যাশিত ২০২৫ প্রত্যাশিত ২০২৫ প্রত্যাশিত ২০২৬ প্রত্যাশিত ২০২৬ প্রত্যাশিত ২০২৬ প্রত্যাশিত ২০২৭

স্করপিন-শ্রেণীর সাবমেরিন

 আইএনএস কালভারি আইএনএস খান্ডেরি আইএনএস করঞ্জ আইএনএস ভেলা আইএনএস ভাগির আইএনএস ভাগশির

ডিসেম্বর, ২০১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

মার্চ, ২০২১

নভেম্বর, ২০২১ জানুয়ারি, ২০২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

সূত্র: লেখকের সংকলন

এই সম্পদগুলির কমিশনিং চলাকালীন, প্রধানমন্ত্রী মোদী একটি প্রধান সামুদ্রিক শক্তি হিসাবে ভারতের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির উপর জোর দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনটি জাহাজ ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করেছে। তবে, ইন্দো-প্যাসিফিকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ এবং ভারত মহাসাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতকে চিনের দ্রুত বর্ধনশীল নৌবাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি অ্যান্ড নেভি ইন্দো-প্যাসিফিকে সংঘাতের জন্য শক্তি বাড়িয়েছে। ভারত চিনের সঙ্গে নৌ-‌সংঘর্ষের কৌশল অনুসরণ না করলেও, ভারত মহাসাগরে বেজিংয়ের অগ্রসরমানতার সূক্ষ্ম অর্থ মাথায় রেখে অন্য সমমনস্ক অংশীদারেরা সমুদ্রে নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শনের জন্য এই অঞ্চলে
নৌ-‌কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে আন্তঃকার্যক্ষমতা ও নৌ-‌সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত। এখানেই ভারতীয় নৌবাহিনীর ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে একটি প্রধান নৌশক্তি হিসাবে ভারত এই অঞ্চলে নৌ সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভারতীয় নৌবাহিনীতে এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনগুলি এই অঞ্চলে একটি অবাধ ও উন্মুক্ত শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা প্রসারিত করতে পারে।


অতএব, সমুদ্রে শান্তিপূর্ণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের অভিপ্রায় এবং দায়বদ্ধতার ইঙ্গিত দেওয়ার ক্ষেত্রে এই তিনটি নৌ-‌সম্পদ একটি স্বাগত অগ্রগতি। উপরন্তু, ঘটনাটি অভ্যন্তরীণভাবে দক্ষতার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পদ উৎপাদনের জন্য ভারতের প্রচেষ্টায় বড় ধরনের উৎসাহ প্রদান করে। বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা দৃশ্যপটের বেশিরভাগ পরিবর্তন সামুদ্রিক ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলতে পারে, তাই ভারতের নৌ-‌সক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং এর দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রকৃতপক্ষে জাতীয় নিরাপত্তার দিকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি, এবং একইসঙ্গে তা সমুদ্রে উদীয়মান শৃঙ্খলায় নয়াদিল্লিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ করে দেয়।



সায়ন্তন হালদার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.