বিশেষত পূর্ব ক্ষেত্রে সংঘাত এবং টানাপড়েনের প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লিকে অবশ্যই আরও ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সীমান্ত সমস্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতীয় সৈন্যরা ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) একতরফা প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়ায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অর্থাৎ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চিনারা ৩০০ সুদক্ষ সামরিক কর্মী নিয়ে এলএসি-তে পৌঁছলেও ভারতীয় সৈন্যরা যে এতটা প্রস্তুত থাকবে, তা তারা আশা করেনি। চিনা সৈন্যদের প্রতিভারতীয় সৈন্যদের উপযুক্ত প্রত্যুত্তর সত্ত্বেওনয়াদিল্লির তরফে শুধুমাত্র পিএলএ-এর মরিয়া কার্যকলাপের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানই যথেষ্ট নয়, অদূর ভবিষ্যতে প্রতিপক্ষের আচরণ ঠাহর করাও গুরুত্বপূর্ণ।
বেজিংয়ের নৈরাশ্য
চিন এ কথা লক্ষ করেছে যে, ভারতের রাজনৈতিক বিরোধীরাওভারতের জি২০ সভাপতিত্বের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে চিনাদের নিরস্ত করার জন্যকেন্দ্রকে অনুরোধ জানিয়েছে।পেলোসি-তাইওয়ান পর্বেরউদাহরণ থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক বছর ধরে তাদের ফাঁপা হুমকি বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব হারিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিনও বিশ্বকে তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে একটি ‘একক শক্তি’ রূপে বিবেচনা করে ভারতকে আক্রমণ করা এই মুহূর্তে সহজতম বিকল্প বলে মনে হওয়ার নেপথ্যে প্রধান কারণ হলমার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী শক্তিগুলিকে অন্ধভাবে অনুসরণ না করেইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ভারতের একটি কঠিন কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পথে হাঁটা।
বিপর্যয়কর শূন্য কোভিড নীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর প্রশাসনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের মনোযোগকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার জন্য জিঙ্গোইজম এবং যুদ্ধবাজ মানসিকতাই তাঁর কাছে নিরাপদ বিকল্প।
অবশেষে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশের জনগণের সমর্থন পাওয়ার উপায় হিসাবে বৈদেশিক নীতির সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিপর্যয়কর শূন্য কোভিড নীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর প্রশাসনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের মনোযোগকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার জন্য জিঙ্গোইজম এবং যুদ্ধবাজ মানসিকতাই তাঁর কাছে নিরাপদ বিকল্প। তাইওয়ান প্রণালীতে নতুন করে উত্তেজনা একই উদ্দেশ্য সাধন করবে।
ভারতের সংকল্প
বেজিং-এর গা-জোয়ারি স্পষ্টতই নয়াদিল্লিকে অরুণাচল প্রদেশেরাস্তা নির্মাণ করা থেকে শুরু করে একটি গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর স্থাপন করা পর্যন্তপরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারত সীমান্ত সংযোগের উপর জোর দিয়ে পরিকাঠামো নির্মাণকে ত্বরান্বিত করেছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হল অরুণাচল ফ্রন্টিয়ার হাইওয়ে।
এর পাশাপাশি, ১৩,৭০০ ফুট উঁচু সেলা টানেলটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসের মধ্যে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন দ্বারা সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে, যার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বৈসাকি থেকে বিদ্যমান এক লেনের রাস্তাকে ডাবল লেনে প্রশস্ত করার পাশাপাশি সেলাকে বাইপাস করে দু’টি টানেল এবং অসংখ্য হেয়ার পিন টার্ন নির্মাণ করা। একবার এই কাজ সম্পূর্ণ হলে সেলা টানেলটি হয়ে উঠবে বিশ্বের দীর্ঘতম বাইলেন টানেল।
অবশেষে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী তাওয়াং সংঘর্ষের পর পরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশীয় আধা-ব্যালিস্টিক সারফেস-টু-সারফেস প্রলয় ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকপাকিস্তান ও চিনের সীমান্তে মোতায়েন করার জন্যএই ধরনের ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র কেনার অনুমোদন দিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লক্ষ্যগুলিকে ধ্বংস করতে পারে এবং উড়ানে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব ভ্রমণ করার পরে তাদের গতিপথপরিবর্তন করার ক্ষমতার কারণেতাদের বাধা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন।
নয়াদিল্লির বাধ্যবাধকতা
সেলা বাইলেন টানেলটিকে বেজিং দ্বারা ডংঝাং সেক্টরে সম্প্রতি উন্নত সীমান্ত গ্রামগুলির জন্য একটি হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, পিএলএ এই অঞ্চলেভারতীয় পরিকাঠামো ও লজিস্টিক ভেঙে ফেলা ও ধ্বংস করার লক্ষ্যেআরও কৌশলের আশ্রয় নেবে বলে আশঙ্কা করা যেতে পারে। তাই নয়াদিল্লির জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে, বিশেষত পূর্ব ক্ষেত্রে সংঘাত এবং টানাপড়েনের প্রেক্ষিতে অবশ্যই আরও ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সীমান্ত সমস্যার জন্য প্রস্তুত থাকা।
পিএলএএই অঞ্চলে ভারতীয় পরিকাঠামো ও লজিস্টিক ভেঙে ফেলা ও ধ্বংস করার লক্ষ্যে আরও কৌশলের আশ্রয় নেবে বলে আশঙ্কা করা যেতে পারে।
অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের উন্নয়ন (এএলজি) বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পাসিঘাট এএলজি-র কথাই বিবেচনা করা যাক, যেটিকে শুধুমাত্র সামরিক কারণেই নয়,বাণিজ্য, চাকরি, পর্যটন এবং অর্থনৈতিক সুযোগের দিক থেকেওগুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই সম্ভাবনা তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন বিমানবন্দরটির উন্নতি করা হবে এবং দেশের বাকি অংশের সঙ্গে তার সংযোগ বাড়ানো হবে। এই লক্ষ্যে সরকারকে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য দ্রুত তহবিলের জোগান বাড়াতে হবে। একই ভাবে এএলজি থেকে ফিক্সড-উইং ডর্নিয়ার ২২৮ বিমান পরিষেবা শুরু করার আগে মেচুকায়সিভিল টার্মিনাল বিল্ডিংয়েরবহুপ্রত্যাশিত কাজের সমাপ্তিও গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি এ বিষয়েও অবশ্যই জোর দেওয়া উচিত যে, পরিকাঠামোর গুণমান যেন কোনও মতেই প্রকল্প সমাধার অবাস্তবোচিত সময়সীমার জন্য ব্যাহত না হয়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.